কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষকের পদাবনতি, দুই শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার
Published: 30th, April 2025 GMT
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরিবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে দুই শিক্ষকের পদাবনতি দেওয়া হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের আলী রেজওয়ানকে সহযোগী অধ্যাপক থেকে সহকারী অধ্যাপক এবং ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের মোহাম্মদ জসিম উদ্দিনকে সহকারী অধ্যাপক থেকে প্রভাষক পদে পদাবনতি দেওয়া হয়েছে।
এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা শিক্ষা বিভাগের এমবিএ ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী তাকভির আল মাহমুদ ও সাইদ উদ্দিন আহমেদকে মাদক সেবনের অভিযোগে এক বছরের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে। একই সঙ্গে তাঁদের বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে প্রবেশ এবং আবাসিক হলে অবস্থানের ওপরও এক বছরের নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে।
গত সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০৪তম সিন্ডিকেট সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হায়দার আলী।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (চলতি দায়িত্ব) মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন গতকাল মঙ্গলবার রাতে প্রথম আলোকে বলেন, গত সোমবার বেলা ১১টায় সিন্ডিকেট সভা শুরু হয়ে সন্ধ্যার পর শেষ হয়। সভায় অর্ধশতাধিক বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে। সেসব লিখিত আকারে শিগগিরই প্রকাশ করা হবে।
সিন্ডিকেট সভার একাধিক সদস্য ও বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২০২০ সালে সান্ধ্যকালীন কোর্সের এক শিক্ষার্থীকে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ এবং বিভাগের শিক্ষকদের নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্যের কারণে ইংরেজি বিভাগের বিভাগীয় প্রধানের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয় আলী রেজওয়ানকে।
অন্যদিকে, ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মোহাম্মদ জসিম উদ্দিনের বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ ওঠে। পরবর্তী সময় তদন্তের স্বার্থে ১ অক্টোবর তাঁকে বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠানো হয়। এসব ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতেই তাঁদের বিরুদ্ধে পদাবনতির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এ ছাড়া গত ২৩ ফেব্রুয়ারি রাত সাড়ে ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মাঠে মাদক সেবনের সময় দুই শিক্ষার্থীসহ এক বহিরাগতকে আটক করে প্রক্টরিয়াল টিম। এর পরিপ্রেক্ষিতে দুই শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার এবং এক বছরের জন্য ক্যাম্পাসে প্রবেশ ও হলে অবস্থানের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হায়দার আলী বলেন, ‘সিন্ডিকেট সভায় সবার মতামতেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। শুধু এই সিদ্ধান্ত নয়, আরও বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে সবার সম্মতিক্রমেই। আমি আসলে একা কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারি না, কিছু চাপিয়েও দিতে পারি না। একটা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় সব সিন্ডিকেট সদস্যদের মত থাকে এখানে।’
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
মুক্তিপণ দিয়েও পাঁচ মাস ধরে ১৪ তরুণের খোঁজ পাচ্ছেন না স্বজনেরা
অবৈধ পথে ইতালির উদ্দেশে যাত্রা করেছিলেন মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার ১৪ তরুণ। কিন্তু দুবাই হয়ে লিবিয়ায় পৌঁছানোর পর পাঁচ মাস ধরে তাঁদের আর খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। স্বজনদের দাবি, দালালের প্রলোভনে পড়ে জনপ্রতি ৩০ থেকে ৩৫ লাখ টাকা মুক্তিপণও দিয়েছেন তাঁরা। কিন্তু সন্ধান না পাওয়ায় চরম দুশ্চিন্তায় দিন কাটাচ্ছেন তাঁরা।
ইউরোপের কোনো দেশে গেলে সচ্ছলতা আসবে, এমন ধারণা নিয়ে প্রতিবছর মাদারীপুর থেকে শত শত তরুণ সেখানে পাড়ি জমানোর চেষ্টা করছেন। তবে অবৈধ পথে ইউরোপ যেতে গিয়ে অনেকের মৃত্যু হয়েছে। কেউবা দালালের খপ্পরে পড়ে নির্যাতনের শিকার হয়ে কাটাচ্ছেন বন্দিজীবন। জেলা প্রশাসন ও পুলিশের তথ্য বলছে, ২০১৯ থেকে ২০২৩ সালের মার্চ পর্যন্ত জেলার ৪৫ জন লিবিয়া হয়ে ইতালি যাওয়ার পথে মারা গেছেন। ২০১৯ থেকে ২০২৩ সালের মার্চ পর্যন্ত সময়ের মধ্যে নির্যাতনের শিকার হয়ে লিবিয়া থেকে বাংলাদেশে ফিরে আসতে পেরেছেন অন্তত ৩৫০ তরুণ। নিখোঁজ আছেন তিন শতাধিক।
সবশেষ নিখোঁজ তরুণদের সবার বাড়ি রাজৈরের বাজিতপুর ইউনিয়নে। তাঁরা হলেন পাখুল্লা গ্রামের জাহাঙ্গীর ব্যাপারীর ছেলে সালমান ব্যাপারী, চৌরাশী গ্রামের মোসলেম শিকদারের ছেলে বাবুল শিকদার, একই গ্রামের মজিবর বয়াতীর ছেলে সাজ্জাদ বয়াতী, জাকির মাতুব্বরের ছেলে বাদল মাতুব্বর, কানাই রায়ের ছেলে লিটন রায়, নিরঞ্জন বাড়ৈর ছেলে বাঁধন বাড়ৈ, কিসমদ্দি বাজিতপুর গ্রামের আলম চৌকিদারের ছেলে ইমন চৌকিদার, অহিদুল মাতুব্বরের ছেলে নয়ন মাতুব্বর, আজিজ খালাসির ছেলে খলিল খালাসি, সোনা মিয়া চৌকিদারের ছেলে সোহেল চৌকিদার, নয়াকান্দি বাজিতপুর গ্রামের গৌরাঙ্গ বাড়ৈর ছেলে গৌতম বাড়ৈ, একই গ্রামের সামচু সরদারের ছেলে ইমরান সরদার, শ্রীনাথদী বাজিতপুরের জলিল বয়াতীর ছেলে আল আমিন বয়াতি ও শ্রীনদী গ্রামের সিদ্দিকুর রহমান ঘরামির ছেলে আলী ঘরামি। তাঁদের সবার বয়স ১৮ থেকে ২৮ বছরের মধ্যে।
স্বজনদের অভিযোগ, মানব পাচার চক্রের সক্রিয় সদস্য বাজিতপুর এলাকার বাবুল হাওলাদার ইতালি নেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে প্রত্যেক পরিবারের কাছ থেকে প্রথমে ১৬ লাখ টাকা করে নেন। পরে লিবিয়ায় বন্দী করে আদায় করেন আরও ২০ থেকে ২৫ লাখ টাকা। এর পর থেকে ঘরে তালা ঝুলিয়ে পালিয়েছেন অভিযুক্ত বাবুল ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা।
মাদারীপুরের ১৪ তরুণ ইতালি যেতে গত ফেব্রুয়ারি মাসে দালালের হাত ধরে ঘর ছাড়েন। নিখোঁজ তরুণদের সন্ধানে তাদের ছবি হাতে স্বজনেরা