গাজা নগরীতে দুই দিনে দেড় শতাধিক হামলা ইসরায়েলের
Published: 17th, September 2025 GMT
ফিলিস্তিনের গাজা নগরীতে স্থল অভিযান শুরুর পর সেখানে প্রচণ্ড হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েল। জল, স্থল ও আকাশ—তিন পথেই গাজা উপত্যকার সবচেয়ে বড় এ শহর এলাকায় হামলা হচ্ছে। এমন নৃশংসতার মধ্যে প্রাণ বাঁচাতে গাজা নগরী ছেড়ে পালাচ্ছেন বাসিন্দারা। তাঁদের জন্য সাময়িক একটি পথ খুলে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী।
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়, এমনকি নিজেদের সেনাপ্রধান ইয়াল জমিরের আপত্তির পরও গতকাল মঙ্গলবার গাজা নগরীতে স্থল অভিযান শুরুর ঘোষণা দেয় ইসরায়েল। এ অভিযান নিয়ে এক মাসের বেশি সময় ধরে হুমকি দিয়ে আসছিল তারা। ইসরায়েলের দাবি, গাজায় দুই থেকে তিন হাজার হামাস সদস্য রয়েছেন। তাঁদের নির্মূল করতেই এ অভিযান শুরু করা হয়েছে।
ইসরায়েলের অভিযান শুরুর ঘোষণার আগেই সোমবার রাত থেকে গাজা নগরীতে ইসরায়েলের সেনাসদস্য ও ট্যাংক প্রবেশ শুরু করে। আজ বুধবার অভিযানের দ্বিতীয় দিনে সেখানে হাজার হাজার সেনাসদস্যের উপস্থিতি দেখা যায়। ইসরায়েলি বাহিনী জানিয়েছে, মঙ্গলবার থেকে দুই দিনে শহরটিতে দেড় শতাধিকবার বিমান ও কামান হামলা চালানো হয়েছে।
আজ সকালে গাজার হাসপাতালগুলোর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, আগের রাতে উপত্যকার বিভিন্ন স্থানে ইসরায়েলের হামলায় অন্তত ১৬ জন নিহত হয়েছেন। তাঁদের বেশির ভাগই গাজা নগরীর। এর মধ্যে নগরীর শাতি শরণার্থীশিবিরে এক শিশু ও তার মা রয়েছেন। পরে সন্ধ্যা নাগাদ হাসপাতাল থেকে জানানো হয়, এদিন গাজা নগরীতে ৩৮ জনসহ উপত্যকাটিতে অন্তত ৫০ জন নিহত হয়েছেন।
ইসরায়েলের এমন নৃশংসতার মুখে গাজা নগরীর বাসিন্দা হামদি আবু তাবক বলেন, ‘সব সময় বোমাবর্ষণ চলছেই। নিরাপদ কোনো জায়গা নেই। আমরা তো সাধারণ মানুষ। রাজনীতি নিয়ে আমাদের মাথাব্যথা নেই। আমরা চাই সন্তানেরা যেন পড়াশোনা করতে পারে। তবে দুই বছর ধরে তারা স্কুলের বাইরে। বিশ্ববাসীর কাছে আহ্বান জানাই, আমাদের পাশে দাঁড়ান। নিষ্ঠুর এই যুদ্ধ বন্ধ করুন।’
এদিকে ২০২৩ সালের অক্টোবরে শুরু হওয়া গাজায় অভিযান–সংক্রান্ত ইসরায়েলের কিছু নথি হাতে এসেছে আল–জাজিরার। তাতে দেখা গেছে, চলমান অভিযানের সমুদ্রতীরবর্তী কিছু এলাকা ছাড়া পুরো উপত্যকাটির নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে ইসরায়েল সরকারের। এরই মধ্যে সংঘাতের প্রায় দুই বছরে গাজায় প্রায় ৬৫ হাজার ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে ইসরায়েলি বাহিনী।
সাময়িক পথ চালুর ঘোষণা ইসরায়েলেরজাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, গত আগস্টে গাজা নগরী ও এর আশপাশের এলাকায় কমবেশি ১০ লাখ ফিলিস্তিনির বসবাস ছিল। স্থল অভিযান শুরুর আগে থেকেই সেখান থেকে বাসিন্দাদের সরে যাওয়ার নির্দেশ দিয়ে আসছিল ইসরায়েলি বাহিনী। এমন নির্দেশনা পেয়ে প্রাণ বাঁচাতে বিগত দিনগুলোতে গাজা নগরী ও আশপাশের এলাকা থেকে সাড়ে তিন লাখ মানুষ পালিয়েছেন।
স্থল অভিযান শুরুর পর আজও হাজার হাজার ফিলিস্তিনিকে গাজা নগরী ছেড়ে দক্ষিণে আল–মাওয়াসি এলাকার দিকে পালাতে দেখা গেছে। এ এলাকাকে নিরাপদ বলে ঘোষণা দিয়েছিল ইসরায়েল। এরপরও সেখানে হামলা চালানো হয়েছে। গাজার আল–নাসের হাসপাতালের একটি সূত্র আল–জাজিরাকে জানিয়েছে, আল–মাওয়াসিতে একটি তাঁবুতে হামলা হলে মারা যান অন্তত পাঁচজন।
তবু কোনো উপায় না পেয়ে আল–মাওয়াসির দিকে যাচ্ছিলেন ৬৩ বছর বয়সী এক ফিলিস্তিনি। ইসরায়েলের নৃশংসতার মুখে এ নিয়ে সপ্তমবার বাস্তুচ্যুত হলেন তিনি। এই বৃদ্ধ বলেন, ‘আমি আমার সন্তান ও নাতি–নাতনিদের নিয়ে খুবই ভয়ের মধ্যে আছি। আমার সঙ্গে শুধু একটি কম্বল আছে। ২৫ কিলোমিটারের দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে হবে। তাই অন্য কিছু নিতে পারিনি।’
এদিকে গাজা নগরী থেকে বাসিন্দাদের পালানোর জন্য একটি সাময়িক পথ খুলে দেওয়া ঘোষণা দিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। বাহিনীর মুখপাত্র কর্নেল আভিচে আদ্রি বলেন, আজ দিনের মধ্য সময় থেকে মাত্র ৪৮ ঘণ্টার জন্য পথটি খোলা থাকবে। এখন পর্যন্ত গাজার উপকূলবর্তী একটি পথ দিয়ে উত্তর থেকে দক্ষিণে যাচ্ছিলেন ফিলিস্তিনিরা।
ইসরায়েলের স্থল অভিযানের মুখে গাজা নগরী থেকে দক্ষিণ দিকে পালাচ্ছেন ফিলিস্তিনিরা। আজ বুধবার গাজার মধ্যাঞ্চলে.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
তথ্য উপদেষ্টার সঙ্গে বাংলাদেশ সেক্রেটারিয়েট রিপোর্টার্স ফোরামের সাক্ষাৎ
তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মো. মাহফুজ আলমের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন বাংলাদেশ সেক্রেটারিয়েট রিপোর্টার্স ফোরামের (বিএসআরএফ) কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্যবৃন্দ।
রবিবার (২ নভেম্বর) বিকেলে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সভা কক্ষে এ সাক্ষাৎ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
আরো পড়ুন:
‘সাংস্কৃতিক জাগরণেই মুক্তি’
‘নো ওয়েজ বোর্ড, নো মিডিয়া’সহ ৩৮ দাবি সংবাদকর্মীদের
সাক্ষাৎকালে বিএসআরএফের সভাপতি মাসউদুল হক জানান, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সচিবালয় বিটে কর্মরত অ্যাক্রিডিটেশন কার্ডধারী সাংবাদিকদের সচিবালয়ের ক্লিনিকে স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ২০২৪ সালের ২২ ডিসেম্বর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগে পত্র পাঠানো হলেও এখনো তা বাস্তবায়িত হয়নি।
তিনি অ্যাক্রিডিটেশন কার্ডধারী সাংবাদিকদের জন্য সচিবালয়ের ক্লিনিকে স্বাস্থ্যসেবা চালুর বিষয়ে তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টার সহযোগিতা কামনা করেন। এছাড়া সচিবালয়ের ১ নম্বর গেটের পাশাপাশি ৫ নম্বর গেট দিয়েও অ্যাক্রিডিটেশন কার্ডধারী সাংবাদিকদের সচিবালয়ে প্রবেশের ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য তিনি উপদেষ্টাকে অনুরোধ জানান।
এ সময় তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা বিএসআরএফের সভাপতির প্রস্তাব আন্তরিকভাবে বিবেচনা করার আশ্বাস দেন।
সাক্ষাৎকালে বিএসআরএফের সহ-সভাপতি মাইনুল হোসেন পিন্নু, সাধারণ সম্পাদক উবায়দুল্লাহ বাদলসহ কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্যবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
ঢাকা/এএএম/মেহেদী