একজন মুসলিম পুরুষ একসঙ্গে একাধিক স্ত্রী রাখতে পারেন বলে জানিয়েছেন ভারতের এলাহাবাদ হাইকোর্ট। হাইকোট তার পর্যবেক্ষণে জানিয়েছে, একজন পুরুষ যদি তার সব স্ত্রীর সঙ্গে সমানভাবে আচরণ করতে পারেন তবে তিনি একাধিক বিয়ে করতে পারেন। খবর এনডিটিভির।

আদালত আরো বলেছে, কোরআনে নির্দিষ্ট কারণে একাধিক বিয়ের অনুমতি দেওয়া হয়েছে, কিন্তু বাস্তবে অনেক পুরুষই একে নিজস্ব স্বার্থে অপব্যবহার করেন।

এনডিটিভি বলছে, বিচারপতি অরুণ কুমার সিং দেশওয়ালের একক বেঞ্চ মোরাদাবাদ আদালতের চার্জশিট ও সমন আদেশ বাতিল করার একটি আবেদন শুনানির সময় এই মন্তব্য করেন।

আরো পড়ুন:

ভারত আরেকটি অভিযান চালাতে পারে: খাজা আসিফ

আমরা ভারতের বিরুদ্ধে ১৯৭১-এর যুদ্ধের প্রতিশোধ নিয়েছি: শাহবাজ শরীফ

মামলাটি ২০২০ সালের, যখন এক নারী অভিযোগ করেন যে ফুরকান নামের এক ব্যক্তি তাকে বিয়ে করেছিলেন। কিন্তু বিয়ের আগে তিনি জানাননি যে ফুরকান ইতিমধ্যেই আরেকজনকে বিয়ে করেছেন। ওই নারী আরো অভিযোগ করেন, বিয়ের সময় ফুরকান তাকে ধর্ষণও করেন।

এই অভিযোগের ভিত্তিতে মোরাদাবাদ থানায় একটি মামলা দায়ের হয় এবং ফুরকানসহ আরো দু’জনের বিরুদ্ধে সমন জারি করা হয়।

ফুরকানের পক্ষের আইনজীবী মোরাদাবাদ আদালতে যুক্তি দেন যে, ওই নারী নিজেই স্বীকার করেছেন যে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক ছিল এবং সম্পর্কের ভিত্তিতেই বিয়ে হয়েছে। তাই এটা জালিয়াতি বা গোপন বিয়ে হিসেবে গণ্য হওয়ার কথা নয়।

তিনি আরো যুক্তি দেন, ফুরকান তার আগের বিয়ের বিষয়টি গোপন করলেও একাধিক বিয়ে মুসলিম ধর্ম অনুযায়ী বৈধ হওয়ায়, ভারতীয় দণ্ডবিধির ৪৯৪ ধারার (একাধিক স্ত্রী থাকা অবস্থায় পুনরায় বিবাহ) অধীনে তার বিরুদ্ধে এই অপরাধের বিষয়টি প্রযোজ্য নয়।

বিচারপতি দেশওয়াল এক্ষেত্রে ইউনিফর্ম সিভিল কোডের (যাতে সব ধর্মে বিয়ের নিয়ম একই করা যায়) পক্ষে মত দেন এবং বলেন, একজন মুসলিম পুরুষ ইসলাম ধর্ম অনুযায়ী চারটি বিয়ে করতে পারেন, তাই এটি কোনো অপরাধ নয়। তিনি বলেন, কোরআনে বহুবিবাহের ঐতিহাসিক কারণ রয়েছে এবং বিবাহ ও তালাক সম্পর্কিত সকল বিষয় শরিয়ত অ্যাক্ট, ১৯৩৭ অনুসারে নির্ধারণ করা উচিত।

আদালতের ১৮ পৃষ্ঠার রায়ে বলা হয়েছে, যেহেতু ফুরকানের দুই স্ত্রী-ই মুসলিম, তাই দ্বিতীয় বিয়েটি বৈধ।

আদালত এই মামলার পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করেছে আগামী ২৬ মে।

ঢাকা/ফিরোজ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ফ রক ন এক ধ ক

এছাড়াও পড়ুন:

স্বাস্থ্য খাতে আলাদা বেতনকাঠামো হোক

দক্ষিণ এশিয়ার ভূগোল এক হলেও স্বাস্থ্য খাতের মর্যাদা ও আর্থিক কাঠামোয় বাংলাদেশের অবস্থান যেন এক পরিহাস। ভারত, পাকিস্তান, নেপাল কিংবা শ্রীলঙ্কায় চিকিৎসক ও নার্সরা যেখানে তুলনামূলকভাবে সম্মানজনক বেতন ও সুবিধার অধিকারী, সেখানে বাংলাদেশে তাঁদের উপার্জন দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সর্বনিম্ন।

রাজধানীতে ‘অ্যালায়েন্স ফর হেলথ রিফর্মস বাংলাদেশ’-এর সাম্প্রতিক আলোচনায় প্রকাশিত তথ্য বলছে, বাংলাদেশে বছরে গড়ে একজন চিকিৎসক বেতন পান তিন লাখ টাকা। আর একজন নার্স পান ১ লাখ ৯০ হাজার টাকা। প্রতিবেশী দেশ ভারতে একজন চিকিৎসক বছরে বেতন পান ১৬ লাখ টাকার বেশি; অন্যদিকে নার্স পান প্রায় ৭ লাখ টাকা। নেপালে একজন চিকিৎসক বছরে বেতন পান ১০ লাখ টাকার বেশি আর একজন নার্স পান ৫ লাখ টাকা। একইভাবে পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কার তুলনায় বাংলাদেশের চিকিৎসক ও নার্সরা অনেক কম আর্থিক সুবিধা পান। দেশে স্বাস্থ্য খাতের কর্মীদের জন্য আলাদা বেতনকাঠামো নেই। এ তথ্য শুধু পরিসংখ্যান নয়; বরং এক গভীর হতাশার প্রতিচ্ছবি।

চিকিৎসক ও নার্সদের পেশা কেবল চাকরি নয়; বরং এটি এক অনন্ত মানবিক ব্রত। তাঁরা মানুষের দুঃখ লাঘব করেন, প্রাণ রক্ষায় নিয়োজিত থাকেন। অথচ এই পবিত্র দায়িত্ব পালনের বিনিময়ে রাষ্ট্র তাঁদের যে স্বল্পতম আর্থিক প্রতিদান দেয়, তা এক অর্থে তাঁদের শ্রমের অবমাননা।

একজন চিকিৎসক যখন জানেন তাঁর জ্ঞান, দক্ষতা ও পরিশ্রমের বিনিময়ে ন্যায্য প্রাপ্তি নেই, তখন তাঁর মনে জন্ম নেয় বঞ্চনার বোধ। এই বঞ্চনাই কর্মস্পৃহা নিঃশেষ করে এবং অগণিত মেধাবী চিকিৎসক-নার্সকে প্রবাসমুখী করে তোলে।

এভাবে যদি শ্রমের অবমূল্যায়ন হতে থাকে এবং মেধাপ্রবাহ যদি বহমান থাকে, বাংলাদেশের হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলো একসময় দক্ষ জনশক্তিহীন হয়ে পড়বে। প্রতিদিন যে বিপুলসংখ্যক রোগী চিকিৎসার প্রত্যাশায় হাসপাতালে ভিড় করেন, তাঁদের সেবার মান অবধারিতভাবে হ্রাস পাবে। চিকিৎসা তখন আর মানবিকতার প্রতীক থাকবে না; বরং তা নিছক যান্ত্রিকতায় পরিণত হবে। এমনিতেই আমাদের হাসপাতালগুলোতে রোগীর সংখ্যার বিপরীতে পর্যাপ্ত চিকিৎসক ও নার্স না থাকায় সেবার মান নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে বহু আগে থেকে।  

সংবিধান প্রত্যেক নাগরিকের জন্য ন্যায্য মজুরির প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। কিন্তু চিকিৎসক ও নার্সদের ক্ষেত্রে এ প্রতিশ্রুতির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন ঘটছে। সমাজ দর্শনের এক পুরোনো সত্য এ ক্ষেত্রে প্রযোজ্য, ‘যেখানে চিকিৎসক অসম্মানিত, সেখানে সমাজের রোগ নিরাময় অসম্ভব।’ স্বাস্থ্য খাতের এ অবমাননা কেবল চিকিৎসকদের নয়, গোটা জাতির জন্যও। 

এ কারণে রাষ্ট্রীয় নীতিতে মৌলিক সংস্কার এখনই প্রয়োজন। চিকিৎসক-নার্সদের জন্য আলাদা ও সময়োপযোগী বেতনকাঠামো প্রণয়ন করতে হবে। পেশার ঝুঁকিপূর্ণ চরিত্রকে স্বীকৃতি দিয়ে ঝুঁকি ভাতা চালু করতে হবে। একই সঙ্গে আন্তর্জাতিক মানের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ ন্যূনতম বেতন, বাসস্থানসুবিধা ও অবসরকালীন সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। এগুলো কেবল অর্থনৈতিক সুবিধা নয়; বরং মানবিক দায়বদ্ধতারই বহিঃপ্রকাশ। সরকারি-বেসরকারি উভয় খাতের কর্মীদের বেতন এমন হওয়া উচিত, যাতে তাঁকে অতিরিক্ত আয়ের জন্য বিকল্প খুঁজতে না হয়। এতে প্রতিষ্ঠানের প্রতি কর্মীর দায়িত্ববোধ বাড়বে এবং সেবার মানও বাড়বে।

স্মরণ রাখা দরকার, একটি জাতি কীভাবে তার জ্ঞানবাহক ও জীবন রক্ষাকারীদের মর্যাদা দেয়, তার দ্বারা সেই জাতির সভ্যতার মান নির্ণীত হয়। চিকিৎসক-নার্সদের অবহেলা করা মানে মানবিকতাকেই অবহেলা করা। তাঁদের প্রতি বৈষম্য ও বঞ্চনা যদি অব্যাহত থাকে, তবে বাংলাদেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থা ধীরে ধীরে অকার্যকরতায় নিমজ্জিত হবে এবং একদিন কেবল রোগীর দেহ নয়, জাতির মননও অসুস্থ হয়ে পড়বে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ৪০ ঘণ্টা পর এক ছাত্রের মরদেহ উদ্ধার, নিখোঁজ আরেকজন
  • সিদ্ধিরগঞ্জে ৭ কেজি গাঁজাসহ মাদক কারবারি গ্রেপ্তার 
  • গরুর গোবর কুড়ানো থেকে সাত তারকা হোটেলে, জয়দীপের গল্প জানেন কি
  • টর্চলাইট
  • স্বাস্থ্য খাতে আলাদা বেতনকাঠামো হোক
  • নাটোরে একসঙ্গে পাঁচ সন্তান প্রসব প্রসূতির
  • একসঙ্গে পাঁচ সন্তানের জন্ম দিলেন রেশমা
  • বিশ্বব্যবস্থা: যুক্তরাষ্ট্র সরে গেলে বাকি পশ্চিমাদের এগিয়ে আসতে হবে
  • একটি আপেল যেভাবে বদলে দিয়েছে মহাবিশ্বের ধারণা
  • ব্যস্ত দম্পতিদের কাছে জনপ্রিয়তা পাচ্ছে ‘মাইক্রো-ডেটিং’