ফিলিস্তিনের গাজা নগরীতে স্থল অভিযান শুরুর পর সেখানে প্রচণ্ড হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েল। জল, স্থল ও আকাশ—তিন পথেই গাজা উপত্যকার সবচেয়ে বড় এ শহর এলাকায় হামলা হচ্ছে। এমন নৃশংসতার মধ্যে প্রাণ বাঁচাতে গাজা নগরী ছেড়ে পালাচ্ছেন বাসিন্দারা। তাঁদের জন্য সাময়িক একটি পথ খুলে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী।

আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়, এমনকি নিজেদের সেনাপ্রধান ইয়াল জমিরের আপত্তির পরও গতকাল মঙ্গলবার গাজা নগরীতে স্থল অভিযান শুরুর ঘোষণা দেয় ইসরায়েল। এ অভিযান নিয়ে এক মাসের বেশি সময় ধরে হুমকি দিয়ে আসছিল তারা। ইসরায়েলের দাবি, গাজায় দুই থেকে তিন হাজার হামাস সদস্য রয়েছেন। তাঁদের নির্মূল করতেই এ অভিযান শুরু করা হয়েছে।

ইসরায়েলের অভিযান শুরুর ঘোষণার আগেই সোমবার রাত থেকে গাজা নগরীতে ইসরায়েলের সেনাসদস্য ও ট্যাংক প্রবেশ শুরু করে। আজ বুধবার অভিযানের দ্বিতীয় দিনে সেখানে হাজার হাজার সেনাসদস্যের উপস্থিতি দেখা যায়। ইসরায়েলি বাহিনী জানিয়েছে, মঙ্গলবার থেকে দুই দিনে শহরটিতে দেড় শতাধিকবার বিমান ও কামান হামলা চালানো হয়েছে।

আজ সকালে গাজার হাসপাতালগুলোর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, আগের রাতে উপত্যকার বিভিন্ন স্থানে ইসরায়েলের হামলায় অন্তত ১৬ জন নিহত হয়েছেন। তাঁদের বেশির ভাগই গাজা নগরীর। এর মধ্যে নগরীর শাতি শরণার্থীশিবিরে এক শিশু ও তার মা রয়েছেন। পরে সন্ধ্যা নাগাদ হাসপাতাল থেকে জানানো হয়, এদিন গাজা নগরীতে ৩৮ জনসহ উপত্যকাটিতে অন্তত ৫০ জন নিহত হয়েছেন।

ইসরায়েলের এমন নৃশংসতার মুখে গাজা নগরীর বাসিন্দা হামদি আবু তাবক বলেন, ‘সব সময় বোমাবর্ষণ চলছেই। নিরাপদ কোনো জায়গা নেই। আমরা তো সাধারণ মানুষ। রাজনীতি নিয়ে আমাদের মাথাব্যথা নেই। আমরা চাই সন্তানেরা যেন পড়াশোনা করতে পারে। তবে দুই বছর ধরে তারা স্কুলের বাইরে। বিশ্ববাসীর কাছে আহ্বান জানাই, আমাদের পাশে দাঁড়ান। নিষ্ঠুর এই যুদ্ধ বন্ধ করুন।’

এদিকে ২০২৩ সালের অক্টোবরে শুরু হওয়া গাজায় অভিযান–সংক্রান্ত ইসরায়েলের কিছু নথি হাতে এসেছে আল–জাজিরার। তাতে দেখা গেছে, চলমান অভিযানের সমুদ্রতীরবর্তী কিছু এলাকা ছাড়া পুরো উপত্যকাটির নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে ইসরায়েল সরকারের। এরই মধ্যে সংঘাতের প্রায় দুই বছরে গাজায় প্রায় ৬৫ হাজার ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে ইসরায়েলি বাহিনী।

সাময়িক পথ চালুর ঘোষণা ইসরায়েলের

জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, গত আগস্টে গাজা নগরী ও এর আশপাশের এলাকায় কমবেশি ১০ লাখ ফিলিস্তিনির বসবাস ছিল। স্থল অভিযান শুরুর আগে থেকেই সেখান থেকে বাসিন্দাদের সরে যাওয়ার নির্দেশ দিয়ে আসছিল ইসরায়েলি বাহিনী। এমন নির্দেশনা পেয়ে প্রাণ বাঁচাতে বিগত দিনগুলোতে গাজা নগরী ও আশপাশের এলাকা থেকে সাড়ে তিন লাখ মানুষ পালিয়েছেন।

স্থল অভিযান শুরুর পর আজও হাজার হাজার ফিলিস্তিনিকে গাজা নগরী ছেড়ে দক্ষিণে আল–মাওয়াসি এলাকার দিকে পালাতে দেখা গেছে। এ এলাকাকে নিরাপদ বলে ঘোষণা দিয়েছিল ইসরায়েল। এরপরও সেখানে হামলা চালানো হয়েছে। গাজার আল–নাসের হাসপাতালের একটি সূত্র আল–জাজিরাকে জানিয়েছে, আল–মাওয়াসিতে একটি তাঁবুতে হামলা হলে মারা যান অন্তত পাঁচজন।

তবু কোনো উপায় না পেয়ে আল–মাওয়াসির দিকে যাচ্ছিলেন ৬৩ বছর বয়সী এক ফিলিস্তিনি। ইসরায়েলের নৃশংসতার মুখে এ নিয়ে সপ্তমবার বাস্তুচ্যুত হলেন তিনি। এই বৃদ্ধ বলেন, ‘আমি আমার সন্তান ও নাতি–নাতনিদের নিয়ে খুবই ভয়ের মধ্যে আছি। আমার সঙ্গে শুধু একটি কম্বল আছে। ২৫ কিলোমিটারের দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে হবে। তাই অন্য কিছু নিতে পারিনি।’

এদিকে গাজা নগরী থেকে বাসিন্দাদের পালানোর জন্য একটি সাময়িক পথ খুলে দেওয়া ঘোষণা দিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। বাহিনীর মুখপাত্র কর্নেল আভিচে আদ্রি বলেন, আজ দিনের মধ্য সময় থেকে মাত্র ৪৮ ঘণ্টার জন্য পথটি খোলা থাকবে। এখন পর্যন্ত গাজার উপকূলবর্তী একটি পথ দিয়ে উত্তর থেকে দক্ষিণে যাচ্ছিলেন ফিলিস্তিনিরা।

ইসরায়েলের স্থল অভিযানের মুখে গাজা নগরী থেকে দক্ষিণ দিকে পালাচ্ছেন ফিলিস্তিনিরা। আজ বুধবার গাজার মধ্যাঞ্চলে.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ইসর য় ল র নগর ত

এছাড়াও পড়ুন:

আফ্রিদির অলরাউন্ড নৈপুণ্যে আমিরাতকে হারিয়ে সুপার ফোরে পাকিস্তান

বিকেলে ছিল ম্যাচ হবে কি না অনিশ্চয়তা। নানা নাটকীয়তার পর অনিশ্চয়তা কেটে ম্যাচ শুরু হলো এক ঘণ্টা দেরিতে। তবে বিলম্বিত ম্যাচে আর খুব বেশি অনিশ্চয়তা–নাটকীয়তার দেখা মিলল না। দুবাইয়ে ফেবারিট হিসেবে মাঠে নেমে সংযুক্ত আরব আমিরাতকে ৪১ রানে হারিয়েছে পাকিস্তান।

এই জয়ে এশিয়া কাপের সুপার ফোরে জায়গা করেছে সালমান আগার দল। ‘এ’ গ্রুপ থেকে সেরা চারে জায়গা করেছে ভারতও। যার অর্থ, ২১ সেপ্টেম্বর আবারও মুখোমুখি হতে চলেছে ভারত–পাকিস্তান।

গতকাল দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামের পাকিস্তান–আরব আমিরাত ম্যাচ নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছিল ১৪ সেপ্টেম্বরের ভারত–পাকিস্তান গ্রুপ ম্যাচের ঘটনার জেরে। সেদিন ভারতের খেলোয়াড়েরা পাকিস্তানের খেলোয়াড়দের সঙ্গে ম্যাচের শুরু ও শেষে হাত না মেলানোয় ম্যাচ রেফারি অ্যান্ডি পাইক্রফটের ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করে পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (পিসিবি)।

পাইক্রফট টসের সময় অধিনায়ককে হাত না মেলানোর পরামর্শ দিয়ে নিয়ম লঙ্ঘন করেছেন অভিযোগ তুলে তাঁর অপসারণ চেয়ে রীতিমতো এশিয়া কাপ বর্জনের আবহ তৈরি করে পিসিবি।

শেষ পর্যন্ত পাইক্রফটের ক্ষমা প্রার্থনায় গতকাল তাঁর পরিচালনায় আরব আমিরাতের বিপক্ষে মাঠে নামে পাকিস্তান। তবে খেলতে নামার সিদ্ধান্ত নিতে আলোচনার জন্য এক ঘণ্টা পিছিয়ে দেওয়া হয় ম্যাচ শুরুর সময়।

আরও পড়ুনপাকিস্তান অধিনায়কের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন ম্যাচ রেফারি পাইক্রফট, দাবি পিসিবির৬ ঘণ্টা আগে

দেরিতে শুরু হওয়া ম্যাচে আমিরাত অধিনায়ক টসে জিতে পাকিস্তানকে ব্যাটিংয়ে পাঠান। ফখর জামানের ৩৬ বলে ৫০ আর শেষ দিকে শাহিন আফ্রিদির ১৪ বলে ২৯ রানের অপরাজিত ইনিংসে ভর করে পাকিস্তান করে ২০ ওভারে ৯ উইকেটে ১৪৬। মূলত আফ্রিদির শেষ দিকের ঝোড়ো ব্যাটিংই পাকিস্তানের রান দেড় শর কাছাকাছি নিয়ে যায়।

নানা নাটকীয়তার পর অ্যান্ডি পাইক্রফটই পাকিস্তান–আমিরাত ম্যাচে রেফারির দায়িত্বে ছিলেন

সম্পর্কিত নিবন্ধ