যশোরের ভবদহ এলাকার জলাবদ্ধতার সমস্যার স্থায়ী সমাধানে সরকার চিন্তাভাবনা শুরু করেছে মন্তব্য করে পরিবেশ ও পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘আমরা আমাদের যে ফিজিবিলিটি স্টাডি করতে হয়, ওই স্টাডি করার কাজ শুরু করে দিয়েছি।’

আজ মঙ্গলবার ভবদহ এলাকা পরিদর্শনে এসে ভবদহ মহাবিদ্যালয়ের মাঠে প্রেস বিফ্রিংয়ে তিনি এ কথা বলেন। এ সময় স্বরাষ্ট্র ও কৃষি উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.

) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম উপস্থিত ছিলেন। তবে তাঁরা কোনো বক্তব্য দেননি।

আজ সকালে হেলিকপ্টারে করে অভয়নগর উপজেলার নওয়াপাড়ায় আসেন তিন উপদেষ্টা। সকাল ১০টায় তাঁদের বহনকারী হেলিকপ্টারটি নওয়াপাড়া সরকারি মহাবিদ্যালয় মাঠের হেলিপ্যাডে অবতরণ করে। এরপর বেলা সাড়ে ১১টায় সড়কপথে তিন উপদেষ্টা অভয়নগরের ভবানীপুর এলাকায় শ্রী নদীর ওপর নির্মিত ভবদহ ২১-ভেন্ট স্লুইসগেট এলাকা পরিদর্শনের পর দুপুর ১২টার দিকে ভবদহ মহাবিদ্যালয়ের মাঠে ব্রিফিংয়ে বক্তব্য দেন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।

রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘ভবদহের কিছু এলাকায় ২০ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো হয়। আমরা ১৭ হাজার হেক্টর জমি সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আবার ধান চাষের আওতায় আনতে পেরেছি। আমরা আজকে ধান চাষের আনন্দটুকু দেখতে এসেছি। একইভাবে ভবদহের সমস্যাটার চিরস্থায়ী কী সমাধান করা যায়, এটা নিয়ে আমরা চিন্তাভাবনা শুরু করেছি। আমরা আমাদের যে ফিজিবিলিটি স্টাডি করতে হয়, ওই স্টাডি করার কাজ শুরু করে দিয়েছি। আমাদের সরকারের কয়েকটা মন্ত্রণালয়ের সম্মিলিত প্রয়াসের কারণে আমরা এই ১৭ হাজার হেক্টর এলাকাকে আপাতত পানিমুক্ত করতে পেরেছি।’

ভবদহের জলাবদ্ধতা অনেক দিনের লম্বা সমস্যা উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন, ‘সমস্যাটা দিন দিন আরও জটিল হয়ে গেছে। আমরা যখন ২০০৫ সালে কাজ শুরু করেছিলাম, তখন যদি আমরা এটার সমাধান করতে পারতাম, সমাধান সবার জন্য সঠিক হতো, সহজ হতো। সেটা আমরা করিনি, করতে পারিনি, করার সদিচ্ছা দেখাইনি। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার ভবদহ সমস্যার চিরস্থায়ী সমাধান কীভাবে করা যায়, সেটা নিয়ে সবার সঙ্গে কথা বলবে। পক্ষ-বিপক্ষ এসব কোনো কিছু দেখা হবে না। সবার সঙ্গে কথা বলা হবে। তারপর বিশেষজ্ঞেরা যে কথাগুলো বলবেন, জনগণের মতামত নিয়ে সেই বিশেষজ্ঞদের মতামতের আলোকে আমরা চেষ্টা করব চিরস্থায়ী সমাধানের পথে অন্তত কাজটা শুরু করে দিয়ে যেতে।’

রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘এ বছর বর্ষায় যেন গত বছরের বর্ষার মতো দুর্ভোগ না হয়, সে জন্য অন্তর্বর্তী কিছু কাজ আমরা হাতে নিয়েছি। যেমন আমডাঙ্গা খাল খনন। হরি, ভদ্রা ও আপার ভদ্রা—এই তিন নদীও খননের কাজ আমরা শুরু করে দেব। এটা বাংলাদেশ সেনাবাহিনী করবে। আপাতত গত বর্ষার মতো যেন আর পানি না জমে, সেটার জন্য সেনাবাহিনী এই নদীগুলো খননের কাজ শুরু করে দেবে এবং আমরা আমডাঙ্গা খাল খননের কাজ শুরু করে দেব।’

পানিসম্পদ উপদেষ্টা বলেন, ‘খেতভরা ধান যেটা দেখতে পাচ্ছি। যে তিন হাজার হেক্টরে ধান হয়নি, সেই কৃষকদের তো নিশ্চয়ই কিছু দুঃখ রয়ে গেছে। কিন্তু ১৭ হাজার হেক্টর জমিতে যে ধান হয়েছে, এটা আমাদের খাদ্যনিরাপত্তায় অনেক ভূমিকা রাখবে।’ তিনি বলেন, মনিরামপুরে একটি জায়গায় চিংড়িঘেরের বাঁধ ভেঙে ছয় শ র বেশি মানুষের জমি প্লাবিত হয়েছে। কিন্তু তাঁদের জন্য ওই শেষ মুহূর্তে কিছুই করার ছিল না। কিন্তু তাঁরা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়কে বলেছেন। সঙ্গে সঙ্গে তারা তিন মাসের জন্য খাদ্যসহায়তা দিয়েছে।

সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান আরও বলেন, কৃষকদের যাতে বাণিজ্যিক হারে সেচের জন্য টাকা দিতে না হয়, বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয় সেই ব্যবস্থা করে দিয়েছে। এর ফলে পাঁচ মাস পানির নিচে থাকা কৃষকদের অবশ্যই অনেক সুবিধা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আজকে আমরা সবাই একসঙ্গে আসার উদ্দেশ্য হচ্ছে, সবাই একসঙ্গে সরেজমিনে দেখা, যাঁদের সঙ্গে কথা বলতে পারি কথা বলে জাতীয় নীতিনির্ধারণী মহলে যখন আমরা সবাই মিলে বসব, আমরা যেন একটা জনগণের মতামত নিয়ে বিশেষজ্ঞদের নিয়ে একটা ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারি।’

উপদেষ্টা বলেন, ‘ভবদহের জলাবদ্ধতা আসলে একটা জাতীয় দুর্যোগ। এত বড় একটা জাতীয় দুর্যোগে সবাইকে আগাতে হবে। জলাবদ্ধতা সমস্যা কিন্তু পুরোটা প্রকৃতিকেন্দ্রিক বা পুরোটা কোনো মন্ত্রণালয়ের সৃষ্টি, তা নয়। এখানে কিছু স্থানীয় সমস্যাও রয়েছে। ঠিক কোন পথে ভবদহের জলাবদ্ধ সমস্যার সমাধান হবে, এটা এই মুহূর্তে এখানে দাঁড়িয়ে আমার পক্ষে বলা ঠিক হবে না। তার কারণ হচ্ছে, এখন জনগণের সঙ্গে যাঁরা ভুক্তভোগী, তাঁদের সঙ্গে কথা বলা শুরু হয়েছে। সেখানে বিভিন্ন মতবাদ আছে। সেই মতবাদের পক্ষে-বিপক্ষে মতামত আছে। কিন্তু বৃহত্তর জনগোষ্ঠীকে যে বিষয়টা সমাধান দেবে, আমরা নিশ্চয়ই সেই সমাধানের পথে হাঁটব।’

ভবদহের বিভিন্ন প্রকল্পে দুর্নীতির বিষয়ে উপদেষ্টা বলেন, ‘অনিয়ম-দুর্নীতির তদন্ত কিন্তু আমরা শুরু করে দিয়েছি। এটা শুধু ভবদহকেন্দ্রিক নয়। এ ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে একটি কমিটি করে দেওয়া হয়েছে। কমিটিতে যে এলাকায় প্রকল্প হবে, সেই এলাকার ডিসি মহোদয়ের প্রতিনিধি, স্থানীয় ভুক্তভোগী জনগণের একজন প্রতিনিধি, একজন ছাত্রপ্রতিনিধি ও একজন বাইরের এক্সপার্ট থাকবেন।’

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: চ রস থ য় উপদ ষ ট সমস য র র জওয় ন ভবদহ র জনগণ র র জন য আম দ র মত মত সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

সন্ত্রাস, চাঁদাবাজ ও মাদকমুক্ত বন্দর গড়তে চাই : সাখাওয়াত

নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এড. সাখাওয়াত হোসেন খাঁন বলেন, আমরা রাজনীতি করি মানুষের কল্যাণে, সমাজ থেকে দুর্নীতি, চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাস দূর করার জন্য।

বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) বিকেল ৪টায় সোনাকান্দা হেভেন কমিউনিটি সেন্টারে বন্দর ২০নং ওয়ার্ড বিএনপির প্রাথমিক সদস্য নবায়ন ও নতুন সদস্য ফরম বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, বিএনপি একটি উদার গণতন্ত্রে বিশ্বাসী দল। শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের দর্শন ছিল—জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস। জনগণকে বাদ দিয়ে রাষ্ট্র বা দেশের উন্নয়ন সম্ভব নয়। যারা অপকর্মে লিপ্ত, তাদের সরিয়ে দিতে এবং জনগণের পক্ষে শক্ত অবস্থান নিতে আমরা রাজনীতি করি। 

জনগণের মনে কষ্ট পায় এমন কিছু করা যাবে না। আমাদেরকে সব সময় জনগণের সুখে-দুখে পাশে থাকতে হবে। এটা আমাদের নেতা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান নির্দেশ। 

তিনি আরও বলেন, বিএনপিতে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজ ও দুর্নীতিবাজদের কোন স্থান নেই। কেউ যদি বিএনপির নাম বিক্রি করে এসকল অপকর্মের সাথে জড়িত থাকে তাদেরকে বিএনপি থেকে বিতাড়িত করা হবে। 

আমরা সন্ত্রাস,  চাঁদাবাজ ও মাদকমুক্ত একটি সুন্দর বন্দর গড়তে চাই। সারাদেশে ছোট বড় অনেক ব্রীজ হয়েছে বন্দরবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি সেতু সেলিনা হায়াৎ আইভী দীর্ঘ ১৫ বছরেও করে দিতে পারে নাই। ইনশাল্লাহ আগামী নির্বাচনে বিএনপি ক্ষমতায় আসলে সেই সেতু নির্মাণ করা হবে। 

নবায়ন ও সদস্য সংগ্রহ কার্যক্রম সম্পর্কে সাখাওয়াত হোসেন খাঁন বলেন, বিএনপির সদস্য হতে পারবেন তারা, যারা আদর্শবান ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, কৃষক, শ্রমিক ও ছাত্র। কিন্তু চাঁদাবাজ, সন্ত্রাসী, মাদক ব্যবসায়ী কিংবা যারা আওয়ামী লীগ বা জাতীয় পার্টির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত, তাদের সদস্যপদ নবায়ন করা হবে না।

বন্দর ২০নং ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি জিল্লুর রহমানের সভাপতিত্বে  ও সাধারণ সম্পাদক মনির হোসেন প্রধানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এড. সাখাওয়াত হোসেন খান, প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব এড.আবু আল ইউসুফ খান টিপু, বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, বন্দর থানা বিএনপির সভাপতি শাহেনশাহ আহমেদ, নারায়ণগঞ্জ সদর থানা বিএনপির সভাপতি মাসুদ রানা, বন্দর থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক রানা।

এছাড়াও অতিথি হিসেবে আরও উপস্থিত ছিলেন, বন্দর থানা বিএনপির সাবেক সভাপতি আমির হোসেন, সাবেক সাধারণ সম্পাদক আলী আহম্মদ, ২০নং ওয়ার্ড বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি মাসুদুর রহমান, সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক খোরশেদ আলম, সাংগঠনিক সম্পাদক ইসারুল হক রাহাত, বন্দর থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব মোশারফ হোসেন মশুসহ বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • জুলাই সনদে আমাদের যে সম্মতি সেটি আইনের ঊর্ধ্বে: সালাহউদ্দিন
  • সন্ত্রাস, চাঁদাবাজ ও মাদকমুক্ত বন্দর গড়তে চাই : সাখাওয়াত
  • জুলাই আন্দোলনকে মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে জড়াবেন না: টুকু
  • সবাই অপেক্ষা করছে একটা নির্বাচনের জন্য
  • সরকারের ভুল সিদ্ধান্তে দেশে ফ্যাসিবাদ, উগ্রবাদ মাথাচাড়া দিতে পারে: তারেক রহমান
  • সরকারের একটি অংশ অপকৌশলের আশ্রয় নিচ্ছে: তারেক রহমান
  • ট্রাম্পের প্রতি মার্কিন জনগণের সমর্থন ৪০ শতাংশে ঠেকেছে
  • জাতিসংঘে সম্মেলনের ফাঁকে বাংলাদেশ-পাকিস্তান বৈঠক, ফিলিস্তিন ইস্যুতে উদ্বেগ
  • চায়না ডেলিগেশন টিমের যশোরের ভবদহ পরিদর্শন
  • এ যেন এক অন্তহীন দুর্ভোগ