ভাসানচরকে চট্টগ্রামের সন্দ্বীপে অন্তর্ভুক্ত না করতে লিগ্যাল নোটিশ
Published: 17th, April 2025 GMT
ভাসানচরকে নোয়াখালীর হাতিয়া থেকে বিচ্ছিন্ন করে চট্টগ্রামের সন্দ্বীপের সঙ্গে অন্তর্ভুক্ত না করতে সরকারকে আইনি নোটিশ পাঠানো হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার ‘নিরাপদ নোয়াখালী চাই’ সংগঠনের সভাপতি সাইফুর রহমান রাসেলের পক্ষে আইনজীবী রাশিদা চৌধুরী নীলু এ নোটিশ পাঠান। চট্টগ্রাম ও নোয়াখালী জেলা প্রশাসককে এ নোটিশ পাঠানো হয়েছে।
এতে বলা হয়, ২০২১ সালের ২ ফেব্রুয়ারি ভাসানচর থানা গঠন করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এতে হাতিয়ার ৫ চর ঈশ্বর ইউনিয়নের ছয়টি মৌজা তথা ভাসানচর, শালিকচর, চর বাতায়ন, চর মোহনা, চর কাজলা এবং কেওডার চরকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। কিন্তু সম্প্রতি একটি গ্রুপ ওই মৌজাটি (ভাসানচর) সন্দ্বীপে অন্তর্ভুক্ত করা চেষ্টা করছে। এটা বেআইনি এবং সরকারের কর্তৃত্বকে চ্যালেঞ্জ করা। এই কার্যক্রম বন্ধ না হলে বিষয়টি চ্যালেঞ্জ করে সংবিধানের ১০২ অনুচ্ছেদ অনুসারে হাইকোর্টে আবেদন (রিট) করা হবে বলেও আইনি নোটিসে সংশ্লিষ্টদের সতর্ক করা হয়েছে।
আইনজীবী রাশিদা চৌধুরী নীলু সাংবাদিকদের বলেন, ভাসানচর দ্বীপটি সন্দীপের সঙ্গে যুক্ত করতে কিছু মানুষ মরিয়া হয়ে উঠেছে। তারা সবাই নানা শ্রেণি-পেশার সন্দীপের মানুষ। তাদের দাবি ও নানামুখী তৎপরতার মুখে মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয় সীমানা জটিলতা নিরসনের লক্ষ্যে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছিল। ওই কমিটির নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে সম্প্রতি চট্টগ্রাম জোনাল সেটেলমেন্ট অফিসার প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। এতে ভাসানচর চট্টগ্রামের সন্দ্বীপের অংশ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। বিষয়টি নজরে এই কার্যক্রম বন্ধের জন্য সংশ্লিষ্টদের আইনি নোটিশ দেওয়া হয়েছে।
এদিকে ভাসানচর সন্দ্বীপের মানচিত্রে যুক্ত করার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসছে- বিষয়টি জানাজানি হলে হাতিয়ার লোকজনের মধ্যে প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকেও অনেকে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ভ স নচর ভ স নচর ক ত কর
এছাড়াও পড়ুন:
এক-এগারোর মতো ঘটনা ঘটা এখানে অস্বাভাবিক কিছু নয়
নেতা–কর্মীদের সতর্ক করে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘আমরা যদি ঐক্যবদ্ধ না থাকি, আমরা যদি সতর্ক না থাকি তাহলে এক-এগারোর মতো ঘটনা ঘটা এখানে অস্বাভাবিক কিছু নয়।’
আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি মিলনায়তনে ‘ফ্যাসিবাদ থেকে গণতন্ত্রে উত্তরণের পথে আইনজীবীদের ভূমিকা: আলোচনা ও ডকুমেন্টারি প্রদর্শনী’ শীর্ষক এক অনুষ্ঠানে এই সতর্কবার্তা দিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব।
সভায় মির্জা ফখরুল বলেন, ‘খুব সতর্ক থাকতে হবে। আমরা কিন্তু খুব একটা সূক্ষ্ম তারের ওপর দিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু চারদিকে আপনারা আমার চেয়ে ভালো জানেন, চারদিকে একটু চোখ–কান খোলা রাখেন। দেখবেন কতগুলো ঘটনা ঘটছে, যে ঘটনাগুলোর আলামত ভালো না। এদিকে একটু লক্ষ রাখতে হবে।’
দেশের মানুষ সংখ্যানুপাতিক বা পিআর পদ্ধতির নির্বাচন কী, সেটি বোঝে না বলে মন্তব্য করেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, ‘আমরা অবশ্যই চাই সংস্কার হোক। সাধারণ মানুষ কিন্তু চায় যে একটা নির্বাচন হোক, সে নির্বাচন থেকে নতুন সরকার আসুক। যে সরকার তারা নির্বাচিত করতে পারবে, যে প্রতিনিধি তারা নির্বাচন করবে। তাদের কথা বলার লোক তারা পার্লামেন্টে (সংসদ) নিতে চায়। এটা খুব সহজ হিসাব।’
এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, ‘এই যে বিষয়গুলো তৈরি করা হচ্ছে কেন? এই বিতর্কগুলো তৈরি করা হচ্ছে কেন? এর পেছনে আপনি যদি মনে করেন এমনি এমনি করা হচ্ছে, তা নয়। এর পেছনে একটা বিশেষ উদ্দেশ্য আছে। সেই উদ্দেশ্যটা সেই এক–এগারোতে ফিরে যাবেন, সেই উদ্দেশ্যটা, সেই একেবারে ফিরে চলে যাবেন এরশাদ সাহেবের ক্ষমতা দখল করা পর্যন্ত। এ দেশে গণতন্ত্রকে চলতে দিতে চায় না। একটা মহল আছে যারা বারবার গণতন্ত্রের গলা টিপে ধরে। এমনকি শেখ মুজিবুর রহমানও এই কাজটা করেছেন একদলীয় শাসনব্যবস্থা (বাকশাল) প্রবর্তন করে।’
বিএনপি লিবারেল ডেমোক্রেসি (উদার গণতন্ত্র) চায় উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা চাই, আমাদের দেশের জনগণ তার ভোটের অধিকার ফিরে পাক। সে ভোট দিক। ভোট দিয়ে তার প্রতিনিধি সে নির্বাচিত করুক। পার্লামেন্ট (সংসদ) তৈরি হোক, সরকার তৈরি হোক। তারা চালাবে পাঁচ বছর। সেই পাঁচ বছরে যদি তারা ব্যর্থ হয়, না পারে, আবার নির্বাচন হবে। নির্বাচনে জনতা তাদের বাদ দিয়ে দেবে, অন্য দলকে দেবে। তাই তো? এই জায়গাটায় যেতে এত তর্ক–বিতর্ক কেন?
নির্বাচনের জন্য আর দেরি করা অধ্যাপক ইউনূসের সরকারের জন্য সঠিক হবে না বলে মন্তব্য করেন বিএনপির মহাসচিব। তিনি বলেন, ‘ফেব্রুয়ারির শুরুতে যে ডেডলাইন (সময়সীমা), এর পরে হলে আপনি যে সম্মান নিয়ে এসেছেন, সমগ্র বিশ্বে আপনার যে সম্মান, সেই সম্মান ক্ষুণ্ন হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে।’
সভায় প্রধান উপদেষ্টার সমালোচনা করে গণফোরামের সভাপতি সুব্রত চৌধুরী বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা গত এক বছরে বাংলাদেশের জন–আকাঙ্ক্ষার যে কর্মসূচি হাতে নিয়েছেন এবং পুরা জিনিসটাই আপনি সংস্কারের নামে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠন করে এত বিস্তৃতি ঘটিয়েছেন; শেষ পর্যন্ত আমার কাছে মনে হচ্ছে, এটা আমার ব্যক্তিগত অপিনিয়ন (মতামত), সংস্কারের নামে অপসংস্কার কুসংস্কার তৈরি করে নিয়ে যাবেন। একটু থামেন, আপনার তো এত ম্যান্ডেট নাই। সবকিছু নিয়েই আপনি বসে পড়েছেন। জুলাই সনদ হবে, জুলাই ঘোষণা হবে, সবই ঠিক। আর কত সময় নেবেন?
তিনি বলেন, ‘আমাদের হাতে কিন্তু খুব বেশি সময় নাই। আগামী ফেব্রুয়ারির মধ্যেই বাংলাদেশে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এর কোনো ব্যত্যয় যেন না ঘটে। আইনজীবীসহ সারা দেশের সকল রাজনৈতিক দলকে আবার রাজপথের আন্দোলনে শরিক হওয়ার জন্য আমাদেরকে বাধ্য করবেন না।’
সভাপতির বক্তব্যে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সভাপতি জয়নুল আবেদীন বলেন, ‘এখন পর্যন্ত ঐকমত্য দেখি না, নির্বাচনের রোডম্যাপ দেখি না। গণতন্ত্রের পথে হাঁটুন, আইনজীবীরা কালো কোট পরে মাঠে নামলে কেউ থাকতে পারে না। নির্বাচনের রোডম্যাপ দিয়ে বিদায়ের চিন্তা করুন।’ সরকারে থাকা দুই তরুণ উপদেষ্টাকে যেন তাঁদের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়, সেই আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার প্রতি জানান তিনি।
সভার শুরুতেই একটি তথ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। এরপর স্বাগত বক্তব্য দেন সুপ্রিম কোর্ট বারের সম্পাদক মাহফুজুর রহমান মিলন। জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সভাপতি জয়নুল আবেদীনের সভাপতিত্বে এবং ফোরামের মহাসচিব কায়সার কামালের সঞ্চালনায় সভায় আরও বক্তব্য দেন জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি মাহবুব উদ্দিন খোকন, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কুদ্দুস কাজল, সাংগঠনিক সম্পাদক গাজী কামরুল ইসলাম, যুগ্ম মহাসচিব মো. কামাল হোসেন, মোহাম্মদ আলী, ফোরামের সুপ্রিম কোর্ট ইউনিটের সদস্যসচিব গাজী তৌহিদুল ইসলাম প্রমুখ।