ভারতের ধর্মীয় স্থাপনাকে হামলার টার্গেট করছে পাকিস্তান: মিশ্রি
Published: 9th, May 2025 GMT
বেছে বেছে ভারতের বিভিন্ন ধর্মীয় স্থাপনায় পাকিস্তান হামলা করছে বলে অভিযোগ করেছেন দেশটির পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রি।
ভারত-পাকিস্তান সংঘাতের মধ্যে শুক্রবার (৯ মে) বিকালে উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে আসেন বিক্রম মিশ্রি। তার সঙ্গে ছিলেন কর্নেল সোফিয়া কুরেশি এবং উইং কমান্ডার ব্যোমিকা সিংহ।
ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রি বলেন, তাদের ধর্মীয় স্থানগুলো হামলার নিশানা করছে পাকিস্তান। মন্দির-গুরুদুয়ারা, গির্জাকেও টার্গেট করার চেষ্টা চালানো হচ্ছে। দায়িত্ববান দেশের মতোই ভারত যোগ্য জবাব দিচ্ছে তাদের এবং সমস্ত চক্রান্ত ব্যর্থ করেছে ভারত।
আরো পড়ুন:
বিবিসির প্রতিবেদন
ভারত-পাকিস্তান সংঘাত: প্রতিবেশীদের কার কী অবস্থান
পাকিস্তান ৩০০-৪০০ ড্রোন দিয়ে হামলা চালিয়েছে: ভারত
পাকিস্তান মিথ্যাচার করছে বলে অভিযোগ তুলে বিক্রম মিশ্রি বলেন, “পাকিস্তান দাবি করেছে, কোনো ধর্মীয় স্থানকে তারা হামলার নিশানা করেনি, যেটা সম্পূর্ণ মিথ্যা।”
“আপনাদের নিশ্চয়ই মনে আছে, গতকাল (৮ মে) আমি পুঞ্চে গুরুদুয়ারায় হামলার কথা জানিয়েছিলাম। সেই হামলার দায়ভার স্বীকার করার পরিবর্তে পাকিস্তান মিথ্যাচার করছে। তারা বলছে, ভারতের সশস্ত্র বাহিনী ও ভারতীয় বিমানবাহিনীই অমৃতসরে হামলা করছে। এর মাধ্যমে তারা ভারতের ঘাড়ে দায় চাপাাচ্ছে। এটা পাকিস্তানের দায় নিতে অস্বীকার করা ছাড়া আর কিছুই নয়। বিশ্বকে বিভ্রান্ত করার জন্য মিথ্যা বলছে পাকিস্তান। তবে তাদের এই উদ্দেশ্য সফল হবে না।”
ভারতের বিমান হামলা এড়াতে ঢাল হিসেবে পাকিস্তান যাত্রীবাহী বিমানকে ব্যবহার করছে বলে অভিযোগ করেছেন বিক্রম মিশ্রি। তিনি বলেছেন, “ভারতকে আটকাতে জঙ্গিদের মতো নিরীহদের ঢাল বানাচ্ছে পাকিস্তান।”
“করাচি-লাহোরের মধ্যে বিমান বন্ধ না করে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করছে পাকিস্তান। ভারতের আকাশসীমা একাধিকবার লঙ্ঘন করেছে তারা। ভারতের ৩৬টি জায়গায় আকাশসীমা লঙ্ঘনের চেষ্টা করেছে; ৩০০ থেকে ৪০০টি ড্রোন দিয়ে হামলার চেষ্টা চালিয়েছে । তবে পাকিস্তানের চক্রান্ত ব্যর্থ, বেশিরভাগ ড্রোনই ধ্বংস করেছে ভারত,” যোগ করেন তিনি।
ঢাকা/সুচরিতা/রাসেল
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনায় বন্দর পরিচালনা করার দাবি
চার প্রধান দাবিতে রাজধানী থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম রোডমার্চ শুরু করেছে দেশের বামপন্থী দল ও সংগঠনগুলোর সমন্বয়ে গঠিত ‘সাম্রাজ্যবাদবিরোধী দেশপ্রেমিক জনগণ’। ঘোষণা অনুযায়ী গতকাল শুক্রবার সকালে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে উদ্বোধনী সমাবেশের মধ্য দিয়ে এ কর্মসূচি শুরু করা হয়। কর্মসূচির মূল স্লোগান ‘মা মাটি মোহনা, বিদেশিদের দেব না’।
রোডমার্চের উদ্বোধনী সমাবেশের শুরুতে বিভিন্ন সংগীত পরিবেশনা করেন গণতান্ত্রিক সাংস্কৃতিক ঐক্যের সদস্যরা। পরে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ শেষে বিকেলে কুমিল্লায় পৌঁছান রোডমার্চে অংশ নেওয়া ব্যক্তিরা। পরে রাত পৌনে আটটার দিকে সেখানকার টাউন হল মাঠে জনসভা অনুষ্ঠিত হয়। আয়োজকেরা জানান, আজ শনিবার সকাল ৯টায় ফেনী জেলা শহীদ মিনারে গণমিছিল ও বিকেল পাঁচটায় চট্টগ্রাম বন্দরে সমাবেশের আয়োজন করা হবে।
চারটি প্রধান দাবির মধ্যে রয়েছে নিউমুরিং টার্মিনালসহ চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবস্থাপনা বিদেশিদের হাতে না দিয়ে রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনায় বন্দর পরিচালনা করা, রাখাইনে করিডর দেওয়ার উদ্যোগ বাতিল, স্টারলিংকের সঙ্গে চুক্তি বাতিল এবং মার্কিন ও ভারতসহ সাম্রাজ্যবাদী শক্তির সঙ্গে সব অসম চুক্তি বাতিল ও জনসমক্ষে প্রকাশ করা।
রোডমার্চে অংশ নেওয়া নেতা-কর্মীদের হাতে ছিল বিভিন্ন স্লোগান-সংবলিত প্ল্যাকার্ড। এসবের মধ্যে রয়েছে ‘ইন্টেরিম সরকার, সাম্রাজ্যবাদের পাহারাদার’, ‘বন্দর-করিডর, বিদেশিদের দেব না’, জাতীয় স্বার্থবিরোধী সকল অসম চুক্তি বাতিল কর’, ‘মার্কিন ভারতসহ সকল সাম্রাজ্যবাদী আধিপত্যের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াও’, ‘চট্টগ্রাম বন্দর বিদেশিদের হাতে তুলে দেওয়া চলবে না’, ‘মার্কিন কোম্পানি স্টারলিংকের সঙ্গে চুক্তি বাতিল কর’ প্রভৃতি স্লোগান।
রোডমার্চ উদ্বোধনী সমাবেশে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন (প্রিন্স) বলেন, ‘আমরা মনে করি, চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থান ও মুক্তিযুদ্ধের আকাঙ্ক্ষা হলো গণতন্ত্রের আকাঙ্ক্ষা। এ আকাঙ্ক্ষা হলো আধিপত্যবাদ আর সাম্রাজ্যবাদবিরোধী আকাঙ্ক্ষা। ইতিপূর্বে বিভিন্ন আন্দোলনে প্রাণ বিসর্জন দেওয়া সব শহীদের প্রতি আমরা শ্রদ্ধা জানাই। আমাদের সাম্রাজ্যবাদবিরোধী এ আন্দোলন দীর্ঘদিনের।’
চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থান ও মুক্তিযুদ্ধের আকাঙ্ক্ষা হলো গণতন্ত্রের আকাঙ্ক্ষা। এ আকাঙ্ক্ষা হলো আধিপত্যবাদ আর সাম্রাজ্যবাদবিরোধী আকাঙ্ক্ষা। রুহিন হোসেন, সাধারণ, সম্পাদক; সিপিবিরুহিন হোসেন আরও বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে আমরা আহ্বান করছি, অবিলম্বে বন্দর ইজারাসহ রাষ্ট্রবিরোধী করিডর দেওয়ার চিন্তা বাদ দিতে হবে। আগামীকালের (আজ শনিবার) পর আর কোনো নতুন কর্মসূচি আসবে না। কিন্তু সরকার যদি এ দায়িত্ব পালন না করে, আগামীকাল সমাবেশে ঘোষণাপাঠের সঙ্গে সঙ্গে আন্দোলনের বৃহত্তর কর্মসূচি ঘোষণা করব।’
রোডমার্চ উদ্বোধনী সমাবেশে অংশ নেন সিপিবির সাবেক সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ, বাংলাদেশ জাসদের স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা. মুশতাক হোসেন, গণমুক্তি আন্দোলনের আহ্বায়ক নাসিরউদ্দিন আহমেদ, তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ–বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির প্রতিষ্ঠাতা সদস্যসচিব এম এম আকাশ, গণমঞ্চের মাসুদ খান, গার্মেন্টস শ্রমিকনেতা সত্যজিৎ বিশ্বাস, সাংস্কৃতিক অঙ্গনের নেতা কামাল হোসেন, বাসদের (মার্ক্সবাদ) প্রধান সমন্বয়ক মাসুদ রানা, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট লিগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল কবির জাহিদ প্রমুখ।
ঢাকা-চট্টগ্রাম রোডমার্চ কর্মসূচিতে একাত্মতা পোষণ করেছেন অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী ও অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ। সিপিবির সাধারণ সম্পাদক বিষয়টি জানিয়ে বলেন, ‘তাঁরা শারীরিক অসুস্থতার জন্য উপস্থিত হতে পারেননি। কিন্তু তাঁরা আমাদের সঙ্গে রয়েছেন।’
কুমিল্লায় জনসমাবেশরোডমার্চে অংশগ্রহণকারীরা সন্ধ্যা সোয়া ছয়টার দিকে কুমিল্লা নগরের টাউন হল মাঠে পৌঁছান। সেখানে প্রথমে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন প্রতিবাদী গান, নাটকসহ বিভিন্ন পরিবেশনা করে। পরে রাত পৌনে আটটার দিকে জনসমাবেশে বক্তৃতা শুরু হয়।
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির কুমিল্লা জেলার সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা সুজাত আলীর সভাপতিত্বে সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন বাংলাদেশের বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল কবির জাহিদ, বাসদ (মার্ক্সবাদী) ও গণতান্ত্রিক বাম জোটের সমন্বয়ক মাসুদ রানা, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোশরেফা মিশু, ফ্যাসিবাদবিরোধী বাম মোর্চার সমন্বয়ক ও গণমুক্তি ইউনিয়নের সমন্বয়ক নাসিরউদ্দিন আহম্মদ, বাংলাদেশের সাম্যবাদী আন্দোলনের আহ্বায়ক শুভ্রাংশু চক্রবর্তী, বাংলাদেশের সোশ্যালিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম, বাসদের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মহিনউদ্দীন চৌধুরী লিটন, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক পার্টির নির্বাহী সভাপতি আবদুল আলী, জাতীয় গণফ্রন্টের ভারপ্রাপ্ত সমন্বয়ক রজত হুদা, সচেতন রাজনৈতিক ফোরামের কুমিল্লার সমন্বয়ক শেখ আবদুল মান্নান, বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মোমেন প্রমুখ। সঞ্চালনা করেন রোডমার্চের কুমিল্লার জনসভা আয়োজন কমিটির সদস্যসচিব খায়রুল আনাম রায়হান।
জনসভায় গণতান্ত্রিক সাংস্কৃতিক ঐক্য, গণতান্ত্রিক ছাত্র জোট, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিল, বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রী, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ, বাংলাদেশ ছাত্রলীগসহ (বিসিএল) বিভিন্ন সংগঠনের নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।