জুলাই আন্দোলনকে কেন্দ্র করে উদ্দেশ্যমূলক মামলা হচ্ছে দাবি করে এসব ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও উদ্বেগ জানিয়েছে হিউম্যান রাইটস ফোরাম বাংলাদেশ (এইচআরএফবি)। পাশাপাশি এসব মামলায় অভিনেতা ইরেশ জাকেরসহ যাঁদের ইচ্ছাকৃত বা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে আসামি করা হয়েছে, তদন্ত করে সেসব নাম বাদ দিতে আহ্বান জানিয়েছে জোটটি।

২০টি মানবাধিকার ও উন্নয়ন সংগঠনের জোট এইচআরএফবি আজ মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে এ কথা বলে।

বিবৃতিতে এসব মামলায় কেউ যেন হয়রানির শিকার না হন, সে জন্য সরকারকে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ জানানো হয়। একই সঙ্গে আইনের অপব্যবহারকারীদের ব্যাপারে জরুরি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে।

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালে গুলিতে বিএনপির কর্মী মাহফুজ আলমকে (শ্রাবণ) হত্যার অভিযোগে অভিনেতা ইরেশ জাকেরসহ পেশাদার সাংবাদিকদের আসামি করে মিরপুর থানায় দায়ের হওয়া মামলার বিষয়টি উল্লেখ করে এইচআরএফবি বলে, এ মৃত্যুর ঘটনায় সাধারণ নাগরিকদের সম্পৃক্ত করে মামলা করা হয়েছে। এর ফলে ন্যায়বিচার পাওয়ার ক্ষেত্রে অনিশ্চয়তা তৈরি হতে পারে।

বিবৃতিতে বলা হয়, জুলাই-আগস্টের গণ-আন্দোলনে হতাহতের বিচার চেয়ে দেশজুড়ে ঢালাওভাবে যেসব মামলা হচ্ছে, এতে ভুক্তভোগীর পরিবার সঠিক বিচার পাবে কি না, তা নিয়ে শঙ্কা থেকে যায়। গণহারে আসামি করায় মামলার তদন্ত ও বিচার বিঘ্নিত হওয়া এবং তদন্ত প্রতিবেদন দিতে দীর্ঘসূত্রতা তৈরি হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন তাঁরা।

কোনো প্রমাণ ছাড়া কারও বিরুদ্ধে হত্যার মতো গুরুতর অভিযোগে মামলা হওয়ার ঘটনা নিশ্চিতভাবেই নিপীড়নমূলক এবং অগ্রহণযোগ্য বলে বিবৃতিতে বলা হয়। বলা হয়, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও হয়রানিমূলক অভিযোগ ঢালাওভাবে আমলে নেওয়ার ফলে মামলা, গ্রেপ্তার ও জামিন বাণিজ্যের বিকাশ ঘটছে এবং প্রকৃত অপরাধীদের বিচার বিঘ্নিত হওয়ার ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে, তেমনি সার্বিকভাবে ন্যায়বিচারবিরোধী দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রমূলক অপপ্রচারের সুযোগও উদ্বেগজনকভাবে বাড়ছে।

বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেন হামিদা হোসেন, সুলতানা কামাল, জেড আই খান পান্না, সারা হোসেন, ইফতেখারুজ্জামান, ফওজিয়া মোসলেম, শামসুল হুদা, খুশী কবির, সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহমেদ প্রমুখ।

নিরপরাধ ব্যক্তিকে আসামি করায় আসকের উদ্বেগ

অন্য এক বিবৃতিতে নিরপরাধ ব্যক্তিকে আসামি করায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)। বিবৃতিতে আসক জানায়, সম্প্রতি একটি মামলায় অভিনেতা ইরেশ জাকেরসহ অন্তত ২৫ জন সাংবাদিককে অন্তর্ভুক্তি করে হত্যা মামলা হয়েছে। এ ধরনের উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলা করে নিরীহ মানুষদের হয়রানির ঘটনা অগ্রহণযোগ্য। বিগত সরকারের সময় বিভিন্ন সময়ে ‘গায়েবি’ মামলার ঘটনায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছিল । বর্তমান সরকারের সময়েও ‘গায়েবি’ মামলা ফিরে এসেছে বলে প্রতীয়মান হচ্ছে।

বিবৃতিতে আসক বলছে, তারা মনে করে, ঘটনার সঙ্গে ন্যূনতম সম্পর্ক নেই, এমনকি বিদেশে অবস্থানকালীন ঘটনায় দায়েরকৃত মামলায় এজাহারভুক্ত এবং গণমাধ্যমকর্মী যাঁরা আসামি হয়ে হয়রানির শিকার হচ্ছেন, অনতিবিলম্বে তদন্ত সাপেক্ষে এ ধরনের হয়রানিমূলক মামলা থেকে তাঁদের নাম বাদ দিতে হবে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: হয়র ন র ঘটন ঘটন য় তদন ত

এছাড়াও পড়ুন:

পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে বংশে তিনি প্রথম, তাই এত আয়োজন

চীনে উচ্চশিক্ষার জন্য অভিজাত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে প্রথম সারিতে রয়েছে বেইজিংয়ের পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়। সেখানে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাওয়া দেশটির যেকোনো শিক্ষার্থীর জন্য দারুণ সম্মানের। এ বছর পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন লি গুওইয়াও।

লির বাড়ি জেজিয়াং প্রদেশের ওয়েনজউ শহরে। এর আগে তাঁর বংশে শত বছরের ইতিহাসে কেউ পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পাননি। এত বড় সম্মানের উপলক্ষ উদ্‌যাপন করতে তাই বিন্দুমাত্র কার্পণ্য করেননি লির পরিবার ও গ্রামের বাসিন্দারা। রীতিমতো লালগালিচা বিছিয়ে, মোটর শোভাযাত্রা করে, ব্যান্ড বাজিয়ে পরিবার ও গ্রামের মুখ উজ্জ্বল করা লিকে সংবর্ধনা দেন তাঁরা, সঙ্গে ছিল ভূরিভোজের ব্যবস্থা। চীনের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম উইবোতে এই সংবর্ধনার ছবি ও ভিডিও রীতিমতো ভাইরাল হয়ে যায়।

চীনে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য জাতীয় পর্যায়ে একটি পরীক্ষা নেওয়া হয়। যেটি ‘গাওকাও’ নামে পরিচিত। তীব্র প্রতিযোগিতাপূর্ণ এই পরীক্ষা বেশ কঠিন। পরীক্ষায় মোট ৭৫০ নম্বরের মধ্যে লি পেয়েছেন ৬৯১।

লির গ্রামের এক প্রতিবেশী জানান, লির বাবা নির্মাণশ্রমিক। লির মা মাত্র ২ হাজার ৮০০ ইউয়ান বেতনে একটি সুপারশপে কাজ করেন। সত্যি বলতে, ছেলেটি সম্পূর্ণ নিজের চেষ্টা আর পরিশ্রমে এটা অর্জন করেছেন।

প্রতিবেশী আরেক গ্রামবাসী বলেন, লি তাঁর বাবার কাছ থেকে পাওয়া একটি পুরোনো মুঠোফোন দিয়ে প্রশ্নোত্তর অনুশীলন করতেন। সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোয় গ্রামের গ্রন্থাগারে বসে পরীক্ষার প্রশ্নপত্র হাতে লিখে তারপর সেগুলো অনুশীলন করতেন। মাধ্যমিকে তিনি কখনো কোনো প্রাইভেট শিক্ষকের কাছে পড়েননি।

লিকে সংবর্ধনা দিতে শতাব্দীপ্রাচীন ঐতিহ্য ভেঙে তাঁদের গ্রামের পূর্বপুরুষদের মন্দিরের প্রধান ফটক খোলা হয়, যা একটি বিশেষ সম্মানের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত।

লিকে সংবর্ধনা দেওয়ার ছবি ও ভিডিও চীনজুড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

অনলাইনে একজন লেখেন, ‘পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে ৬৯১ নম্বর! এটা অবিশ্বাস্য। সত্যিই পুরো পরিবারের মুখ উজ্জ্বল করেছে!’

তবে কেউ কেউ এই জমকালো উদ্‌যাপন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

তাঁরা বলেছেন, এটা কি একটু বাড়াবাড়ি নয়? উৎসবটা খুবই জাঁকজমকপূর্ণ, এতে ছেলেটার ওপর অকারণ চাপ তৈরি হতে পারে। স্নাতক হওয়ার পর কি পরিবার তাঁর কাছ থেকে অনেক বেশি কিছু প্রত্যাশা করবে না?

সম্পর্কিত নিবন্ধ