ইরানের বন্দর আব্বাসের কাছে শহীদ রাজয়ি বন্দরে ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনায় চারজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ৫০০ জনের বেশি। দেশটির রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম এ কথা জানিয়েছে।

বিস্ফোরণের সঠিক কারণ তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়নি। বন্দরটির শুল্ক কার্যালয়ের বিবৃতির বরাত দিয়ে রাষ্ট্রীয় টিভিতে জানানো হয়, সম্ভবত বিপজ্জনক রাসায়নিক পদার্থ সংরক্ষণ ডিপোতে অগ্নিকাণ্ডের ফলে এই বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে।

রাষ্ট্রীয় টিভিতে সম্প্রচারিত ফুটেজে দেখা যায়, বন্দরের এলাকা থেকে ঘন কালো ধোঁয়া উড়ছে এবং সেখানে জ্বলতে থাকা বহু কনটেইনারের আগুন নেভাতে হেলিকপ্টার ব্যবহার করা হচ্ছে।

স্থানীয় জরুরি সেবা বিভাগের বরাত দিয়ে রাষ্ট্রীয় টিভি জানিয়েছে, কমপক্ষে ৫১৬ জন আহত হয়েছেন। অনেককেই কাছের চিকিৎসাকেন্দ্রগুলোতে নেওয়া হয়েছে।

ইরানের রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির রিলিফ অ্যান্ড রেসকিউ অর্গানাইজেশনের প্রধান বাবাক মাহমুদি পরে রাষ্ট্রীয় সম্প্রচার মাধ্যমে জানান, ‘উদ্ধারকারীরা অন্তত চারজনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।’

ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসউদ পেজেশকিয়ান বিস্ফোরণের ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করেছেন। তিনি ‘পরিস্থিতি ও কারণ খতিয়ে দেখতে’ তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এসকান্দার মোমেনিকে ঘটনাস্থলে পাঠিয়েছেন।

শহীদ রাজয়ি বন্দর ইরানের রাজধানী তেহরানের দক্ষিণে এক হাজার কিলোমিটারের বেশি দূরে অবস্থিত। এটি ইরানের সবচেয়ে উন্নত কনটেইনার বন্দর বলে জানিয়েছে ইরনা। এটি বন্দর আব্বাস শহরের ২৩ কিলোমিটার পশ্চিমে এবং হরমুজ প্রণালির উত্তরে অবস্থিত। এই প্রণালি দিয়ে বিশ্বের এক-পঞ্চমাংশ তেল পরিবহন করা হয়।

রাজয়ি বন্দর ইরানের হরমোজগান প্রদেশে অবস্থিত। প্রাদেশিক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের প্রধান মেহরদাদ হাসানজাদে রাষ্ট্রীয় টিভিকে জানান, শহীদ রাজয়ি বন্দরের সংরক্ষিত কয়েকটি কনটেইনার বিস্ফোরণের কারণেই এই দুর্ঘটনা ঘটেছে। তিনি আরও বলেন, ‘আমরা আহত ব্যক্তিদের উদ্ধার করে কাছের চিকিৎসাকেন্দ্রে পাঠাচ্ছি।’

ফার্স বার্তা সংস্থা জানিয়েছে, বিস্ফোরণের শক্তি এতটাই তীব্র ছিল যে ৫০ কিলোমিটার দূর থেকেও তা অনুভূত হয়েছে। তাসনিম বার্তা সংস্থা জানিয়েছে, বিস্ফোরণে বন্দরের বেশির ভাগ ভবন মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

রাষ্ট্রায়ত্ত ন্যাশনাল ইরানিয়ান অয়েল প্রোডাক্টস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, বিস্ফোরণের সঙ্গে কোনো পরিশোধনকেন্দ্র, জ্বালানি ট্যাংক, বিতরণকেন্দ্র বা তেলের পাইপলাইনের কোনো সম্পর্ক নেই। তারা আরও জানিয়েছে, বন্দর আব্বাসের তেল স্থাপনাগুলো স্বাভাবিকভাবে পরিচালিত হচ্ছে।

উল্লেখ্য, এ ধরনের বিস্ফোরণ ইরানে বিরল ঘটনা। কয়েক মাস আগেই ইরানের পূর্বাঞ্চলের তাবাসে একটি কয়লাখনিতে গ্যাস লিকেজের কারণে ঘটে যাওয়া দুর্ঘটনায় ৫০ জনের বেশি নিহত হয়েছিলেন। আজ বিস্ফোরণের সময় ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিরা ওমানে তেহরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে উচ্চপর্যায়ের আলোচনায় ব্যস্ত ছিলেন।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ত হয় ছ র ঘটন

এছাড়াও পড়ুন:

২২ ক্যাডার নিয়ে চলতেন স্বেচ্ছাসেবক দলের জিতু

বগুড়ায় মেয়েকে উত্ত্যক্ত ও বাবাকে খুনে অভিযুক্ত জিতু ইসলাম দলীয় প্রভাবে বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। কথায় কথায় যাকে-তাকে অহেতুক মারধর করতেন। চলতেন ২২ জনের ক্যাডার বাহিনী নিয়ে। তারা সবাই নানা অপকর্মে জড়িত এবং একাধিক মামলার আসামি। তাঁর আয় চাঁদাবাজি ও মাদক ব্যবসা থেকে। গতকাল রোববার এলাকায় গিয়ে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
জানা যায়, জিতু ফুলবাড়ী কারিগরপাড়ার মৃত সেকেন্দার আলীর ছেলে। ২০০৩ সালে এলাকায় বালু ব্যবসা নিয়ে প্রতিপক্ষ রবিউল ইসলামকে খুন করেন। সেই মামলায় তাঁর ১৪ বছর সাজা হয়। সাজা খেটে তিন বছর আগে বের হন। এর পর এলাকায় গড়ে তোলেন সন্ত্রাসী বাহিনী। তাঁর বাহিনীতে যে ২২ জন সদস্য, তারা কেউ রাজনৈতিক দলের পদ-পদবিতে নেই। হত্যা মামলা ছাড়াও জিতুর বিরুদ্ধে একটি মাদক ও একটি ডাকাতির মামলা রয়েছে।

ফুলবাড়ীর এক মুদি দোকানি বলেন, জিতু মাঝেমধ্যে তাঁর দোকান থেকে বাকি নিতেন। দু’বছরে বাকির পরিমাণ প্রায় ৪৮ হাজার টাকা হয়। তখন একদিন টাকা চান। এ কারণে জিতু তাঁকে মারধর করে নাকে খত নেন।
বৃন্দাবন এলাকার আরেক ব্যবসায়ী বলেন, মাঝেমধ্যে জিতু তাঁর বাহিনী নিয়ে হাজির হতেন। মোটা অঙ্কের চাঁদা চাইতেন। চাঁদার কমপক্ষে অর্ধেক দিয়ে তবে নিস্তার পাওয়া যেত। এ ছাড়া ঈদে সেলামির নামে মোটা অঙ্কের চাঁদা দিতে হতো তাঁকে।

স্থানীয় ব্যবসায়ী জানান, তাঁর কাছে মোটা অঙ্কের চাঁদা চান জিতু। না দেওয়ায় দোকানে ককটেল হামলা করেন। বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকায় আগস্টের পর জিতু বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। এলাকার একাধিক আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীর কাছ থেকে মোটা অঙ্কের চাঁদা নিয়ে আশ্রয় দেওয়ার অভিযোগ আছে তাঁর বিরুদ্ধে। ছোট ভাই মিতুলও তাঁর বাহিনীর সদস্য।

জিতু গত ১৯ ফেব্রুয়ারি জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের ১০১ সদস্যবিশিষ্ট কমিটির সহসাধারণ সম্পাদকের পদ পান। সন্ত্রাসী হয়ে দলের পদ পাওয়ায় এলাকায় তাঁকে নিয়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। পদ পেয়ে তিনি আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠেন।

এলাকার এক ভুক্তভোগী বলেন, ‘জিতুর কারণে আমরা মুখ খুলতে পারি না। সে চাঁদাবাজি ও মাদক ব্যবসার মাধ্যমে এলাকা অতিষ্ঠ করে তুলেছে। বিশেষ করে রাজনৈতিক দলের পদ-পদবি পেয়ে ভয়ংকর হয়ে ওঠে। তার নির্যাতনের শিকার অর্ধশতের কম হবে না। তার বখাটেপনার কারণে কেউ মেয়ে বিয়ে দিতে রাজি হতো না।’
এক বছর আগে থেকে ফুলবাড়ির পাশেই শহরের শিববাটি এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে বসবাস করতে থাকেন জিতু। সেই এলাকার বাসিন্দা রিকশাচালক শাকিল হোসেন। শাকিলের মেয়ে স্থানীয় ভান্ডারী সিটি বালিকা বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে। এক মাস আগে ৫২ বছর বয়সী জিতু বিয়ের প্রস্তাব দেন শাকিলের মেয়েকে। বিষয়টি শাকিল জেনে রাগ করেন। জিতুর ওপর চড়াও হন। কিছুতে রাজি না হলে নানাভাবে নির্যাতন করতে থাকেন জিতু। তাঁর মেয়েকেও উত্ত্যক্ত করতেন। এরই এক পর্যায়ে শনিবার বিকেলে শাকিলকে পিটিয়ে খুন করেন জিতু ও তাঁর বাহিনী।
এ হত্যার ঘটনায় জিতুকে এক নম্বর আসামি করে ১৭ জনের নাম উল্লেখ করে গতকাল রোববার বগুড়া সদর থানায় হত্যা মামলা করেছেন শাকিলের স্ত্রী মালেকা খাতুন। পুলিশ শনিবার রাতেই জিতু ও তাঁর সহযোগী মতি এবং বিপ্লবকে আটক করে।

সন্ত্রাসীকে দলের পদ দেওয়ার বিষয়ে জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি সরকার মুকুল বলেন, ‘আমি জানতাম না, সে দলের নাম ভাঙিয়ে এসব অপকর্ম করছে। আমরা তাকে দল থেকে বহিষ্কার করেছি।’ শনিবার রাতে স্বেচ্ছাসেবক দল কেন্দ্রীয় সভাপতি এস এম জিলানী ও সাধারণ সম্পাদক রাজিব আহসানের সই করা বিবৃতিতে জিতু ইসলামকে বহিষ্কার করা হয়। সেই সঙ্গে তাঁর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে অনুরোধ জানানো হয়।

বগুড়া সদর থানার ওসি হাসান বাসির বলেন, ‘এ মামলার অন্য আসামিদেরও গ্রেপ্তার করা হবে।’
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও ফুলবাড়ী পুলিশ ফাঁড়ির উপপরিদর্শক জোবায়ের খান জানান, গতকাল জিতুসহ তিন আসামিকে আদালতে হাজির করা হয়। সাত দিনের রিমান্ড চাওয়া হয়। সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. মেহেদী হাসান পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এদিকে হত্যার প্রতিবাদ ও দোষীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে মানববন্ধন ও সমাবেশ করেছে সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরাম জেলা শাখা। গতকাল বিকেলে শহরের সাতমাথায় সংগঠনের সভাপতি অ্যাডভোকেট দিলরুবা নূরী এতে সভাপতিত্ব করেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ