আসন্ন ঈদুল আজহায় কোরবানির পশুর কোনো সংকট নেই। আমদানিরও দরকার নেই, বরং চাহিদার বেশি উদ্বৃত্ত থাকবে বলে জানিয়েছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার।

তিনি বলেন, “কোরবানিযোগ্য মোট গবাদিপশুর সংখ্যা এক কোটি ২৪ লাখ ৪৭ হাজার ৩৩৭টি। এবার প্রায় ২০ লাখ ৬৮ হাজার ১৩৫টি গবাদিপশু উদ্বৃত্ত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। বরং যে চাহিদা নির্ধারণ করা হয়েছে সেটা যদি বেড়েও যায় সেটা পূরণ করার মতো সক্ষমতা সরকারের রয়েছে।”

আসন্ন পবিত্র ঈদুল আজহা উদযাপন উপলক্ষে রবিবার (৪ মে) সচিবালয়ে কোরবানির পশুর চাহিদা নিরূপণ, সরবরাহ এবং দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে কোরবানির পশুর অবাধ চলাচল বা পরিবহন নিশ্চিতে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

আরো পড়ুন:

ইজারাদারদের দ্বন্দ্ব: রাজশাহীতে গরু হাটে নিতে টানাটানি

ইলিশ: দাম স্বাভাবিক, ক্রেতা কম

প্রতি বছরের মতো এ বছরও প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় দেশে কোরবানিযোগ্য গবাদিপশুর সংখ্যা নিরূপণ করেছে জানিয়ে ফরিদা আখতার বলেন, “এ বছর কোরবানিযোগ্য হৃষ্টপুষ্ট গবাদিপশুর মধ্যে ৫৬ লাখ ২ হাজার ৯০৫টি গরু-মহিষ, ৬৮ লাখ ৩৮ হাজার ৯২০টি ছাগল-ভেড়া এবং ৫ হাজার ৫১২টি অন্য প্রজাতিসহ মোট এক কোটি ২৪ লাখ ৪৭ হাজার ৩৩৭টি গবাদিপশুর প্রাপ্যতা আশা করা যাচ্ছে। এ বছর প্রায় ২০ লাখ ৬৮ হাজার ১৩৫টি গবাদিপশু উদ্বৃত্ত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।”

তিনি বলেন, “ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে আমরা মোটামুটি অনেক প্রস্তুতি নিচ্ছি। সতর্কতার সঙ্গে প্রস্তুতি নিচ্ছি যে, গবাদি পশুর যে বাজার সেটা যেন স্থিতিশীল থাকে। খামারিরা বছরের একটা সময় ইনকামের জন্য যে কাজটা করে সেটা যেন ঠিক থাকে। অন্যদিকে যারা কোরবানি দেবেন পশুর দাম যেন তাদের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে থাকে। আমদানির প্রয়োজন নেই, নিয়ন্ত্রণ করা হবে চাঁদাবাজি।”

এ বছর গবাদিপশু আমদানি করার প্রয়োজন নেই মন্তব্য করে উপদেষ্টা বলেন, “অবৈধ পথেও যেন কোনো পশু বাংলাদেশ থেকে আসতে না পারে সেই ব্যবস্থা আমরা করব। আমাদের দেশীয় উৎপাদিত যে গবাদিপশু খামারিরা করেন, তা যথেষ্ট। প্রয়োজনের তুলনায় আমাদের আয়োজন ও ব্যবস্থাপনা ঠিক আছে।”

আগামী কোরবানির ঈদে বাজার যেন কেউ অস্থিতিশীল করতে না পারে, সেজন্য সাংবাদিকদের সহযোগিতা চেয়ে ফরিদা আখতার বলেন, “চাঁদাবাজির কারণে পশুর দাম যেন না বাড়ে সেজন্য সরকার কাজ করে যাচ্ছে। আমরা আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক করেছি, সেখানে এই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে।”

সারা দেশে বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে কোরবানিযোগ্য গবাদিপশু হৃষ্টপুষ্টকরণ প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চলমান রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “গবাদি পশু হৃষ্টপুষ্টকরণ ও বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে লালন-পালন বিষয়ে ৮৩ হাজার ৬৫৬ জন খামারিকে প্রশিক্ষণ, ৬ হাজার ৬০০টি উঠান বৈঠক, ২ লাখ ৭৪ হাজার ৩৭৮টি লিফলেট ও পোস্টার বিতরণ করা হয়েছে। স্টেরয়েড ও হরমোন ব্যবহার রোধে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে খামারিদের প্রশিক্ষণ চলমান এবং জেলা প্রশাসন ও জেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরের যৌথ সহযোগিতায় মোবাইল কোর্ট পরিচালনা অব্যাহত থাকবে। এরই মধ্যে ৫৩ হাজার ২৬৩টি খামার পরিদর্শন করে খামারিদের স্টেরয়েড বা হরমোনের কুফল সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করা হয়েছে।”

বাসে বা পরিবহনে বাসের লকআপে ছাগল ও ভেড়া পরিবহন না করে সে বিষয়ে সচেতনতাসহ প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হবে জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, “প্রাণিকল্যাণ আইন, ২০১৯ অনুযায়ী কোরবানিযোগ্য গবাদিপশুর প্রতি নিষ্ঠুর আচরণ পরিহার করতে হবে এবং যথাযথ পরিবহনের মাধ্যমে পরিবহন নিশ্চিত করতে হবে। তা ব্যত্যয় হলে প্রাণিকল্যাণ আইন অনুযায়ী শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

রাজধানীর ১৯ হাটে ২০ ভেটেরিনারি মেডিকেল দল থাকবে জানিয়ে ফরিদা আখতার বলেন, “সিটি করপোরেশন বা পৌরসভার উদ্যোগে প্রতিটি হাটে উপযুক্ত ও নির্দিষ্ট স্থান নির্ধারণপূর্বক ভেটেরিনারি মেডিকেল দলের ক্যাম্প স্থাপন করাসহ দায়িত্ব পালনকালীন প্রয়োজনীয় লজিস্টিক সাপোর্ট থাকবে। ভেটেরিনারি মেডিকেল টিমের সেবা কর্মীদের জন্য এপ্রোন, মাস্ক, চেয়ার-টেবিল, বালতি, মগ ইত্যাদি সরবরাহ করা হবে।”

তিনি বলেন, “গত বছরের মতো এবারও ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের আওতায় ১৯টি পশুর হাটে পশুর প্রাথমিক চিকিৎসা দিতে ২০টি ভেটেরিনারি মেডিকেল দল গঠন করা হবে। ভেটেরিনারি মেডিকেল দলের কার্যক্রম মনিটরিং এর জন্য ৫টি কেন্দ্রীয় মনিটরিং দল এবং ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনে দুটি বিশেষজ্ঞ মেডিকেল দল গঠন করা হবে। কেন্দ্রীয় সমন্বয়, ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা, কন্ট্রোল রুম পরিচালনাসহ কার্যক্রম পরিচালনার জন্য পৃথক টিম গঠন করা হবে। মন্ত্রণালয়ের গঠিত মনিটরিং দল ঢাকা শহরে ভেটেরিনারি মেডিকেল দলের কার্যক্রম মনিটরিং করবেন। বিভাগীয়, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে গঠিত মনিটরিং দল সংশ্লিষ্ট উপজেলার ভেটেরিনারি মেডিকেল দলের কার্যক্রম মনিটরিং করবেন।”

তিনি আরো বলেন, “স্বাস্থ্যসম্মতভাবে গবাদিপশু কোরবানির জন্য চামড়া ছাড়ানো ও সংরক্ষণ বিষয়ে ১৫ হাজার ৩৬৯ জন পেশাদার ও ২১ হাজার ২০৮ জন অপেশাদার মাংস প্রক্রিয়াজাতকারীকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। খামারিদের ন্যয্যমূল্য, পশুর দাম যেন কোরবানিদাতারর ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে থাকে সেদিকে লক্ষ্য রাখা হবে এবং কঠোরভাবে বাজার নিয়ন্ত্রণ করা হবে,” বলেও জানান তিনি।

চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ৭ জুন দেশে মুসলমানদের দ্বিতীয় বড় ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল আজহা উদযাপিত হবে।

ঢাকা/নঈমুদ্দীন/সাইফ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর গর ম ড ক ল দল র ক ক রব ন য গ য ক রব ন র পর বহন র জন য এ বছর আখত র

এছাড়াও পড়ুন:

বড় ভাইয়ের বিয়েতে যাওয়া হলো না আরমানের

ময়মনসিংহের গৌরীপুরের বয়রা গ্রামে বড় ভাই নোমান হোসেনের বিয়ে। আগামীকাল সোমবার বিয়ের অনুষ্ঠান। বাড়িতে এর মধ্যেই দূরের স্বজনদের অনেকেই এসে উপস্থিত হয়েছেন। বড় ভাইয়ের বিয়েতে অংশ নিতে চট্টগ্রাম থেকে কর্ণফুলী এক্সপ্রেস ট্রেনে বাড়ির উদ্দেশে রওনা দিয়েছিলেন আরমান হোসেন (১৮)। তবে বাড়িতে পৌঁছানো হয়নি তাঁর। পথেই ট্রেনের ছাদ থেকে পড়ে আরমানের মৃত্যু হয়। মুহূর্তে বিয়ের উৎসবে শুরু হয় শোকের মাতম।

আজ রোববার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড রেলস্টেশনের উত্তরে এ দুর্ঘটনা ঘটে। তিন ভাই ও দুই বোনের মধ্যে নিহত আরমান দ্বিতীয়।

আরমানের বড় ভাই নোমান হোসেন মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, তিনি কাজ করেন চট্টগ্রাম নগরের কর্ণফুলী ইপিজেডে একটি কারখানায়। তাঁর ভাই আরমান পতেঙ্গার কাঠগড়ের একটি রেস্তোরাঁয় চাকরি করতেন। বিয়ে উপলক্ষে নোমান আগেই বাড়িতে চলে যান। তাঁর ছোট ভাই আরমান আজ সকালে চট্টগ্রাম রেলস্টেশন থেকে কর্ণফুলী এক্সপ্রেস ট্রেনে বাড়িতে আসছিলেন। ট্রেনটি সীতাকুণ্ড পৌঁছালে অসাবধানতাবশত ট্রেনের ছাদ থেকে পড়ে যান তিনি। গুরুতর আহত আরমানকে উদ্ধার করে প্রথমে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। সেখান থেকে তাঁকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

নোমান বলেন, তাঁর ভাইয়ের মৃত্যুর খবর বাড়িতে পৌঁছালে বিয়ের আনন্দ হঠাৎ বিষাদে পরিণত হয়। এখন বাড়িতে শোকের মাতম চলছে। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তাঁরা লোক পাঠিয়েছেন। তাঁরা লাশ গ্রহণ করে বাড়িতে নিয়ে আসবেন বলে জানান তিনি।

সীতাকুণ্ড রেল পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ উপপরিদর্শক (এসআই) আশরাফ ছিদ্দিকী প্রথম আলোকে বলেন, তিনি শুনেছেন, সীতাকুণ্ড রেলস্টেশনের উত্তর পাশের কোনো একটি জায়গায় ট্রেনের ছাদ থেকে পড়ে এক তরুণ নিহত হয়েছেন। নিহত তরুণের লাশ চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের মর্গে রয়েছে বলে জেনেছেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ