মুসলিম পুরুষ একসঙ্গে একাধিক স্ত্রী রাখতে পারেন: ভারতীয় হাইকোর্ট
Published: 15th, May 2025 GMT
একজন মুসলিম পুরুষ একসঙ্গে একাধিক স্ত্রী রাখতে পারেন বলে জানিয়েছেন ভারতের এলাহাবাদ হাইকোর্ট। হাইকোট তার পর্যবেক্ষণে জানিয়েছে, একজন পুরুষ যদি তার সব স্ত্রীর সঙ্গে সমানভাবে আচরণ করতে পারেন তবে তিনি একাধিক বিয়ে করতে পারেন। খবর এনডিটিভির।
আদালত আরো বলেছে, কোরআনে নির্দিষ্ট কারণে একাধিক বিয়ের অনুমতি দেওয়া হয়েছে, কিন্তু বাস্তবে অনেক পুরুষই একে নিজস্ব স্বার্থে অপব্যবহার করেন।
এনডিটিভি বলছে, বিচারপতি অরুণ কুমার সিং দেশওয়ালের একক বেঞ্চ মোরাদাবাদ আদালতের চার্জশিট ও সমন আদেশ বাতিল করার একটি আবেদন শুনানির সময় এই মন্তব্য করেন।
আরো পড়ুন:
ভারত আরেকটি অভিযান চালাতে পারে: খাজা আসিফ
আমরা ভারতের বিরুদ্ধে ১৯৭১-এর যুদ্ধের প্রতিশোধ নিয়েছি: শাহবাজ শরীফ
মামলাটি ২০২০ সালের, যখন এক নারী অভিযোগ করেন যে ফুরকান নামের এক ব্যক্তি তাকে বিয়ে করেছিলেন। কিন্তু বিয়ের আগে তিনি জানাননি যে ফুরকান ইতিমধ্যেই আরেকজনকে বিয়ে করেছেন। ওই নারী আরো অভিযোগ করেন, বিয়ের সময় ফুরকান তাকে ধর্ষণও করেন।
এই অভিযোগের ভিত্তিতে মোরাদাবাদ থানায় একটি মামলা দায়ের হয় এবং ফুরকানসহ আরো দু’জনের বিরুদ্ধে সমন জারি করা হয়।
ফুরকানের পক্ষের আইনজীবী মোরাদাবাদ আদালতে যুক্তি দেন যে, ওই নারী নিজেই স্বীকার করেছেন যে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক ছিল এবং সম্পর্কের ভিত্তিতেই বিয়ে হয়েছে। তাই এটা জালিয়াতি বা গোপন বিয়ে হিসেবে গণ্য হওয়ার কথা নয়।
তিনি আরো যুক্তি দেন, ফুরকান তার আগের বিয়ের বিষয়টি গোপন করলেও একাধিক বিয়ে মুসলিম ধর্ম অনুযায়ী বৈধ হওয়ায়, ভারতীয় দণ্ডবিধির ৪৯৪ ধারার (একাধিক স্ত্রী থাকা অবস্থায় পুনরায় বিবাহ) অধীনে তার বিরুদ্ধে এই অপরাধের বিষয়টি প্রযোজ্য নয়।
বিচারপতি দেশওয়াল এক্ষেত্রে ইউনিফর্ম সিভিল কোডের (যাতে সব ধর্মে বিয়ের নিয়ম একই করা যায়) পক্ষে মত দেন এবং বলেন, একজন মুসলিম পুরুষ ইসলাম ধর্ম অনুযায়ী চারটি বিয়ে করতে পারেন, তাই এটি কোনো অপরাধ নয়। তিনি বলেন, কোরআনে বহুবিবাহের ঐতিহাসিক কারণ রয়েছে এবং বিবাহ ও তালাক সম্পর্কিত সকল বিষয় শরিয়ত অ্যাক্ট, ১৯৩৭ অনুসারে নির্ধারণ করা উচিত।
আদালতের ১৮ পৃষ্ঠার রায়ে বলা হয়েছে, যেহেতু ফুরকানের দুই স্ত্রী-ই মুসলিম, তাই দ্বিতীয় বিয়েটি বৈধ।
আদালত এই মামলার পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করেছে আগামী ২৬ মে।
ঢাকা/ফিরোজ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ফ রক ন এক ধ ক
এছাড়াও পড়ুন:
দয়া করে গাজায় যান: পোপ লিওর প্রতি ম্যাডোনার আহ্বান
মার্কিন গায়িকা ম্যাডোনা পোপ লিওর প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, ‘গাজায় গিয়ে শিশুদের জন্য আপনার আলো নিয়ে আসুন।’ গত সোমবার সন্ধ্যায় ইনস্টাগ্রামে তিনি লেখেন, ‘পবিত্র পিতা, দয়া করে গাজায় যান এবং দেরি হওয়ার আগে শিশুদের জন্য আপনার আলো নিয়ে আসুন।’
ম্যাডোনা যোগ করেন, একজন মা হিসেবে তিনি তাদের কষ্ট সহ্য করতে পারছেন না।
ম্যাডোনা বলেন, ‘দুনিয়ার সব শিশু সবারই সন্তান। আপনি আমাদের মধ্যে একমাত্র ব্যক্তি, যাঁকে গাজায় ঢুকতে বাধা দেওয়া যাবে না।’
গত মাসে গ্রিক অর্থোডক্স প্যাট্রিয়ার্ক থিওফিলস তৃতীয়র সঙ্গে জেরুজালেমের সর্বোচ্চ ক্যাথলিক ধর্মীয় নেতা কার্ডিনাল পিয়েরবাতিস্তা পিজাবাল্লা গাজায় এক বিরল সফরে যান।
গাজা সিটির হলি ফ্যামিলি চার্চে ইসরায়েলি হামলার কয়েক দিনের মধ্যেই এ সফর হয়েছিল। এটি গাজার শেষ ক্যাথলিক চার্চ, যেখানে ওই হামলায় তিনজন ফিলিস্তিনি নিহত ও কয়েকজন আহত হন।
পোপ লিও ওই হামলার প্রথম প্রতিক্রিয়ায় প্রাণহানির কথা স্বীকার করলেও ইসরায়েলকে দায়ী করেননি। ফলে এ নিয়ে সমালোচনা হয় ও পূর্বসূরি পোপ ফ্রান্সিসের সঙ্গে তাঁর তুলনা করা হয়। আগের পোপ প্রকাশ্যে ইসরায়েলের যুদ্ধের নিন্দা করেছিলেন। পরে পোপ লিও বলেন, হামলাটি ইসরায়েলি সেনারা চালিয়েছেন।
গাজা অবরোধ ভাঙতে এবং সেখানে জরুরি মিশন পরিচালনা করতে বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে যে দাবি উঠেছে, এ আহ্বান জানানোর মাধ্যমে তার সঙ্গে এবার ম্যাডোনা যোগ দিলেন।
যাতে ফিলিস্তিনি শিশুদের বাঁচানো যায়, সে জন্য মার্কিন এই গায়িকা গাজায় ‘মানবিক সাহায্যের দরজা পুরোপুরি খুলে দেওয়ার’ আহ্বান জানান।
গত মার্চ থেকে ইসরায়েল গাজায় খাদ্য ও মানবিক সহায়তার ওপর প্রায় পূর্ণ অবরোধ আরোপ করেছে, ফলে ব্যাপকভাবে ক্ষুধা ও অপুষ্টি ছড়িয়ে পড়েছে।
মে মাসের শেষ দিক থেকে মার্কিন ও ইসরায়েল–সমর্থিত বিতর্কিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচএফ) ত্রাণ বিতরণের দায়িত্ব নেয়। তবে তারা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই সামান্য সহায়তা দিয়েছে। বিতর্কিত সংস্থাটির ত্রাণকেন্দ্রে খাদ্য নিতে গিয়ে ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিতে অন্তত ১ হাজার ৮০০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, যুদ্ধ শুরুর পর থেকে অন্তত ২২২ জন ফিলিস্তিনি অনাহারে মারা গেছেন, এর মধ্যে ১০১টি শিশু।
পোপদের সঙ্গে ম্যাডোনা বিরোধম্যাডোনার বিবৃতিতে গাজায় ইসরায়েলের কর্মকাণ্ডের সরাসরি সমালোচনা ছিল না।
ম্যাডোনা বলেন, ‘আমি কাউকে দোষ দিচ্ছি না, পক্ষ নিচ্ছি না। সবাই কষ্ট পাচ্ছে, জিম্মিদের মায়েরাও। আমি তাদের মুক্তির জন্যও প্রার্থনা করছি। আমি শুধু চেষ্টা করছি, যাতে এই শিশুরা অনাহারে মারা না যায়।’
ম্যাডোনার মতে, রাজনীতি নয়, কেবল সচেতনতা পারে পরিবর্তন আনতে। এ কারণেই তিনি ‘ঈশ্বরের একজন মানুষ’-এর কাছে আবেদন করছেন।
ম্যাডোনা রোমান ক্যাথলিক ধর্মের অনুসারী হিসেবে বড় হয়েছেন এবং প্রায়ই তাঁর গান ও মিউজিক ভিডিওতে ক্যাথলিক প্রতীক ব্যবহার করে থাকেন।
ধর্মীয় বিষয় নিয়ে ম্যাডোনার উসকানিমূলক উপস্থাপনা, যেমন জ্বলন্ত ক্রস, পোল-ড্যান্স করা সন্ন্যাসিনী ইত্যাদি কর্মকাণ্ড দশকের পর দশক ধরে তাঁকে ক্যাথলিক চার্চ ও পোপদের সঙ্গে বিরোধে জড়িয়েছে।
১৯৯০ সালে পোপ জন পল দ্বিতীয় ম্যাডোনার ব্লন্ড অ্যাম্বিশন ট্যুরকে ‘মানব ইতিহাসের সবচেয়ে শয়তানি শোগুলোর একটি’ বলে উল্লেখ করেছিলেন।
২০০৬ সালে ম্যাডোনার কনফেশনস ট্যুরকে পোপ বেনেডিক্ট ষোড়শের অনুমোদনে কার্ডিনাল এরসিলিও টোনিনি ‘ধর্মবিশ্বাসের বিরুদ্ধে চরম চ্যালেঞ্জ ও ক্রসের অপমান’ হিসেবে বর্ণনা করেছিলেন। টোনিনি তখন বলেন, তাঁকে ক্যাথলিক সমাজ থেকে বের করে দেওয়া উচিত।
গত বছর ম্যাডোনা এআই দিয়ে তৈরি একটি ছবি পোস্ট করে বিতর্কে জড়ান। যেখানে দেখা যায়, পোপ ফ্রান্সিস তাঁর কোমরে হাত রেখেছেন।
চলতি বছরের জুনে নিউইয়র্ক টাইমসের এক অনুসন্ধানে দেখা যায়, ম্যাডোনা ও পোপ লিও ছয় প্রজন্ম আগে একই পূর্বপুরুষের বংশধর ছিলেন। সেই হিসাবে তাঁরা নবম স্তরের প্রজন্মে চাচাতো ভাই–বোন।