চলমান প্লাস্টিক বর্জ্য ক্লিন-আপ প্রোগ্রামের অংশ হিসাবে তিউ পরিবেশ বিভাগ ও ইউনিডো যৌথভাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সিনেট হলে যৌথভাবে টেকসই প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা প্রশিক্ষণ কর্মশালার আয়োজন করে। চার সেশনে বিভক্ত ডিইউ, বুয়েট, ডিএমসিএইচ শিক্ষার্থী ও পরিবেশগত স্বেচ্ছাসেবীদের প্রশিক্ষণ কর্মশালায় প্রধান অতিথি হিসাবে অধ্যাপক ডা.

নিয়াজ আহমেদ খান পিএইচডি করেছিলেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি (একাডেমিক) প্রফেসর ড. মামুন আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই দিনব্যাপী কর্মশালায় অংশ নেন ড. আবদুল্লাহ আল মামুন, জাতীয় প্রকল্প পরিচালক, পরিবেশ অধিদপ্তর; অধ্যাপক ড. মো. রিদওয়ানুল হক, আইবিএ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়; ড. জাকি উজ-জামান, কান্ট্রি ডিরেক্টর, ইউনিডো বাংলাদেশ; এস. এম. আরাফাত, জাতীয় বিশেষজ্ঞ, ইউনিডো বাংলাদেশ; ড. মো. কামরুজ্জামান, এনডিসি, মহাপরিচালক, পরিবেশ অধিদপ্তর; ড. ফাহমিদা খানম, অতিরিক্ত সচিব, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রণালয়; অধ্যাপক ড. ইজাজ আহমেদ, সাবেক ফ্যাকাল্টি, কেমিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ, বুয়েট; সুমাইয়া তাবাসসুম আহমেদ, হেড অফ , সাস্টেইনেবিলিটি, প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ; ডা. এ.এইচ.এম. মোস্তাফা কামাল, প্রভোস্ট, ডা. ফজলে রাব্বী হল, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল; ড. মো. মফিজুর রহমান, প্রফেসর, সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ, বুয়েট; এবং পরিবেশ অধিদপ্তরের ডেপুটি প্রজেক্ট ডিরেক্টর কাজী সুমনসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রফেসর ড. নিয়াজ আহমেদ খান বলেন, “আমাদের সকলকে প্লাস্টিক বর্জ্য হ্রাস, পুনঃব্যবহার ও পুনঃপ্রক্রিয়াকরণের মাধ্যমে টেকসই ব্যবস্থাপনার দিকে এগিয়ে আসতে হবে।” তিনি বলেন, “আমাদের সবাইকে কাজ করতে হবে আমাদের নিজেদের বাঁচানোর জন্য, কারণ এটি সমগ্র সভ্যতার টিকে থাকার প্রশ্ন।” তিনি শিক্ষার্থী পরিবেশ কর্মীদের সর্বাত্মক সহযোগিতার আশ্বাস দেন।

ড. ফাহমিদা খানম উদ্বোধনী বক্তব্যে বলেন, “সরকার বা স্থানীয় সরকার এককভাবে অপচনশীল  প্লাস্টিক বর্জ্য সমস্যার সমাধান করতে পারবে না। এজন্য পুরো সমাজকে বিশেষ করে তরুণ শিক্ষার্থী ও স্বেচ্ছাসেবকদেরই এগিয়ে আসতে হবে।” তিনি সম্মিলিত উদ্যোগের প্রয়োজনীয়তার উপর গুরুত্বারোপ করেন।

ড. জাকি উজ জামান তার বক্তব্যে বলেন, বাংলাদেশ সর্বদা তার জনসংখ্যাগত লভ্যাংশ ভোগ করে। দেশের তরুণ প্রজন্ম কেবল অর্থনৈতিকভাবেই নয়, পরিবেশগতভাবেও দেশকে উন্নত করবে। ২০২৬ সালের মধ্যে দেশ মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হবে। তবে অর্থনৈতিক উন্নয়নের সর্বোত্তম সুবিধা পেতে, আমাদের পরিবেশকে নিরাপদ এবং টেকসই রাখতে হবে।

ড. মোঃ কামরুজ্জামান, এনডিসি, ডিজি, পরিবেশ অধিদপ্তর বলেন, বাংলাদেশে প্লাস্টিক বর্জ্যের মাত্র ৬০% পুনর্ব্যবহার করা হয়, ৪০% যেমন আছে তেমনই রয়ে গেছে। এগুলো নদীর স্রোতে প্রবাহিত হয়ে আমাদের পানি ও বায়ু দূষণ করে চলেছে।

প্রফেসর ড. আবদুল্লাহ আল মামুন, প্রকল্প পরিচালক, পরিবেশ অধিদপ্তর বলেন, ”সমগ্র জাতির সামাজিক-সাংস্কৃতিক যোগাযোগ ও সম্পৃক্ততার কারণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রাজধানীর মধ্যে আরেকটি রাজধানী। তাই আমরা আমাদের পরিসরকে জনসাধারণের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন করতে পারি না। একইসঙ্গে আমাদের ক্যাম্পাসকে প্লাস্টিক বর্জ্য মুক্ত সবুজ রাখতে হবে।”

তৃতীয় অধিবেশনে ঢাবি, ঢামেক মেডিকেল কলেজ এবং বুয়েটের প্রশিক্ষণার্থী প্রতিনিধিদের উপর আলোকপাত করা হয়। ইউনিডো বাংলাদেশের জাতীয় বিশেষজ্ঞ এস.এম. আরাফাত ‘বাংলাদেশে টেকসই প্লাস্টিক ব্যবহার এবং সামুদ্রিক আবর্জনার দিকে সমন্বিত দৃষ্টিভঙ্গি’ প্রকল্পের অর্জনযোগ্য লক্ষ্যগুলি ব্যাখ্যা করেন। তিনি বলেন, আজকের প্রশিক্ষণ কর্মশালা পরিবেশ সচেতনতার সবচেয়ে প্রাসঙ্গিক উপাদান। 
কক্সবাজারের ২০টি স্কুল, মাদ্রাসা এবং কলেজের অংশগ্রহণের অভিজ্ঞতার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই উদ্যোগটি দেশব্যাপী প্রতিলিপি করা উচিত। হা ৩আর প্যাকেজের কথা পুনর্ব্যক্ত করেন যা অক্ষয়যোগ্য প্লাস্টিক বর্জ্য হ্রাস, পুনঃব্যবহার এবং পুনর্ব্যবহার নির্দেশ করে।

উদ্বোধনী অধিবেশনে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ড. ফাহমিদা খানম তার মূল বক্তব্যে বলেন যে, সরকার এবং স্থানীয় সরকার সংস্থাগুলি তাদের সীমিত ক্ষমতা দিয়ে অপচনশীল প্লাস্টিক বর্জ্য থেকে মুক্তি পাওয়া অসম্ভব বলে মনে হচ্ছে। সেজন্য সমগ্র সম্প্রদায়, বিশেষ করে তরুণ ছাত্র এবং স্বেচ্ছাসেবকদের আমাদের ভূপৃষ্ঠ এবং পানিকে প্লাস্টিক বর্জ্য থেকে মুক্ত রাখার বিশাল কাজে হাত দেওয়া উচিত। তিনি প্লাস্টিক বর্জ্যের পরিবেশগত ঝুঁকি মোকাবেলায় সম্মিলিতভাবে অংশগ্রহণের প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দেন। 

অধ্যাপক ড. রেদোয়ানুল হক বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্ব কেবল শিক্ষা প্রদান করাই নয়, বরং তরুণ শিক্ষার্থীদের দায়িত্বশীল নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলাও। আইবিএতে আমরা আধুনিক দৃষ্টিভঙ্গিসহ একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ গড়ে তোলার জন্য কঠোর পরিশ্রম করছি।  টেকসই পরিবেশ সংরক্ষণ করতে অবদান রেখে শিক্ষার্থীরা আমাদের   গর্বিত করতে পারে।

বিশিষ্ট রাসায়নিক প্রকৌশলী এবং বুয়েটের প্রাক্তন অনুষদ অধ্যাপক ড. ইজাজ হোসেন তার সংক্ষিপ্ত গবেষণা উপস্থাপনায় প্লাস্টিক বর্জ্যের বিপদগুলি মূলত একাডেমিক ভাষায় ব্যাখ্যা করেছেন, বিশেষ করে ন্যানো-প্লাস্টিকের ট্রেস উপাদানগুলির মারাত্মক প্রভাব যা মাইক্রো প্লাস্টিকের চেয়েও বেশি ক্ষতিকারক।

প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের সাসটেইনেবিলিটি বিভাগের প্রধান সুমাইয়া তাবাসসুম আহমেদ বলেন, "আমরা উদ্বেগজনকভাবে প্লাস্টিকের উপর এতটাই নির্ভরশীল হয়ে পড়ছি যে প্লাস্টিকের সাথে এক ঘন্টাও বেঁচে থাকার কথা ভাবতে পারি না। তবে টেকসই প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনার সাথে খাপ খাইয়ে নেওয়া উচিত যাতে প্লাস্টিক বর্জ্য উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস করা যায় এবং ধ্বংসাত্মক মাত্রার বিপজ্জনক ঝুঁকি থেকে পরিবেশকে রক্ষা করা যায়। বর্জ্য হ্রাস, পুনঃব্যবহার এবং রিসাইকেল সমাধান গ্রহণ করলে এটি অর্জন করা সম্ভব। তবে একবার ব্যবহৃত প্লাস্টিক এবং পলিথিন থেকে সম্পূর্ণরূপে মুক্তি পাওয়ার অভিযান অব্যাহত রাখতে হবে।

প্রফেসর ড. মামুন আহমেদ, উপ-উপাচার্য (একাডেমিক), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এর ধন্যবাদ জ্ঞাপনের মাধ্যমে দিনব্যাপী প্রশিক্ষণ কর্মশালাটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের প্লাস্টিক বর্জ্যমুক্ত, সবুজ ও পরিষ্কার ক্যাম্পাস এবং সংলগ্ন কমিউনিটি’র নেতৃত্ব দেওয়ার অঙ্গীকারের মাধ্যমে সমাপ্ত হয়।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: পর ব শ প ল স ট ক বর জ য ট কসই প ব যবহ র আম দ র সরক র আহম দ ইউন ড র উপর

এছাড়াও পড়ুন:

চাকরি খেয়ে ফেলব, কারারক্ষীকে কারাবন্দী আ’লীগ নেতা

‘চাকরি খেয়ে ফেলব, দেখে নেব তোমাকে, চেন আমি কে?’ কারবন্দী কুড়িগ্রাম জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান সাজু (৪৯) মঙ্গলবার বিকেল ৪টার দিকে ২ কারারক্ষীকে এভাবে হুমকি দেন বলে অভিযোগ উঠেছে। 

জানা যায়, কুড়িগ্রাম জেলা কারাগারে জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান সাজুকে দেখতে যান তার কয়েকজন স্বজন। কারা নিয়মানুযায়ী সাক্ষাৎ কক্ষে বেঁধে দেওয়া সময়ে কথা শেষ করার কথা থাকলেও তিনি তার মানতে রাজি নন। তিনি দীর্ঘ সময় কথা বলতে চাইলে সাক্ষাৎ কক্ষে দায়িত্বরত মহিলা কারারক্ষী পপি রানী কারাবন্দী নেতার স্বজনদের সময়ের মধ্যে কথা শেষ করতে বলেন। এতে ক্ষিপ্ত হন আওয়ামী লীগ নেতা সাজু। তখন তিনি বলেন, ‘এই আপনি কে? ডিস্টার্ব করছেন কেন? চিনেন আমাকে? চাকরি খেয়ে ফেলব।’

এ সময় সাক্ষাৎ কক্ষে সাজুর স্বজনরাও পপি রানীর সঙ্গেও আক্রমণাত্মক আচরণ করেন। পপি রানীকে নিরাপদ করতে সুমন নামের আরেকজন কারারক্ষী এগিয়ে এলে তাকে লাথি দিয়ে বের করে দেওয়ার হুমকি দেন সাজু। উত্তেজনার একপর্যায়ে ঘটনাস্থলে দ্রুত উপস্থিত হন প্রধান কারারক্ষী আব্দুর রাজ্জাক। তিনি সাজুর স্বজনদের সাক্ষাৎ কক্ষ থেকে চলে যেতে বলেন। তারাও চলে যাওয়ার সময়ে কারারক্ষীদের গালিগালাজ করেন। 

এ ব্যাপারে কারারক্ষী পপি রানী  বলেন, ‘আমি ডিউটিরত অবস্থায় তিনি আমাকে প্রভাব দেখিয়ে চাকরি খাওয়ার হুমকি দেন ও গালিগালাজ করেন। আমি জেলার স্যারের কাছে বিচার প্রার্থনা করছি।’

প্রত্যক্ষদর্শী কারারক্ষী মো. সুমন বলেন, ‘আমরা তো ছোট পদে চাকরি করি, আমাদের নানান নির্যাতন সহ্য করতে হয়। আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া আর কিছু বলতে পারব না।’

প্রধান কারারক্ষী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘সাক্ষাৎ কক্ষের ভেতরে পুলিশ সদস্যকে গালিগালাজ করা হয়। পরে আমি গিয়ে পরিবেশ শান্ত করি।’ 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কুড়িগ্রাম কারাগারের জেলার এ জি মো. মামুদ বলেন, ‘বিষয়টি আমি শুনেছি। বন্দীরা আমাদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করলেও আমরা মানবিকতা প্রদর্শন করি। কেউ অতিরিক্ত কিছু করলে জেলের নিয়ম অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

উল্লেখ্য, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান সাজুকে গত ৩ ফেব্রুয়ারি বিকেলে রংপুর শহরের সড়ক ও জনপথ কার্যালয়ের কাছ থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)। তার বিরুদ্ধে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে ছাত্র-জনতার ওপর হামলা ও শিক্ষার্থী আশিক হত্যা মামলাসহ একাধিক মামলা রয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ