নির্বাচন কমিশনারদের ত্রুটিবিচ্যুতির জন্য চাকরিচ্যুত, এমনকি অবসরে থাকলেও যাতে তাঁদের শাস্তি হয়, সেই বিধান চায় বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। এ জন্য প্রয়োজনীয় আইনের সংশোধন করার প্রস্তাব দিয়েছে দলটি।

আজ রোববার বেলা দেড়টার দিকে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বৈঠকের বিরতিতে জামায়াতের নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে জাতীয় সংসদের এলডি হলে দ্বিতীয় দফার এই বৈঠক শুরু হয়। এর আগে ২৬ এপ্রিল জামায়াতের সঙ্গে ঐকমত্য কমিশনের আলোচনা হয়েছিল। সেদিন মূলত সংবিধান সংস্কার কমিশনের সুপারিশগুলো নিয়ে আলোচনা হয়।

নির্বাচন কমিশনারদের শাস্তির বিষয়ে সৈয়দ আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের বলেন, ‘গত ১৫ বছর বা তার আগেও নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব ছিল সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন করা। কিন্তু অনেকেই সেটি করেননি। এটির অন্যতম প্রধান কারণ হচ্ছে আমাদের বিদ্যমান আইনে নির্বাচন কমিশনারদের ত্রুটিবিচ্যুতির জন্য খুব বেশি শাস্তির বিধান নেই। নির্বাচন কমিশনারদের চাকরিকালে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল তাঁদের শাস্তি নিশ্চিত করতে পারে। কিন্তু আমরা বলেছি নির্বাচন কমিশনারদের চাকরি চলে যাওয়া বা অবসরের পরেও যাতে তাঁদের আইনের আওতায় আনার বিধান থাকে। এ জন্য প্রয়োজনীয় আইনের সংশোধন করা দরকার।’

দুর্নীতি দমন কমিশনের বিষয়ে জামায়াতের প্রস্তাবের বিষয়ে সৈয়দ আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের বলেন, ‘দুর্নীতি দমন কমিশন অনেক সময় দুর্নীতিগ্রস্ত হিসেবে সবার কাছে চিহ্নিত হয়েছে। এই অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে দলের পক্ষ থেকে একটি টাস্কফোর্স গঠনের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, যেটি দুর্নীতি দমন কমিশনের ওয়াচডগ হিসেবে কাজ করবে। কমিশনের কেউ দুর্নীতিতে জড়িত হলে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তির সুপারিশ করবে। আমাদের এই প্রস্তাবের সঙ্গে ঐকমত্য কমিশনের সদস্যরাও একমত হয়েছেন।’

ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণের বিষয়ে প্রস্তাব তুলে ধরে জামায়াতের নায়েবে আমির বলেন, ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণের প্রস্তাবের ওপর জোরালো আলোচনা হয়েছে। জামায়াতের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, একজন ব্যক্তি একইসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী এবং সেই দলের প্রধান থাকতে পারবেন না। এ রকম উদাহরণ পৃথিবীর বহু দেশে আছে। এ ছাড়া একজন ব্যক্তি সারা জীবনে ১০ বছরের বেশি প্রধানমন্ত্রী থাকতে পারবেন না বলেও মতামত দিয়েছে দলটি। গত বৈঠকেও এ বিষয়ে কিছুটা ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছিল। আজ এর ওপর আরও স্পষ্ট আলোচনা হয়েছে।

জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল (এনসিসি) গঠনের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে সৈয়দ আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের বলেন, ‘আমরা এনসিসি গঠনের সঙ্গে নীতিগতভাবে একমত। কিন্তু যে ফরম্যাট দেওয়া হয়েছে, সেখানে আমরা কিছু সংশোধনী এনেছি। মূলত প্রধান বিচারপতি এবং রাষ্ট্রপ্রধানকে তারা বডির ভেতরে প্রস্তাব করেছিল। কিন্তু আমরা বলেছি তাঁদের এখান থেকে দূরে রাখতে হবে। কারণ, কোনো জরুরি সংকট তৈরি হলে যাতে মানুষ সমাধানের জন্য তাঁদের কাছে যেতে পারে।’

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজের নেতৃত্বে আলোচনায় অংশ নেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্য বদিউল আলম মজুমদার, সফর রাজ হোসেন, ইফতেখারুজ্জামান, জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের সদস্য মোহাম্মদ আইয়ুব মিয়া ও প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (ঐকমত্য) মনির হায়দার।

অপর দিকে জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহেরের নেতৃত্বে আলোচনায় অংশ নেন রাজনৈতিক দলটির ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল এ টি এম মাছুম, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আজাদ, মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, এহসানুল মাহবুব জোবায়ের, কেন্দ্রীয় প্রচার ও মিডিয়া সেক্রেটারি মতিউর রহমান আকন্দ, নির্বাহী পরিষদের সদস্য সাইফুল আলম খান মিলন, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আমির নুরুল ইসলাম বুলবুল, ঢাকা মহানগর উত্তরের আমির মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন, জামায়াতের আইনজীবী শিশির মোহাম্মদ মনির। প্যানেল সদস্য হিসেবে আছেন মহিউদ্দিন সরকার।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র প রস ত ব র সদস য র বল ন ইসল ম

এছাড়াও পড়ুন:

ঐকমত্য কমিশনের কাজ সফলভাবে শেষ হওয়ায় প্রধান উপদেষ্টার অভিনন্দন

সাফল্যের সঙ্গে সব সক্রিয় রাজনৈতিক দলের সঙ্গে লাগাতার বৈঠকের মাধ্যমে ঐকমত্যে পৌঁছে জুলাই জাতীয় সনদ তৈরি ও বাস্তবায়নের রূপরেখা নির্ধারণ করায় জাতীয় ঐক্যমত্য কমিশনের সদস্যদের অভিনন্দন জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।

বাসস লিখেছে, বাংলাদেশে একটি স্থায়ী জবাবদিহিমূলক রাষ্ট্রের ভিত্তি স্থাপনের জন্য প্রয়োজনীয় কাঠামোগত সংস্কারের লক্ষ্যে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে সভাপতি করে ঐকমত্য কমিশনের যাত্রা শুরু হয় চলতি বছরের ১২ ফেব্রুয়ারি, যার মেয়াদ শেষ হয় ৩১ অক্টোবর।

আরো পড়ুন:

প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে তিন বাহিনীর প্রধানের সাক্ষাৎ, নির্বাচনি প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনা

সমবায়ভিত্তিক অর্থনৈতিক কার্যক্রমের মাধ্যমে আত্মনির্ভরশীল দেশ গড়া সম্ভব 

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “জুলাই জাতীয় সনদ আমাদের ঐতিহাসিক অর্জন। এই সনদ আমাদের জাতির এক মূল্যবান দলিল, যা আমাদের আগামী জাতীয় নির্বাচনের পথকে কেবল সুগমই করবে না, জাতীয় রাজনীতির ভবিষ্যৎ পথনির্দেশক হিসেবে কাজ করবে এবং আমাদের গণতন্ত্রকে সুসংহত করবে।”

প্রধান উপদেষ্টা আরো বলেন, “জনগণ প্রত্যাশায় আছে জাতীয় জীবনে এমন কিছু পরিবর্তন দেখার জন্য, যা বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির বিকাশ ঘটাবে; এমন কিছু পরিবর্তন যা এদেশে আর কখনো কোনো স্বৈরাচারের আগমন ঘটতে দেবে না, এমন কিছু পরিবর্তন যা আমাদের জাতীয় জীবনে সামগ্রিক উন্নয়ন ঘটাবে, সবার নাগরিক অধিকার ও মর্যাদা রক্ষা করবে।”

“সবচেয়ে আশার কথা হচ্ছে, আমরা নিজেরাই এই সংস্কার প্রক্রিয়াগুলো নিয়ে কাজ করেছি, একমত হয়েছি। বাইরের কেউ আমাদের ওপর কোনো সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেয়নি,” বলেন প্রধান উপদেষ্টা।

‘অতীতে বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশে যে সমস্ত রাজনৈতিক সংলাপ হয়েছে, তাতে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে আমরা বিদেশিদের আসতে দেখেছি’ জানিয়ে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, “বন্ধু রাষ্ট্রসহ জাতিসংঘের প্রতিনিধিবৃন্দ বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোকে এক টেবিলে আনার চেষ্টা করেছেন। তবে জুলাই গণ-অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলো একমত হয়েছে যে, আমাদের নিজেদের সংকট নিজেদেরই সমাধান করতে হবে।”

“এই কারণেই সকল রাজনৈতিক দল এক কাতারে এসেছে, রাজনৈতিক বিতর্কে অংশ নিয়েছে এবং আমাদেরকে সমাধানের পথ দেখিয়েছে। বিশ্ববাসীকে বাংলাদেশে রাজনৈতিক সংকট সমাধানে আমন্ত্রণ জানানোর পরিবর্তে আমরা নিজেরাই বিশ্ববাসীর দরবারে আমাদের জাতীয় ঐক্যকে তুলে ধরেছি,” বলেন তিনি। 

প্রধান উপদেষ্টা বাংলাদেশের সকল রাজনৈতিক দলকে এবং তাদের নেতৃবৃন্দকে বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, “রাজনৈতিক দলের নেতারা যারা এই সনদ তৈরিতে অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন, অসম্ভবকে সম্ভব করেছেন তাদের সকলকে আমি জাতির পক্ষ থেকে কৃতজ্ঞতা জানাই।”

এই জুলাই সনদ সারা বিশ্বের জন্যই একটি অনন্য দৃষ্টান্ত বলে মন্তব্য করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “পৃথিবীর আর কোথাও এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি। এটা পৃথিবীর রাজনৈতিক ইতিহাসে এক উজ্জ্বল ঘটনা হয়ে থাকবে। পৃথিবীর অন্যান্য দেশও সংকটকালীন সময়ে দেশগঠনের পদক্ষেপ হিসেবে ‘ঐকমত্য কমিশন’ গঠনের কথা বিবেচনা করবে।”

প্রধান উপদেষ্টা জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ, সদস্য ড. বদিউল আলম মজুমদার, ড. ইফতেখারুজ্জামান, সফর রাজ হোসেন, বিচারপতি এমদাদুল হক ও ড. মোহাম্মদ আইয়ুব মিয়া এবং বিশেষ সহকারী মনির হায়দারকে ধন্যবাদ জানান। এর পাশাপাশি গণমাধ্যমের প্রতিনিধিবৃন্দ যারা মাসের পর মাস এই দীর্ঘ আলোচনার সঙ্গে থেকেছেন, ঐকমত্য কমিশনের সকল কার্যকলাপ মানুষের কাছে সহজ ভাষায় পৌঁছে দিয়েছেন, তাদের প্রতিও কৃতজ্ঞতা জানান প্রধান উপদেষ্টা।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “আমাদের সকলের মনে রাখতে হবে, যে অভূতপূর্ব ঐক্য আমাদের মাঝে রয়েছে রাষ্ট্র সংস্কারে এই জাতীয় ঐক্য আমাদের ধরে রাখতেই হবে। কারণ ফ্যাসিবাদী গোষ্ঠী এ জাতিকে বিভক্ত করতে সর্বশক্তি নিয়োজিত করেছে। গত ১৫ মাস আমরা তাদের নানা ষড়যন্ত্র ঐক্যবদ্ধভাবে মোকাবিলা করেছি। ফ্যাসিবাদকে পরাস্ত করতে হলে, এই দেশকে বাঁচাতে হলে জাতীয় ঐক্য ধরে রাখা ছাড়া আর কোনো বিকল্প নাই।”

‘দেশের ভবিষ্যৎ নির্মাণে আমাদের সামনে চ্যালেঞ্জ আছে’ বলে মন্তব্য করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা কোনো একক ব্যক্তি, একক সংগঠন, একক সংস্থা অথবা একক সরকার দিয়ে সম্ভব হবে না; এজন্য সকল রাজনৈতিক দল ও পক্ষের মধ্যে একতা থাকতে হবে, যত প্রতিকূলতাই আসুক না কেন ঐক্য ধরে রাখতে হবে।”

ঢাকা/রাসেল

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • জুলাই সনদ নিয়ে রাজনৈতিক সংকট তৈরি হলো কেন
  • সনদ বাস্তবায়নে দ্রুত সিদ্ধান্ত, আরপিওতে পরিবর্তন আসছে
  • ঐকমত্য কমিশনের কাজ সফলভাবে শেষ হওয়ায় প্রধান উপদেষ্টার অভিনন্দন
  • তড়িঘড়ি না করে সংবিধান সংস্কারে আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান
  • কিছু রাজনৈতিক দল ঐকমত্য কমিশনে গিয়ে ফাঁদে পড়েছে: জাপা মহাসচিব
  • ঐকমত্য কমিশন হাজির করেছে অনৈক্যের দলিল: বিএনপি নেতা জহির উদ্দিন স্বপন
  • জুলাই সনদ নিয়ে জট খুলুন, সময় কিন্তু চলে যাচ্ছে
  • সমস্যা সমাধান করে নির্বাচনের পথে এগোন: অন্তর্বর্তী সরকারকে মির্জা ফখরুল
  • অধ্যাপক আলী রীয়াজের নতুন বই প্রকাশিত
  • সুপারিশ নিয়ে বিতর্ক, কতটা যৌক্তিক