ব্যাংকঋণের সুদহার বেড়ে যাওয়ায় লোকসানের ধারা থেকে বের হতে পারছে না ইলেকট্রনিকস খাতের বহুজাতিক কোম্পানি সিঙ্গার বাংলাদেশ। চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে (জানুয়ারি-মার্চ) ৩৫ কোটি টাকা লোকসান করেছে কোম্পানিটি। গত বছরের একই সময়ে কোম্পানিটির লোকসানের পরিমাণ ছিল দুই কোটি টাকা। সেই হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে কোম্পানিটির লোকসান বেড়েছে ৩৩ কোটি টাকা। অথচ গত বছরের প্রথম তিন মাসের তুলনায় চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে সিঙ্গারের আয় ১৫৮ কোটি টাকা বা প্রায় ৪০ শতাংশ বেড়েছে।

সিঙ্গার বাংলাদেশ আজ রোববার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) মাধ্যমে তাদের চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকের (জানুয়ারি-মার্চ) আর্থিক তথ্য শেয়ারধারীদের জানিয়েছে। এর আগে গত বৃহস্পতিবার কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদের সভায় এই আর্থিক প্রতিবেদন অনুমোদন করা হয়।

আর্থিক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, গত জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিকে ৫৫৯ কোটি টাকার ব্যবসা বা আয় করেছে। এই আয় থেকে উৎপাদন, বিপণন ও প্রশাসনিক খরচ বাদ দেওয়ার পর কোম্পানিটির পরিচালন মুনাফা দাঁড়ায় সোয়া ১৭ কোটি টাকা। গত বছরের একই সময়ে কোম্পানিটি ৪০১ কোটি টাকার ব্যবসা করেছিল। উৎপাদন, বিপণন ও প্রশাসনিক খরচ বাদ দেওয়ার পর গত বছরের প্রথম তিন মাসে পরিচালন মুনাফা করেছিল ১৮ কোটি টাকা। পরিচালন মুনাফা প্রায় একই থাকার পরও চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিক শেষে বড় লোকসান করেছে কোম্পানিটি। এর বড় কারণ সুদ বাবদ কোম্পানিটির খরচ উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বেড়ে যাওয়া।

আর্থিক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে সিঙ্গারের সুদ বাবদ খরচ বেড়ে দাঁড়ায় ৪৭ কোটি টাকা। গত বছরের একই সময়ে এই খাতে কোম্পানিটির খরচ ছিল ১৮ কোটি টাকা। সেই হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে সুদ বাবদ সিঙ্গারের খরচ বেড়েছে ২৯ কোটি টাকা। তাতে পরিচালন মুনাফার পরও ৩৫ কোটি টাকা লোকসান গুনতে হয়েছে সিঙ্গারকে। অর্থাৎ আগের বছরের তুলনায় ভালো ব্যবসা করার পরও সিঙ্গারের মুনাফা খেয়ে ফেলেছে ব্যাংকের বাড়তি সুদ।

সিঙ্গারের গত কয়েক প্রান্তিকের আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা যায়, গত বছরের প্রথম প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ) লোকসান করলেও দ্বিতীয় প্রান্তিকে (এপ্রিল-জুন) এসে মুনাফায় ফেরে কোম্পানিটি। এরপর তৃতীয় প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) এসে কোম্পানিটি আবারও লোকসানের ধারায় ফিরে যায়। সব মিলিয়ে গত বছর শেষে সিঙ্গার বাংলাদেশ ৪৭ কোটি টাকা লোকসান করেছে। যদিও ২০২৩ সালে সিঙ্গার মুনাফা করেছিল ৫০ কোটি টাকার বেশি।

গত বছরটি লোকসানে শেষ করার পর চলতি বছরটিও লোকসান দিয়ে শুরু করেছে সিঙ্গার। লোকসানের এই খবরে আজ ঢাকার শেয়ারবাজারে কোম্পানিটির শেয়ারের দাম ৯০ পয়সা কমে নেমে এসেছে ১০৮ টাকায়। দিন শেষে হাতবদল হয়েছে কোম্পানিটির ৫৫ হাজার শেয়ার। সিঙ্গার শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত পুরোনো কোম্পানিগুলোর একটি। ১৯৮৩ সালে এটি শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। সর্বশেষ গত বছর লোকসান করলেও কোম্পানিটি শেয়ারধারীদের জন্য প্রতি শেয়ারের বিপরীতে ১০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দেয়। এটি শেয়ারবাজারে ‘এ’ শ্রেণিভুক্ত কোম্পানি।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: বছর র প রথম ত ন ম স শ য় রব জ র গত বছর র খরচ ব

এছাড়াও পড়ুন:

আজও আছে পরতে পরতে সৌন্দর্য

কারুকার্যখচিত বিশাল ভবন। দেয়ালের পরতে পরতে মনোহর সৌন্দর্য। মনোরম পরিবেশে ভবনের চারপাশে দাঁড়িয়ে সুন্দরী পরীর আবক্ষ মূর্তি। ছবির মতো সাজানো ‘পাকুটিয়া জমিদারবাড়ি’ এখন কালের সাক্ষী।

মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া থেকে ১২ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে টাঙ্গাইলের নাগরপুরের কলমাই নদীতীরে ১৫ একর জমিতে জমিদারবাড়িটি। ঢুকতেই চোখে পড়ে পুরোনো মন্দির। লোকমুখে প্রচলিত, শরতের দিনে দেবী দুর্গার প্রতিমা তৈরিতে এখানে ব্যস্ত থাকতেন ভারতবর্ষের নামকরা কারিগররা। কালের বিবর্তনে স্থানটি এখন নির্জন। নেই আগের গৌরব-আভিজাত্যের ছাপ, এমনকি প্রতিমা তৈরির ব্যস্ততাও।

মন্দির ঘুরে দেখা যায়, এর কোথাও কোথাও ইট খসে পড়েছে। পুরোনো দিনের নকশা হারাচ্ছে তার সৌন্দর্য। মন্দিরের পেছনে বিশাল তিনটি মহল, যা সেকালে তিন তরফ নামে পরিচিত ছিল। মহলগুলোর আলাদা কোনো নাম পাওয়া যায়নি। সবচেয়ে বড় মহলে বর্তমান পাকুটিয়া বিসিআরজি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ পরিচালিত হচ্ছে।

দোতলা ভবনের নির্মাণশৈলী মুগ্ধ করবে সবাইকে। যদিও সংস্কারের অভাবে ভবনটিতে ফাটল দেখা দিয়েছে। পাশেই অপূর্ব লতাপাতার কারুকার্যখচিত বিশাল আরেকটি ভবন, যার মাথায় ময়ূরের মূর্তি। এ ছাড়া কিছু নারী মূর্তিরও দেখা মেলে। জমিদার আমলের টিনের চৌচালা ঘরে অস্থায়ীভাবে সরকারি তহশিল অফিস স্থানান্তর হলেও, সেটি এখন স্থায়িত্ব পেয়েছে।

লতাপতায় আচ্ছন্ন ভবনের একাংশ বর্তমানে উপস্বাস্থ্যকেন্দ্র এবং আরেকাংশে একটি বেসরকারি দাতব্য সেবা সংস্থা কার্যক্রম চালাচ্ছে। ভবনটির পিলারের মাথায় এবং দেয়ালেও অসাধারণ নকশা মুগ্ধ করে।

দোতল আরেকটি মহল, যার সামনে বিশাল শান বাঁধানো সিঁড়ি। অন্য সব ভবনের সঙ্গে এটির নকশার যথেষ্ট মিল খুঁজে পাওয়া যায়। ভবনটির বারান্দা ও পুরোনো কাঠের দরজা সৌন্দর্য বাড়িয়ে তুলেছে কয়েক গুণ। ভবনটির মাথায় ময়ূরের সঙ্গে দুই পাশে দুই নারী মূর্তির দেখা মেলে। সিঁড়ি বেয়ে ছাদে গেলে গাছগাছালির সবুজে ঘেরা পুরো জমিদারবাড়ির সৌন্দর্য বিমোহিত করতে বাধ্য। যদিও ভবনের ভিন্ন অংশ খসে পড়ছে, হারাচ্ছে রূপ-লাবণ্য।

জমিদারবাড়ির পেছনে রয়েছে দীঘি ও দুটি পরিত্যক্ত কূপ। এ ছাড়া জমিদারবাড়ির বিশাল মাঠের এক কোণে নাটমন্দির। জানা যায়, নাগরপুরের সঙ্গে কলকাতার একটি বাণিজ্যিক ও সাংস্কৃতিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এর পরিপ্রেক্ষিতে পশ্চিমবঙ্গের কলকাতা থেকে আসেন ধনাঢ্য ব্যক্তি রামকৃষ্ণ সাহা মণ্ডল। তিনিই ঊনবিংশ শতাব্দীর শুরুতে ব্রিটিশদের কাছ থেকে বিপুল অর্থের বিনিময়ে জমি কিনে জমিদারি শুরু করেন।

রামকৃষ্ণ সাহার দুই ছেলে বৃন্দাবন ও রাধাগোবিন্দ। রাধা নিঃসন্তান। তবে বৃন্দাবনের তিন ছেলে– ব্রজেন্দ্র মোহন, উপেন্দ্র মোহন ও যোগেন্দ্র মোহন দীর্ঘকাল রাজত্ব করেন। এভাবে পাকুটিয়া জমিদারবাড়ি তিন ভাইয়ের তরফে বিভক্ত থাকলেও, জমিদাররা সবাই ছিলেন প্রজানন্দিত। বৃন্দাবনের মেজ ছেলে উপেন্দ্রকে কাকা রাধাগোবিন্দ দত্তক নেন। ফলে উপেন্দ্র কাকার জমিদারির পুরো সম্পত্তি লাভ করেন।

দৃষ্টিনন্দন পাকুটিয়া জমিদারবাড়িতে প্রতিনিয়ত পর্যটকের ভিড় বাড়ছে। ইতিহাসের সাক্ষী বাড়িটি সংস্কার না হওয়ায় একদিকে যেমন সৌন্দর্য হারাচ্ছে, অন্যদিকে তরুণ প্রজন্মের কাছে অজানা থেকে যাচ্ছে ইতিহাস। জমিদারবাড়িটি পুরাকীর্তি হিসেবে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের অধীনে নিয়ে সংস্কার ও সংরক্ষণের দাবি জোরালো হচ্ছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ