পর্ব–৩

একসময় যেখানে নগদ লেনদেনই ছিল প্রধান মাধ্যম, আজ সেখানে মোবাইল ফোনে ক্লিক করলেই কেনাকাটা, লেনদেন—সব সম্ভব। এই রূপান্তরের মূলে রয়েছে ফিনটেক এবং ই-কমার্সের অদ্ভুত এক সমন্বয়। বাংলাদেশেও এই নতুন বাণিজ্যবিপ্লবের ঢেউ লেগেছে। কিন্তু এই সম্ভাবনাকে কতটা কাজে লাগাতে পেরেছি আমরা?

বাংলাদেশে ফিনটেক ও ই-কমার্সের বর্তমান চিত্র

বাংলাদেশে ই-কমার্স লেনদেনের ৮০ শতাংশের বেশি হয় মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস) ব্যবহার করে (সূত্র: বাংলাদেশ ব্যাংক, ২০২৩)। বিকাশ, নগদ, রকেট, উপায়—এ চারটি মাধ্যম এখন গ্রাহকদের কাছে সবচেয়ে জনপ্রিয়। পাশাপাশি এসএসএলকমার্জ, সূর্যপে, আমারপের মতো গেটওয়েগুলো এসএমই থেকে করপোরেট পর্যন্ত অনলাইন লেনদেনের একটি শক্ত ভিত্তি তৈরি করেছে।

কোভিড-১৯ ও ডিজিটাল লেনদেনের প্রসার

কোভিড-১৯ মহামারির সময় অনলাইন কেনাকাটার পাশাপাশি ডিজিটাল লেনদেনের প্রবৃদ্ধি হয় প্রায় ৪৫ শতাংশ (সূত্র: লাইটক্যাল পার্টনারস ২০২৩)। বাজারে গিয়ে নগদে কেনাকাটার পরিবর্তে ঘরে বসে মোবাইলে লেনদেন করার প্রবণতা বেড়ে যায়। এই পরিবর্তন ই-কমার্স খাতকে দ্রুত প্রসারিত করেছে এবং একই সঙ্গে ফিনটেক সেবা গ্রহণের হার বাড়িয়েছে।

ফিনটেকের মাধ্যমে ই-কমার্সের সুবিধা

২৪/৭ লেনদেন সুবিধা।

নগদ ব্যবহারের ঝামেলা ছাড়া কেনাকাটা।

সুরক্ষিত পেমেন্ট সিস্টেম।

দ্রুত রিফান্ড ও ক্যাশব্যাক অফার।

গ্রামীণ অঞ্চলেও ডিজিটাল ব্যবসার সুযোগ বৃদ্ধি।

মূল চ্যালেঞ্জসমূহ

আন্তর্জাতিক লেনদেন সীমাবদ্ধতা: বাংলাদেশে পেপ্যাল, স্ট্রাইপের অনুপস্থিতি এখনো বড় বাধা।

ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের জন্য ফিন্যান্সিং চ্যালেঞ্জ: অনেক এসএমই এখনো সহজ শর্তে ঋণসুবিধা পায় না।

সাইবার নিরাপত্তাঝুঁকি: অনলাইন লেনদেনে হ্যাকিং ও প্রতারণার ঝুঁকি রয়েছে।

ইন্টারঅপারেবিলিটি ঘাটতি: এক মাধ্যম থেকে আরেক মাধ্যমে লেনদেনে এখনো জটিলতা।

বিশ্ব অভিজ্ঞতা: শেখার মতো দৃষ্টান্ত

চীন: আলিপে ও উইচ্যাট পের মাধ্যমে পুরো ই-কমার্স ও সামাজিক বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ।

ভারত: ইপিআইয়ের (ইউনিফায়েড পেমেন্টস ইন্টারফেস) মাধ্যমে প্রতিদিন ৩০ কোটির বেশি লেনদেন।

ইন্দোনেশিয়া: গোজেক ও টোকোপিডিয়ার ডিজিটাল ওয়ালেট ইকোসিস্টেম।

বাংলাদেশের সম্ভাবনা

বাংলাদেশে বর্তমানে ১৮ কোটির বেশি মোবাইল ব্যবহারকারী ও ১২ কোটির বেশি ইন্টারনেট ব্যবহারকারী রয়েছে (সূত্র: বিটিআরসি, ২০২৪)। এই বিশালসংখ্যক ব্যবহারকারীই বাংলাদেশের ফিনটেক, ই-কমার্স ইকোসিস্টেমের মূল শক্তি। ২০২৫ সালের মধ্যে বাংলাদেশের ই-কমার্স বাজার দেড় হাজার কোটি ডলারে পৌঁছানোর সম্ভাবনা রয়েছে, যদি ডিজিটাল লেনদেন ও ই-কমার্সের সংযোগ আরও শক্তিশালী হয়।

ভবিষ্যৎ করণীয়

ওপেন ব্যাংকিং চালু করে এসএমই উদ্যোক্তাদের সহজতর ঋণসুবিধা নিশ্চিত করা।

ফিনটেক স্টার্টআপদের জন্য ফিনটেক স্যান্ডবক্স (পরীক্ষাগার) তৈরি করা।

ডিজিটাল পরিচিতি ও ই-কেওয়াইসি ব্যবস্থার বিস্তার ঘটানো।

মোবাইল লেনদেন ব্যবস্থার মধ্যে ইন্টারঅপারেবিলিটি বাড়ানো।

আন্তর্জাতিক গেটওয়ে ও ক্রস-বর্ডার ট্রান্সফার সহজীকরণ।

ফিনটেক ও ই-কমার্স সংযোগের উদ্ভাবনী দিক

বাই নাউ পে লেটার (বিএনপিএল) মডেল চালু করা।

ইনভয়েসভিত্তিক ক্ষুদ্রঋণ সুবিধা বৃদ্ধি।

গ্রাহকভিত্তিক ডিজিটাল ক্রেডিট স্কোরিং চালু করা।

ওয়ালেটভিত্তিক লয়্যালটি ও টাকা ফেরত কর্মসূচির সম্প্রসারণ।

বাংলাদেশের ই-কমার্স ও ফিনটেক এখন একে অপরের পরিপূরক হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ দুই খাতের সমন্বয় কেবল ব্যবসার প্রসার নয়, বরং পুরো দেশের অর্থনৈতিক অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করার হাতিয়ার হতে পারে।

(চলবে)

ড.

মোহাম্মদ নূরুজ্জামান: ড্যাফোডিল ফ্যামিলির গ্রুপ সিইও ও গ্লোবাল এন্ট্রাপ্রেনিউরশিপ নেটওয়ার্ক, বাংলাদেশের কোষাধ্যক্ষ

আরও পড়ুনবাংলাদেশের ই-কমার্স: কোথায় আছি, কোথায় যেতে চাই২২ এপ্রিল ২০২৫

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ও ই কম র স ই কম র স র ল ল নদ ন ল নদ ন র ব যবহ র প রস র ফ নট ক ব যবস

এছাড়াও পড়ুন:

২০২৬ এশিয়ান গেমসেও থাকছে ক্রিকেট

ক্রিকেটপ্রেমীদের জন্য সুখবর, ২০২৬ সালের এশিয়ান গেমসেও থাকছে ক্রিকেট ইভেন্ট। অলিম্পিক কাউন্সিল অব এশিয়া (ওসিএ) তাদের ৪১তম বোর্ড সভায় এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সোমবার অনুষ্ঠিত ওই সভাতেই নিশ্চিত করা হয়েছে বিষয়টি। ২০২৬ সালে জাপানের আইচি-নাগোয়ায় বসছে এশিয়ার সবচেয়ে বড় ক্রীড়াযজ্ঞের আসর। ১৯ সেপ্টেম্বর শুরু হয়ে ৪ অক্টোবর পর্যন্ত চলবে এই আসর। 

এশিয়ান গেমসে এটি হবে চতুর্থবারের মতো ক্রিকেটের উপস্থিতি। এর আগে ২০১০ সালে চীনের গুয়াংঝু ও ২০১৪ সালে দক্ষিণ কোরিয়ার ইনচনে অনুষ্ঠিত আসরেও ছিল ক্রিকেট, যদিও তখন ম্যাচগুলো আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পায়নি। ৮ বছর পর, ২০২৩ সালের চীনের হাংঝু এশিয়ান গেমসে আবারও ফিরেছিল ক্রিকেট। সেই আসরে ম্যাচগুলো আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টির মর্যাদা পায়।

২০২৩ সালের হাংঝু গেমসে পুরুষদের বিভাগে স্বর্ণ জিতে ভারত, রৌপ্য পায় আফগানিস্তান এবং ব্রোঞ্জ ঘরে তোলে বাংলাদেশ। নারীদের বিভাগেও সেরা হয় ভারত। বাংলাদেশ পায় ব্রোঞ্জ, আর শ্রীলঙ্কা পায় রৌপ্য। ওই আসরে নারী ও পুরুষ দুই বিভাগেই অংশ নিয়েছিল আরও কয়েকটি দেশ—পাকিস্তান, নেপাল, মালদ্বীপ, মঙ্গোলিয়া, হংকং, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর ও ইন্দোনেশিয়া।

এদিকে ক্রিকেট কেবল এশিয়ান গেমসেই নয়, জায়গা করে নিয়েছে ২০২৮ সালের লস অ্যাঞ্জেলস অলিম্পিকেও। সেখানে টি-টোয়েন্টি সংস্করণে নারী ও পুরুষ দুই বিভাগেই প্রতিযোগিতা হবে ছয়টি করে দলের। তবে অংশগ্রহণকারী দল বাছাইয়ের পদ্ধতি এখনো ঘোষণা করা হয়নি।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ২০২৬ এশিয়ান গেমসেও থাকছে ক্রিকেট
  • কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষকের পদাবনতি, দুই শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার
  • দুই বছর ধরে ঝুলছে যুবলীগ নেতা জামাল হত্যা মামলার তদন্ত
  • নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের জবি শাখার ৩৫ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা
  • রেকর্ড ১৪৩২ কোটি টাকা নিট মুনাফা অর্জন ব্র্যাক ব্যাংকের
  • রেকর্ড ১৪৩২ কোটি টাকা নিট মুনাফা অর্জন করেছে ব্র্যাক ব্যাংক
  • সড়কের কাজ ফেলে রেখে উধাও ঠিকাদার, দুর্ভোগে অর্ধলাখ বাসিন্দা
  • তালেবান সরকার কেন ভারতের দিকে ঝুঁকছে
  • বগুড়ার দুই শিল্পপল্লিতে এক লাখ লোকের কর্মসংস্থান
  • তারুণ্যের সমাবেশ করবে বিএনপির তিন সংগঠন