বিশেষজ্ঞ ও অংশীজনরা জোর দিয়ে বলছেন, বাংলাদেশে ন্যায্য নিয়োগ প্রক্রিয়া এবং বৈষম্যবিরোধী পদক্ষেপের মাধ্যমে অন্তর্ভুক্তি বাড়াতে একটি কার্যকর জাতীয় নীতির প্রয়োজন, যাতে কেউ কর্মক্ষেত্রের জন‌্য প্রয়োজনীয় দক্ষতা, সক্ষমতা ও মনোভাব থাকা সত্ত্বেও কর্মবাজার থেকে বঞ্চিত না হন।

উন্নত ভবিষ্যৎ গড়ার লক্ষ্য সামনে রেখে সোমবার (৫ মে) রাজধানীতে এক জাতীয় সংলাপে বিষয়টি উঠে এসেছে।

ইউসেপ বাংলাদেশ-এর শিক্ষার্থী মো.

রুবেল ইসলাম বাস্তব দক্ষতার অভাব নিয়ে দুঃখ প্রকাশ করেন এবং নিয়োগকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগের আরো সুযোগ সৃষ্টি করার দাবি তোলেন।

আরো পড়ুন:

সিলেটে এয়ারপোর্ট সড়ক অবরোধ করে চা-শ্রমিকদের বিক্ষোভ

গোপালগঞ্জে ভবন থেকে পড়ে রাজমিস্ত্রির মৃত্যু

তিনি প্রশ্ন রাখেন, “দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা এবং শিল্পের মধ্যে কি এমন কোনো যোগাযোগের মাধ্যম রয়েছে, যা যুবসমাজকে কর্মক্ষেত্রের চাহিদার বিষয়ে আপডেট রাখবে?” তিনি এমন উদ্যোগ চান, যাতে যুবসমাজের অর্জিত দক্ষতা শ্রমবাজারে প্রয়োগযোগ্য হবে।

চট্টগ্রামের পাহাড় থেকে আসা লিলি প্রু মারমা কর্মক্ষেত্রে আদিবাসীদের চ্যালেঞ্জ- যেমন প্রশিক্ষণ ও চাকরির সুযোগের অভাব, ভৌগোলিক ও ভাষাগত বাধা তুলে ধরে তাদের কর্মসংস্থান নীতিতে অন্তর্ভুক্তির জন্য ইতিবাচক পদক্ষেপ গ্রহণ ও জবাবদিহিতার কাঠামো গড়ে তোলার অনুরোধ করেন।

আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা- আইএলও, বাংলাদেশ বিজনেস অ্যান্ড ডিজেবিলিটি নেটওয়ার্ক ও বহ্নিশিখা যৌথভাবে শ্রম দিবস উদযাপনের অংশ হিসেবে এই জাতীয় সংলাপ আয়োজন করে। এতে শ্রমবাজারে অন্তর্ভুক্তিমূলক নীতির গুরুত্ব তুলে ধরা হয়। কর্মস্থলে সহিষ্ণুতা ও পরিবর্তনের কণ্ঠস্বরকে স্বাগত জানানো হয়।

আইএলও বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর টুমো পোটিআইনেন বলেন, “আমরা একত্রিত হয়েছি সকল শ্রমিকের, বিশেষ করে যাদের কণ্ঠস্বর প্রায়ই অশ্রুত হয়েছে, তাদের ধৈর্য, আকাঙ্ক্ষা ও অধিকার স্বীকার করার জন্য। বাংলাদেশ যখন জনগণের জন্য একটি নতুন ভবিষ্যতের রূপরেখা গড়ছে, তখন সকল নারী ও পুরুষের জন্য সমান সুযোগের গুরুত্বকে অতিরঞ্জিত করা যাবে না।”

সংলাপে অংশগ্রহণকারীরা সমাজে দৃষ্টান্তস্থাপন করা নারীদের ও পুরুষদের কথা শোনেন, যারা সংখ্যালঘু বা পিছিয়ে পড়া গোষ্ঠীর অর্ন্তভুক্ত হলেও তাদের কাজের জগতে সাফল্য অর্জন করেছেন এবং কর্মস্থলের প্রতিবন্ধকতাগুলো ভেঙে সমাজ ও অর্থনীতিতে অবদান রাখছেন।

বক্তারা বলেন, বৈষম্য কাঠামোগত এবং অচেতনভাবে এখনো বিদ্যমান। তাই তারা স্পষ্টভাবে নীতি এবং সংস্কৃতি ও মনোভাব পরিবর্তনের আহ্বান জানান।

শ্রমিক প্রতিনিধি ও ন্যাশনাল কো-অরডিনেশন কমিটি ফর ওয়ার্কার্স এডুকেশন (এনসিসিডব্লিউই) এর চেয়ারম্যান বাদল খান বলেন, কার্যকর অন্তর্ভুক্তি কেবল শ্রম অধিকারের ভিত্তিতেই অর্জন করা সম্ভব; এটি অবশ্যই অন্তর্ভুক্তি এবং সমতার ভিত্তি হতে হবে।

বাংলাদেশ এমপ্লয়ার্স ফেডারেশনের ভাইস-প্রেসিডেন্ট তাহমিদ আহমেদ বলেন, অন্তর্ভুক্তির ক্ষেত্রে অবশ্যই নীতির বাইরেও যেতে হবে। এটি কর্মক্ষেত্রের সংস্কৃতির অংশ হতে হবে, যা সকল কর্মীকে মর্যাদা এবং সুরক্ষা দেয়। আজ আমরা যে অভিজ্ঞতালব্ধ গল্পগুলো শুনেছি, তা আমাদের অন্তর্ভুক্তিমূলক কর্মক্ষেত্র তৈরিতে আরো কিছু করার জন্য অনুপ্রাণিত করে।

শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব এএইচএম শফিউজ্জামান বলেন, অন্তর্ভুক্তিমূলক শ্রমবাজার শুধু একটি উন্নয়ন লক্ষ্য নয়, এটি সবার জন্য মর্যাদা, ন্যায়বিচার এবং সামাজিক ও অর্থনৈতিক ন্যায়বিচারের প্রশ্ন। অন্তর্ভুক্তি কেবল ব্যক্তিদের উপকার করে না, এটি সমগ্র সম্প্রদায় ও অর্থনীতিকেও শক্তিশালী করে।

নারী ও শিশুবিষয়ক এবং সমাজকল্যাণ উপদেষ্টা শারমিন এস মুরশিদ ঘর থেকে শুরু করে যাতায়াতের পথে এবং কর্মস্থলে নিরাপত্তার বিষয়টিকে নারীদের শ্রমবাজারে অন্তর্ভুক্তির পথে মূল বাধা হিসেবে মনে করেন।

শারমিন এস মুরশিদ বলেন, গণপরিবহন এবং কর্মস্থলে যৌন হয়রানির ব্যাপকতা একটি বড় সমস্যা।

তিনি বলেন, “নারীদের কর্মজীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নীতি সংস্কারের প্রয়োজন। আমরা শক্তিশালী নীতি গ্রহণ করে প্রতিটি প্রতিষ্ঠান ও সংস্থায় এর বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে বিষয়টি পর্যালোচনা করছি।”

শ্রম উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এম সাখাওয়াত হোসেন সংলাপের সমাপ্তি ঘোষণা করেন।

এ সময় তিনি যৌন হয়রানি এবং নারীদের প্রতি সহিংসতার ক্ষেত্রে আইন প্রয়োগের ওপর জোর দিয়ে বলেন, এই ধরনের কর্মকাণ্ডের পরিণতি ভয়াবহ হবে।

ঢাকা/হাসান/রাসেল

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ম দ বস শ রমব জ র র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

নভেম্বর মধ্যে শ্রম আইন সংশোধন: সাখাওয়াত

শিশু শ্রমের শাস্তি বা‌ড়ি‌য়ে আগামী নভেম্বর মধ্যে শ্রম আইন সংশোধন করা হবে বলে জানিয়েছেন শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এম সাখাওয়াত হোসেন।

বুধবার (১৮ জুন) বিশ্ব শিশুশ্রম প্রতিরোধ দিবস উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তি‌নি এ কথা বলেন।

সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‍“বর্তমানে বাংলাদেশের পরিসংখ্যান কতটা বিশ্বাসযোগ্য আমি জানি না। তবে, বর্তমান সংজ্ঞা অনুযায়ী শিশু শ্রমিকের সংখ্যা ৩৫ লাখ।  ঝুঁকিপূর্ণ শ্রমে রয়েছে ১০ লাখ শিশু। এখান থেকে কীভাবে কমানো যায়, সেটা দেখছি। আর সংজ্ঞাটার কি হবে?”

আরো পড়ুন:

পুনরায় ভিসা কার্যক্রম চালু করায় অস্ট্রেলিয়াকে ধন্যবাদ জানালেন প্রধান উপদেষ্টা

রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস স্থাপনে কারো দ্বিমত নেই: উপদেষ্টা

তিনি বলেন, “অনেকে বাপের সঙ্গে মাছ ধরতে যায়। আবার সে স্কুলেও যায়। এগুলোর কি হবে? অনেক পরিবার কাজের জন্য শিশুকে পাঠায় ওস্তাদের সঙ্গে কাজ করার জন্য, পরে সে নিজেই মেকানিক হয়ে যায়। আমি অনুরোধ করব, জোর করে কাউকে পাঠাবেন না। বাচ্চারা স্কুল টাইম শেষ করে যদি ভলান্টিয়ারি কোনো কাজ করে সেটা হয়তো আমরা অন্যরকমভাবে দেখব। জোর করে কাউকে (শিশু) কাজে পাঠানো যাবে না, এটা দণ্ডনীয় অপরাধ।”

সম্প্রতি সুইজারল্যান্ডে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) ১১তম সম্মেলনে যোগ দেওয়ার বিষয়ে উপদেষ্টা বলেন, “শ্রমিকদের আইনগুলো শ্রমিকবান্ধব করার চেষ্টা করছি- সেখানে এটা শ্রমিক ও মালিকদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে আমরাও বলেছি। আমরা সবাই এক সুরে কথা বলেছি। এটা ছিল বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় পাওনা।”

“আমি আইএলও ডিজিসহ অনেকে সঙ্গে কথা বলেছি। সবাই বাংলাদেশের এখন যে অগ্রগতি হচ্ছে এটা নিয়ে বেশ সন্তুষ্ট। আমাদের যাওয়ার আগে এগুলো শেষ করতে হব”, যোগ করেন তিনি।

বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো আইএলও-তে এশিয়া প্যাসিফিক গ্রুপভুক্ত (এএসপিএজি) দেশগুলোর সমন্বয়কারী হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছে বলেও জানান সাখাওয়াত হোসেন।

শ্রম উপদেষ্টা বলেন, “বাংলাদেশে প্রতিবছর ১২ জুন বিশ্ব শিশুশ্রম প্রতিরোধ দিবস পালন করা হয়। এ বছর ১২ জুন সরকারি ছুটি থাকায় ১৯ জুন দিবসটি উদযাপন করা হবে। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য হলো- ‘স্বপ্নের ডানায় ভর করি, শিশু শ্রমের শৃঙ্খল ছিড়ি- এগিয়ে চলি দীপ্ত পায়ে, আশার আগুন বুকে জ্বালি’।

আইএলও শ্রম আইনের বিভিন্ন স্থানে সংশোধনের কথা বলেছিল- এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে সাখাওয়াত হোসেন বলেন, “আলোচনা হয়নি, তবে তারা জানে আমরা এটা নিয়ে কাজ করছি। আমরা চেষ্টা করছি যাতে আগামী দুই-তিন মাস বা নভেম্বরের মধ্যেই শ্রম আইনের সংশোধনটা কমপ্লিট করতে পারি।”

তি‌নি ব‌লেন, “শিশু শ্রমের বিষয়ে আমাদের আইনের যে বিধান আছে, এরই মধ্যে সেটার খসড়া করা হয়েছে। সেখানে জরিমানার পরিমাণ কয়েকগুণ বাড়ানো হচ্ছে।”

ঢাকা/নঈমুদ্দীন/মাসুদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • দেশে ৩৫ লাখ শিশু শ্রমিক, ১০ লাখ ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত
  • নভেম্বর মধ্যে শ্রম আইন সংশোধন: সাখাওয়াত