বাংলাদেশের জন্য এ বছরটি সব দিক থেকেই বেশ কঠিন। গত গ্রীষ্মে অর্থনৈতিক ভঙ্গুর পরিস্থিতির মধ্যে বিক্ষোভকারীরা একজন অত্যাচারী শাসককে উৎখাত করে এবং দেশে অস্থিতিশীলতা দেখা দেয়। অন্তর্বর্তী সরকারের হাত ধরে দেশের অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে অগ্রগতির মধ্যে এক ভয়াবহ খবর আসে। মাসখানেক আগে বাংলাদেশি পণ্য আমদানিতে ৩৭ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। এ নিয়ে বিশ্বজুড়ে প্রতিক্রিয়া শুরু হলে বাংলাদেশসহ অনেক দেশের শুল্ক স্থগিত করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তবে এই শুল্ক পুনরায় কার্যকর হওয়ার সম্ভাবনা বাংলাদেশের লাখ লাখ পোশাক শ্রমিককে দুশ্চিন্তায় ফেলে দিয়েছে। খবর নিউইয়র্ক টাইমসের
 
পাঁচ বছর ধরে পোশাক কারখানায় সেলাইয়ের কাজ করে পরিবার চালাচ্ছেন মুর্শিদা আখতার (২৫)। তাঁর বাড়ি দেশের উত্তরাঞ্চলে। বর্তমানে তিনি ঢাকার উপকণ্ঠে সাভারে বসবাস করেন। সম্প্রতি তিনি এবং তাঁর আরও ২০০ সহকর্মী (তাদের ৭০ শতাংশই নারী) সাভারের ৪এ ইয়ার্ন ডাইং নামের একটি পোশাক কারখানায় কাজ শুরু করেছেন। 

মুর্শিদা জানান, যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক আরোপ নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার মধ্যে সময় পার করছেন তিনি। বর্তমান চাকরি থেকে তিনি প্রতি মাসে ১৫৬ ডলার (প্রায় ১৯ হাজার টাকা) পাওয়ার আশা করছেন। তবে তাঁর আশঙ্কা, কারখানায় কাজের ক্রয়াদেশ কমে যেতে পারে। আর ক্রয়াদেশ কমে গেলে কাজের সঙ্গে সঙ্গে কমে যাবে তাঁর আয়-রোজগারও। 

১৭ কোটি মানুষের ঘনবসতিপূর্ণ দেশ বাংলাদেশ। এটি যুক্তরাষ্ট্রের উইসকনসিন অঙ্গরাজ্যের আকারের একটি বদ্বীপ। ১৯৭০-এর দশকে এক রক্তক্ষয়ী স্বাধীনতা সংগ্রামের মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জনের পর দেশটিকে অর্থনৈতিকভাবে ব্যর্থ রাষ্ট্র হিসেবে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা হয়। তবে ১৯৮০-এর দশকে দেশের অর্থনীতির চাকা ঘুরিয়ে দেয় তৈরি পোশাক খাত। এই খাতে নারী শ্রমিকদের বিশেষ অবদানের কারণে তৈরি পোশাক প্রস্তুতকারক দেশগুলোর মধ্যে প্রধান শক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে বাংলাদেশ। 

মুর্শিদা আখতারের মতো দেশটির প্রায় ৪০ লাখ মানুষ পোশাক তৈরিতে যুক্ত। সম্ভবত তাঁর ছেলে ও স্বামীর মতো আরও পাঁচ গুণ মানুষ এই শ্রমিকদের আয়ের ওপর নির্ভরশীল। 

ট্রাম্পের আগের আরোপিত শুল্ক এবং চীনা পণ্যের ওপর আরোপিত ১৪৫ শতাংশ শুল্কের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় বাংলাদেশের মতো দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি থমকে যেতে পারে। 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতিবিদ রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর বলেন, দীর্ঘ কয়েক দশকের ঈর্ষণীয় প্রবৃদ্ধির পর যখন দেশটি মন্দার মুখে পড়েছে এবং এক প্রকার ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে, ঠিক তখনই শুল্কের হুমকি এসেছে। 

বাংলাদেশের রপ্তানিযোগ্য পণ্যের ৮৫ শতাংশই হচ্ছে তৈরি পোশাক। এই পণ্য সবচেয়ে বেশি রপ্তানি হয় যুক্তরাষ্ট্রে। স্থগিত আদেশ শেষ হওয়ার পর যদি ট্রাম্প ৩৭ শতাংশ শুল্ক নাও আরোপ করেন, তবুও বাংলাদেশকে অন্যান্য দেশের মতো ১০ শতাংশ শুল্কের মুখোমুখি হতে হবে। তবে পোশাকের মতো কম মার্জিন ব্যবসায় এই পরিমাণ শুল্কও অনেক কঠিন। তাছাড়া পোশাক খাতে রপ্তানিকারক দেশ হিসেবে চীনের পাশাপাশি ভারত, কম্বোডিয়া ও শ্রীলঙ্কার অবস্থান বেশ শক্ত। তাদের সঙ্গে বাংলাদেশের তীব্র প্রতিযোগিতাও রয়েছে। 

বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিবর্তন পশ্চিমা দেশের উদার গণতন্ত্রের সমর্থকদের কাছে আশার প্রতীক হিসেবে দেখা দেয়। ড.

মুহাম্মদ ইউনূসকে স্বাগত জানান সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। তবে খুশি হতে পারেনি ভারত। শেখ হাসিনার আকস্মিক পতনে বেশ হতাশ হয়েছে দেশটি। হাসিনার আমলে আর্থিক খাতে ব্যাপক লুণ্ঠনের ফলে যে ক্ষতি হয়েছে, তা কাটিয়ে উঠতে তৎপরতা চালাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। প্রথম বছর প্রবৃদ্ধি কমলেও ২০২৬ সালের মধ্যে তা স্বাভাবিক হতে পারে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। তবে ট্রাম্পের শুল্ক আরোপ সেই আশায় গুড়েবালি দিয়েছে। এরই মধ্যে বাংলাদেশের পরবর্তী দুই বছরের প্রবৃদ্ধি কমে যাওয়ার পূর্বাভাস দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। 

ঢাকাভিত্তিক থিঙ্ক ট্যাঙ্ক সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলেছেন, জ্বালানির দাম বাড়াতে এবং ভর্তুকি কমিয়ে দিতে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) পক্ষ থেকে আমাদের ওপর প্রচণ্ড চাপ রয়েছে। 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র প রব দ ধ

এছাড়াও পড়ুন:

মাননীয় উচ্চারণ থেকেই স্বৈরশাসনের জন্ম হয়: ফখরুল

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, “প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মাননীয় উচ্চারণ থেকেই স্বৈরশাসনের জন্ম হয়। আমি কিছুদিনের জন্য অর্থ প্রতিমন্ত্রী ছিলাম। ঢাকার বাইরে গেলে ওখানকার পুলিশের কন্টিনজেন্টের সবাই দাঁড়িয়ে স্যালুট করতো। নিজেকে তখন বিরাট কিছু মনে হতো। আমাদের এখানে যেই মন্ত্রী হয়ে গেল, সেই ভিন্ন জগতে চলে গেল। স্যালুট, বাঁশি, সামনে-পেছনে গাড়ি, এই যে মানসিকতা, তা ধীরে ধীরে ডিক্টেটরের দিকে নিয়ে যায়।”

মঙ্গলবার (৮ জুলাই) বাংলা একাডেমির আব্দুল করিম সাহিত্য বিশারদ মিলনায়তনে ঢাকা কলেজ ডিবেটিং সোসাইটি ও দ্য বাংলাদেশ ডায়লগ এর যৌথ আয়োজনে ‘সিভিল ডিসকোর্স ন্যাশনাল ২০২৫; ভয়েস অব ডেমোক্রেসি: রিথিংকিং বাংলাদেশ’ শিরোনামে এক বিতর্ক প্রতিযোগিতার সমাপনী অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘অনেকে বলেন যে এখানে কিছু হবে না। এটা সঠিক নয়। আমি অত্যন্ত আশাবাদী। অনেক কিছু হবে এবং বাংলাদেশে অবশ্যই আমরা মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারব।”

আরো পড়ুন:

নির্বাচন যত দেরি হবে, দেশ তত পিছিয়ে যাবে: মির্জা ফখরুল

মুরাদনগরে ক্ষমতার অপব্যবহার করছেন একজন উপদেষ্টা: ফখরুল

তিনি বলেন, “তর্ক আছে, বিতর্ক আছে। মতের অমিল আছে। আমরা বিশ্বাস করি যে আমার কথা বলার স্বাধীনতা থাকতে হবে। তোমারও কথা বলার স্বাধীনতা থাকতে হবে। এটাই হচ্ছে উপযুক্ত একটা ডেমোক্রেসি।”

বিএনপি মহাসচিব বলেন, “দুর্ভাগ্য যে বাংলাদেশে গণতন্ত্রের চর্চা হয়নি। পাকিস্তান আমল থেকেই এখানে গণতন্ত্রের চর্চা সেভাবে হয়নি। খুব স্বল্প সময় ধরে কিছুটা চর্চা হলেও, পরবর্তীতে আমরা সেই চর্চা থেকে দূরে সরে গেছি।”

বিএনপির মহাসচিব বলেন, “বাংলাদেশের তরুণরা মাত্র এক দশমিক ৮৭ শতাংশ রাজনীতিতে আগ্রহী-এমন একটি জরিপ দেখে সকালে মন খারাপ হয়ে গিয়েছিল। তবে এখানে এসে আমাদের আশা বেড়েছে। আমাদের তরুণরা আরও বেশি যোগ্য। তারা দেশ গঠনে বেশি ভূমিকা রাখতে পারবে।”

আয়োজকদের ধন্যবাদ জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, “তারা অত্যন্ত সুন্দর একটা ভালো কাজ করেছেন। আমাদের নতুন প্রজন্মের চেঞ্জের সঙ্গে আমাদের পরিচয়টা আরো বাড়ানো দরকার। এখানে একটা বড় গ্যাপ আছে। ঢাকাতে যে চিন্তা-ভাবনা আবার ঠাকুরগাঁওয়ে সেই চিন্তা-ভাবনা না। আমরা একটা প্রজন্ম তৈরি করতে চাচ্ছি, একটা শক্তি তৈরি করতে চাচ্ছি, একটা আর্মি তৈরি করতে চাচ্ছি, যে আর্মি বাংলাদেশকে বদলে দেবে। যদি আমরা সামনের দিকে যেতে পারি তাহলে নিশ্চই আমরা জয় করব।”

অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ এ কে এম ইলিয়াস, অ্যাডকম হোল্ডিং লিমিটেডের ম্যানেজিং ডিরেক্টর (এমডি) নাজিম ফারহান চৌধুরী, সুপ্রিম কোর্টের ব্যারিস্টার রাশনা ইমাম, বিএনপির পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক কমিটির সদস্য ইশরাফি খসরু প্রমুখ।

ঢাকা/রায়হান/সাইফ 

সম্পর্কিত নিবন্ধ