ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষার্থী ও ছাত্রদল নেতা শাহরিয়ার আলম সাম্য হত্যার ঘটনায় উপাচার্য ও প্রক্টরের পদত্যাগ দাবিতে দ্বিতীয় দিনের মতো অবস্থান কর্মসূচী পালন করেছেন ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। এ সময় তাদের কালো ব্যাজ ধারণ করতে দেখা যায়।

বৃহস্পতিবার (১৫ মে) সাড়ে ১১টায় ঢাবির ভিসি চত্বরে তারা অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন।

এ কর্মসূচিতে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদল ছাড়াও নিউমার্কেট থানা, শাহবাগ থানা, তিতুমীর কলেজ, কবি নজরুল কলেজসহ মহানগরের বিভিন্ন ইউনিটের নেতাকর্মীরা অংশ নেন। বুধবারও (১৪ মে) তাদের বহিরাগত নেতাকর্মীদের নিয়ে কর্মসূচি পালন করতে দেখা গেছে।

আরো পড়ুন:

সাম্যকে নিজ গ্রামে দাফন করা হবে

লক্ষ্মীপুরে মাদ্রাসাছাত্রকে হত্যার অভিযোগে মামলা, শিক্ষক কারাগারে

শাহবাগ থানা থেকে আসা সোহান নামের এক ছাত্রদল কর্মী বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ে আমাদের ছাত্রদলের একজন ভাইকে মেরে ফেলা হয়েছে। এজন্য আমরা উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে আসছি।”

গুলিস্তান থেকে আসা জিহাদ নামের একজন বলেন, “আমি জানি না কি কারণে আনা হয়েছে।” তবে কার নেতৃত্বে এসেছেন জানতে চাওয়া হলে তিনি প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে দৌড় দেন।

এদিকে বহিরাগত এনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে আন্দোলন করার অভিযোগে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী বলেন, “ক্যাম্পাসে টোকাই এনে মব, হয়রানি ও নির্যাতন করার সংস্কৃতি আমরা জুলাইয়ের ১৭ তারিখে দাফন করেছিলাম। ১৫ জুলাই এই ক্যাম্পাসে এভাবে বাইরে থেকে টোকাই এনেছিল নিষিদ্ধ লীগ! কিন্তু আজ ছাত্রদল পুনরায় ক্যাম্পাসে টোকাই এনে উপাচার্য-প্রক্টরের পদত্যাগ চেয়ে ধর্মঘট পালন করছেন। দুঃখের কথা আসলে কাউকে বলতে যাব না। কারণ এসবের পরিণতি জুলাই আগস্টে দেখেছি।”

নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগ নেতা সাব্বির আহমেদ রিয়ন বলেন, “এভাবে টোকাই এনে আধিপত্য জানান দিয়েছিল ছাত্রলীগ। আবারো ক্যাম্পাস টোকাই দ্বারা পরিপূর্ণ হচ্ছে।”

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাহতাব নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, “বহিরাগত টোকাই এনে উপাচার্য স্যারের বিরুদ্ধে মব উস্কে দিলে ঢাবি শিক্ষার্থীরাও বসে থাকবে না। তারাও পাল্টা আন্দোলন করতে প্রস্তুত।”

জাহিদ নামে আরেক শিক্ষার্থী বলেন, “বহিরাগতরা ঢাবির ছাত্র হত্যা করে বহিরাগতরা মিছিল করে উপাচার্য স্যারের পদত্যাগ চাচ্ছে। শেইম অন ইয়োর ডার্টি পলিটিক্স।”

অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাওয়ার জন্য ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব ও সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছিরকে একাধিকবার মুঠোফোনে কল করলেও তারা রিসিভ করেননি।

ঢাকা/সৌরভ/মেহেদী

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর হত য ছ ত রদল ছ ত রদল র র পদত য গ উপ চ র য

এছাড়াও পড়ুন:

সংস্কার কমিশনের সুপারিশের ওপর শাকের আঁটি

জাতীয় সংসদের প্রস্তাবিত উচ্চকক্ষ ও নিম্নকক্ষ এবং স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানে নারীর নির্বাচনী তরিকা নিয়ে তিনটি কমিশন মোটামুটি কাছাকাছি পরামর্শ দিয়েছে। নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন জাতীয় সংসদের প্রস্তাবিত নিম্নকক্ষে ৩০০ আসনের স্থলে ৪০০ আসন করে ১০০টি আসন নারীদের জন্য সংরক্ষণের প্রস্তাব করেছে।

প্রতি চার আসনের একটি ঘূর্ণায়মান পদ্ধতিতে নারীর জন্য সংরক্ষিত থাকবে। সেই আসনে শুধু নারীই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশন প্রস্তাব করেছে, স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানে প্রতি তিনটি আসনের একটি ঘূর্ণায়মান পদ্ধতিতে নারীর জন্য সংরক্ষিত থাকবে।

নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন অবশ্য জাতীয় সংসদের ৩০০ আসনের জন্য ৬০০ সদস্য নির্বাচনের প্রস্তাব করেছে; প্রতিটি আসনে ভোটাররা একজন নারী ও একজন পুরুষকে নির্বাচিত করবেন। তাতে জাতীয় সংসদে নারী ও পুরুষ সমমর্যাদায় নির্বাচিত হবেন। উদাহরণ হিসেবে উপজেলা পরিষদে একই নির্বাচনী এলাকা থেকে একজন পুরুষ ও একজন নারী ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচনের দৃষ্টান্ত তুলে ধরা হয়েছে। 

ঘূর্ণায়মান পদ্ধতিতে ভারতে স্থানীয় সরকার নির্বাচন হয়ে আসছে। এই পদ্ধতির ভালো দিক হচ্ছে, একজন নারীকে সাধারণ আসনের কমপক্ষে তিন গুণ বিদ্যমান সংরক্ষিত আসনে নির্বাচনী ধকল সামলাতে হবে না। স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনের অভিমত, তিনটি সাধারণ আসনের নির্বাচিত সদস্য ও সংরক্ষিত আসনের নির্বাচিত সদস্যের অধিক্ষেত্র সাংঘর্ষিক হওয়ায় গত ২৭ বছর ধরে ব্যবস্থাটি নারীর ক্ষমতায়নে কাঙ্ক্ষিত সুফল আনতে পারেনি। প্রস্তাবিত পদ্ধতিতে সেটা সম্ভব হবে। 

মন্দ দিক হচ্ছে, সংরক্ষিত আসনে নির্বাচিত হওয়ার জন্য স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে একজন নারীকে প্রতি তৃতীয় নির্বাচনের জন্য এবং জাতীয় সংসদের ক্ষেত্রে প্রতি চতুর্থ নির্বাচনের জন্য অপেক্ষা করতে হবে। যোগ্যতা ও আগ্রহ থাকা সত্ত্বেও একেকটি নির্বাচনী এলাকার পুরুষ প্রার্থীদের স্থানীয় সরকার নির্বাচনে তিন মেয়াদ ও জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চার মেয়াদ অন্তর নিষ্ক্রিয় থাকতে হবে। 

ভারতে সংরক্ষিত নারী আসন কোনো কোনো সময়ে তপশিলি নারীর জন্য সংরক্ষিত থাকায় অ-তপশিলি নারীকেও নির্বাচন থেকে বিরত থাকতে হয়। কোনো সর্বজনীন নির্বাচনে লিঙ্গ বা ধর্মের কারণে কাউকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে বিরত রাখা হলে তা প্রকৃত গণতন্ত্র হতে পারে না। ভারতে প্রচলিত বলেই ঘূর্ণায়মান পদ্ধতিতে আসন সংরক্ষণকে ভালো সমাধান মনে করার কারণ নেই। নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন ও স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনের তুলনায় বরং নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন অধিকতর গ্রহণযোগ্য প্রস্তাব করেছে। 

সংরক্ষিত আসনের মাধ্যমে স্বতন্ত্র নির্বাচনের ধারণা আমাদের দেশে আসে ১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইনে। এই আইনে বঙ্গীয় আইন পরিষদের মোট ২৫০টি আসনের মধ্যে ১১৭টি আসন মুসলমানদের জন্য এবং অবশিষ্ট আসনগুলোর ২০ শতাংশ তপশিলি সম্প্রদায়ের জন্য সংরক্ষণ করে। তদনুসারে ব্রিটিশ আমলে ১৯৩৭ ও ১৯৪৬ সালের এবং পূর্ব বাংলায় ১৯৫৪ সালের সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। ১৯৫৬ সালে পাকিস্তানের সংবিধানে স্বতন্ত্র নির্বাচন ব্যবস্থা রহিত করা হয়। নতুন করে সংরক্ষিত আসনে স্বতন্ত্র নির্বাচন ব্যবস্থা চালু হলে এই ব্যবস্থার দাবি নানাভাবে সম্প্রসারিত হতে পারে। 

নারী আসন সংরক্ষণে আমরা পুরোনো প্রেসক্রিপশন অনুসরণ না করে নতুন কিছু ভাবতে পারি। বিশেষত স্থানীয় সরকার নির্বাচনে। স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশন ইউনিয়ন পরিষদে ৯টি নির্দিষ্ট ওয়ার্ডের পরিবর্তে ৯ থেকে ৩৯টি পর্যন্ত ৩ গুণিতক সংখ্যক ওয়ার্ড গঠনের প্রস্তাব করেছে। প্রতি ওয়ার্ডে একজন সদস্য নির্বাচনের পরিবর্তে এক ওয়ার্ড থেকে তিনজনকে নির্বাচিত করে সমস্যার সমাধান খোঁজা যেতে পারে। গত বছরের ২৫ নভেম্বর সমকালে ‘‌স্থানীয় সরকারে নারীর অংশগ্রহণ বাড়াতে করণীয়‌’ শীর্ষক নিবন্ধে সমাধানের রূপরেখা দেওয়া হয়েছিল। 

প্রস্তাবিত পদ্ধতিতে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে প্রতিটি আসনে তিনজন প্রতিনিধি নির্বাচনের ব্যবস্থা রাখা যেতে পারে। নারী-পুরুষ নির্বিশেষ যে প্রার্থী সর্বোচ্চ ভোট পাবেন, তিনি ‘সোনালি সদস্য’ নামে বিবেচিত হবেন। অবশিষ্ট পুরুষ প্রার্থীদের মধ্যে সর্বোচ্চ ভোটপ্রাপ্ত পুরুষ ও নারী প্রার্থীদের মধ্যে সর্বোচ্চ ভোটপ্রাপ্ত নারী ‘রুপালি সদস্য’ হিসেবে নির্বাচিত হবেন। প্রতিটি ওয়ার্ডে তিনজন প্রার্থী নির্বাচিত হবেন এবং কোনোক্রমেই সবাই নারী বা পুরুষ হবেন না। কমপক্ষে একজন নারী বা একজন পুরুষ প্রতিনিধিত্ব করবেন। এর ফলে স্থানীয় সরকারে ৩ গুণিতক সংখ্যক ওয়ার্ড নির্ধারণের বাধ্যবাধকতা থাকবে না। তবে যত সংখ্যক ওয়ার্ডই হোক না কেন, তার ৩ গুণিতক সংখ্যক সদস্য নির্বাচিত হবেন। 

উল্লিখিত তিনটি সংস্কার কমিশনই মন্ত্রিপরিষদ শাসিত গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে পরিষদের সদস্যদের ভোটে চেয়ারম্যান বা মেয়র নির্বাচিত করার প্রস্তাব করেছে। আলোচ্য পদ্ধতিতে চেয়ারম্যান বা মেয়র ও সভাধ্যক্ষ পদে শুধু সোনালি সদস্যই প্রার্থী হতে পারেন। একজন করে রুপালি পুরুষ ও নারী সদস্য নির্বাচিত ভাইস চেয়ারম্যান বা ডেপুটি মেয়র হতে পারবেন। চেয়ারম্যান বা মেয়র, সভাধ্যক্ষ, ভাইস চেয়ারম্যান বা ডেপুটি মেয়র পদের মেয়াদ হবে এক বছর। একজন ব্যক্তি পরপর দুই মেয়াদের বেশি একই পদে থাকতে পারবেন না। এতে চেয়ারম্যান-মেয়র বাকি সদস্যদের অবজ্ঞা করবেন না কিংবা মৌরসি পাট্টাদারও হবেন না। আইনে সোনালি সদস্য, রুপালি পুরুষ সদস্য ও রুপালি নারী সদস্যের দায়িত্ব নির্ধারণ করা থাকবে। এ পদ্ধতি কার্যকর হলে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানে ও জাতীয় সংসদে নারীর ন্যূনতম এক-তৃতীয়াংশ আসন নিশ্চিত থাকবে। এমনকি কোথাও কোথাও সেই হার বেশিও হতে পারে; তবে কোনোভাবেই দুই-তৃতীয়াংশ অতিক্রম করবে না। স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানে গণতান্ত্রিক আবহ বিরাজ করবে।

সংস্কারের মহামিছিলে হোক না একটি ব্যতিক্রমী সংস্কার! এমনটা যদি জাতীয় সংসদের ১০০ বা ১৩৩টি আসন ধরে নির্বাচন হয়, ক্ষতি কী! হতেও পারে জাতীয় সংসদের কোনো আসনে তিন দলের তিনজন নির্বাচিত হওয়ার মাধ্যমে বিভিন্ন দলের সহাবস্থানের রাজনৈতিক উত্তরণ।

আ ক ম সাইফুল ইসলাম চৌধুরী: অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত সচিব

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • যোগসূত্র
  • এবি ব্যাংকের নতুন চেয়ারম্যান কাইজার এ চৌধুরী
  • তথ্য উপদেষ্টার ওপর বোতল নিক্ষেপকারী শনাক্ত, ‘কম সময়ের মধ্যে’ গ্রেপ্তারের আশা পুলিশের
  • হুইসেন আসছেন রিয়ালে, কারেরার সঙ্গে আলোচনা শুরু 
  • ময়লা ফেলে পরিত্যক্ত জায়গা দেখিয়ে পুকুর ভরাট, ১০ জনকে আসামি করে মামলা
  • ফিলিস্তিনিদের পক্ষে সোচ্চার ইহুদি পরিবারগুলোতে অসন্তোষ তুঙ্গে, ঘটছে ভাঙন পর্যন্ত
  • ঝিনাইদহে ৩ বাড়িতে অজ্ঞান পার্টির হানা, নগদ অর্থ ও স্বর্ণালংকার লু
  • শিক্ষক ৩, শিক্ষার্থী ৫
  • সংস্কার কমিশনের সুপারিশের ওপর শাকের আঁটি