নাসির-তামিমার মামলায় বিব্রত আদালত, অন্য আদালতে বদলি
Published: 28th, April 2025 GMT
অন্যের স্ত্রীকে প্রলুব্ধ করে নিয়ে যাওয়া, ব্যভিচার ও মানহানির অভিযোগে ক্রিকেটার নাসির হোসাইন ও তার স্ত্রী তামিমা সুলতানা তাম্মির বিরুদ্ধে করা মামলা শুনতে বিব্রতবোধ করেছেন আদালত। এরপর মামলাটি অন্য আদালতে বদলির আদেশ দিয়েছেন।
সোমবার ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ওয়াহিদুজ্জামান এ আদেশ দেন।
এদিন মামলাটিতে নাসির হোসেন এবং তামিমা সুলতানার আত্মপক্ষ শুনানির দিন ধার্য ছিল। নাসির হোসেন এবং তামিমা সুলতানা আদালতে হাজির হন।
তাদের পক্ষে অ্যাডভোকেট আজিজুর রহমান দুলু আদালতে দুটি আবেদন করেন। এর মধ্যে বাদীপক্ষের আইনজীবী ইশরাত হাসানের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগে একটি আবেদন করেন।
কারণ হিসেবে তিনি বলেন, এ মামলার বিচার চলছে। এ অবস্থায় বাদীপক্ষের আইনজীবী গত ১৬ এপ্রিল মিডিয়াতে বলেন, নাসির হোসেন ব্যভিচার করে তামিমাকে প্রলুব্ধ করে নিয়ে গেছেন। এ বিষয়ে আদালতে বিচার চলছে। বিচার শেষে আদালত রায়ের মাধ্যমে নির্ধারণ করবেন নাসির তামিমাকে প্রলুব্ধ করে নিয়ে গেছেন কিনা এবং ব্যভিচারের সম্পর্ক করেছেন কিনা। একই সঙ্গে আসামিদের আত্মপক্ষ শুনানিতে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী মামলার পুরো অভিযোগ না শুনিয়ে সারসংক্ষেপ পড়ে শোনানোর আবেদন করেন।
এদিকে বাদীপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট ইশরাত হাসান আদালতে অভিযোগ করেন, আসামিপক্ষের আইনজীবী আগে বাদীপক্ষে মামলা পরিচালনা করেছেন। আইন অনুযায়ী তিনি এখন আসামিপক্ষে মামলা পরিচালনা করতে পারেন না।
অভিযোগের ইশরাত হাসান বলেন, মামলার কেস রেকর্ডে যা আছে তাই বলেছি। যা সত্যি তাই বলেছি। আদালতকে নিয়ে কোনও কিছু বলিনি বরং আদালতের নিকট ন্যায়বিচার প্রত্যাশা করা কোনও অপরাধ নয়। এ ধরনের আবেদন উদ্দেশ্যমূলক। আমাকে মামলা পরিচালনা থেকে বিরত রাখার জন্য আগেও প্রকাশ্য আদালতে হুমকি দেওয়া হয়েছিল। বারবার আপস করার জন্য চাপ দেওয়া হয়েছিল। তবে এসব করে লাভ হবে না। আইনজীবীকে ভয় দেখিয়ে লাভ নেই। আমি আইনগতভাবেই সব বিষয় মোকাবেলা করবো।
দুই পক্ষের শুনানি নিয়ে আদালত বলেন, উভয় পক্ষেরই আবেদন দেওয়ার অধিকার আছে। এটা একটা ব্যস্ত আদালত। এক মামলার শুনানি করতে যে ধৈর্য দরকার, এতো সময় এই আদালতের নেই। এতে অন্য মামলায় ইফেক্ট পড়ে। আমি আসলে বিব্রতবোধ করছি। মামলাটা অন্য কোর্টে পাঠিয়ে দেই। এতে আপনারা কি নাখোশ হবেন? তখন আইনজীবীরা বলেন, এতে তাদের আপত্তি নেই।
তখন আদালত বলেন, মামলাটা বদলি করে চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট বরাবর পাঠিয়ে দিচ্ছি। সিএমএম মামলাটি একটা অন্য কোর্টে পাঠিয়ে দেবেন। এর আগে গত ১৬ এপ্রিল মামলাটিতে সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয়। মামলাটিতে ১০ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করেন আদালত।
২০২২ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি একই আদালত ক্রিকেটার নাসির হোসাইন ও তার স্ত্রী তামিমা সুলতানা তাম্মির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে বিচার শুরুর আদেশ দেন। তবে নাসিরের শাশুড়ি সুমি আক্তারকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। একই বছরের ৬ মার্চ মহানগর দায়রা আদালতে নাসির ও তামিমার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের আদেশের বিরুদ্ধে রিভিশন করেন তাদের আইনজীবী কাজী নজিব্যুল্লাহ হিরু। অন্যদিকে সুমি আক্তারকে অব্যাহতির আদেশের বিরুদ্ধে রিভিশন দায়ের করেন বাদীপক্ষের আইনজীবী ইশরাত হাসান।
২০২৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি বাদী ও বিবাদী উভয় পক্ষের রিভিশন অবেদন নামঞ্জুর করে ঢাকার ষষ্ঠ অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ মুর্শিদ আহাম্মেদ মামলাটির বিচার চলবে বলে আদেশ দেন। একই সঙ্গে নাসিরের শাশুড়ি সুমি আক্তার মামলার দায় থেকে অব্যাহতি থাকবেন বলে আদেশ দেন।
এর আগে ২০২১ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে তাম্মির সাবেক স্বামী রাকিব হাসান বাদী হয়ে এই মামলাটি দায়ের করেন।
মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, ২০১১ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি তাম্মি ও রাকিবের বিয়ে হয়। তাদের আট বছরের একটি মেয়েও রয়েছে। তাম্মি পেশায় একজন কেবিন ক্রু। ২০২১ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি তাম্মি ও ক্রিকেটার নাসির হোসেনের বিয়ের ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে তা রাকিবের নজরে আসে। পরে পত্র-পত্রিকায় তিনি ঘটনার বিষয়ে সম্পূর্ণ জানেন।
অভিযোগে আরও বলা হয়, রাকিবের সঙ্গে বৈবাহিক সম্পর্ক চলমান অবস্থাতেই তাম্মি নাসিরকে বিয়ে করেছেন; যা ধর্মীয় এবং রাষ্ট্রীয় আইন অনুযায়ী সম্পূর্ণ অবৈধ। তাম্মিকে প্রলুব্ধ করে নিজের কাছে নিয়ে গেছেন নাসির। তাম্মি ও নাসিরের এমন অনৈতিক ও অবৈধ সম্পর্কের কারণে রাকিব ও তার আট বছর বয়সী কন্যা মারাত্মভাবে মানসিক বিপর্যস্ত হয়েছেন। আসামিদের এমন কার্যকলাপে রাকিবের চরমভাবে মানহানি হয়েছে, যা তার জন্য অপূরণীয় ক্ষতি।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ইশর ত হ স ন কর ছ ন
এছাড়াও পড়ুন:
শিক্ষকের মুক্তি চেয়ে শিক্ষার্থীদের আদালত চত্বরে অবস্থান, সড়ক অব
পঞ্চগড়ে ধর্ষণ চেষ্টা মামলায় কারাগারে থাকা পঞ্চগড় সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের গণিত বিষয়ের শিক্ষক মোস্তাফিজুর রহমানের মুক্তির দাবিতে আদালত চত্বরে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষার্থীরা। পরে তারা সড়ক অবরোধ করেন। ফলে সড়কের দুই পাশে অসংখ্য যানবাহন আটকা পড়ে।
মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) বিকেলে পঞ্চগড় জেলা ও দায়রা জজ আদালত চত্বরের ন্যায়কুঞ্জ ভবনের সামনে পঞ্চগড় সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অবস্থান নেন। পরে তারা সেখান থেকে সরে গিয়ে পঞ্চগড়-তেতুঁলিয়া মহাসড়ক অবরোধ করেন। পুলিশ গিয়ে তাদের বুঝিয়ে সড়ক থেকে সরিয়ে দেয়।
আরো পড়ুন: পঞ্চগড়ে ছাত্রীকে যৌন হয়রানির অভিযোগে শিক্ষক আটক
আরো পড়ুন:
পাবিপ্রবিতে জুলাই গণঅভ্যুত্থান নিয়ে প্রজেক্ট শো
অবকাঠামো উন্নয়নের দাবিতে ববিতে মানববন্ধন
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা জানান, গণিত বিষয়ের শিক্ষক মোস্তাফিজুর রহমানকে ন্যায় বিচার পাওয়া থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর বাবা আদালতের কর্মকর্তা হওয়ায় আসামির পক্ষে কোনো আইনজীবীকে দাঁড়াতে দিচ্ছেন না। দ্রুত সময়ের মধ্যে তারা শিক্ষক মোস্তাফিজুর রহমানের জামিন দাবি করেন।
অভিযুক্ত শিক্ষক মোস্তাফিজুর রহমানের স্ত্রী আক্তার বানুর অভিযোগ, “একটি মিথ্যা মামলায় আমার স্বামীকে কারাগারে রাখা হয়েছে। ভুক্তভোগীর বাবা আইনজীবী হওয়ায় আমাদের পক্ষে কোনো আইনজীবীকে শুনানি করতে দেওয়া হচ্ছে না।”
তিনি আরো বলেন, “মঙ্গলবার দুপুরে মামলার শুনানিকালে এজলাসে আসামি পক্ষের কাউকে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। দ্রুতই মামলার চার্জশিট দেওয়া হয়েছে। কোনো মামলায় এত দ্রুত চার্জশিট দেওয়া হয় না। আমি আমার স্বামীর মুক্তি দাবি করছি।”
নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনালের বিশেষ পাবলিক প্রসিকিউটর জাকির হোসেন বলেন, “আসামির মামলার শুনানি যথাযথ প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে হচ্ছে। আসামি পক্ষে কোনো আইনজীবী দাঁড়াতে দেওয়া হচ্ছে না অভিযোগটি সত্য নয়। তারা কোনো আইনজীবীর প্রতি ভরসা রাখতে পারছেন না।”
তিনি বলেন, “শিশু আছিয়া মারা যাওয়ার পর থেকে প্রতিটি ধর্ষণ মামলা দ্রুততম সময়ের মধ্যে শেষ করার নির্দেশনা রয়েছে।”
গত ১৬ এপ্রিল ৯ম শ্রেণির এক ছাত্রীকে ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগে শিক্ষক মোস্তাফিজুর রহমানকে আটক করে গণধোলাইয়ের পর পুলিশে সোপর্দ করেন স্থানীয়রা।
ওসি বলেন, “শিক্ষার্থীরা শিক্ষকের জামিন হচ্ছে না দাবি করে আন্দোলন করেন। তারা ২০ মিনিটের মতো সড়ক অবরোধ করে রাখেন। আমরা গিয়ে শিক্ষার্থীদের বুঝাই, আদালতের বিষয়ে হস্তক্ষেপ করার সুযোগ নেই। এরপর শিক্ষার্থীরা সড়ক থেকে সরে যান।”
ঢাকা/নাঈম/মাসুদ