কাতারের দোহায় আর্থনা সামিটে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে থাকা চার বাংলাদেশি মহিলা ক্রীড়াবিদ আজ ব্যস্ত দিন কাটিয়েছেন।

চার খেলোয়াড়- ফুটবলার আফিদা খন্দকার ও শাহেদা আক্তার রিপা এবং ক্রিকেটার সুমাইয়া আক্তার ও শারমিন সুলতানা ম্যান্ডারিন ওরিয়েন্টাল হোটেলে শীর্ষ সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে যোগ দেন।

প্রধান উপদেষ্টা উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অতিথিদের সঙ্গে চার খেলোয়াড়ের পরিচয় করিয়ে দেন এবং তাদের অর্জন ও বাংলাদেশে মহিলা ক্রীড়ার পটভূমি তুলে ধরেন।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে কাতার ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তারা চারজন খেলোয়াড়কে স্বাগত জানান। কাতার ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তারা শীর্ষ সম্মেলনের সময় চারজন খেলোয়াড়ের সাক্ষাৎকার নেন।

খেলোয়াড়রা পরে কাতার ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এবং আর্থনা সামিটের আয়োজক শেখা হিন্দ বিনতে হামাদ আল থানির সঙ্গে দেখা করেন, যেখানে তাদের পাশে প্রধান উপদেষ্টা ছিলেন।

শেখ হিন্দ বিনতে হামাদ আল থানি, যিনি নিজে একজন শীর্ষস্থানীয় প্রাক্তন কাতারি ক্রীড়াবিদ এবং কাতারের আমিরের বোন, বাংলাদেশি খেলোয়াড়দের কথা শোনেন ও মহিলা ক্রীড়াবিদদের জন্য একটি বিশেষ ডরমিটরি, জিমনেসিয়াম এবং অনুশীলনের সুযোগ-সুবিধা তৈরিতে তার আগ্রহ প্রকাশ করেন।

ফুটবলার আফিদা খন্দকার বলেন, আমরা আজ কাতারি রাজকুমারীর সঙ্গে আমাদের জীবনের অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিলাম। এটি আমাদের জন্য একটি আশ্চর্যজনক অভিজ্ঞতা। এখানে নিয়ে আসার জন্য আমরা প্রধান উপদেষ্টার প্রতি সত্যিই কৃতজ্ঞ।

প্রধান উপদেষ্টা খেলোয়াড়দের ব্রিটিশ অভিনেতা ইদ্রিস এলবার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন। কারণ ব্রিটিশ অভিনেতা ইদ্রিস এলবা বিশেষ অংশগ্রহণকারী হিসেবে শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিয়েছেন।

ইতিহাসে প্রথমবারের মতো কাতার সফরে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূসের সঙ্গে রয়েছেন চার জাতীয় মহিলা ফুটবলার এবং ক্রিকেটার।

কাতার ফাউন্ডেশন এই মহিলা খেলোয়াড়দের কাতারে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে আমন্ত্রণ জানিয়েছে।

আর্থনা শীর্ষ সম্মেলনে যোগদানের জন্য অধ্যাপক ইউনূস এখন চার দিনের সফরে কাতার সফরে রয়েছেন। সূত্র-বাসস
 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

বৈষম্য কেন? আদিবাসী নারী শ্রমিকরা পাই না সমান মজুরি

‘‘সাম্যের গান গাই-
আমার চক্ষে পুরুষ-রমণী কোনো ভেদাভেদ নাই।
বিশ্বের যা-কিছু মহান সৃষ্টি চির-কল্যাণকর
অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর।’’

কাজী নজরুল ইসলাম ‘নারী’ কবিতায় নারী-পুরুষের সমান অধিকারের কথা বলেছেন। কিন্তু, এ বৈষম্য সমাজের সর্বস্তরে এখনো রয়ে গেছে। দিনাজপুরের হাকিমপুরে বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী নারী শ্রমিকেরা। পুরুষের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করেও সমান মজুরি পাচ্ছেন না তারা।

হাকিমপুর উপজেলার বিভিন্ন ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী পাড়া ঘুরে জানা যায়, বছরে আমন এবং ইরি মৌসুমে ধানের চারা রোপণ, ক্ষেত নিড়ানিসহ ধান কাটা-মাড়াইয়ের কাজ করেন নারী শ্রমিকেরা। পুরুষের পাশাপাশি সমান তালে এসব কাজ করেন তারা। এ কাজে পুরুষ শ্রমিকেরা ৫০০ টাকা দৈনিক মজুরি পেলেও নারী শ্রমিকেরা পান ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা। শুধু ধানের মৌসুমেই নয়, অন্যান্য ফসলের ক্ষেতে কাজ করলেও তারা পুরুষের সমান মজুরি পান না। এই বৈষম্য দূর হলে আরেকটু স্বচ্ছল জীবনযাপন করা যেত বলে তারা মনে করেন।

হাকিমপুর পৌর এলাকা চন্ডিপুর ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী পাড়ার নারী শ্রমিক লক্ষ্মী হাসদা ও শান্তি সরেন বলেন, ‘‘আমরা বছরে দুই সিজন ধানের চারা রোপণসহ কাটা-মাড়াই করি। সকাল ৮ থেকে বিকেল ৫ পর্যন্ত কাজ করি। কিন্তু মজুরি কম পাই। পুরুষরা ৫০০ টাকা পেলে আমরা পাই সাড়ে ৩০০ টাকা। এটা কেমন নিয়ম?’’

অপর নারী শ্রমিক সুরুজ মনি হেম্ব্রন বলেন, ‘‘এখন তো হামরা তেমন কাম পাই না। আলু ও সরিষার মাঠে এখন মুসলমান বেটি ছোলরা কাম করে। আগে আমরাই করতাম, এখন অনেক কাম কমে গেছে। এরপর আবার পুরুষ মানুষের চেয়ে হামাক হাজিরাও কম দেয়। হারা (আমি) চলবো কি করে?’’

একই প্রশ্ন করেন হিলির তালতলার রানী হেম্ব্রন ও বিউটি হেম্ব্রন। শ্যামলী হাড্ডি বলেন, ‘‘এই বৈষম্যের কারণে আমরা স্বাবলম্বী হতে পারছি না। বৈষম্য দূর হলে আরেকটু ভালো করে চলতে পারতাম।’’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে হাকিমপুর উপজেলার ১ নাম্বার খট্রা-মাধবপাড়া ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান ছদরুল শামীম স্বপন বলেন, ‘‘আমরা জানি, নারী-পুরুষ সমান অধিকারী। কিন্তু, সমাজে নারী শ্রমিকেরা বৈষম্যের শিকার হচ্ছে। তারা সঠিক মজুরি পায় না। আমি শ্রমিক ফেডারেশনের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বলব- আপনারা এই বৈষম্য দূর করুন। নারীর ন্যায্য মজুরির ব্যবস্থা করুন।’’

খট্রা-মাধবপাড়া ইউনিয়ন শ্রমিক দলের সভাপতি শাহানুর আলম শাহিন বলেন, ‘‘আমাদের এই অঞ্চলে অনেক আদিবাসী নারী শ্রমিক আছেন, যারা বৈষম্যের শিকার। আমি গৃহস্থ এবং কৃষকদের বলতে চাই, আপনারা বৈষম্য না করে নারী-পুরুষ শ্রমিকদের সমান মজুরি দেবেন।’’

ঢাকা/তারা

সম্পর্কিত নিবন্ধ