ন্যায় প্রতিষ্ঠায় অন্তর্ভুক্তিমূলক কর্মসংস্থান নীতি অপরিহার্য
Published: 5th, May 2025 GMT
বিশেষজ্ঞ ও অংশীজনরা জোর দিয়ে বলছেন, বাংলাদেশে ন্যায্য নিয়োগ প্রক্রিয়া এবং বৈষম্যবিরোধী পদক্ষেপের মাধ্যমে অন্তর্ভুক্তি বাড়াতে একটি কার্যকর জাতীয় নীতির প্রয়োজন, যাতে কেউ কর্মক্ষেত্রের জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতা, সক্ষমতা ও মনোভাব থাকা সত্ত্বেও কর্মবাজার থেকে বঞ্চিত না হন।
উন্নত ভবিষ্যৎ গড়ার লক্ষ্য সামনে রেখে সোমবার (৫ মে) রাজধানীতে এক জাতীয় সংলাপে বিষয়টি উঠে এসেছে।
ইউসেপ বাংলাদেশ-এর শিক্ষার্থী মো.
আরো পড়ুন:
সিলেটে এয়ারপোর্ট সড়ক অবরোধ করে চা-শ্রমিকদের বিক্ষোভ
গোপালগঞ্জে ভবন থেকে পড়ে রাজমিস্ত্রির মৃত্যু
তিনি প্রশ্ন রাখেন, “দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা এবং শিল্পের মধ্যে কি এমন কোনো যোগাযোগের মাধ্যম রয়েছে, যা যুবসমাজকে কর্মক্ষেত্রের চাহিদার বিষয়ে আপডেট রাখবে?” তিনি এমন উদ্যোগ চান, যাতে যুবসমাজের অর্জিত দক্ষতা শ্রমবাজারে প্রয়োগযোগ্য হবে।
চট্টগ্রামের পাহাড় থেকে আসা লিলি প্রু মারমা কর্মক্ষেত্রে আদিবাসীদের চ্যালেঞ্জ- যেমন প্রশিক্ষণ ও চাকরির সুযোগের অভাব, ভৌগোলিক ও ভাষাগত বাধা তুলে ধরে তাদের কর্মসংস্থান নীতিতে অন্তর্ভুক্তির জন্য ইতিবাচক পদক্ষেপ গ্রহণ ও জবাবদিহিতার কাঠামো গড়ে তোলার অনুরোধ করেন।
আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা- আইএলও, বাংলাদেশ বিজনেস অ্যান্ড ডিজেবিলিটি নেটওয়ার্ক ও বহ্নিশিখা যৌথভাবে শ্রম দিবস উদযাপনের অংশ হিসেবে এই জাতীয় সংলাপ আয়োজন করে। এতে শ্রমবাজারে অন্তর্ভুক্তিমূলক নীতির গুরুত্ব তুলে ধরা হয়। কর্মস্থলে সহিষ্ণুতা ও পরিবর্তনের কণ্ঠস্বরকে স্বাগত জানানো হয়।
আইএলও বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর টুমো পোটিআইনেন বলেন, “আমরা একত্রিত হয়েছি সকল শ্রমিকের, বিশেষ করে যাদের কণ্ঠস্বর প্রায়ই অশ্রুত হয়েছে, তাদের ধৈর্য, আকাঙ্ক্ষা ও অধিকার স্বীকার করার জন্য। বাংলাদেশ যখন জনগণের জন্য একটি নতুন ভবিষ্যতের রূপরেখা গড়ছে, তখন সকল নারী ও পুরুষের জন্য সমান সুযোগের গুরুত্বকে অতিরঞ্জিত করা যাবে না।”
সংলাপে অংশগ্রহণকারীরা সমাজে দৃষ্টান্তস্থাপন করা নারীদের ও পুরুষদের কথা শোনেন, যারা সংখ্যালঘু বা পিছিয়ে পড়া গোষ্ঠীর অর্ন্তভুক্ত হলেও তাদের কাজের জগতে সাফল্য অর্জন করেছেন এবং কর্মস্থলের প্রতিবন্ধকতাগুলো ভেঙে সমাজ ও অর্থনীতিতে অবদান রাখছেন।
বক্তারা বলেন, বৈষম্য কাঠামোগত এবং অচেতনভাবে এখনো বিদ্যমান। তাই তারা স্পষ্টভাবে নীতি এবং সংস্কৃতি ও মনোভাব পরিবর্তনের আহ্বান জানান।
শ্রমিক প্রতিনিধি ও ন্যাশনাল কো-অরডিনেশন কমিটি ফর ওয়ার্কার্স এডুকেশন (এনসিসিডব্লিউই) এর চেয়ারম্যান বাদল খান বলেন, কার্যকর অন্তর্ভুক্তি কেবল শ্রম অধিকারের ভিত্তিতেই অর্জন করা সম্ভব; এটি অবশ্যই অন্তর্ভুক্তি এবং সমতার ভিত্তি হতে হবে।
বাংলাদেশ এমপ্লয়ার্স ফেডারেশনের ভাইস-প্রেসিডেন্ট তাহমিদ আহমেদ বলেন, অন্তর্ভুক্তির ক্ষেত্রে অবশ্যই নীতির বাইরেও যেতে হবে। এটি কর্মক্ষেত্রের সংস্কৃতির অংশ হতে হবে, যা সকল কর্মীকে মর্যাদা এবং সুরক্ষা দেয়। আজ আমরা যে অভিজ্ঞতালব্ধ গল্পগুলো শুনেছি, তা আমাদের অন্তর্ভুক্তিমূলক কর্মক্ষেত্র তৈরিতে আরো কিছু করার জন্য অনুপ্রাণিত করে।
শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব এএইচএম শফিউজ্জামান বলেন, অন্তর্ভুক্তিমূলক শ্রমবাজার শুধু একটি উন্নয়ন লক্ষ্য নয়, এটি সবার জন্য মর্যাদা, ন্যায়বিচার এবং সামাজিক ও অর্থনৈতিক ন্যায়বিচারের প্রশ্ন। অন্তর্ভুক্তি কেবল ব্যক্তিদের উপকার করে না, এটি সমগ্র সম্প্রদায় ও অর্থনীতিকেও শক্তিশালী করে।
নারী ও শিশুবিষয়ক এবং সমাজকল্যাণ উপদেষ্টা শারমিন এস মুরশিদ ঘর থেকে শুরু করে যাতায়াতের পথে এবং কর্মস্থলে নিরাপত্তার বিষয়টিকে নারীদের শ্রমবাজারে অন্তর্ভুক্তির পথে মূল বাধা হিসেবে মনে করেন।
শারমিন এস মুরশিদ বলেন, গণপরিবহন এবং কর্মস্থলে যৌন হয়রানির ব্যাপকতা একটি বড় সমস্যা।
তিনি বলেন, “নারীদের কর্মজীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নীতি সংস্কারের প্রয়োজন। আমরা শক্তিশালী নীতি গ্রহণ করে প্রতিটি প্রতিষ্ঠান ও সংস্থায় এর বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে বিষয়টি পর্যালোচনা করছি।”
শ্রম উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এম সাখাওয়াত হোসেন সংলাপের সমাপ্তি ঘোষণা করেন।
এ সময় তিনি যৌন হয়রানি এবং নারীদের প্রতি সহিংসতার ক্ষেত্রে আইন প্রয়োগের ওপর জোর দিয়ে বলেন, এই ধরনের কর্মকাণ্ডের পরিণতি ভয়াবহ হবে।
ঢাকা/হাসান/রাসেল
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ম দ বস শ রমব জ র র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
আর কত অঙ্ক মেলাবে বাংলাদেশ
যোগ, বিয়োগ, গুণ, ভাগ—বাংলাদেশের বেশির ভাগ মানুষের জন্যই শৈশবের দুঃসহ স্মৃতি। পড়ালেখার পাঠ চুকিয়ে অনেকেই অঙ্কের কঠিন সব ধাধা থেকে বেঁচে যাওয়ার স্বস্তির শ্বাস ছাড়েন— বিশ্ববিদ্যালয়ে পা রেখে গণিতের সমীকরণের পথ পেরোতে হবে না এমন বিষয় খোঁজেন কেউ কেউ।
কিন্তু তিনি যদি বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সমর্থক হন? তাহলে তাঁর আর ওই সুযোগ কই। আগে তো তাও টিউশনে গিয়ে আলাদা করে অঙ্কটা বুঝে নেওয়া যেত। কিন্তু বাংলাদেশ ক্রিকেটের অঙ্কটা মেলাতে সে সাহায্যও নেই। উল্টো উচ্চরক্তচাপ মেপে নেওয়ার মেশিনটা কোথায় আছে, অল্প বয়সেই শুরু করতে হয় সেই খোঁজ।
হৃদয়ে যাঁদের রোগ আছে, তাঁদের শঙ্কা থাকে হার্ট অ্যাটাকের। কে কত রান করলে কী হবে, কার জয়ে কী ক্ষতি—এসব সমীকরণ মেলাতে মেলাতে পার হয় বহু নির্ঘুম রাত। বিশ্বাস হচ্ছে না? ক্রিকেট সংক্রান্ত কোনো হ্যাশট্যাগ দিয়ে ফেসবুকে সার্চ করুন কাল রাতে আফগানিস্তান-শ্রীলঙ্কা এশিয়া কাপের ম্যাচের আগে-পরেও এমন কত অভিজ্ঞতা ঘুরে বেড়াচ্ছে সামাজিক মাধ্যমটিতে।
আফগানিস্তানের ইনিংসের শেষ ওভারে মোহাম্মদ নবী যখন ৫ ছক্কা হাঁকিয়ে দিলেন দুনিত ভেল্লালাগেকে—নবম-দশম শ্রেণির অঙ্কে ফাঁকি দেওয়া ছেলেটাও নিশ্চয়ই বসে গিয়েছিলেন অঙ্ক মেলাতে। এখন যদিও কাজটা সহজ, কোনো এক ব্রাউজারে ক্লিক করলেই ভেসে ওঠে লেখাটা ‘শ্রীলঙ্কা যদি…বাংলাদেশ তাহলে…।’
আরও পড়ুনসুপার ফোরে বাংলাদেশ৮ ঘণ্টা আগেযদি-কিন্তুর সমীকরণ মেলানো সহজ হয়ে গেলেও ম্যাচের দুশ্চিন্তা কমানোর কোনো অ্যাপ তো আর বের হয়নি। দুনিয়া আধুনিক হয়ে গেছে— কিন্তু বাংলাদেশের সমর্থকদের ম্যাচ জেতানোর রীতি তো রয়ে গেছে সেকেলেই। ‘এই এখান থেকে কিন্তু উঠবে না, উঠলেই আর শ্রীলঙ্কা জিতবে না’—কিছু মুহূর্তের জন্য আবুধাবির প্রেসবক্সের পাশের গ্যালারিতে গিয়েও শোনা গেল তা।
নিজের দলের হলেও তা না হয় মেনে নেওয়া যায়। কিন্তু ব্যস্ত জীবনে প্রতিদিন কি কাজ বাদ দিয়ে ক্রিকেট ম্যাচ দেখা যায়? বাংলাদেশের সমর্থকদের করতে হয় তাও। কারণ তাঁদের ভাগ্য তো আর নিজেদের হাতে না। এবারের এশিয়া কাপেই দেখুন, দুটো ম্যাচ জিতেও স্বস্তি ছিল না একদমই।
হংকংয়ের বিপক্ষে সহজে জিততে পারেনি লিটন দাসের দল