শাকসু নির্বাচন সামনে রেখে একাধিক শর্তে ছাত্ররাজনীতি চালুর সুপারিশ
Published: 17th, September 2025 GMT
সিলেটে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় ১০ মাস ধরে দলীয় ব্যানারে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ রয়েছে। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (শাকসু) নির্বাচন সামনে রেখে দলীয় ব্যানারে ছাত্ররাজনীতির বিষয়ে নতুন সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে কর্তৃপক্ষ। সম্প্রতি ছাত্রসংগঠনগুলোর সঙ্গে বৈঠকের পর নিয়ন্ত্রিত ও শর্ত জুড়ে দিয়ে দলীয় ব্যানারে রাজনীতি চালুর বিষয়ে সুপারিশ করেছে প্রক্টরিয়াল কমিটি।
আজ বুধবার কমিটির একাধিক সদস্যের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে। এর আগে গত বছরের ৬ নভেম্বর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ক্যাম্পাসে দলীয় ব্যানারে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও দলীয় ব্যানারে একাধিক কর্মসূচি পালন করেছে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের নেতা–কর্মীরা। একই সঙ্গে ভিন্ন নামে কর্মসূচি নিয়ে সক্রিয় ছিলেন ছাত্রশিবিরের নেতা–কর্মীরা। নবীনবরণ উপলক্ষে ছাত্র ইউনিয়নও একটি কর্মসূচি করে। নিষেধাজ্ঞা থাকায় ছাত্রসংগঠনগুলো দলীয় ব্যানারে ছাত্ররাজনীতি চালুর বিষয়ে দাবি জানিয়ে আসছে একাধিকবার।
প্রক্টরিয়াল কমিটি সূত্রে জানা যায়, গত ১৮ আগস্ট বিকেলে পাঁচ থেকে সাতটি ক্রিয়াশীল ছাত্রসংগঠনের সঙ্গে প্রক্টরিয়াল কমিটির আলোচনায় ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি উন্মুক্ত করার দাবি ওঠে। শাকসু নির্বাচন সামনে রেখে ও কয়েকটি সংগঠনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে এ বিষয়ে বৈঠক হয়। সেখানে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, ইসলামী ছাত্রশিবির, ছাত্র ইউনিয়ন, ছাত্র মৈত্রী ও ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা অংশগ্রহণ করেন। এর আগে ছাত্রসংগঠনের সঙ্গে আলোচনার জন্য মৌখিকভাবে প্রক্টরিয়াল কমিটিকে জানায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। ছাত্রসংগঠনগুলোর সঙ্গে আলোচনার পর দলীয় ব্যানারে ছাত্ররাজনীতি চালুর বিষয়ে সুপারিশ করেছে প্রক্টরিয়াল কমিটি।
আরও পড়ুনশাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘সাধারণ শিক্ষার্থীর’ ব্যানারে চলছে নিষিদ্ধ ছাত্ররাজনীতি০৪ ডিসেম্বর ২০২৪প্রক্টরিয়াল কমিটির দুজন সদস্য প্রথম আলোকে জানান, ক্যাম্পাসে দলীয় ব্যানারে রাজনীতি উন্মুক্ত করার জন্য সুপারিশ করা হয়েছে। তবে একাডেমিক ভবন বা অনুষদে কোনো কর্মসূচি (মিছিল ও বৈঠক) ও কমিটি দিতে পারবে না ছাত্রসংগঠনগুলো। যাতে একাডেমিক কার্যক্রমে কোনো ব্যাঘাত না ঘটে,Ñএ জন্য সেখানে রাজনৈতিক কার্যক্রম বন্ধ থাকবে। এ ছাড়া আবাসিক হলে রাজনৈতিক কর্মসূচি যেমনÑমিছিল নিষিদ্ধের বিষয়েও সুপারিশ করা হয়েছে। হল ছাত্র সংসদ নির্বাচন হলে রাজনীতি চালু থাকা প্রয়োজন, ফলে ছাত্ররাজনীতি সেখানে শুধু কমিটি থাকবে, এমন সুপারিশও রয়েছে।
আরও পড়ুনশাহজালালে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ নির্বাচন নভেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে: উপাচার্য১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল কমিটির সভাপতি ও ছাত্র উপদেশ নির্দেশনা পরিচালক মো.
জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর মোখলেসুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ছাত্ররাজনীতি উন্মুক্ত হলেও কিছু শর্ত রয়েছে। তবে রাজনীতি চালু হলে ছাত্রসংগঠনগুলো কর্মসূচি করার আগে অবশ্যই প্রক্টরিয়াল কমিটি থেকে অনুমতি নিতে হবে।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: দল য় ব য ন র স প র শ কর র জন ত কম ট র এক ধ ক
এছাড়াও পড়ুন:
জকসু নির্বাচন নিয়ে একে অপরকে দোষারোপ ছাত্র সংগঠনগুলোর
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জকসু) নির্বাচন নিয়ে একে অপরকে নানাভাবে দোষারোপ করছে ছাত্র সংগঠনগুলো। সরাসরি নাম উল্লেখ না করে কেউ কাউকে কিছু না বললেও ছাড় দিতে নারাজ তারা।
গত ৩০ অক্টোবর জবি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষা শহীদ রফিক ভবনের নিচে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ছাত্রদলের নেতারা জকসু নির্বাচনের বিধিমালা প্রণয়নে প্রশাসন একটি বিশেষ গোষ্ঠীকে সুবিধা দিতে তাড়াহুড়ো করেছে বলে অভিযোগ করে।
আরো পড়ুন:
জবি প্রশাসনের কাছে ২০ দাবি জানাল ইউটিএল
পিএইচডি গবেষকদের জন্য বৃত্তি চালু করা হবে: জবি উপাচার্য
রবিবার (২ নভেম্বর) ভাষা শহীদ রফিক ভবনের নিচে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে জকসু নির্বাচন পেছাতে নির্বাচন কমিশন ‘বিশেষ উদ্দেশ্যে’ কাজ করছে বলে অভিযোগ করেছেন জবি শাখা ইসলামী ছাত্রশিবিরের সভাপতি মো. রিয়াজুল ইসলাম।
পরে সন্ধ্যায় একই স্থানে ‘জকসু নির্বাচনের আচরণবিধি ও স্পোর্টস কার্নিভাল’ বিষয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে শাখা জাতীয় ছাত্রশক্তি অভিযোগ করে, জকসু নির্বাচন নিয়ে একটি সংগঠন তড়িঘড়ি করে নির্বাচন আয়োজন করতে চাচ্ছে এবং আরেকটি সংগঠন নির্বাচন পিছিয়ে জাতীয় নির্বাচনের সময়ের কাছাকাছি নিয়ে যেতে চাচ্ছে।
রবিবার দুপুরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে শাখা ছাত্রশিবিরের সভাপতি মো. রিয়াজুল ইসলাম বলেন, “নির্বাচন কমিশন একটি বিশেষ কারো ইশারায়, বাইরের প্রেসক্রিপশনে নির্বাচনের খসড়া প্রস্তুত করেছে। আমাদের দাবি, ২৭ নভেম্বরই শিক্ষার্থীদের নিয়ে জকসু নির্বাচন বাস্তবায়ন করা। নির্বাচন কমিশনের সবাই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অংশ। তারা ২৭ নভেম্বর নির্বাচন হওয়ার বিষয়টি আগেই জানতো। কিন্তু তবু ১০ ডিসেম্বরকে সামনে রেখে খসড়া রোডম্যাপ তৈরি করেছে। এতে একটি গ্রুপকে সুবিধা দিয়ে অন্যদের ভোটাধিকার হরণের চেষ্টা চলছে।”
তিনি বলেন, “প্রশাসন ও কমিশন আগে জানিয়েছিল, আইন প্রণয়নের পরই প্রস্তুতি কমিটি গঠনের কাজ শুরু হবে। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, তারা নতুনভাবে সব কাজ করতে চাচ্ছে—যেন নির্বাচন বিলম্বিত হয়। আলোচনার টেবিলে নির্বাচন কমিশন পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ করছে।”
তিনি আরো বলেন, “একটা পক্ষের সব কথা শোনা হচ্ছে। কিন্তু অন্যদের মতামত গুরুত্ব পাচ্ছে না। এতে স্পষ্ট, নির্বাচন পেছানোর মানসিকতা নিয়েই তারা আলোচনায় বসছে। ১৩ ডিসেম্বর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন শিক্ষা বর্ষের ভর্তি পরীক্ষা, ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস এবং ১৬ ডিসেম্বর জাতীয় বিজয় দিবসের কর্মসূচির কারণে সে সময় নির্বাচন গ্রহণ করা সম্ভব নয়।”
“এ অবস্থায় নির্বাচন কমিশন ১৬ ডিসেম্বরের পর ভোট আয়োজন করতে চাইছে। কিন্তু তখন জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হলে বা ছুটি শুরু হলে জকসু নির্বাচন করা অসম্ভব হয়ে পড়বে,” যুক্ত করেন শিবির সভাপতি।
আপ বাংলাদেশের সঙ্গে প্যানল ঘোষণার বিষয়ে তিনি বলেন, “আমরা ইনক্লুসিভ প্যানেল করতে চাচ্ছি। আমাদের প্যানেলে কারা থাকবেন সেটা এখনো নির্দিষ্ট হয়নি। শিগগিরই এ বিষয়ে জানতে পারবেন।”
এ সময় উপস্থিত ছিলেন জবি ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল আলিম আরিফ, অফিস সম্পাদক ইব্রাহিম খলিল ও বাইতুল মাল সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান প্রমুখ।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জকসু) নির্বাচন নিয়ে একটি সংগঠন তড়িঘড়ি করে নির্বাচন আয়োজন করতে চাইছে, আরেকটি সংগঠন নির্বাচন পিছিয়ে জাতীয় নির্বাচনের সময়ের কাছাকাছি নিয়ে যেতে চাইছে বলে অভিযোগ করেছে শাখা জাতীয় ছাত্রশক্তি।
অপরদিকে, ‘জকসু নির্বাচনের আচরণবিধি ও স্পোর্টস কার্নিভাল’ বিষয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে শাখা জাতীয় ছাত্রশক্তি সদস্য সচিব শাহিন মিয়া বলেন, “একটি সংগঠন নির্বাচনকে পেছানোর চেষ্টা করছে, আরেকটি সংগঠন তড়িঘড়ি করে দিতে চাইছে। আমরা চাই এমন একটি নির্বাচন, যেখানে শিক্ষার্থীরা অবাধভাবে অংশ নিতে পারবে এবং সবাই সমান সুযোগ পাবে। নির্বাচন কমিশন যেন প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে একটি গ্রহণযোগ্য সময়সূচি ঘোষণা করে এবং কোনো পক্ষের প্রভাবে না পড়ে।”
তিনি বলেন, “নির্বাচন কমিশনের যে সাহসী ও নিরপেক্ষ ভূমিকা দেখানোর কথা, আজকের মতবিনিময় সভায় আমরা তা দেখতে পাইনি।”
জবি শাখার আহ্বায়ক ফয়সাল মুরাদ বলেন, “আমরা সব সময় অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের পক্ষে। আমরা চাই না যে ক্লাস-পরীক্ষা বাদ দিয়ে হঠাৎ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হোক। অন্যদিকে, ছাত্রশিবির দ্রুত নির্বাচন চায়, আর ছাত্রদল সেটি পেছাতে চায়—যা নির্বাচনী পরিবেশকে জটিল করে তুলছে। জাতীয় নির্বাচন ও জকসু নির্বাচন একই সময়ে পড়লে তা প্রশাসনিকভাবেও বড় চ্যালেঞ্জ তৈরি করবে।”
এর আগে, গত ৩০ অক্টোবর আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক মেহেদী হাসান হিমেল বলেছিলেন, “আমাদের প্রত্যাশা ছিল প্রশাসন একটি আধুনিক, যুগোপযোগী ও বাস্তবসম্মত জকসু নীতিমালা প্রণয়ন করবেন। কিন্তু আমরা দেখেছি, প্রশাসন একটি বিশেষ গোষ্ঠীকে সুবিধা দিতে তাড়াহুড়ো করেছে, যা হতাশাজনক।”
তিনি বলেছিলেন, “জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর প্রথমবার জকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। আমরা চাই এটি অবাধ, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হোক—যাতে জকসু শিক্ষার্থীদের প্রকৃত প্রতিনিধি নির্বাচনের মুক্ত মঞ্চে পরিণত হয়, কোনো দলীয় প্রভাবের শিকার না হয়।”
ঢাকা/লিমন/মেহেদী