রেলের সাবেক ডিজি তৌহিদুলসহ ৭ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা
Published: 17th, September 2025 GMT
বাংলাদেশের রেল অবকাঠামো ও প্রযুক্তিতে অনুপযোগী এবং অকার্যকর ডেমু ট্রেন ক্রয় করে রাষ্ট্রের ৫৯৮ কোটি ৮৪ লাখ ১৭ হাজার টাকা ক্ষতি করেছেন বাংলাদেশ রেলওয়ের সাবেক মহাপরিচালক মো. তোহিদুল আনোয়ার চৌধুরীসহ সাত কর্মকর্তা। নিজেরা আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার জন্য রাষ্ট্রীয় অর্থের অপব্যবহার করেছেন। তারা সঠিক সম্ভাব্যতা সমীক্ষা না করেই ডেমু ট্রেন ক্রয় প্রকল্পের অনুমোদন দেন।
দুর্নীতি দমন কমিশনের অনুসন্ধান শেষে তাদের বিরুদ্ধে এমন তথ্য প্রমাণ মিলেছে। ফলে, রেলওয়ের সাবেক মহাপরিচালক মো.
আরো পড়ুন:
৩৬৩ কোটি টাকা হাতিয়েছে এস আলম ও নাবিল গ্রুপ
লক্ষ্মীপুরে মামলায় জড়ানোর প্রতিবাদ ভুক্তভোগী পরিবারের
মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) দুদকের ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে সংস্থাটির সহকারী পরিচালক রাজু আহমেদ বাদী হয়ে এ মামলা দায়ের করেন। বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) দুদকের মহাপরিচালক আক্তার হোসেন এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, “সরকারি দায়িত্ব পালনকালে ডেমু ট্রেন ক্রয় প্রকল্পের আবশ্যিক সম্ভাব্যতা সমীক্ষা ও বাস্তবায়নযোগ্যতা যথাযথভাবে যাচাই না করে এবং রাষ্ট্রীয় অর্থের ব্যবস্থাপনা ও যথার্থ ব্যয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত হয়ে আসামিগণ পরস্পর যোগসাজশে নিজে লাভবান ও অন্যকে লাভবান করার হীন উদ্দেশ্যে প্রতারণা ও জাল-জালিয়াতির আশ্রয়ে অপরাধজনক বিশ্বাসভঙ্গ করে অকার্যকর, লোকসানি এবং বাংলাদেশের রেল অবকাঠামো, প্রযুক্তি ও পরিবেশে অনুপযোগী ডেমু ট্রেন ক্রয় প্রকল্পের অনুমোদন গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করে রাষ্ট্রের ৫৯৮ কোটি ৮৪ লাখ ১৭ হাজার টাকার ক্ষতি করেছেন। যা দন্ডবিধির ৪০৯/৪২০/৪৬৭/৪৬৮/৪৭১/১০৯ এবং তৎসহ ১৯৪৭ সনের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ।”
মামলার আসামিরা হলেন, বাংলাদেশ রেলওয়ের সাবেক মহাপরিচালক মো. তোহিদুল আনোয়ার চৌধুরী, প্রকল্প পরিচালক ও সাবেক প্রধান যান্ত্রিক প্রকৌশলী (উন্নয়ন) মো. ইফতিখার হোসেন, সাবেক প্রধান যান্ত্রিক প্রকৌশলী (পূর্ব) মো. আক্তারুজ্জামান হায়দার, পরিকল্পনা বিভাগের সাবেক উপসচিব বেনজামিন হেমক্রম, রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সাবেক উপপ্রধান অঞ্জন কুমার বিশ্বাস, মন্ত্রণালয়ের সাবেক উপ-সচিব আশরাফুজ্জামান এবং বাস্তবায়ন, নিরীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের সাবেক উপ-পরিচালক মো. মুমিতুর রহমান।
এজাহারে বলা হয়েছে, দুর্নীতি দমন কমিশন প্রধান কার্যালয় ঢাকার এনফোর্সমেন্ট ইউনিট রেলভবনে একটি অভিযান পরিচালনা করে। উক্ত অভিযোগের ডেমু ট্রেন ক্রয় প্রকল্প অংশের প্রকল্প সমাপ্তি প্রতিবেদন, অডিট আপত্তি, স্পেসিফিকেশন, চুক্তিসহ অন্যান্য রেকর্ডপত্র সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করে দেখা যায় যে, বাংলাদেশ রেলওয়ে, সংগ্রহ শাখা, রেলভবনের নথি নং-প্রকিউরমেন্ট/৪০/২০-এমজি/ডেমু/২০১১ অনুযায়ী ২০ সেট ডেমু (DEMU-MG Diesel Electric Multiple Unit) ট্রেন ক্রয়ের দর প্রস্তাব সিসিজিপি কর্তৃক ১১/০৭/২০১১ তারিখে অনুমোদন করা হয়। উক্ত প্রকল্পে M/S Tangshan Railway Vehicle Co. Ltd. China কে কার্যাদেশ প্রদান করা হয়।
পূর্ব অভিজ্ঞতাহীন অত্যাধুনিক প্রযুক্তিসম্পন্ন ডেমু সংগ্রহ প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই এর আবশ্যিকতা থাকলেও বাংলাদেশের রেল অবকাঠামো, পরিবেশ, প্রযুক্তি ও আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটের বিপরীতে ডেমু ট্রেনের সম্ভাব্যতা সমীক্ষা/বাস্তবায়নযোগ্যতা (কারিগরী ও আর্থিক) যথাযথভাবে যাচাই করা হয়নি। প্রকল্পের প্রাক্কালে রেলপথ মন্ত্রণালয়, প্রশাসন-১ শাখার এর নং-৫৪.০০.০০০০.০০৭.২৫.০৬৬.১২-২০৫৩, তারিখ: ০৩/০৯/২০১২ খ্রি. মূলে বাংলাদেশের অবকাঠামোগত প্রেক্ষাপটে ডেমু ট্রেনের কার্যকারিতা ও উপযোগিতা পর্যবেক্ষণের নিমিত্ত বিস্তারিত নকশা চূড়ান্তকরণ, মেরামত ও কমিশনিং বিষয়ে আলোচনার জন্য বাংলাদেশ রেলওয়ে, রেলপথ মন্ত্রণালয় ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় হতে আসামি (৩) মো. আক্তারুজ্জামান হায়দার, (৪) বেনজামিন হেমক্রম, (৫) অঞ্জন কুমার বিশ্বাস (৬) আশরাফুজ্জামান ও (৭) মো: মুমিতুর রহমান চীন ভ্রমণ করেন।
কিন্তু চীন ভ্রমণ পরবর্তীতে তারা বাংলাদেশ এর আবহাওয়া, রেলওয়ে অবকাঠামো ও প্রযুক্তিগত অবস্থার বিপরীতে ডেমু ট্রেনের অনুপযোগিতা ও অকার্যকারিতা সম্পর্কে সঠিক তথ্য প্রদান করেননি এবং মিথ্যা তথ্য প্রদান করে উক্ত লোকসানি ও আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটে ক্ষতিকর প্রকল্প গ্রহণে প্রতারণা, জালিয়াতি ও অপরাধজনক বিশ্বাসভঙ্গ করেছেন মর্মে রেকর্ডপত্র বিশ্লেষণে প্রতীয়মান হয়েছে। ফলে ডেমু ট্রেনের কোচে প্রয়োজনীয় সংখ্যক প্রশস্ত জানালার অপ্রতুলতা, বারবার ট্রেনের লোকোমোটিভ বিকল হয়ে যাওয়া ও স্পেসিফিকেশনে টয়লেট গ্লাসের বিবরণ দেওয়া থাকলেও পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা না থাকায় যাত্রীদের অসুস্থতার ঝুঁকি, ভোগান্তিসহ রাষ্ট্রের আর্থিক ক্ষতি হয়েছে।
এতদ্ব্যতীত, ক্রয় চুক্তিতে প্রযুক্তি হস্থান্তর, পরিচালন সফটওয়্যার, মডিউল, ওয়ারেন্টিসহ প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশ প্রভৃতি সংস্থানের বিষয়ে কোনো সুস্পষ্ট শর্ত উল্লেখ না থাকায় ডেমু ট্রেনের যন্ত্রাংশ ও লোকোমোটিভ বারংবার অকেজো বা নষ্ট হয়েছে। যেখানে ডেমু ট্রেন সচল রাখার জন্য পরবর্তীতে গৃহীত মেরামতকাজে অতিরিক্ত প্রায় ২ কোটি ৯০ লাখ ২৩ হাজার ৭৩০ কোটি টাকা ব্যয় করা হলেও উপযোগী ও সচল রাখা সম্ভব হয়নি মর্মে রেকর্ডপত্র পর্যালোচনায় প্রতিভাত হয়েছে।
এক্ষেত্রে ডেমু ট্রেন ক্রয় প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাগণ বাংলাদেশ এর রেল অবকাঠামো ও প্রযুক্তিগত অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে ডেমু ট্রেনের অকার্যকারিতা ও অনুপযোগিতাসহ রাষ্ট্রীয় অর্থের সম্ভাব্য অপব্যয় এর তথ্য প্রতারণা ও জাল-জালিয়াতির আশ্রয়ে গোপন ও মিথ্যা তথ্য প্রদান করে প্রকল্পটিকে লাভজনক ও উপযোগী হিসেবে উপস্থাপন করা হয়। ফলে প্রকল্প বাস্তবায়নের পর ডেমু ট্রেন ক্রয় প্রকল্পটি আর্থিক ও অর্থনৈতিক উভয় ক্ষেত্রে অপরিকল্পিত, অনুপযোগী, লোকসানি, অকার্যকর এবং রাষ্ট্রীয় অর্থের অপব্যয় হয়েছে মর্মে প্রতীয়মান হয়।
বর্ণিত আসামিগণ পরস্পর যোগসাজশে নিজে লাভবান ও অন্যকে লাভবান করার হীন উদ্দেশ্যে প্রতারণা ও অপরাধজনক বিশ্বাসভঙ্গ করে জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে আবশ্যিক সম্ভাব্যতা সমীক্ষা সম্পাদন না করে ও অরিজিনাল ইকুইপমেন্ট মেনুফ্যাকচারিং (ওইএম) দেশ ও প্রতিষ্ঠান পরিভ্রমণ ও পরিদর্শনপূর্বক রাষ্ট্রীয় অর্থের ক্ষতিসাধন জেনেও বাংলাদেশের অবকাঠামোগত-পরিবেশগত ও আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটের সহিত অসামঞ্জস্যপূর্ণ, অকার্যকর, অনুপযোগী ও লোকসানি ডেমু ট্রেন ক্রয় প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়নের মাধ্যমে রাষ্ট্রের ৫৯৮ কোটি ৮৪ লাখ ১৭ হাজার টাকার ক্ষতি করার অপরাধ করা হয়েছে।
ঢাকা/নঈমুদ্দীন/মেহেদী
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র ষ ট র য় অর থ র র র ল অবক ঠ ম ল দ শ র লওয় প রকল প র কর মকর ত কর ছ ন ও আর থ আর থ ক অপর ধ
এছাড়াও পড়ুন:
আফ্রিদির অলরাউন্ড নৈপুণ্যে আমিরাতকে হারিয়ে সুপার ফোরে পাকিস্তান
বিকেলে ছিল ম্যাচ হবে কি না অনিশ্চয়তা। নানা নাটকীয়তার পর অনিশ্চয়তা কেটে ম্যাচ শুরু হলো এক ঘণ্টা দেরিতে। তবে বিলম্বিত ম্যাচে আর খুব বেশি অনিশ্চয়তা–নাটকীয়তার দেখা মিলল না। দুবাইয়ে ফেবারিট হিসেবে মাঠে নেমে সংযুক্ত আরব আমিরাতকে ৪১ রানে হারিয়েছে পাকিস্তান।
এই জয়ে এশিয়া কাপের সুপার ফোরে জায়গা করেছে সালমান আগার দল। ‘এ’ গ্রুপ থেকে সেরা চারে জায়গা করেছে ভারতও। যার অর্থ, ২১ সেপ্টেম্বর আবারও মুখোমুখি হতে চলেছে ভারত–পাকিস্তান।
গতকাল দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামের পাকিস্তান–আরব আমিরাত ম্যাচ নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছিল ১৪ সেপ্টেম্বরের ভারত–পাকিস্তান গ্রুপ ম্যাচের ঘটনার জেরে। সেদিন ভারতের খেলোয়াড়েরা পাকিস্তানের খেলোয়াড়দের সঙ্গে ম্যাচের শুরু ও শেষে হাত না মেলানোয় ম্যাচ রেফারি অ্যান্ডি পাইক্রফটের ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করে পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (পিসিবি)।
পাইক্রফট টসের সময় অধিনায়ককে হাত না মেলানোর পরামর্শ দিয়ে নিয়ম লঙ্ঘন করেছেন অভিযোগ তুলে তাঁর অপসারণ চেয়ে রীতিমতো এশিয়া কাপ বর্জনের আবহ তৈরি করে পিসিবি।
শেষ পর্যন্ত পাইক্রফটের ক্ষমা প্রার্থনায় গতকাল তাঁর পরিচালনায় আরব আমিরাতের বিপক্ষে মাঠে নামে পাকিস্তান। তবে খেলতে নামার সিদ্ধান্ত নিতে আলোচনার জন্য এক ঘণ্টা পিছিয়ে দেওয়া হয় ম্যাচ শুরুর সময়।
আরও পড়ুনপাকিস্তান অধিনায়কের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন ম্যাচ রেফারি পাইক্রফট, দাবি পিসিবির৬ ঘণ্টা আগেদেরিতে শুরু হওয়া ম্যাচে আমিরাত অধিনায়ক টসে জিতে পাকিস্তানকে ব্যাটিংয়ে পাঠান। ফখর জামানের ৩৬ বলে ৫০ আর শেষ দিকে শাহিন আফ্রিদির ১৪ বলে ২৯ রানের অপরাজিত ইনিংসে ভর করে পাকিস্তান করে ২০ ওভারে ৯ উইকেটে ১৪৬। মূলত আফ্রিদির শেষ দিকের ঝোড়ো ব্যাটিংই পাকিস্তানের রান দেড় শর কাছাকাছি নিয়ে যায়।
নানা নাটকীয়তার পর অ্যান্ডি পাইক্রফটই পাকিস্তান–আমিরাত ম্যাচে রেফারির দায়িত্বে ছিলেন