ভারতের কেরালায় চলতি বছর ৭০ জনের বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন প্রাণঘাতী ‘মস্তিষ্কখেকো অ্যামিবাতে’। এরমধ্যে ১৯ জন মারা গেছেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুধু কেরালার নয় বরং বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে রোগের মানচিত্র বদলাচ্ছে এবং আগে বিরল হিসেবে পরিচিত সংক্রমণগুলোও ক্রমেই সাধারণ মানুষকে হুমকিতে ফেলছে। উষ্ণ পানির উপস্থিতি, দীর্ঘ গ্রীষ্মকাল এবং পানিদূষণ এই ঝুঁকিকে আরো বাড়াচ্ছে।

বৃহস্পতিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) প্রকাশিত বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এ রোগ এতটাই বিরল যে অনেক চিকিৎসক তাদের পুরো কর্মজীবনে একটি কেসও দেখেন না। অথচ মাত্র এক বছরেই শুধু কেরালাতে আক্রান্ত হয়েছেন ৭০ জনের বেশি মানুষ।
কেরালা অঙ্গরাজ্যের সবচেয়ে আনন্দময় উৎসব ওনামের প্রাক্কালে ৪৫ বছর বয়সী শোভনা হঠাৎ কাঁপতে কাঁপতে অচেতন হয়ে পড়েন। দলিত সম্প্রদায়ের এই নারী জীবিকা নির্বাহ করতেন ফলের রস বোতলজাত করে। কয়েকদিন আগে মাথা ঘোরা ও উচ্চ রক্তচাপের জন্য চিকিৎসকের শরণাপন্ন হলেও ওষুধ নেওয়ার পর কিছুটা স্বাভাবিক মনে হচ্ছিল তাকে। কিন্তু হঠাৎ করেই জ্বর ও কাঁপুনি দেখা দেয়, যা দ্রুত প্রাণঘাতী রূপ নেয়। ৫ সেপ্টেম্বর ওনামের মূল অনুষ্ঠানের দিনেই তার মৃত্যু হয়।

আরো পড়ুন:

শেরপুরে পুলিশের উপর হামলা: থানায় মামলা, গ্রেপ্তার ৪

৫০ শয্যার থানচি হাসপাতাল চলছে একজন চিকিৎসকে

পরিবারের সদস্য ও সমাজকর্মী অজিথা কাথিরাদাথ বলেন, “আমরা একেবারেই অসহায় ছিলাম। শোভনার মৃত্যু হওয়ার পরেই রোগটি সম্পর্কে জানতে পারি।”

কীভাবে সংক্রমণ ছড়ায়
এই এককোষী জীব সাধারণত উষ্ণ মিষ্টি পানিতে থাকে এবং ব্যাকটেরিয়া খেয়ে বেঁচে থাকে। সাঁতার বা গোসল করার সময় নাক দিয়ে শরীরে প্রবেশ করে এটি প্রাইমারি অ্যামিবিক মেনিনগোএনসেফালাইটিস নামক মারাত্মক সংক্রমণ ঘটায়। এতে মস্তিষ্কের টিস্যু দ্রুত ধ্বংস হয়।

কেরালায় প্রথম এ রোগ শনাক্ত হয় ২০১৬ সালে। তখন বছরে এক বা দুটি কেস ধরা পড়ত এবং প্রায় সবগুলোরই মৃত্যু ঘটত। বিশ্বব্যাপী ১৯৬২ সাল থেকে এখন পর্যন্ত মাত্র ৪৮৮টি কেস রিপোর্ট হয়েছে—প্রধানত যুক্তরাষ্ট্র, পাকিস্তান ও অস্ট্রেলিয়ায়। আক্রান্তদের মধ্যে মৃত্যুর হার ৯৫ শতাংশ।

ভারত সরকারের পদক্ষেপ 
পরিস্থিতি মোকাবিলায় কেরালার জনস্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ ব্যাপক উদ্যোগ নিয়েছে। আগস্টের শেষ দিকে ২৭ লাখ কূপে ক্লোরিন দেওয়া হয়েছে। গ্রামীণ এলাকায় পুকুরের চারপাশে সতর্কতামূলক সাইনবোর্ড ঝোলানো হয়েছে। সুইমিং পুল ও পানির ট্যাংক নিয়মিত ক্লোরিনেশনের ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে।

তবে স্থানীয় কর্মকর্তারা স্বীকার করছেন, বাস্তবে প্রতিটি গ্রামীণ পানির উৎসে এমন ব্যবস্থা কার্যকর করা সম্ভব নয়। পুকুরে ক্লোরিন দিলে মাছ মারা যায়, আর কোটি মানুষের অঙ্গরাজ্যের প্রতিটি পানির উৎসে নজরদারি করাও অকার্যকর হয়ে দাঁড়ায়। ফলে সচেতনতা তৈরিই এখন মূল লক্ষ্য।

জনগণের জন্য সতর্কতা

স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ পরিবারগুলোকে কিছু পরামর্শ দিয়েছেন। সেগুলো হলো—পানির ট্যাংক ও সুইমিং পুল নিয়মিত পরিষ্কার রাখতে, নাক ধোয়ার সময় পরিষ্কার উষ্ণ পানি ব্যবহার করতে, শিশুদের বাগানের স্প্রিংকলার থেকে দূরে রাখতে, অনিরাপদ পুকুরে সাঁতার বা গোসল এড়িয়ে চলতে, সাঁতারুদের নাক রক্ষার জন্য নাকের প্লাগ ব্যবহার করা, মাথা পানির ওপরে রাখা এবং অপরিশোধিত পানিতে তলদেশ নাড়াচাড়া না করার নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে।

বিজ্ঞানীদের সতর্কবার্তা

যুক্তরাষ্ট্রের জর্জিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডেনিস কাইল বলেন, “এটি একটি জটিল সমস্যা। কোনো কোনো জায়গায় সতর্কতামূলক সাইনবোর্ড থাকলেও অধিকাংশ পানির উৎসে ঝুঁকি থেকেই যায়। তবে সুইমিং পুল বা কৃত্রিম জলাশয়ের মতো নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে সঠিকভাবে ক্লোরিনেশন মনিটরিং করলে ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে কমানো সম্ভব।”

অন্যদিকে কেরালার অধ্যাপক অনীশ জানান, জলবায়ু পরিবর্তন এই ঝুঁকি আরো বাড়িয়ে দিচ্ছে। তার ভাষায়, “মাত্র ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা বৃদ্ধিই কেরালার গ্রীষ্মমণ্ডলীয় আবহাওয়ায় অ্যামিবার বিস্তার ঘটাতে পারে। উপরন্তু পানিদূষণ ব্যাকটেরিয়ার পরিমাণ বাড়ায়, যা অ্যামিবার খাদ্য।”

চিকিৎসার সীমাবদ্ধতা

অধ্যাপক ডেনিস কাইল সতর্ক করে বলেছেন, “অতীতে অনেক কেস হয়তো শনাক্তই হয়নি। আর যেগুলো শনাক্ত হয়েছে, সেখানে ব্যবহৃত ওষুধের সমন্বয় এখনো অপর্যাপ্ত।”

তিনি বলেন, “যে অল্প সংখ্যক রোগী বেঁচে যান, তাদের চিকিৎসা পদ্ধতিই পরবর্তীতে মানদণ্ডে পরিণত হয়। কিন্তু আমাদের কাছে যথেষ্ট তথ্য নেই যে সব ওষুধ আসলে কার্যকর কি না, বা সবগুলো একসঙ্গে প্রয়োজনীয় কি না।”

কেরালা কিছু রোগী শনাক্ত করতে ও প্রাণ বাঁচাতে সক্ষম হলেও এর শিক্ষা কেবল স্থানীয় পর্যায়ে সীমাবদ্ধ নয়। বিজ্ঞানীরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তন রোগের মানচিত্র নতুন করে আঁকছে। তাই সবচেয়ে বিরল জীবাণুগুলোও হয়তো আর খুব বেশি দিন বিরল থাকবে না।

ঢাকা/ইভা 

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর জলব য জলব য় সতর ক

এছাড়াও পড়ুন:

বিনা মূল্যে কম্পিউটার প্রশিক্ষণের সুযোগ, সারা দেশে ৮টি কেন্দ্রে

ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ইমাম প্রশিক্ষণ একাডেমি ২০২৫-২৬ অর্থবছরে হাফেজ, ইমাম, মাদ্রাসাছাত্র ও বেকার যুবকদের বিনা কোর্স ফিতে কম্পিউটার প্রশিক্ষণের দ্বিতীয় কোর্সে প্রক্রিয়া শুরু করেছে। এ প্রশিক্ষণের মেয়াদ দুই মাস। প্রশিক্ষণটি আগামী ১২ অক্টোবর শুরু হবে, চলবে ১০ ডিসেম্বর পর্যন্ত। প্রশিক্ষণ শেষে ইসলামিক ফাউন্ডেশন থেকে প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে সরকারি সনদ দেওয়া হবে। আগ্রহী প্রার্থীদের ৯ অক্টোবরের মধ্যে ইমাম প্রশিক্ষণ একাডেমিতে আবেদন করতে হবে।

প্রশিক্ষণের বিষয়

১. বেসিক কম্পিউটার,

২. অফিস অ্যাপ্লিকেশন ও ইউনিকোড বাংলা,

৩. ইন্টারনেট,

৪. গ্রাফিক ডিজাইন,

৫. ফ্রিল্যান্সিং,

৬. মার্কেটপ্লেস ও কনসালটিং।

আরও পড়ুনহার্ভার্ড এনভায়রনমেন্টাল ফেলোশিপ, দুই বছরে ১ লাখ ৮৫ হাজার ডলার১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫আবেদনের যোগ্যতা

১. ন্যূনতম দাখিল বা সমমানের পরীক্ষায় পাস হতে হবে,

২. হাফেজদের ক্ষেত্রে শিক্ষাগত যোগ্যতা শিথিল করা হবে,

৩. উচ্চতর শিক্ষাগত যোগ্যতা সম্পন্ন প্রার্থীকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে,

৪. প্রার্থীকে কম্পিউটার চালনায় বেসিক জ্ঞান থাকতে হবে,

৫. যাঁদের নিজস্ব কম্পিউটার আছে, তাঁদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।

ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ইমাম প্রশিক্ষণ একাডেমি ২০২৫-২৬ অর্থবছরে হাফেজ, ইমাম, মাদ্রাসাছাত্র ও বেকার যুবকদের বিনা কোর্স ফিতে কম্পিউটার প্রশিক্ষণের দ্বিতীয় কোর্সে প্রক্রিয়া শুরু করেছে।যে ৮টি কেন্দ্রে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে

১. ঢাকা,

২. চট্টগ্রাম,

৩. রাজশাহী,

৪. খুলনা,

৫. বরিশাল,

৬. সিলেট,

৭. দিনাজপুর,

৮. গোপালগঞ্জ।

আরও পড়ুনবিনা মূল্যে ২ লাখ টাকার প্রশিক্ষণ, নন-আইটি স্নাতক শিক্ষার্থীদের সুযোগ ৭ ঘণ্টা আগেদরকারি কাগজপত্র

১. শিক্ষাগত যোগ্যতার সব সনদের সত্যায়িত ফটোকপি,

২. জাতীয় পরিচয়পত্রের সত্যায়িত ফটোকপি,

৩. এক কপি পাসপোর্ট সাইজের সত্যায়িত ছবি জমা দিতে হবে,

৪. ইমামদের ক্ষেত্রে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান অথবা ওয়ার্ড কমিশনারের কাছ থেকে নেওয়া ইমামতির প্রমাণপত্রের সত্যায়িত কপি জমা দিতে হবে,

৫. মাদ্রাসাছাত্রদের ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানের প্রধানের কাছ থেকে ছাত্রত্ব প্রমাণের কপি জমা দিতে হবে।

নিবন্ধন ফি

মনোনীত প্রার্থীদের নিবন্ধন ফি হিসেবে ৫০০ টাকা দিতে হবে।

দেশের ৮টি প্রশিক্ষণকেন্দ্রে এ প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে

সম্পর্কিত নিবন্ধ