বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেলে (শেবাচিম) শিক্ষার্থীদের হাতে-কলমে প্রশিক্ষণের জন্য অত্যাধুনিক সিমুলেশন ল্যাব উদ্বোধন করা হয়েছে। মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) সকালে ৮টি কক্ষের সমন্বয়ে গঠিত এ ল্যাবের উদ্বোধন করেন শেবাচিম অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. ফয়জুল বাশার। 

ল্যাবে থাকা কৃত্রিম মানব শরীরের সাহায্যে হাতে-কলমে চাহিদা অনুযায়ী প্রশিক্ষণ নিতে পারবেন শেবাচিমের শিক্ষার্থীরা। ফলে জীবন্ত মানবদেহ ছাড়াই সহজেই সিপিআর, নরমাল ডেলিভারি, বেসিক ও অ্যাডভান্স লাইফ সাপোর্ট সম্পর্কে 
জ্ঞান অর্জন করতে পারবেন তারা। উন্নত বিশ্বের এ অত্যাধুনিক উপকরণ পেয়ে আনন্দ প্রকাশ করেছেন শিক্ষার্থীরা।

ল্যাব উদ্বোধনের সময় অন্যদের মধ্য উপস্থিত ছিলেন- শেবাচিমের উপাধ্যক্ষ ডা.

রেফায়েতুল হায়দার, শেবাচিম শিক্ষক সমিতির সভাপতি ডা. কামরুদ্দোজা হাফিজুল্লাহ ও সাধারণ সম্পাদক ডা. সিহাব উদ্দিন, ডা. মো. শফিকুল ইসলাম, ডা. শফিকুল ইসলাম, ডা. আকবর কবির, ল্যাব পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি ডা. চন্দনা সরকার ও সদস্য ডা. ওয়াহিদা সুলতানা, ডা. মো. সাইফুল ইসলাম, ডা. রফিকুল বারী, ডা. হানিফ হাওলাদার, ডা. কাজল কান্তি দাস, ডা. জামিল হোসেন, ডা. রিয়াজ হোসেন।

আরো পড়ুন:

ও লেভেল-এ লেভেলসহ বিভিন্ন পরীক্ষার ফি পাঠাতে নতুন নির্দেশনা 

এসএসসি ও সমমান
পাস-ফেল দূরের কথা, যে স্কুলের কেউ পরীক্ষাই দিচ্ছে না

শেবাচিম সূত্র জানায়, এই মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা ল্যাব থেকে বিভিন্ন অপারেশনসহ তাৎক্ষণিক সেবা দেওয়ার পদ্ধতি হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ নিতে পারবেন। কৃত্রিম মানবদেহে শিক্ষার্থীদের করা কাটাছেড়া কিছুক্ষণ পর মিলিয়ে আগের রূপে ফিরে যাবে। ফলে শিক্ষার্থীরা সহজেই দক্ষতা অর্জন না করা পর্যন্ত একাধিকবার প্রশিক্ষণ নিতে পারবেন। যার ফলাফল উঠবে পাশে থাকা কম্পিউটার মনিটরে। এর মধ্যদিয়ে শিক্ষার্থীরা দ্রুত দক্ষতা অর্জন করে রোগীদের সর্বোচ্চ সেবা নিশ্চিত করতে পারবেন। পাশাপাশি হাসপাতালে মেডিকেল শিক্ষার্থীদের চাপ কমবে।

শেবাচিম শিক্ষার্থী আবদুর রহমান বলেন, “ক্যাম্পাসের মধ্যেই এখন হাতে-কলমে একাধিকবার কৃত্রিম মানবদেহ কাটাছেড়া করে প্রশিক্ষণ নিতে পারব। উন্নত বিশ্বের এ মডেল ব্যবহারের মধ্যদিয়ে আমাদের শিক্ষা কার্যক্রমে আরো গতি আসবে।”

শেবাচিম অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. ফয়জুল বাশার বলেন, “অত্যাধুনিক এ উপকরণগুলোর মধ্যদিয়ে কম সময়ে ও কার্যকরী পদ্ধতিতে স্বাস্থ্য বিষয়ক শিক্ষা নিতে পারবেন শিক্ষার্থীরা। রোগীদের সর্বোচ্চ সেবা নিশ্চিতে এ উদ্যোগ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।”

তিনি আরো বলেন, “শিক্ষার্থীদের শেখানোর পদ্ধতিগুলোর মধ্যে সিমুলেশন একটি আধুনিক কৌশল। এ প্রক্রিয়ায় শিক্ষার্থীরা বাস্তবজীবনের বিভিন্ন সমস্যার বিষয়ে জীবন্ত দেহের পরিবর্তে কৃত্রিম উপকরণ বা পরিবেশ ব্যবহার করে প্রশিক্ষণ নিয়ে থাকেন।”

ঢাকা/পলাশ/মাসুদ

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর প রব ন

এছাড়াও পড়ুন:

‘লিচুর বাগানে’ যে কারণে ‘পিরিতের বেড়া’ দিতে হয়

‘তাণ্ডব’ সিনেমার গান ‘লিচুর বাগানে’ প্রকাশের পর রীতিমতো হইচই পড়ে গেছে। কফি শফ থেকে বাস, মেট্রোরেল আশপাশে কান পাতলে গানটা শোনা যাচ্ছে। কেউ না কেউ শুনছেন। সামাজিক মাধ্যমের স্টোরি ও রিলসেও গানটি ভেসে বেড়াচ্ছে। চরকি ও এসভিএফের অফিশিয়াল ইউটিউব চ্যানেলে প্রকাশিত গানটির আজ পর্যন্ত (১২ এপ্রিল ২০২৫) ভিউ হয়েছে যথাক্রমে ১২ মিলিয়ন ও ৩ দশমিক ৬ মিলিয়ন।

উচ্ছ্বসিত অনেক দর্শক গানটি নিয়ে মন্তব্যও করেছেন। তাহসিন নামের এক শ্রোতা লিখেছেন, ‘গানটির প্রতিটি সুর, দৃশ্য ও পরিবেশনায় বাঙালির ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির অপূর্ব রূপ ফুটে উঠেছে। যাত্রাপালার ফিল্মের আবহে তৈরি এই গানটি যেন গ্রামীণ বাংলার প্রাণস্পন্দন তুলে ধরেছে। লোকেশন থেকে শুরু করে কস্টিউম, প্রতিটি ডিটেইলে আছে নিখুঁত যত্ন।’

গানটি নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে বন্ধুদের মধ্যে খুনসুটিও চলছে। বন্ধুকে মেনশন দিয়ে কেউ যেমন প্রশ্ন করছেন, ‘কী রে, বেড়া ডিঙাতে পারলি?’ আবার কেউ জিজ্ঞেস করছেন বল তো, ‘“লিচুর বাগানে” কেন “পিরিতের বেড়া” দিতে হয়?’

প্রশ্নটির উত্তর খোঁজার চেষ্টা করা যাক। শুরুতেই ‘লিচুর বাগানে’ গানটি দিয়ে আলোচিত, ‘কে এই ছত্তার পাগলা’ শীর্ষক প্রথম আলোর প্রতিবেদন থেকে কিছু তথ্য জেনে নেওয়া যাক। গবেষক সরোজ মোস্তফার মতে ‘কে দিল পিরিতের বেড়া লিচুরও বাগানে’ পঙ্‌ক্তির রচয়িতা ও সুরকার ছত্তার পাগলা। তবে সংগীতগবেষক গৌতম কে শুভর মত ভিন্ন। তাঁর মতে, ‘এটি মূলত প্রচলিত ঘেটু গান। “কে দিল পিরিতির বেড়া লিচুর বাগানে?” অংশটি মূল গানের অংশ। ছত্তার পাগলা নিজের মতো করে এর সঙ্গে কথা সংযোজন করেছেন। নেত্রকোনায় ছত্তার পাগলার লেখা রূপটিই বিখ্যাত হয়েছে।’ ২০১৪ সালের এপ্রিলে মারা গেছেন ছত্তার পাগলা। জীবদ্দশায় রচনা ও সুরারোপ করেছেন কয়েক শ গান। মৃত্যুর বছর তিনেক আগে তাঁর কাছ থেকে গানটি শুনে হাতে লিখে রেখেছিলেন আল মামুন চৌধুরী।

আল মামুন চৌধুরীর লেখা অনুযায়ী গানটির কথা:
কে দিল পিরিতের বেড়া, লিচুরও বাগানে
লিচুরও বাগানে গো সই…লিচুরও বাগানে …(ঐ)
পাখি খাইছ না লিচু, বন্দে খাইবো
বন্দে লিচু খাইয়া, খুশি হইবো
আমার কাছে আইসা কইবো
কত শান্তি দিবো আমার মনেপ্রাণে (ঐ)
ছোট ছোট লিচুগুলি, বন্দে তুলে আম্বো তুলি
বন্দে দেয় গো আমার মুখে,
আমি দিতে চাই বন্ধুর মুখের পানে…(ঐ)
মিষ্টি লিচু খাইয়া বন্দে, বাঁশি বাজায় মন আনন্দে
আমার মনে লাগে সন্দে বন্ধু সম্ভব জাদু জানে (ঐ)
বাঁশি হাতে পলায় মালা, তারে চায় ছত্তার পাগলা,
করব লইয়া উলামেলা, (২) প্রাণবন্ধুর সনে…(ঐ)

সরল অর্থে ‘বেড়া’ হচ্ছে  প্রতিবন্ধকতা তথা বাধা তৈরির উপকরণ। আর ‘পিরিতের বেড়া’ মানে ভালোবাসায় বাধা। কিন্তু ভালোবাসার এই বাধা তথা প্রতিবন্ধকতা ‘লিচুর বাগানে’ কেন? কবিতা তথা গানে অর্থের তারতম্য অর্থের অনুগত না হয়ে বোধ কিংবা ভাবনার পরবশে প্রস্ফুটিত হয়। ব্যক্তিবিশেষে তা ভিন্ন ভিন্ন অর্থ লাভ করে, ভিন্ন ভিন্ন মূল্য পায়।

আরও পড়ুন‘লিচুর বাগানে’ গানটি দিয়ে আলোচিত, কে এই ছত্তার পাগলা ০৬ জুন ২০২৫

‘কে দিল পিরিতের বেড়া, লিচুরও বাগানে’ একটি ‘ঘাটু গান’ বা ‘ঘেটু গান’। এই গান প্রসঙ্গে জানা যায়, এই গানের অন্যতম অনুষঙ্গ ছিল নৃত্য। অল্প বয়সী একটি ছেলেকে মেয়ে সাজিয়ে তার নৃত্যের মধ্য দিয়ে ঘেটু গান পরিবেশিত হতো। সঙ্গে থাকত ঢোল, হারমোনিয়াম, বাঁশি ইত্যাদি বাদ্যযন্ত্র। কয়েকটি ‘ঘেটু গানে’র দৃষ্টান্ত দেখা যাক।
(১)
‘তুই আমারে চিনলে নারে
আমি তো রসের কমলা।
বন্ধুর বাড়ি আমার বাড়ি
মধ্যে নলের বেড়া।’
(২)
ঘুমাইলা ঘুমাইলারে বন্ধু
পান খাইলায়না
এক বালিশে দুইটি মাথা
সুন্দর কইরা কওরে কথা।
গানগুলো থেকে উপলব্ধি করতে কষ্ট হয় না যে ‘ঘেটু গানে’ যেমন ভাষার সারল্য আছে, তেমনিভাবে রূপকল্প হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে যাপিত জীবনের সঙ্গে আষ্টেপৃষ্ঠে থাকা নানা উপকরণ। আর এ ক্ষেত্রে গান রচনার সময় রচয়িতা তাঁর আশপাশ থেকেই গান নির্মাণের উপকরণগুলো যে নিয়ে থাকবেন, সেই ধারণাও পাওয়া যায়। ‘লিচুর বাগানে’ গানের ক্ষেত্রেও বোধ করি এটা ঘটেছে। তাই এই গানে যেমন ‘লিচু বাগানে’র কথা আছে, একইভাবে আছে ‘পাখি’, ‘বাঁশি’ ও ‘লিচু’র কথাও। পাখিকে লিচু না খাওয়ার অনুরোধ করলেও পাখি যেন খেতে না পারে সে কারণেই যে বেড়া দেওয়া হয়েছে; সেই ব্যথাও গানটিতে ফুটে উঠেছে। সব মিলিয়ে ‘লিচুর বাগান’ শেষ পর্যন্ত ‘লিচুর বাগানে’ সীমাবদ্ধ থাকেনি। হয়ে উঠেছে ভালোবাসার প্রতীক।

কথায় আছে, ভালোবাসা জয় করে নিতে হয়। জিতে নেওয়ার মধ্যেই আছে অপার আনন্দ। ভালোবাসায় প্রতিবন্ধকতা থাকাটা মোটেও দোষের নয়। বরং বাধা না থাকাটাই যেন আশ্চর্যের। একইভাবে ভালোবাসা জিতে নেওয়ার পরও পেয়ে গেছি বলে হাল ছেড়ে দিলে চলে না। ‘লিচুর বাগান’কে এ ক্ষেত্রে ভালোবাসার প্রতীক হিসেবে বিবেচনা করলে, ‘লিচুর বাগানে’ ‘পিরিতের বেড়া’ তথা ভালোবাসার বেষ্টনী দেওয়াটাই যুক্তিযুক্ত। কেননা ‘ভালোবাসা’কে ভালোবাসা দিয়েই আগলে রাখতে হয়। প্রবল যত্নে আঁকড়ে রাখতে হয়। যেন কোনো কৌতূহলেই তা দুলে না ওঠে, হারিয়ে না যায়।

আরও পড়ুনসাবিলা তো ‘লিচুর বাগানে’ দিয়ে কী যে আগুন লাগিয়ে দিল...০৫ জুন ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ‘লিচুর বাগানে’ যে কারণে ‘পিরিতের বেড়া’ দিতে হয়
  • তালশাঁসের চপ খেয়েছেন? দেখুন রেসিপি