ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধ বেধে গেলে চীনের ভূমিকা কী হবে
Published: 3rd, May 2025 GMT
কাশ্মীরের পেহেলগামে হামলার পর ভারত আর পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। এরই মধ্যে পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ তাঁর দেশে ভারতীয় হামলার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। এমন পরিস্থিতিতে চীনের ভূমিকা কী হবে, তা নিয়েও আলোচনা চলছে।
পাকিস্তান আর চীনের মধ্যে যে সুসম্পর্ক রয়েছে, সে কারণে কি ভারত কোনো কড়া পদক্ষেপ নেওয়া থেকে বিরত থাকবে? চীন এ বিতর্কে কতটা পাকিস্তানের পাশে দাঁড়াবে? উঠছে এসব প্রশ্নও।
চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই সম্প্রতি মন্তব্য করেছেন, কাশ্মীরের পেহেলগামে হামলার পর পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার দিকে নজর রাখছেন তাঁরা।
বেইজিং থেকে চীনের বিদেশ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দারের সঙ্গে কথা বলার সময়ে ওয়াং ই দুই পক্ষকেই সংযত থাকার অনুরোধ করেছিলেন।
পেহেলগামের হামলার পরের দিনই ঘটনার নিন্দা জানিয়েছে চীন। ভারতে চীনের রাষ্ট্রদূতও ওই হামলায় নিহত ব্যক্তিদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন।
বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলে বিবিসি জানার চেষ্টা করেছে, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে চীনের ভূমিকা কতটা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে আর তারা পাকিস্তানকে কতটা সহায়তা দিতে পারে।
নিরাপত্তা নিয়ে পাকিস্তান কেন চিন্তিতচীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী তথা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দারের সঙ্গে কথা বলার সময়ে ওয়াং ই জানিয়েছিলেন, দ্রুত নিরপেক্ষ তদন্তের দাবিকে চীন সমর্থন করে।
এর কারণ হিসেবে বলা হয়, এ সংঘাত পাকিস্তান বা ভারত কারও পক্ষেই যেমন ভালো নয়, তেমনই আঞ্চলিক শান্তি ও নিরাপত্তার জন্যও ক্ষতিকর হবে।
পেহেলগাম হামলার জন্য ভারতের দিক থেকে যেসব অভিযোগ তোলা হচ্ছে, তা অস্বীকার করেছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ।
পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আবার সব সময়ে তাদের পাশে থাকার জন্য চীনকে ধন্যবাদ জানিয়েছে।
পহেলগাম হামলার ‘নিরপেক্ষ তদন্ত’বেইজিংয়ের তাই হে ইনস্টিটিউটের সিনিয়র ফেলো আইনার ট্যাঙ্গেন বলছেন, কোনো প্রমাণ ছাড়াই ভারত দাবি করছে, পাকিস্তান এ হামলা করিয়েছে। এ ধরনের অভিযোগের তালিকাটা লম্বা, কিন্তু অভিযোগের সত্যতার জন্য তো পাকাপোক্ত প্রমাণের দরকার।
ট্যাঙ্গেনের কথায়, পানি বন্ধ করে দেওয়ার যে হুমকি দিয়েছে ভারত, সেটাও খুবই গুরুতর বিষয়। আসল প্রশ্ন হলো, সত্যিই কি ভারত পানি বন্ধ করে দেবে? যদি সেটা করা হয়, তাহলে দুটি দেশের মধ্যে সংঘর্ষের আশঙ্কা বাড়বে। শান্তি বজায় রাখতে তাই একমাত্র পথই হলো পেহেলগাম হামলার নিরপেক্ষ তদন্ত করা এবং সত্যের ভিত্তিতে সব প্রশ্নের জবাব সামনে আনা।
তাই হে ইনস্টিটিউটের সিনিয়র ফেলো বলছিলেন, এ উদ্যোগে চীনের মতো পাকিস্তানঘনিষ্ঠ দেশগুলোই শুধু নয়, তুরস্ক ও ‘ব্রিকস’-এর মতো সংগঠনগুলোকেও শামিল করা হোক, যাতে সঠিক তদন্ত হয় এবং তা দুই পক্ষের কাছেই গ্রহণযোগ্য হয়।
চীনের কাছে কোন বিষয়গুলো প্রাধান্য পাবেপাকিস্তান ও চীনের মধ্যে কয়েক দশক ধরেই প্রতিরক্ষা ও কূটনৈতিক সহযোগিতার সম্পর্ক রয়েছে। এই সময়কালের মধ্যে অর্থনৈতিকভাবেও চীনের প্রতি পাকিস্তানের নির্ভরতা বেড়েছে।
আধুনিক সমরসজ্জার জোগান হোক বা প্রতিবছর আর্থিক ঘাটতি সামাল দিতে ঋণ নেওয়া হোক অথবা ‘এফএটিএফ’-এর কড়া পদক্ষেপের হাত থেকে বাঁচতে—অনেক ক্ষেত্রেই পাকিস্তানকে সহায়তা দিতে এগিয়ে এসেছে চীন।
এফএটিএফ বা ফিন্যান্সিয়াল অ্যাকশন টাস্ক ফোর্স হলো বিশ্বের নানা দেশের একটি আন্তরাষ্ট্রীয় সংস্থা, যারা অর্থপাচার ও সন্ত্রাসবাদের অর্থায়নের ওপর নজরদারি চালায়।
আবার ‘চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডরের (সিপেক) মাধ্যমে পাকিস্তানে চীন ৬২ কোটি ডলার বিনিয়োগ করেছে। সম্প্রতি গদরে চীনা বিনিয়োগে নির্মিত বিমানবন্দরের উদ্বোধন করা হয়েছে।
চীন ও পাকিস্তান শুধু যৌথ সামরিক মহড়া করে থাকে তা নয়, চীনের কাছ থেকে পাকিস্তান বড় পরিমাণে আধুনিক অস্ত্রও কিনে থাকে।
স্টকহোমের ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের এক প্রতিবেদন দেখা যাচ্ছে, বিগত পাঁচ বছরে পাকিস্তান ৮১ শতাংশ অস্ত্রই চীন থেকে আমদানি করেছে।
পাকিস্তানের সাবেক কূটনৈতিক তসনিম আসলামের কথায়, পাকিস্তানের মাধ্যমে চীন উপসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোতে পৌঁছাতে পারে। কিন্তু পাকিস্তানে চীনের নাগরিকদের ওপরে হামলাও হয়েছে।
তাসনিম আসলাম বলেন, চীন এ অঞ্চলের এমন একটা বড় দেশ, যার সঙ্গে দুই প্রতিদ্বন্দ্বী দেশের সঙ্গেই বাণিজ্যিক সম্পর্ক আছে। ভারত যেমন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সীমান্ত অঞ্চলে উত্তেজনা তৈরির জন্য অভিযোগ তুলে থাকে, তেমনই পাকিস্তানও বালুচিস্তানের ঘটনাবলির জন্য ভারতকে দায়ী করে অভিযোগ তোলে। কিন্তু এ অঞ্চলে শান্তি বজায় থাকলেই চীনের স্বার্থ পূর্ণ হবে। চীনের দরকার নিজের অর্থনৈতিক স্বার্থ নিরাপদে রাখা।
পাকিস্তানের এই সাবেক কূটনৈতিক আরও বলেন, চীন এ অঞ্চলের দুটি দেশ পাকিস্তান আর ভারতের মধ্যে মধ্যস্থতা করতে পারে। যদিও এ জন্য নিরপেক্ষভাবে, প্রমাণের ওপর ভিত্তি করে এ ঘটনার তদন্ত করা জরুরি।
পাঞ্জাবে সামরিক মহড়ার সময় সেনাদের উদ্দেশে বক্তৃতা করছেন পাকিস্তানের সেনাপ্রধান আসিম মুনির। ১ মে, পাঞ্জাবের টিলা ফিল্ড ফায়ারিং রেঞ্জেস.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: পরর ষ ট র র জন য মন ত র তদন ত
এছাড়াও পড়ুন:
চবির বিশেষ ভোজের টোকেনে অনাবাসিক শিক্ষার্থীরা ‘অতিথি’
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) বিভিন্ন আবাসিক হলে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উদযাপন উপলক্ষ্যে আলোচনা সভা ও বিশেষ ভোজের আয়োজন করা হয়েছে। এতে আবাসিকদের শিক্ষার্থী বলা হচ্ছে এবং অনাবাসিকদের অতিথি হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
এছাড়া, আবাসিকদের জন্য টাকার পরিমাণ কম ধরলেও অনাবাসিকদের জন্য বেশি ধরা হয়েছে। এ নিয়ে ক্ষোভ জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সচেতন শিক্ষার্থীরা।
জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের শহিদ ফরহাদ হোসেন হলে উন্নত ভোজের টোকেন আবাসিকদের জন্য ১০০ টাকা ধরা হয়েছে। অপরদিকে, অতিথিদের জন্য ধরা হয়েছে ১৭০ টাকা; এই অতিথিরা হলেন হলের অনাবাসিক শিক্ষার্থী। শামসুন নাহার হলে আবাসিকদের জন্য ৮০ টাকা, অনাবাসিকদের জন্য ১৭০ টাকা। মিল পদ্ধতি চালু থাকা আমানত হলে আবাসিকদের জন্য ফ্রি হলেও অনাবাসিকদের জন্য ৭০ টাকা। তবে সোহরাওয়ার্দী হলে আবাসিক-অনাবাসিক সবার জন্যই ১৫৫ টাকা ধরা হয়েছে।
আরো পড়ুন:
এসএসসিতে জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা দিল শাবিপ্রবি প্রশাসন
চবিতে বিপ্লবী ছাত্র ঐক্যের আত্মপ্রকাশ
এদিকে, বিজয়-২৪ হলের প্রথম বিজ্ঞপ্তিতে আবাসিক-অনাবাসিক সবার জন্য ৮০ টাকা উল্লেখ করলেও দ্বিতীয় বিজ্ঞপ্তিতে অনাবাসিকদের জন্য ১৭০ টাকা ধরা হয়েছে। এভাবে অন্যান্য হলগুলোতেও একই অবস্থার কথা জানা গেছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের শিক্ষার্থী জারিফ মাহমুদ বলেন, “৫ আগস্টের ফিস্ট নিয়ে হলে হলে বিশেষ খাবারের আয়োজন করছে, সেখানে আবাসিক-অনাবাসিক আলাদা করেছে। আমার প্রশ্ন হলো, প্রশাসনদের ছাত্র বা সন্তান কি শুধু আবাসিকরা? আমরা যারা অনাবাসিক, তারা কি বিশ্ববিদ্যালয়ে উড়ে এসেছি?”
তিনি প্রশাসনকে উদ্দেশ্য করে বলেন, “আপনারা আমাদের হলে সিট দিতে পারেননি, এটা আপনাদের ব্যর্থতা। এই আবাসিক-অনাবাসিক পরিচয় বন্ধ করুন। আয়োজন করলে সবার জন্য সমান করে আয়োজন করুন। আর সেটা না পারলে আয়োজন বন্ধ করুন।”
ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী নাঈম শাহ ফেসবুকে লেখেন, “কোনো একটা বিশেষ দিন এলেই দেখা যায়, হল প্রশাসনগুলোর আবাসিক শিক্ষার্থীদের বিশেষ করে দাঁড় করানোর ভণ্ডামি। ৫ তারিখে আয়োজনকে ঘিরে তারা আবার সেই অতিথি টার্ম সামনে নিয়ে আসছে। ফরহাদ হলে অনুষ্ঠান শেষে বিশেষ ভোজের আয়োজনের টোকেন আবাসিক শিক্ষার্থীদের জন্য ১০০ টাকা এবং অতিথিদের জন্য ১৭০ টাকা। বাকি হলগুলোতে বোধহয় তাই করেছে। কিন্তু এই অতিথিগুলোও তো বিশ্ববিদ্যালয়েরই শিক্ষার্থী।”
তিনি বলেন, “বাহির থেকে যে কয়েকজন শিক্ষার্থী আসবে, তাদের থেকে ৭০ টাকা করে বেশি না নিলে তো হল প্রশাসন দেউলিয়া হয়ে যাচ্ছে না। আর আপনাদের যদি সামর্থ্য নাই থাকে, কাউকেই খাওয়ায়েন না। কিন্তু ৫ আগস্টের দিনকে কেন্দ্র করে করা অনুষ্ঠানে প্রিভিলেজড-আনপ্রিভিলেজড বিষয়টা জিইয়ে রাখাটা নিতান্ত নোংরামি লাগছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এটা নিয়ে ভাবা উচিত।”
এ বিষয়ে শহিদ মো. ফরহাদ হোসেন হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. আব্দুল মান্নান বলেন, “এ সিদ্ধান্তটি শুধু ফরহাদ হলের জন্য নয়, অন্যান্য হলেও এ সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়েছে। মূলত উন্নত ভোজের আয়োজনটি আবাসিক শিক্ষার্থীদের জন্য করা হয়েছে। তারপরেও কোনো অনাবাসিক শিক্ষার্থী বা কারো বন্ধুবান্ধব অংশ নিতে চাইলে পারবে। সেক্ষেত্রে তাদের জন্য টাকা বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। যেহেতু তাদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে কোনো বরাদ্দ দেওয়া হয়নি।”
বিশ্ববিদ্যালয়ে সব হল প্রাধ্যক্ষের উপস্থিতিতে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।
ঢাকা/মিজান/মেহেদী