কক্সবাজারের বাঁকখালী নদীর দখল-দূষণ দেখে হতাশ দুই উপদেষ্টা, দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস
Published: 24th, April 2025 GMT
কক্সবাজার শহরের প্রধান নদী বাঁকখালীর দখল-দূষণের ভয়াবহ চিত্র দেখে হতাশা প্রকাশ করলেন অন্তর্বর্তী সরকারের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এবং নৌপরিবহন, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত হোসেন।
আজ বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টায় বাঁকখালী নদীর কস্তুরাঘাট পয়েন্টে নেমে প্যারাবন নিধন করে তৈরি করা অবৈধ বসতবাড়ি, দোকানপাট, পোলট্রি ফার্ম, চিংড়িখামার, আবাসনের জন্য নির্মিত প্লট দেখেন দুই উপদেষ্টা। এ সময় উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন, পুলিশ সুপার মো.
সেখান থেকে দুই উপদেষ্টা যান নদীর পেশকারপাড়া অংশে। সেখানেও দখল–দূষণের ভয়াবহ দৃশ্য দেখেন। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে নদীর তীরে দাঁড়িয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন দুই উপদেষ্টা। উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, নদীর অর্ধেকের বেশি জায়গা দখল হয়ে গেছে। শত শত অবৈধ স্থাপনা গড়ে উঠেছে। নদীর জায়গা নদীকে ফেরত দিতে হবে। নৌবন্দরের জায়গাও থাকতে হবে। অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, দখল–দূষণে বাঁকখালী নদী এখন মৃতপ্রায়। অবৈধ স্থাপনা দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে। অনেকে আদালতের নিষেধাজ্ঞা নিয়ে আছেন। আবার নদীর অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা রয়েছে। নদী বাঁচাতে সবকিছু করা হবে।
স্থানীয় লোকজন বলেন, গত এক বছরে কস্তুরাঘাট এলাকায় অন্তত ৩০০ একরের প্যারাবনের লাখো কেওড়াগাছ ধ্বংস করে তৈরি করা হয়েছে চার শতাধিক পাকা-আধা পাকা ঘরবাড়ি ও দোকানপাট। দুই যুগ আগে নদীর ওই অংশে প্যারাবন সৃজন করেছিল জাপানের একটি সংস্থা। কস্তুরাঘাটের দক্ষিণ-পূর্ব দিকে পেশকারপাড়া, মাঝিরঘাট এবং পশ্চিম-উত্তর দিকে ছয় নম্বর জেটিঘাট, ফিশারীঘাট, নুনিয়াছটা পর্যন্ত আরও কয়েক কিলোমিটার নদীর তীর দখল করে তৈরি হয়েছে আরও ছয় শতাধিক অবৈধ স্থাপনা।
বন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, গত ১ বছরে নদীর ৬ কিলোমিটারের অন্তত ৬০০ একরের প্যারাবন ধ্বংস করে ১ হাজার ২০০টির মতো অবৈধ স্থাপনা গড়ে তোলা হয়েছে। তাতে পাখির আবাসস্থল, মৎস্যসম্পদ-জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হয়েছে। প্যারাবনের জলাভূমি বেচাবিক্রি করে ইতিমধ্যে ১২০টি স্থাপনার টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন স্থানীয় পাঁচটি চক্রের শতাধিক ব্যক্তি। বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি থেকে উৎপত্তি হয়ে ৩৪ কিলোমিটারের নদীটি রামু ও কক্সবাজার সদর হয়ে শহরের কস্তুরাঘাট নুনিয়াছটা দিয়ে বঙ্গোপসাগরে মিশেছে।
পরিবেশবাদী সংগঠনের নেতারা বলেন, আড়াই বছর আগে নদীর ওপর প্রায় ২০০ কোটি টাকা ব্যয়ে ৫৯৫ মিটার দৈর্ঘ্যের একটি সেতুর নির্মাণকাজ শুরু হয়। তখন থেকে ভূমিদস্যুদের নজর পড়ে সেতুর দুপাশের প্যারাবনের দিকে। দখল-দূষণে দেড় মাইল প্রস্থের নদীটি সংকুচিত হয়ে এখন (সেতুর গোড়ার অংশ) ২০০ ফুটের কাছাকাছি এসে ঠেকেছে। তাতে নৌচলাচল ব্যাহত হচ্ছে।
জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা বলেন, উচ্চ আদালতের নির্দেশে ২০২৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি ও ১ মার্চ অভিযান চালিয়ে কস্তুরাঘাটের চার শতাধিক অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে জেলা প্রশাসন। তখন দখলমুক্ত করা হয় বাঁকখালী নদীর ৩০০ একরের বেশি প্যারাবনের জমি। কিন্তু কিছুদিনের মাথায় উচ্ছেদ করা প্যারাবনে আবার নির্মিত হয়েছে চার শতাধিক ঘরবাড়ি, দোকানপাটসহ নানা স্থাপনা। অনেকে টিনের বেড়া দিয়ে শত শত একর জলাভূমি ঘিরে রেখেছেন।
গত বছরের ২৩ মে জেলা প্রশাসনের সম্মেলনকক্ষে অনুষ্ঠিত হয় জেলা নদী রক্ষা কমিটির সভা। তাতে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের তৎকালীন চেয়ারম্যান সারোয়ার মাহমুদ বিএস দাগ অনুসরণ করে নদীর অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ, সীমানা নির্ধারণ এবং দখলদারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেন। তবে এখন পর্যন্ত কিছুই হয়নি।
শহরে প্রতিদিন উৎপন্ন হয় ৯৭ টনের বেশি বর্জ্য। এর মধ্যে ৭০ টন বর্জ্য নদীতে ফেলা হয়। অবশিষ্ট বর্জ্য সাগরে চলে যাচ্ছে। বছরের পর বছর বর্জ্য ফেলার কারণে নদীর বুকে এখন ময়লার পাহাড় জমেছে। উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অমান্য করে পৌরসভা কর্তৃপক্ষ এখনো ময়লা–আবর্জনা ফেলছে। শহরের কোথাও ময়লা ফেলার ডাম্পার স্টেশন নেই। সরেজমিনে নদীর বুকে কয়েকটি বর্জ্যের পাহাড় দেখতে পান দুই উপদেষ্টা।
বিকেলে জেলা প্রশাসকের সম্মেলনকক্ষে নদীর দখল-দূষণ নিয়ে জেলা প্রশাসন, পরিবেশ অধিদপ্তর, বিআইডব্লিউটিএ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে বৈঠক করবেন দুই উপদেষ্টা। সেখানে নদীর অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ন দ ই উপদ ষ ট প য র বন র র শত ধ ক পর ব শ বর জ য র দখল
এছাড়াও পড়ুন:
দৌলতদিয়ায় ফেরির ধাক্কায় ভেঙে গেছে পন্টুনের কবজা, যানবাহন পারাপার ব্যাহত
তীব্র স্রোতে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেরির ধাক্কায় ভেঙে গেছে রাজবাড়ীর গোয়ালন্দের দৌলতদিয়া ফেরিঘাটের ৩ নম্বর পন্টুনের কবজা। ফলে বন্ধ হয়ে গেছে ঘাটটি। গতকাল সোমবার দিবাগত রাত পৌনে ১২টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
বর্তমানে দৌলতদিয়ায় শুধু ৪ নম্বর ঘাট চালু আছে। এতে যানবাহন পারাপারে মারাত্মক বিঘ্ন ঘটছে এবং সৃষ্টি হয়েছে দীর্ঘ যানজটের।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি) আরিচা কার্যালয় ও ঘাট-সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গতকাল বিকেল থেকে দৌলতদিয়া প্রান্তে পদ্মায় তীব্র স্রোত দেখা দেয়। সন্ধ্যার পর এর তীব্রতা আরও বাড়ে। রাত ১১টার দিকে মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া থেকে ছেড়ে আসা রো রো ফেরি শাহ পরান দৌলতদিয়ায় পৌঁছে নিয়ন্ত্রণে রাখতে না পারায় ফেরিটি প্রচণ্ড বেগে ৩ নম্বর ঘাটের পন্টুনে ধাক্কা দিলে কবজা ভেঙে যায়। এর পর থেকে ঘাটটি বন্ধ করে দেওয়া হয়।
এর আগে ২৩ আগস্ট থেকে তীব্র স্রোতের কারণে দৌলতদিয়ার ৭ নম্বর ঘাটও বন্ধ রয়েছে। বর্তমানে চারটি ঘাটের মধ্যে কেবল ৪ নম্বর ঘাট সচল রয়েছে। সেখানে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে যাত্রীবাহী পরিবহন এবং জরুরি কিছু পণ্যবাহী গাড়ি পার করা হচ্ছে। তবে সাধারণ পণ্যবাহী গাড়ি পারাপার বন্ধ রাখা হয়েছে।
দৌলতদিয়া জিরো পয়েন্টে (৩ নম্বর ঘাট) দায়িত্বরত বিআইডব্লিউটিসির নিরাপত্তা পরিদর্শক ইদ্রিস আলী ভূঁইয়া বলেন, গতকাল রাতে ফেরি শাহ পরান ঘাটে ভেড়ার সময় প্রচণ্ড ধাক্কায় পন্টুনের কবজা ভেঙে যায়। তখন থেকে ঘাটটি বন্ধ রাখা হয়।
এদিকে সংসদীয় আসন পুনর্বিন্যাসের প্রতিবাদে ফরিদপুরের ভাঙ্গায় কয়েক দিন ধরে সড়ক অবরোধ করা হচ্ছে। এতে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলা থেকে অনেক গাড়ি দৌলতদিয়া ঘাট দিয়ে পারাপার হচ্ছে। এ কারণেও দৌলতদিয়া ঘাট এলাকায় গাড়ির চাপ পড়ছে। আজ মঙ্গলবার সকালে দৌলতদিয়া প্রান্তে প্রায় দুই কিলোমিটার লম্বা গাড়ির লাইন তৈরি হয়। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে গাড়ির লাইন আরও লম্বা হচ্ছে। দীর্ঘ সময় আটকে থাকায় চালকসহ যাত্রীদের বাড়তি ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে।
সৌহার্দ্য পরিবহনের ঘাট তত্ত্বাবধায়ক মনির হোসেন বলেন, ‘শুধু একটি ঘাট চালু থাকায় যানবাহন স্বাভাবিকভাবে পার হতে পারছে না। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল থেকে আসা ঢাকামুখী গাড়ি আটকে দীর্ঘ লাইন তৈরি হয়েছে। আমাদের চারটি যাত্রীবাহী বাস চার ঘণ্টার বেশি সময় ধরে আটকে আছে। বাসগুলো ফেরিতে উঠতে চার থেকে পাঁচ ঘণ্টার মতো সময় লাগছে।’
বিআইডব্লিউটিসির দৌলতদিয়া কার্যালয়ের সহকারী মহাব্যবস্থাপক (এজিএম) মোহাম্মদ সালাউদ্দিন বলেন, তীব্র স্রোতের কারণে ফেরি পারাপারে অনেক বেশি সময় লাগছে। গতকাল রাত পৌনে ১২টার দিকে ৩ নম্বর ঘাটের পন্টুন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এখন শুধু ৪ নম্বর ঘাট চালু রয়েছে। যাত্রীবাহী বাস ও কিছু জরুরি গাড়ি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পার করা হচ্ছে। সাধারণ পণ্যবাহী গাড়ি আপাতত পার করা যাচ্ছে না।