তীব্র খাদ্য সংকটে গাজায় অপুষ্টিতে ধুঁকছে শিশুরা
Published: 18th, April 2025 GMT
দেড় মাস ধরে গাজায় ইসরায়েলের অবরোধে ত্রাণবাহী গাড়ি ঢুকতে না পারায় ক্রমেই তীব্র হচ্ছে খাদ্যসংকট। এতে অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটছে উপত্যকার বাসিন্দাদের। বিশেষ করে শিশুরা ধুঁকছে ব্যাপক অপুষ্টিতে। এ অবস্থায় ক্ষুধাকে অস্ত্র বানানোর অভিযোগ তুলেছে ফিলিস্তিনের সশস্ত্র সংগঠন হামাস। অন্যদিকে, ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী এ অবরোধ অব্যাহত রাখার কথা জানিয়েছেন।
বৃহস্পতিবার আলজাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, গত ১৮ মার্চ যুদ্ধবিরতি ভেঙে গাজায় পুনরায় হামলা শুরুর এক সপ্তাহ আগে ২ মার্চ সব ধরনের ত্রাণ প্রবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে ইসরায়েল। এরই মধ্যে তারা গাজার বিভিন্ন এলাকায় স্থলাভিযানও শুরু করেছে। পাশাপাশি অব্যাহতভাবে চালানো হামলায় গতকাল বৃহস্পতিবার এক দিনে আরও ৪০ জন নিহত হয়েছেন। আহত হন ৭৩ জন। এর মধ্যে গাজার জাবালিয়া শরণার্থী শিবিরে এক হামলায় অন্তত ছয়জন নিহত হন।
গাজায় ত্রাণ প্রবেশ বন্ধ রাখা প্রসঙ্গে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ বলেন, অবরোধই হচ্ছে হামাসের ওপর চাপ প্রয়োগের উপায়। এ অবরোধ সরানোর কোনো পরিকল্পনা আপাতত তাদের নেই। এ অবস্থায় জানিয়েছে, পুষ্টিহীনতার কারণে গাজার পরিস্থিতি দ্রুতই খারাপের দিকে যাচ্ছে। কাটজ বলেন, যুদ্ধ বন্ধে শেষ পর্যন্ত কোনো সমঝোতা হলেও তাদের বাহিনী গাজায় নিজেদের বানানো বাফার জোন ছাড়বে না। ইসরায়েলের মন্ত্রীর বক্তব্যের সমালোচনা করে হামাস বলছে, তাঁর এ বক্তব্য যুদ্ধাপরাধ সংঘটনের বিষয়টি প্রকাশ্যে স্বীকার করা ছাড়া কিছু নয়। বৃহস্পতিবার টেলিগ্রাম পোস্টে সংগঠনটি লিখেছে, ইসরায়েল নিরপরাধ বেসমারিক লোকজনের জীবনরক্ষার মৌলিক উপাদান যেমন– খাবার, ওষুধ, পানি ও জ্বালানি থেকে বঞ্চিত করছে।
এ পরিস্থিতিতে জাতিসংঘ বলছে, পর্যাপ্ত মানবিক সহায়তা প্রবেশ করতে না দেওয়ায় শিশুরা পুষ্টিহীনতায় ভুগছে। জাতিসংঘের মানবিকবিষয়ক সংস্থা ওসিএইচএর এক প্রতিবেদনে ইসরায়েলের অবরোধের ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরে জানায়, মানবিক সহায়তা ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সরবরাহের প্রবেশ বন্ধ করে দেওয়ায় গাজায় তীব্র খাদ্য ঘাটতি দেখা দিয়েছে। সেখানে মাংস, হাঁস-মুরগি, দুগ্ধজাত পণ্য, শাকসবজি ও ফলমূলের মতো পুষ্টিকর খাদ্য একেবারেই কমে গেছে। ওসিএইচএর তথ্য অনুযায়ী, মার্চে অপুষ্টিতে ভোগা ৩ হাজার ৬৯৯ শিশুকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ফেব্রুয়ারিতে এ সংখ্যা ছিল ২ হাজার ২৭। পুষ্টিকর খাবারের পাশাপাশি গাজায় বিশুদ্ধ পানির সংকটও তীব্র।
যুদ্ধের এ পরিস্থিতির মধ্যে ফিলিস্তিনে পালন করা হচ্ছে ‘কারাবন্দি দিবস’। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর গাজায় আগ্রাসন শুরুর আগে ইসরায়েলের কারাগারে বন্দি ফিলিস্তিনির সংখ্যা ছিল ৫ হাজার ২৫০ (৪০ নারী ও ১৭০ শিশু)। চলতি বছরের এপ্রিল পর্যন্ত এ সংখ্যা ৯ হাজার ৯০০ জনে পৌঁছেছে, যাদের মধ্যে নারী ২৭ জন; শিশুর সংখ্যা কমপক্ষে ৪০০। ফিলিস্তিনের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত ইসরায়েলের কারাগারে ৬৪ ফিলিস্তিনির মৃত্যু হয়েছে।
এদিকে, স্থায়ীভাবে ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকা দখলের বিষয়ে ইসরায়েলকে সতর্ক করেছে জার্মানি। মূলত ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ গাজার তথাকথিত নিরাপত্তা অঞ্চলে সেনাদের অনির্দিষ্টকালের জন্য অবস্থান করার কথা বলার পর এ সতর্কবার্তা এলো। অন্যদিকে, ইসরায়েল স্পষ্টভাবে ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড গাজা দখলের চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ তুলেছে উত্তর কোরিয়া। পাশাপাশি গাজা উপত্যকায় নতুন করে শুরু করা ইসরায়েলের হামলার সমালোচনাও করেছে পিয়ংইয়ং। উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত কোরিয়ান সেন্ট্রাল নিউজ এজেন্সি (কেসিএনএ) এ খবর জানায়।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: গ জ গণহত য ইসর য় ল ইসর য় ল র মন ত র প রব শ অবর ধ
এছাড়াও পড়ুন:
মুক্তিপণ দিয়েও পাঁচ মাস ধরে ১৪ তরুণের খোঁজ পাচ্ছেন না স্বজনেরা
অবৈধ পথে ইতালির উদ্দেশে যাত্রা করেছিলেন মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার ১৪ তরুণ। কিন্তু দুবাই হয়ে লিবিয়ায় পৌঁছানোর পর পাঁচ মাস ধরে তাঁদের আর খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। স্বজনদের দাবি, দালালের প্রলোভনে পড়ে জনপ্রতি ৩০ থেকে ৩৫ লাখ টাকা মুক্তিপণও দিয়েছেন তাঁরা। কিন্তু সন্ধান না পাওয়ায় চরম দুশ্চিন্তায় দিন কাটাচ্ছেন তাঁরা।
ইউরোপের কোনো দেশে গেলে সচ্ছলতা আসবে, এমন ধারণা নিয়ে প্রতিবছর মাদারীপুর থেকে শত শত তরুণ সেখানে পাড়ি জমানোর চেষ্টা করছেন। তবে অবৈধ পথে ইউরোপ যেতে গিয়ে অনেকের মৃত্যু হয়েছে। কেউবা দালালের খপ্পরে পড়ে নির্যাতনের শিকার হয়ে কাটাচ্ছেন বন্দিজীবন। জেলা প্রশাসন ও পুলিশের তথ্য বলছে, ২০১৯ থেকে ২০২৩ সালের মার্চ পর্যন্ত জেলার ৪৫ জন লিবিয়া হয়ে ইতালি যাওয়ার পথে মারা গেছেন। ২০১৯ থেকে ২০২৩ সালের মার্চ পর্যন্ত সময়ের মধ্যে নির্যাতনের শিকার হয়ে লিবিয়া থেকে বাংলাদেশে ফিরে আসতে পেরেছেন অন্তত ৩৫০ তরুণ। নিখোঁজ আছেন তিন শতাধিক।
সবশেষ নিখোঁজ তরুণদের সবার বাড়ি রাজৈরের বাজিতপুর ইউনিয়নে। তাঁরা হলেন পাখুল্লা গ্রামের জাহাঙ্গীর ব্যাপারীর ছেলে সালমান ব্যাপারী, চৌরাশী গ্রামের মোসলেম শিকদারের ছেলে বাবুল শিকদার, একই গ্রামের মজিবর বয়াতীর ছেলে সাজ্জাদ বয়াতী, জাকির মাতুব্বরের ছেলে বাদল মাতুব্বর, কানাই রায়ের ছেলে লিটন রায়, নিরঞ্জন বাড়ৈর ছেলে বাঁধন বাড়ৈ, কিসমদ্দি বাজিতপুর গ্রামের আলম চৌকিদারের ছেলে ইমন চৌকিদার, অহিদুল মাতুব্বরের ছেলে নয়ন মাতুব্বর, আজিজ খালাসির ছেলে খলিল খালাসি, সোনা মিয়া চৌকিদারের ছেলে সোহেল চৌকিদার, নয়াকান্দি বাজিতপুর গ্রামের গৌরাঙ্গ বাড়ৈর ছেলে গৌতম বাড়ৈ, একই গ্রামের সামচু সরদারের ছেলে ইমরান সরদার, শ্রীনাথদী বাজিতপুরের জলিল বয়াতীর ছেলে আল আমিন বয়াতি ও শ্রীনদী গ্রামের সিদ্দিকুর রহমান ঘরামির ছেলে আলী ঘরামি। তাঁদের সবার বয়স ১৮ থেকে ২৮ বছরের মধ্যে।
স্বজনদের অভিযোগ, মানব পাচার চক্রের সক্রিয় সদস্য বাজিতপুর এলাকার বাবুল হাওলাদার ইতালি নেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে প্রত্যেক পরিবারের কাছ থেকে প্রথমে ১৬ লাখ টাকা করে নেন। পরে লিবিয়ায় বন্দী করে আদায় করেন আরও ২০ থেকে ২৫ লাখ টাকা। এর পর থেকে ঘরে তালা ঝুলিয়ে পালিয়েছেন অভিযুক্ত বাবুল ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা।
মাদারীপুরের ১৪ তরুণ ইতালি যেতে গত ফেব্রুয়ারি মাসে দালালের হাত ধরে ঘর ছাড়েন। নিখোঁজ তরুণদের সন্ধানে তাদের ছবি হাতে স্বজনেরা