শান্তিপূর্ণ উপায়ে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সঙ্গে নিয়ে মিয়ানমারের ওপর চাপ বাড়াতে হবে। এর মধ্য দিয়ে রোহিঙ্গা সংকট নিরসন করতে হবে। তবে এই প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশের অভ্যন্তরে রাজনৈতিক নেতৃত্বের ঐক্যের পাশাপাশি রোহিঙ্গাদের কণ্ঠস্বর তুলে ধরাও গুরুত্বপূর্ণ।

গতকাল বুধবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে আয়োজিত দিনব্যাপী আলোচনায় বিশেষজ্ঞরা এ অভিমত দিয়েছেন। গবেষণাপ্রতিষ্ঠান নীতি গবেষণা কেন্দ্র ‘অ্যাম্প্লিফাইং দ্য রোহিঙ্গা ভয়েসেস অ্যান্ড অ্যাসপাইরেশন: আ স্ট্র্যাটেজিক ডায়ালগ অ্যাহেড অব ইউএনজিএ ২০২৫’ শীর্ষক জাতীয় সংলাপের আয়োজন করে। দিনব্যাপী আলোচনায় উদ্বোধনী ও সমাপনী অধিবেশন ছাড়াও দুটি কর্ম অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়।

এর আগে সকালে সংলাপের উদ্বোধনী অধিবেশনে প্রধান অতিথি ছিলেন ফরহাদ মজহার। আলোচনা সঞ্চালনা করেন নীতি গবেষণা কেন্দ্রের ট্রাস্টি অধ্যাপক শেখ তৌফিক এম হক।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন মিয়ানমারে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত এবং নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির সাউথ এশিয়া ইনস্টিটিউট অব পলিসি অ্যান্ড গভর্ন্যান্সের জ্যেষ্ঠ গবেষণা ফেলো মোহাম্মদ সুফিউর রহমান। তিনি বলেন, আরাকান আর্মিকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের জন্য অপরিহার্য শর্ত হিসেবে মিয়ানমারের নাগরিকত্ব, ভোটাধিকার এবং রাজনৈতিক অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। রোহিঙ্গাদের জোরপূর্বক শ্রম ও জোরপূর্বক নিয়োগ বন্ধে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হতে হবে, তাদের চলাচলের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে। আস্থা তৈরির জন্য রোহিঙ্গাদের জমি ও সম্পত্তির অধিকার ফিরিয়ে দেওয়া, স্থানীয় সংস্থা ও কাউন্সিলে তাদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা, নিরপেক্ষ পর্যবেক্ষকদের মাঠপর্যায়ে কাজ করার সুযোগ দেওয়া এবং সহনশীলতা, পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও পুনর্মিলনের বিষয়ে রোহিঙ্গা, রাখাইন ও অন্যান্য সম্প্রদায়ের মধ্যে সংলাপ আয়োজন করা জরুরি।

আলোচনায় আরাকান রোহিঙ্গা ন্যাশনাল অ্যালায়েন্সের চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম বলেন, রোহিঙ্গা গণহত্যার জন্য সব অপরাধীকে বিচারের আওতায় আনা, সহিংসতার পুনরাবৃত্তি রোধ করা, আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা তোলা, নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা এবং মানবাধিকার লঙ্ঘন বন্ধে কার্যকর চাপ সৃষ্টি করতে হবে।

আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার (আইওএম) বাংলাদেশ উপকার্যালয়ের প্রধান পিটার কার্ন বলেন, রোহিঙ্গা সংকট মিয়ানমারে উদ্ভূত রাজনৈতিক সমস্যা, যার স্থায়ী সমাধানও মিয়ানমারেই আছে। বাংলাদেশ অভূতপূর্বসংখ্যক রোহিঙ্গা শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়ে যে উদারতা প্রদর্শন করেছে, তার জন্য আন্তর্জাতিক মহলের কাছ থেকে আরও স্বীকৃতি প্রাপ্য।

দ্বিতীয় সেশনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে অন্তর্বর্তী সরকারের শ্রম মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, রোহিঙ্গা সমস্যাকে ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা ভুল হবে। এটি একটি মানবিক ও আন্তর্জাতিক সমস্যা। রোহিঙ্গারা একটি নৃগোষ্ঠী সম্প্রদায়, যারা শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে মিয়ানমারে বসবাস করছে। মিয়ানমার সরকার তাদের পরিচয়ে ধর্মীয় রং দেওয়ার চেষ্টা করেছে, কিন্তু বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক সমাজের জন্য এটি মানবিক সমস্যা। জাতিসংঘের সক্রিয় সদস্য, আন্তর্জাতিক সমাজের দায়িত্বশীল অংশ এবং বাংলাদেশের নৈতিক দায়িত্ব হলো এই সম্প্রদায়ের জন্য নিরাপদ ও শান্তিপূর্ণ সমাধান খোঁজা।

কবি ও চিন্তক ফরহাদ মজহার বলেন, রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান জাতিসংঘ করতে পারবে না। দেশের জনগণের ঐতিহাসিক অভিজ্ঞতা ও ঐক্যের মাধ্যমে এর সমাধান করতে হবে। এ কারণেই সমস্যার মূল সমাধান নির্ভর করছে জনগণের মধ্যে বোঝাপড়া ও গণতান্ত্রিক কাঠামো প্রতিষ্ঠার ওপর।

ফরহাদ মজহার আরও বলেন, রোহিঙ্গা সংকটের সমাধান নিছক কারিগরি নয়, বরং রাজনৈতিক প্রশ্ন। তাই এর সমাধানও রাজনৈতিকভাবে হতে হবে। ভারতের ভূমিকাও এখানে উপেক্ষা করার মতো নয়—এটি আগামী দিনে বড় প্রভাব ফেলতে পারে ।

বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সাবেক প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার এবং ওসমানী সেন্টার ফর পিস অ্যান্ড সিকিউরিটি স্টাডিজের চেয়ারম্যান লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.

) মো. মাহফুজুর রহমান বলেন, মিয়ানমার রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান সামরিক পথে করতে চেয়েছিল। বিষয়টি এক জেনারেলের কন্যা ও জেনারেল নিজে তৈরি করেছেন এবং বর্তমানে আরও দুই জেনারেল এটি পরিচালনা করছেন। এটি (রোহিঙ্গা সংকট) প্রথম দিন থেকেই একটি সামরিক অভিযান, যা কয়েকটি ধাপে পরিচালিত হয়েছে।

সংলাপে আরও বক্তৃতা করেন নেক্সাস ডিফেন্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের প্রেসিডেন্ট ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মোহাম্মদ হাসান নাসির বিএনপির শামা ওবায়েদ, জামায়াতে ইসলামীর এহসান জুবায়ের, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. নজরুল ইসলাম এবং প্রথম আলোর কূটনৈতিক প্রতিবেদক রাহীদ এজাজ। অনুষ্ঠানের শেষে ঢাকা ঘোষণাপত্র পাঠ করেন নীতি গবেষণা কেন্দ্রের ট্রাস্টি এবং মালয়েশিয়ার ইউনিভার্সিটি সুলতান জয়নাল আবেদিনের শিক্ষক মাহবুবুল হক।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র জন ত ক র জন য সমস য

এছাড়াও পড়ুন:

শাহরুখের ব্যাপারে সাবধান করলেন জুহি চাওলা

বলিউড বাদশা শাহরুখ খান। অভিনয় গুণে কোটি কোটি ভক্তের হৃদয়ে দোলা দিয়েছেন তিনি। দীর্ঘ অভিনয় ক্যারিয়ারে যশ-খ্যাতি যেমন পেয়েছেন, তেমনি আয় করেছেন মোটা অঙ্কের অর্থও। রবিবার (২ নভেম্বর) ৬০ বছর পূর্ণ করে একষট্টিতে পা দেবেন এই তারকা।  

অভিনয় ক্যারিয়ারে অনেক নায়িকার সঙ্গে জুটি বেঁধে অভিনয় করেছেন শাহরুখ খান। তাদের মধ্যে অন্যতম জুহি চাওলা। ‘রাজু বান গায়া জেন্টলম্যান’, ‘রামজানে’, ‘ডর’, ‘ইয়েস বস’, ‘ডুপ্লিকেট’সহ আরো কিছু জনপ্রিয় সিনেমা উপহার দিয়েছেন এই জুটি। একসঙ্গে অভিনয় ছাড়াও, এই দুই তারকা বাস্তব জীবনে খুবই ভালো বন্ধু। কেবল তাই নয়, ব্যবসায়ীক অংশীদারও তারা। 

আরো পড়ুন:

শাহরুখের অজানা এই সাত তথ্য জানেন?

পাকিস্তানের সন্ত্রাসী তালিকায় সালমান খান কেন?

বন্ধু শাহরুখের জন্মদিন উপলক্ষে হিন্দুস্তান টাইমসের সঙ্গে কথা বলেছেন জুহি। এ আলাপচারিতায় স্মৃতিচারণ তো করেছেনই, পাশাপাশি শাহরুখের বিষয়ে সতর্কবার্তা দিয়েছেন এই অভিনেত্রী।  

শাহরুখের সঙ্গে প্রথম পরিচয়ের বিষয়ে জুহি চাওলা বলেন, “আমি যখন প্রথম ‘রাজু বান গায়া জেন্টলম্যান’ সিনেমায় চুক্তিবদ্ধ হই, তখন সহপ্রযোজক বিবেক ভাসওয়ানি আমাকে বলেছিলেন, ‘আমার নায়ক দেখতে আমির খানের মতো।’ আমি শাহরুখকে দেখে ভীষণ অবাক হয়েছিলাম। দেখি, শাহরুখের চুল চোখের ওপরে নেমে এসেছে। আর সে একেবারেই আমার কল্পনার সেই ‘চকলেট বয়’ নয়! যখন কাজ শুরু করি, তখন বুঝতে পারি, সে একদম নতুন অভিনেতাদের মতো নয়, সে পরিশ্রমী, দিনে তিন শিফটে কাজ করছে।” 

একটি ঘটনা বর্ণনা করে জুহি চাওলা বলেন, “আমার মনে আছে, ‘ইয়েস বস’ সিনেমার শুটিংয়ের সময়, কোনো দৃশ্য ঠিকমতো লেখা না থাকলে পরিচালক আজিজজি (আজিজ মির্জা) বলতেন, ‘শাহরুখ আসুক, সব ঠিক হয়ে যাবে।’ রোমান্স আর মজার মিশেলে থাকা দৃশ্যগুলো আমাদের সবচেয়ে ভালো ছিল। সেই সূত্রেই আমরা অনেকগুলো সিনেমায় একসঙ্গে কাজ করেছি।” 

শাহরুখের পাশে অবস্থান করলে সাবধান থাকার কথার কথা বলেছেন জুহি। হাসতে হাসতে এ অভিনেত্রী বলেন, “শাহরুখের আশেপাশে থাকলে সাবধানে থাকবেন। কারণ সে কথা দিয়ে আপনাকে যেকোনো কিছু করাতে রাজি করিয়ে ফেলতে পারে। ওর কথাবলার ভঙ্গি এমন যে, আপনি ‘না’ বলতেই পারবে না। আমি ‘ডুপ্লিকেট’ সিনেমা করতে চাইছিলাম না, কারণ সেখানে আমার তেমন কিছু করার ছিল না। আমরা তখন আরেকটি সিনেমার শুটিং করছিলাম, আর শাহরুখ আমাকে সিঁড়িতে বসিয়ে দুই ঘণ্টা বোঝায় এবং আমি সিনেমাটিতে চুক্তিবদ্ধ হই। সে আপনাকে যেকোনো কিছু করতে রাজি করাতে পারে, তাই সাবধানে থাকবেন।” 

শাহরুখ খানের সঙ্গে ব্যক্তিগত সম্পর্কের বিষয়ে জুহি চাওলা বলেন, “অফস্ক্রিনে আমাদের সম্পর্কেও উত্থান-পতন রয়েছে। কিন্তু সৃষ্টিকর্তা কোনো না কোনোভাবে আমাদের যুক্ত রেখেছেন, এমনকি আইপিএলের মাধ্যমেও। আমাদের বন্ধন কোনো পরিকল্পনার ফল নয়, এটা একেবারেই ভাগ্যের ব্যাপার।” 

শাহরুখ খানের সঙ্গে আইপিএল দল কলকাতা নাইট রাইডার্সের (কেকেআর) সহ-মালিক জুহি ও তার স্বামী জয় মেহতা। এই দলের পেছনে জুহি বিনিয়োগ করেছেন ৬২৯ কোটি রুপি। বর্তমানে এই দলটির মূল্য আছে ৯ হাজার ১৩৯ কোটি রুপি। শাহরুখ খানের সঙ্গে ‘রেড চিলিস গ্রুপ’ প্রতিষ্ঠা করেন জুহি। 

১৯৬৫ সালে ২ নভেম্বর ভারতের নয়াদিল্লিতে এক মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন শাহরুখ খান। তার শৈশবের প্রথম পাঁচ বছর কেটেছে ম্যাঙ্গালুরুতে। শাহরুখের দাদা ইফতিখার আহমেদ স্থানীয় পোর্টের প্রধান ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন। যার কারণে সেখানে বসবাস করেন তারা। শাহরুখের বাবার নাম তাজ মোহাম্মদ খান, মা লতিফ ফাতিমা। 

দিল্লির হংসরাজ কলেজ থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেন শাহরুখ খান। তারপর জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়াতে গণযোগাযোগ বিষয়ে মাস্টার্সে ভর্তি হন। কিন্তু অভিনয় জীবন শুরু করার কারণে পড়াশোনা ছেড়ে দেন তিনি। তবে বলিউডে ক্যারিয়ার শুরুর দিকে দিল্লির ন্যাশনাল স্কুল অব ড্রামা-তে ভর্তি হন এই শিল্পী। 

১৯৯২ সালে ‘দিওয়ানা’ সিনেমার মাধ্যমে বলিউডে পা রাখেন শাহরুখ খান। রোমান্টিক ঘরানার এ সিনেমায় অভিনয় করে নজর কাড়েন তিনি। সিনেমাটিতে দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের কারণে সেরা নবাগত অভিনেতা হিসেবে ফিল্মফেয়ার পুরস্কার লাভ করেন শাহরুখ। 

একই বছর ‘চমৎকার’, ‘দিল আসনা হে’ ও ‘রাজু বান গায়া জেন্টলম্যান’ সিনেমায় অভিনয় করেন শাহরুখ। তার পরের বছর ‘ডর’ ও ‘বাজিগর’ সিনেমায় অভিনয় করে নিজের জাত চেনান শাহরুখ। তার অভিনয়ের জাদুতে মুগ্ধ হন কোটি ভক্ত; পৌঁছে যান সাফল্যের চূড়ায়। তার অভিনয়ের খ্যাতি আরো বাড়তে থাকে যশরাজ ফিল্মসের সিনেমায় ধারাবাহিকভাবে অভিনয় করে। একের পর এক হিট সিনেমা দিয়ে জনপ্রিয়তার তুঙ্গে অবস্থান করেন শাহরুখ। যদিও তার এই সফলতার জার্নির গল্প মোটেও সহজ ছিল। আর সে গল্প সবারই জানা। 

অভিনয় ক্যারিয়ারে অসংখ্য সম্মাননা পেয়েছেন শাহরুখ খান। তার মধ্যে মোট পনেরোবার ফিল্মফেয়ার পুরস্কার লাভ করেছেন তিনি। এর মধ্যে আটবার সেরা অভিনেতা হিসেবে পুরস্কার পেয়েছেন তিনি। হিন্দি সিনেমায় বিশেষ অবদানের জন্য ২০০২ সালে তাকে পদ্মশ্রী পুরস্কারে ভূষিত করে ভারত সরকার। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি গ্রহণ করেছেন মোট পাঁচবার। তবে শাহরুখ খানের ৩৩ বছরের অভিনয় ক্যারিয়ারে অধরা ছিল জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। চলতি বছর ‘জওয়ান’ সিনেমার জন্য সেরা অভিনেতা বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন শাহরুখ।

ঢাকা/শান্ত

সম্পর্কিত নিবন্ধ