ছোট বাজারে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে গতি কম
Published: 19th, April 2025 GMT
অপ্রচলিত বা নতুন বাজারে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানি বাড়ছে। তবে নতুন বাজারে তৈরি পোশাক রপ্তানি বৃদ্ধির গতি ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ), যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার মতো বড় বাজারের তুলনায় বেশ কম।
চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে (জুলাই-মার্চ) নতুন বাজারে ৫১২ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে। এ রপ্তানি গত অর্থবছরের একই সময়ে রপ্তানি হওয়া ৪৮০ কোটি ডলারের তুলনায় ৬ দশমিক ৬৬ শতাংশ বেশি। অথচ চলতি অর্থবছর এখন পর্যন্ত তৈরি পোশাক রপ্তানিতে ইইউতে ১১ শতাংশ, যুক্তরাষ্ট্রে ১৭ শতাংশ ও কানাডায় ১৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য বিশ্লেষণ করে এমন তথ্য জানিয়েছে তৈরি পোশাকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ। তাদের দেওয়া তথ্যানুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে ৩ হাজার ২৫ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে। এর মধ্যে ইইউতে ৫০, যুক্তরাষ্ট্রে ১৯, যুক্তরাজ্যে ১১, কানাডায় ৩ ও নতুন বাজারে ১৭ শতাংশ তৈরি পোশাক যায়।
নতুন বাজারের মধ্যে রাশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া, মালয়েশিয়া ও সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই) তৈরি পোশাক রপ্তানি কমেছে। আবার অস্ট্রেলিয়া ও চীনে রপ্তানি প্রবৃদ্ধি হয়েছে খুবই কম। ফলে সার্বিকভাবে নতুন বাজারে তৈরি পোশাক রপ্তানি কমে গেছে।
বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে অপ্রচলিত সবচেয়ে বড় বাজার জাপান। চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে এ বাজারে বাংলাদেশ থেকে ৯৬ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে। এ রপ্তানি তার আগের বছরের তুলনায় ১০ শতাংশ বেশি। দ্বিতীয় বড় বাজার অস্ট্রেলিয়ায় চলতি অর্থবছরের জুলাই-মার্চ সময়ে ৬৫ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে। এ ক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি ১ দশমিক ৯৭ শতাংশ।
ভারত বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের তৃতীয় শীর্ষ নতুন বাজার। চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে দেশটিতে ৫৪ কোটি তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে। এ রপ্তানি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ২০ দশমিক ৪৫ শতাংশ বেশি। চতুর্থ শীর্ষ নতুন বাজার তুরস্ক। চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে দেশটিতে ৩৫ কোটি ৭২ লাখ ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে। এ ক্ষেত্রে রপ্তানি বেড়েছে ৩২ দশমিক ৫৪ শতাংশ। তুরস্কের কাছাকাছি তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে দক্ষিণ কোরিয়ায়, ৩৫ কোটি ৫৪ লাখ ডলার। এ রপ্তানি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৪ দশমিক ৬৭ শতাংশ কম।
বিজিএমইএর তথ্যানুযায়ী, রাশিয়ার বাজারে তৈরি পোশাক রপ্তানি কমেছে ১০ দশমিক ৮৫ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে মার্চ পর্যন্ত ৯ মাসে এ বাজারে রপ্তানি হয়েছে ২৫ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক। গত বছরের একই সময়ে রপ্তানি হয়েছিল ২৮ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বিভিন্ন দেশের ওপর পাল্টা শুল্ক আরোপ করেছেন। এরই অংশ হিসেবে বাংলাদেশের পণ্যের ওপর বসেছে অতিরিক্ত ৩৭ শতাংশ। ট্রাম্প ৯০ দিনের জন্য পাল্টা শুল্ক স্থগিত করলেও ইতিমধ্যে ন্যূনতম ১০ শতাংশ পাল্টা শুল্ক কার্যকর হয়েছে। এমন প্রেক্ষাপটে পণ্য রপ্তানি বাড়াতে নতুন বাজারে জোর দেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন দেশের বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদেরা।
বেসরকারি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান গত বৃহস্পতিবার এক সংলাপে বলেন, এশিয়ায় বড় বাজার রয়েছে। চীন বছরে ২ হাজার ৮০০ বিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি করে। ভারত আমদানি করে ৭৫০ কোটি ডলারের পণ্য। বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত চীনে ১ বিলিয়ন ও ভারতে ২ বিলিয়ন ডলারের কম রপ্তানি করে। এ জায়গা মনোযোগ দেওয়া গেলে পণ্য ও বাজার বহুমুখী করার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশের ওপর নির্ভরশীলতা কমানো সম্ভব।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: বছর র একই সময় নত ন ব জ র বড় ব জ র দশম ক
এছাড়াও পড়ুন:
শেষে এসে ‘বিপদে’ ওয়াসা
একের পর এক জটিলতায় পড়ছে চট্টগ্রাম ওয়াসার পয়োনিষ্কাশন প্রকল্পটি। অর্থ বরাদ্দের সংকট, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে বকেয়া নিয়ে বিরোধ, কাজের ধীরগতি—সব মিলিয়ে প্রকল্পের নির্মাণকাজ বর্ধিত সময়ে শেষ হওয়া নিয়ে তৈরি হয়েছে অনিশ্চয়তা।
প্রায় ৫ হাজার ২০৪ কোটি টাকার এই প্রকল্পে ২২টি ওয়ার্ডের ২০ লাখ মানুষের জন্য আধুনিক পয়োনিষ্কাশনব্যবস্থা গড়ে তোলার কথা রয়েছে। প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে ৭০ শতাংশ। এই সময়ে এসে নানা জটিলতায় ‘বিপদে’ পড়েছে ওয়াসা।
‘চট্টগ্রাম মহানগরের পয়োনিষ্কাশনব্যবস্থা স্থাপন’ শীর্ষক প্রকল্পটি ২০১৮ সালের ৭ নভেম্বর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদন পায়। শুরুতে প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছিল ৩ হাজার ৮০৮ কোটি টাকা। এরপর প্রায় ১ হাজার ৪০০ কোটি টাকা ব্যয় বেড়েছে। মেয়াদ বেড়েছে তিন দফা। ২০২৩ সালের মধ্যে নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল, তা হয়নি।
বর্তমানে অর্থ বরাদ্দের সংকট নিয়ে বিপাকে আছে ওয়াসা। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে সংস্থাটি চেয়েছিল ১ হাজার ৩৪০ কোটি টাকা, সরকারের কাছ থেকে পেয়েছে ৭৪৪ কোটি। চলতি অর্থবছরে (২০২৫-২৬) দরকার ১ হাজার ৪০ কোটি টাকা, কিন্তু এখন পর্যন্ত পাওয়া গেছে ৬৭৬ কোটি টাকা। প্রকল্পে খরচ হয়েছে প্রায় ২ হাজার ৮০০ কোটি টাকা।
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বিল পরিশোধ করা হয়েছিল। এরপর ফেব্রুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত করা কাজের টাকা আমরা পাইনি। আগেও একই কারণে কাজ বন্ধ রাখতে হয়েছিল, পরে আশ্বাস পেয়ে শুরু করেছিলাম। এবারও সেই পরিস্থিতি।প্রকল্প পরিচালক, এসএ ইঞ্জিনিয়ারিংসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে। এই নির্বাচনী মৌসুমে প্রকল্প বরাদ্দে আরও অনিশ্চয়তা দেখা দিতে পারে। অর্থ না এলে প্রকল্পের কাজ স্থবির হয়ে পড়বে। ২০২৭ সালের শুরুতে এ প্রকল্পের পরীক্ষামূলক কার্যক্রম শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। কাজ শেষ না হলে এই পরিকল্পনা পিছিয়ে যাবে।
জানতে চাইলে ওয়াসার তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ও প্রকল্প পরিচালক মোহাম্মদ আরিফুল ইসলাম বলেন, গত বছরই অর্থ বরাদ্দের অভাবে অনেক কাজ আটকে ছিল। এ বছরও চাহিদা অনুযায়ী বরাদ্দ না পেলে সময়সীমা রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়বে। সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সঙ্গে অর্থ বরাদ্দ নিয়ে নিয়মিত যোগাযোগ করা হচ্ছে।
চলতি অর্থবছরে বরাদ্দের বিষয়ে স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব মো. রেজাউল মাকছুদ জাহেদীর সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করে সাড়া পাওয়া যায়নি। তবে মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, পয়োনিষ্কাশন প্রকল্পে অর্থ বরাদ্দের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন।
বর্তমানে অর্থ বরাদ্দের সংকট নিয়ে বিপাকে আছে ওয়াসা। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে সংস্থাটি চেয়েছিল ১ হাজার ৩৪০ কোটি টাকা, সরকারের কাছ থেকে পেয়েছে ৭৪৪ কোটি। চলতি অর্থবছরে (২০২৫-২৬) দরকার ১ হাজার ৪০ কোটি টাকা, কিন্তু এখন পর্যন্ত পাওয়া গেছে ৬৭৬ কোটি টাকা।প্রকল্পের নথিতে বলা হয়, দৈনিক ১০ কোটি লিটার পরিশোধনের ক্ষমতাসম্পন্ন একটি পয়োশোধনাগার, দৈনিক ৩০০ ঘনমিটার পরিশোধনের ক্ষমতাসম্পন্ন একটি সেপটিক ট্যাংকের বর্জ্য শোধনাগার, ২০০ কিলোমিটার পয়োনালা নির্মাণ করা হবে। এতে চট্টগ্রাম নগরের ২২টি ওয়ার্ডের ৩৬ বর্গকিলোমিটার এলাকা প্রকল্পের আওতায় আসবে। আর উন্নত পয়োনিষ্কাশনব্যবস্থার সুফল পাবেন ২০ লাখ মানুষ।
এখনো কাজ বন্ধ, অর্থের টানাপোড়েন
প্রকল্পের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ পাইপলাইন স্থাপনের কাজ ১৫ দিন ধরে বন্ধ রয়েছে। দক্ষিণ কোরিয়ার মূল ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তাইয়ং ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড উপঠিকাদারদের অর্থ পরিশোধ না করায় সাতটি স্থানীয় প্রতিষ্ঠান কাজ বন্ধ রেখেছে।
হালিশহর এলাকায় পাইপ বসানোর কাজ করছে মেসার্স নূর এন্টারপ্রাইজ, এসএ ইঞ্জিনিয়ারিং, জাহান এন্টারপ্রাইজ, দেশ কন্ট্রাক্টরস অ্যান্ড ডেভেলপার লিমিটেড, ইনাস এন্টারপ্রাইজ, পোর্ট হারবার ইন্টারন্যাশনাল ও পাওয়ার বাংলা করপোরেশন। এ প্রতিষ্ঠানগুলোর দাবি, তাদের প্রায় ৪৬ কোটি টাকা বকেয়া পড়ে আছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার তাইয়ং কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনায় উপঠিকাদাররা দুটি শর্তে কাজ শুরুতে রাজি হয়েছেন—আগামী সোমবারের মধ্যে ৫০ শতাংশ বকেয়া পরিশোধ এবং ডিসেম্বরের মধ্যে বাকি অর্থ নিষ্পত্তি।
জানতে চাইলে এসএ ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের প্রকল্প পরিচালক আহাদুজ্জামান বাতেন বলেন, ‘চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বিল পরিশোধ করা হয়েছিল। এরপর ফেব্রুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত করা কাজের টাকা আমরা পাইনি। আগেও একই কারণে কাজ বন্ধ রাখতে হয়েছিল, পরে আশ্বাস পেয়ে শুরু করেছিলাম। এবারও সেই পরিস্থিতি।’
আহাদুজ্জামান জানান, ‘মূল ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আলোচনায় আমরা দুটি শর্ত দিয়েছি—সোমবারের মধ্যে ৫০ শতাংশ বিল পরিশোধ এবং ডিসেম্বরের মধ্যে বাকি অর্থ নিষ্পত্তি। এ দুই শর্তে কাজ আবার শুরু করছি।’