ঢাবিতে বহিরাগতদের নিয়ে ছাত্রদলের উপাচার্যবিরোধী আন্দোলন, ক্ষোভ
Published: 15th, May 2025 GMT
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষার্থী ও ছাত্রদল নেতা শাহরিয়ার আলম সাম্য হত্যার ঘটনায় উপাচার্য ও প্রক্টরের পদত্যাগ দাবিতে দ্বিতীয় দিনের মতো অবস্থান কর্মসূচী পালন করেছেন ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। এ সময় তাদের কালো ব্যাজ ধারণ করতে দেখা যায়।
বৃহস্পতিবার (১৫ মে) সাড়ে ১১টায় ঢাবির ভিসি চত্বরে তারা অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন।
এ কর্মসূচিতে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদল ছাড়াও নিউমার্কেট থানা, শাহবাগ থানা, তিতুমীর কলেজ, কবি নজরুল কলেজসহ মহানগরের বিভিন্ন ইউনিটের নেতাকর্মীরা অংশ নেন। বুধবারও (১৪ মে) তাদের বহিরাগত নেতাকর্মীদের নিয়ে কর্মসূচি পালন করতে দেখা গেছে।
আরো পড়ুন:
সাম্যকে নিজ গ্রামে দাফন করা হবে
লক্ষ্মীপুরে মাদ্রাসাছাত্রকে হত্যার অভিযোগে মামলা, শিক্ষক কারাগারে
শাহবাগ থানা থেকে আসা সোহান নামের এক ছাত্রদল কর্মী বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ে আমাদের ছাত্রদলের একজন ভাইকে মেরে ফেলা হয়েছে। এজন্য আমরা উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে আসছি।”
গুলিস্তান থেকে আসা জিহাদ নামের একজন বলেন, “আমি জানি না কি কারণে আনা হয়েছে।” তবে কার নেতৃত্বে এসেছেন জানতে চাওয়া হলে তিনি প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে দৌড় দেন।
এদিকে বহিরাগত এনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে আন্দোলন করার অভিযোগে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী বলেন, “ক্যাম্পাসে টোকাই এনে মব, হয়রানি ও নির্যাতন করার সংস্কৃতি আমরা জুলাইয়ের ১৭ তারিখে দাফন করেছিলাম। ১৫ জুলাই এই ক্যাম্পাসে এভাবে বাইরে থেকে টোকাই এনেছিল নিষিদ্ধ লীগ! কিন্তু আজ ছাত্রদল পুনরায় ক্যাম্পাসে টোকাই এনে উপাচার্য-প্রক্টরের পদত্যাগ চেয়ে ধর্মঘট পালন করছেন। দুঃখের কথা আসলে কাউকে বলতে যাব না। কারণ এসবের পরিণতি জুলাই আগস্টে দেখেছি।”
নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগ নেতা সাব্বির আহমেদ রিয়ন বলেন, “এভাবে টোকাই এনে আধিপত্য জানান দিয়েছিল ছাত্রলীগ। আবারো ক্যাম্পাস টোকাই দ্বারা পরিপূর্ণ হচ্ছে।”
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাহতাব নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, “বহিরাগত টোকাই এনে উপাচার্য স্যারের বিরুদ্ধে মব উস্কে দিলে ঢাবি শিক্ষার্থীরাও বসে থাকবে না। তারাও পাল্টা আন্দোলন করতে প্রস্তুত।”
জাহিদ নামে আরেক শিক্ষার্থী বলেন, “বহিরাগতরা ঢাবির ছাত্র হত্যা করে বহিরাগতরা মিছিল করে উপাচার্য স্যারের পদত্যাগ চাচ্ছে। শেইম অন ইয়োর ডার্টি পলিটিক্স।”
অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাওয়ার জন্য ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব ও সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছিরকে একাধিকবার মুঠোফোনে কল করলেও তারা রিসিভ করেননি।
ঢাকা/সৌরভ/মেহেদী
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর হত য ছ ত রদল ছ ত রদল র র পদত য গ উপ চ র য
এছাড়াও পড়ুন:
দারফুরে ধর্ষণ-মুক্তিপণ-হত্যা: আরএসএফের ভয়াবহ নিপীড়নের বর্ণনা দিলেন পালিয়ে আসা মানুষেরা
সুদানের পশ্চিমাঞ্চলীয় দারফুর শহরে আধাসামরিক বাহিনী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্স (আরএসএফ)–এর কাছ থেকে পালিয়ে আসা ক্ষুধার্ত এবং নির্যাতিত মানুষেরা বিভিন্ন সংস্থা ও সংবাদমাধ্যমের কাছে তাঁদের ভয়ংকর অভিজ্ঞতাগুলো বর্ণনা করছেন। তবে তাঁরা পালাতে পারলেও হাজার হাজার মানুষ এখনো নিখোঁজ রয়েছেন।
উত্তর দারফুরের রাজধানী এল-ফাশের শহর ছিল রাজ্যটিতে সুদানি সেনাবাহিনীর সর্বশেষ ঘাঁটি। গত রোববার আরএসএফ বাহিনী এটির দখল নেয়। এরপর থেকে জাতিসংঘ ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সহায়তা সংস্থা স্থানীয় মানুষের পরিণতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছে। এরই মধ্যে দারফুরে ধর্ষণ, মুক্তিপণ ও গণহত্যাসহ অন্যান্য নির্যাতনের কথা সামনে আসছে।
আলখেইর ইসমাইল নামের এক সুদানি তরুণ দারফুর থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার (৩১ মাইল) দূরের তাবিলা শহরে পালিয়ে এসেছেন। তিনি বলেন, রোববার এল-ফাশের থেকে পালানোর চেষ্টার সময় ৩০০ জনকে আটক করে আরএসএফ। তিনিও ওই দলে ছিলেন। তবে আটককারীদের একজন তাঁর বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের পরিচিত হওয়ায় তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
ইসমাইল বলেন, ‘খার্তুমের বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার সঙ্গে পড়াশোনা করেছেন এমন একজন তরুণ সেখানে ছিলেন। তিনি তাঁদের বললেন, “ওকে হত্যা করো না”। এরপর তাঁরা আমার সঙ্গে থাকা সব তরুণ ও আমার বন্ধুদের হত্যা করেন।’
তাবিলা এলাকায় পালিয়ে আসা অন্য নাগরিকেরাও তাঁদের ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন। তেমনই একজন তাহানি হাসান। তিনি বলেন, ‘হঠাৎ করেই তাঁরা সেখানে হাজির হলেন। কোথা থেকে এলেন জানি না। ভিন্ন ভিন্ন বয়সী তিন তরুণকে দেখা গেল। তাঁরা আকাশে গুলি ছুড়লেন এবং বললেন, ‘থামো, থামো’। তাঁরা আরএসএফের পোশাকে ছিলেন।’
আলখেইর ইসমাইল নামের এক সুদানি তরুণ দারফুর থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার (৩১ মাইল) দূরের তাবিলা শহরে পালিয়ে এসেছেন। আলখেইর বলেছেন, রোববার এল-ফাশের থেকে পালানোর চেষ্টা করার সময় ৩০০ জনকে আটক করে আরএসএফ। তিনিও ওই দলে ছিলেন। তবে আটককারীদের একজন তাঁর বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের পরিচিত ব্যক্তি হওয়ায় তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়।তাহানি হাসান বলেন, ‘এই তরুণেরা আমাদের বেধড়ক মারধর করেছেন। আমাদের পোশাক মাটিতে ছুড়ে ফেলেছেন। এমনকি আমি একজন নারী হওয়ার পরও আমাকে তল্লাশি করা হয়েছে। হামলাকারীরা সম্ভবত বয়সে আমার মেয়ের চেয়েও ছোট হবে।’
ফাতিমা আবদুলরহিম তাঁর নাতি–নাতনিদের সঙ্গে তাবিলাতে পালিয়ে এসেছেন। তিনি বলেন, পাঁচ দিন ধরে অনেক কষ্ট করে হেঁটে তাবিলাতে পৌঁছাতে পেরেছেন।
ফাতিমা বলেন, ‘তাঁরা (আরএসএফের সদস্যরা) ছেলেশিশুগুলোকে মারলেন এবং আমাদের সব সম্পদ কেড়ে নিলেন। আমাদের কিছুই রাখা হলো না। আমরা এখানে পৌঁছানোর পর জানতে পারলাম, আমাদের পর যেসব মেয়ে এসেছে, তাদের ধর্ষণ করা হয়েছে। তবে আমাদের মেয়েরা বেঁচে গেছে।’
পালিয়ে আসা তরুণী রাওয়া আবদাল্লা বলেছেন, তাঁর বাবা নিখোঁজ।
গত বুধবার রাতে দেওয়া এক বক্তৃতায় আরএসএফের প্রধান মোহাম্মদ হামদান দাগালো বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য তাঁর যোদ্ধাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। বলেন, মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটলে বিচারের মুখোমুখি করা হবে। হামদান ‘হেমেদতি’ নামেও পরিচিত।
২০২৩ সালের এপ্রিল থেকে সুদানি সেনাদের সঙ্গে আরএসএফ সদস্যদের লড়াই চলছে। গত বৃহস্পতিবার আরএসএফ দাবি করে, নির্যাতনের অভিযোগে বেশ কয়েকজন যোদ্ধাকে আটক করেছে তারা।
তবে জাতিসংঘের মানবিক সহায়তাবিষয়ক প্রধান টম ফ্লেচার সাধারণ নাগরিকদের ওপর আরএসএফ সদস্যদের নিপীড়নের অভিযোগ তদন্তে বাহিনীটির দেওয়া প্রতিশ্রুতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আরএসএফের একজন উচ্চপদস্থ কমান্ডার এই ঘটনাগুলো ‘গণমাধ্যমের অতিরঞ্জন’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। তাঁর দাবি, এল–ফাশেরে নিজেদের পরাজয় ও ক্ষয়ক্ষতি আড়াল করতে সেনাবাহিনী এবং তাদের মিত্ররা এমন অপপ্রচার চালাচ্ছে।
জাতিসংঘের তথ্য বলছে, এ সংঘাত চলাকালে আরএসএফ ও সেনাবাহিনী—দুই পক্ষের বিরুদ্ধেই অভিযোগ উঠেছে। সংঘাতে কয়েক হাজার মানুষ নিহত হয়েছে। প্রায় ১ কোটি ৪০ লাখ মানুষ বাড়িঘর ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছেন। সংঘাতকে কেন্দ্র করে ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় তৈরি হয়েছে। বিরাজ করছে ব্যাপক দুর্ভিক্ষের অবস্থা। পাশাপাশি কলেরা ও অন্যান্য প্রাণঘাতী রোগের সংক্রমণ বাড়ছে।
দারফুর থেকে পালিয়ে আসা লোকজন তাবিলা এলাকায় আশ্রয় নিয়েছেন। ২৯ অক্টোবর, ২০২৫