ব্যাংকঋণের সুদ খরচ বৃদ্ধিতে লোকসান বাড়ল সিঙ্গারের
Published: 27th, April 2025 GMT
ব্যাংকঋণের সুদহার বেড়ে যাওয়ায় লোকসানের ধারা থেকে বের হতে পারছে না ইলেকট্রনিকস খাতের বহুজাতিক কোম্পানি সিঙ্গার বাংলাদেশ। চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে (জানুয়ারি-মার্চ) ৩৫ কোটি টাকা লোকসান করেছে কোম্পানিটি। গত বছরের একই সময়ে কোম্পানিটির লোকসানের পরিমাণ ছিল দুই কোটি টাকা। সেই হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে কোম্পানিটির লোকসান বেড়েছে ৩৩ কোটি টাকা। অথচ গত বছরের প্রথম তিন মাসের তুলনায় চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে সিঙ্গারের আয় ১৫৮ কোটি টাকা বা প্রায় ৪০ শতাংশ বেড়েছে।
সিঙ্গার বাংলাদেশ আজ রোববার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) মাধ্যমে তাদের চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকের (জানুয়ারি-মার্চ) আর্থিক তথ্য শেয়ারধারীদের জানিয়েছে। এর আগে গত বৃহস্পতিবার কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদের সভায় এই আর্থিক প্রতিবেদন অনুমোদন করা হয়।
আর্থিক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, গত জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিকে ৫৫৯ কোটি টাকার ব্যবসা বা আয় করেছে। এই আয় থেকে উৎপাদন, বিপণন ও প্রশাসনিক খরচ বাদ দেওয়ার পর কোম্পানিটির পরিচালন মুনাফা দাঁড়ায় সোয়া ১৭ কোটি টাকা। গত বছরের একই সময়ে কোম্পানিটি ৪০১ কোটি টাকার ব্যবসা করেছিল। উৎপাদন, বিপণন ও প্রশাসনিক খরচ বাদ দেওয়ার পর গত বছরের প্রথম তিন মাসে পরিচালন মুনাফা করেছিল ১৮ কোটি টাকা। পরিচালন মুনাফা প্রায় একই থাকার পরও চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিক শেষে বড় লোকসান করেছে কোম্পানিটি। এর বড় কারণ সুদ বাবদ কোম্পানিটির খরচ উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বেড়ে যাওয়া।
আর্থিক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে সিঙ্গারের সুদ বাবদ খরচ বেড়ে দাঁড়ায় ৪৭ কোটি টাকা। গত বছরের একই সময়ে এই খাতে কোম্পানিটির খরচ ছিল ১৮ কোটি টাকা। সেই হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে সুদ বাবদ সিঙ্গারের খরচ বেড়েছে ২৯ কোটি টাকা। তাতে পরিচালন মুনাফার পরও ৩৫ কোটি টাকা লোকসান গুনতে হয়েছে সিঙ্গারকে। অর্থাৎ আগের বছরের তুলনায় ভালো ব্যবসা করার পরও সিঙ্গারের মুনাফা খেয়ে ফেলেছে ব্যাংকের বাড়তি সুদ।
সিঙ্গারের গত কয়েক প্রান্তিকের আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা যায়, গত বছরের প্রথম প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ) লোকসান করলেও দ্বিতীয় প্রান্তিকে (এপ্রিল-জুন) এসে মুনাফায় ফেরে কোম্পানিটি। এরপর তৃতীয় প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) এসে কোম্পানিটি আবারও লোকসানের ধারায় ফিরে যায়। সব মিলিয়ে গত বছর শেষে সিঙ্গার বাংলাদেশ ৪৭ কোটি টাকা লোকসান করেছে। যদিও ২০২৩ সালে সিঙ্গার মুনাফা করেছিল ৫০ কোটি টাকার বেশি।
গত বছরটি লোকসানে শেষ করার পর চলতি বছরটিও লোকসান দিয়ে শুরু করেছে সিঙ্গার। লোকসানের এই খবরে আজ ঢাকার শেয়ারবাজারে কোম্পানিটির শেয়ারের দাম ৯০ পয়সা কমে নেমে এসেছে ১০৮ টাকায়। দিন শেষে হাতবদল হয়েছে কোম্পানিটির ৫৫ হাজার শেয়ার। সিঙ্গার শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত পুরোনো কোম্পানিগুলোর একটি। ১৯৮৩ সালে এটি শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। সর্বশেষ গত বছর লোকসান করলেও কোম্পানিটি শেয়ারধারীদের জন্য প্রতি শেয়ারের বিপরীতে ১০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দেয়। এটি শেয়ারবাজারে ‘এ’ শ্রেণিভুক্ত কোম্পানি।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: বছর র প রথম ত ন ম স শ য় রব জ র গত বছর র খরচ ব
এছাড়াও পড়ুন:
চাঁদপুরে জীবন্ত নবজাতক দাফনের চেষ্টা, হাসপাতাল বন্ধ
চাঁদপুর পৌর কবরস্থানে নবজাতক দাফনের সময় নড়ে ওঠা এবং পরবর্তীতে হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়ার পর মৃত্যুর ঘটনায় গ্রেপ্তার হয় শহরের তালতলা দি ইউনাইটেড হাসপাতালের ওয়ার্ড বয় ফারুক হোসেন গাজী (৪৫)। এই ঘটনায় আগামী দুই দিনের মধ্যে রোগীদের অন্যত্র স্থানান্তর করে হাসপাতালের কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।
বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় দি ইউনাইটেড হাসপাতালে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট বাপ্পি দত্ত রনি।
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, দীর্ঘদিন হাসপাতালটিতে নানা অবৈধ কার্যক্রম চলে আসছে। ওই নবজাতকের জন্মও হয় এই হাসপতালে। জীবন্ত নবজাতক দাফনের চেষ্টা করার ভিডিও ভাইরাল হলে বিষয়টি নজরে আসে প্রশাসনের এবং পুলিশ সুপারের নির্দেশে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) নবজাতককে কবরস্থানে নিয়ে আসা ওয়ার্ড বয় ফারুক গাজীকে গ্রেপ্তার করে।
এই ঘটনায় অজ্ঞাতনামা আসামি করে চাঁদপুর সদর মডেল থানায় মামলা করেন পৌর কবর স্থানের কেয়ারটেকার মো. শাহজাহান মিয়াজী।
এদিকে দি ইউনাইটেড হাসপাতালে এ ঘটনায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনাকালে সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট বাপ্পি দত্ত রনি বলেন, “হাসপাতালে এসে ব্যবস্থাপনায় জড়িত কাউকে পাওয়া যায়নি। তাদের সাথে ফোনে যোগাযোগ করেও কোন সাড়া মিলেনি। চিকিৎসক নেই, হাসপাতালের প্যাথলজি ও ওটির সঠিক পরিবেশ নেই। একই সাথে পোস্ট অপারেটিভ রোগীর জন্য কোন সুব্যবস্থা নেই এবং হাসপাতালের কাগজপত্রও নবায়ন নেই।”
তিনি আরো বলেন, “প্রাথমিকভাবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা এবং ওটি, প্যাথলজি ও সংশ্লিষ্ট কক্ষ সীলগালা করা হয়েছে। একই সাথে রোগীদেরকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অন্য স্থানে সেবার ব্যবস্থা করার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আমাদের অভিযানে পরিচালিত কার্যক্রম সিভিল সার্জন বরাবর প্রদান করা হবে। সিভিল সার্জন হাসপাতালের নিবন্ধন বাতিলসহ পরবর্তী ব্যবস্থা নিতে পারবেন।”
এ ভ্রাম্যমাণ আদালতে উপস্থিত ছিলেন চাঁদপুর সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. রফিকুল হাসান ফয়সাল, জেলা মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মু. মিজানুর রহমান। অভিযানে চাঁদপুর সদর মডেল থানা পুলিশ সহযোগিতা করেন।
অপরদিকে ভ্রাম্যমাণ আদালত শেষে হাসপাতালের ড্রাগ সনদসহ যাবতীয় কার্যক্রম পরীক্ষা করে দেখেন জেলা মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মু. মিজানুর রহমান।
ঢাকা/অমরেশ/এস