মেয়াদ শেষ হওয়ার পরেও নির্বাচন কমিশনারদের শাস্তির বিধান চায় জামায়াত
Published: 18th, May 2025 GMT
নির্বাচন কমিশনারদের ত্রুটিবিচ্যুতির জন্য চাকরিচ্যুত, এমনকি অবসরে থাকলেও যাতে তাঁদের শাস্তি হয়, সেই বিধান চায় বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। এ জন্য প্রয়োজনীয় আইনের সংশোধন করার প্রস্তাব দিয়েছে দলটি।
আজ রোববার বেলা দেড়টার দিকে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বৈঠকের বিরতিতে জামায়াতের নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে জাতীয় সংসদের এলডি হলে দ্বিতীয় দফার এই বৈঠক শুরু হয়। এর আগে ২৬ এপ্রিল জামায়াতের সঙ্গে ঐকমত্য কমিশনের আলোচনা হয়েছিল। সেদিন মূলত সংবিধান সংস্কার কমিশনের সুপারিশগুলো নিয়ে আলোচনা হয়।
নির্বাচন কমিশনারদের শাস্তির বিষয়ে সৈয়দ আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের বলেন, ‘গত ১৫ বছর বা তার আগেও নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব ছিল সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন করা। কিন্তু অনেকেই সেটি করেননি। এটির অন্যতম প্রধান কারণ হচ্ছে আমাদের বিদ্যমান আইনে নির্বাচন কমিশনারদের ত্রুটিবিচ্যুতির জন্য খুব বেশি শাস্তির বিধান নেই। নির্বাচন কমিশনারদের চাকরিকালে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল তাঁদের শাস্তি নিশ্চিত করতে পারে। কিন্তু আমরা বলেছি নির্বাচন কমিশনারদের চাকরি চলে যাওয়া বা অবসরের পরেও যাতে তাঁদের আইনের আওতায় আনার বিধান থাকে। এ জন্য প্রয়োজনীয় আইনের সংশোধন করা দরকার।’
দুর্নীতি দমন কমিশনের বিষয়ে জামায়াতের প্রস্তাবের বিষয়ে সৈয়দ আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের বলেন, ‘দুর্নীতি দমন কমিশন অনেক সময় দুর্নীতিগ্রস্ত হিসেবে সবার কাছে চিহ্নিত হয়েছে। এই অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে দলের পক্ষ থেকে একটি টাস্কফোর্স গঠনের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, যেটি দুর্নীতি দমন কমিশনের ওয়াচডগ হিসেবে কাজ করবে। কমিশনের কেউ দুর্নীতিতে জড়িত হলে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তির সুপারিশ করবে। আমাদের এই প্রস্তাবের সঙ্গে ঐকমত্য কমিশনের সদস্যরাও একমত হয়েছেন।’
ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণের বিষয়ে প্রস্তাব তুলে ধরে জামায়াতের নায়েবে আমির বলেন, ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণের প্রস্তাবের ওপর জোরালো আলোচনা হয়েছে। জামায়াতের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, একজন ব্যক্তি একইসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী এবং সেই দলের প্রধান থাকতে পারবেন না। এ রকম উদাহরণ পৃথিবীর বহু দেশে আছে। এ ছাড়া একজন ব্যক্তি সারা জীবনে ১০ বছরের বেশি প্রধানমন্ত্রী থাকতে পারবেন না বলেও মতামত দিয়েছে দলটি। গত বৈঠকেও এ বিষয়ে কিছুটা ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছিল। আজ এর ওপর আরও স্পষ্ট আলোচনা হয়েছে।
জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল (এনসিসি) গঠনের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে সৈয়দ আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের বলেন, ‘আমরা এনসিসি গঠনের সঙ্গে নীতিগতভাবে একমত। কিন্তু যে ফরম্যাট দেওয়া হয়েছে, সেখানে আমরা কিছু সংশোধনী এনেছি। মূলত প্রধান বিচারপতি এবং রাষ্ট্রপ্রধানকে তারা বডির ভেতরে প্রস্তাব করেছিল। কিন্তু আমরা বলেছি তাঁদের এখান থেকে দূরে রাখতে হবে। কারণ, কোনো জরুরি সংকট তৈরি হলে যাতে মানুষ সমাধানের জন্য তাঁদের কাছে যেতে পারে।’
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজের নেতৃত্বে আলোচনায় অংশ নেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্য বদিউল আলম মজুমদার, সফর রাজ হোসেন, ইফতেখারুজ্জামান, জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের সদস্য মোহাম্মদ আইয়ুব মিয়া ও প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (ঐকমত্য) মনির হায়দার।
অপর দিকে জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহেরের নেতৃত্বে আলোচনায় অংশ নেন রাজনৈতিক দলটির ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল এ টি এম মাছুম, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আজাদ, মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, এহসানুল মাহবুব জোবায়ের, কেন্দ্রীয় প্রচার ও মিডিয়া সেক্রেটারি মতিউর রহমান আকন্দ, নির্বাহী পরিষদের সদস্য সাইফুল আলম খান মিলন, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আমির নুরুল ইসলাম বুলবুল, ঢাকা মহানগর উত্তরের আমির মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন, জামায়াতের আইনজীবী শিশির মোহাম্মদ মনির। প্যানেল সদস্য হিসেবে আছেন মহিউদ্দিন সরকার।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র প রস ত ব র সদস য র বল ন ইসল ম
এছাড়াও পড়ুন:
তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার বিষয়ে সব দল একমত: অধ্যাপক আলী রীয়াজ
বাংলাদেশের সব রাজনৈতিক দল তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার ব্যাপারে অভিন্ন মত পোষণ করে এবং এ ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট ঐকমত্য আছে বলে জানিয়েছেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ।
আজ বুধবার রাজধানীর বেইলি রোডে ফরেন সার্ভিস একাডেমির দোয়েল হলে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে কমিশনের দ্বিতীয় ধাপের অষ্টম দিনের আলোচনা শেষে প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি এ কথা জানান।
আজকের বৈঠকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের গঠন, কাঠামো এবং এই সরকার কত দিন থাকবে, সেসব বিষয়ে আলোচনা হয়েছে বলে জানান অধ্যাপক আলী রীয়াজ। তিনি বলেন, আলোচনায় বিভিন্ন রকম মতামত এসেছে। এ বিষয়ে দুটি সুপারিশ ছিল, সংবিধান সংস্কার কমিশন থেকে ছিল ৯০ দিনের, আর নির্বাচন কমিশন সংস্কারবিষয়ক কমিশন সুপারিশ করেছিল ১২০ দিনের।
সুপারিশকৃত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের এই দুই সময় এবং এই সরকারের পরিধি নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলে জানান অধ্যাপক আলী রীয়াজ। তিনি বলেন, কোন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে প্রধান উপদেষ্টার নিয়োগ হবে, তা নিয়েও আলোচনা হয়েছে। এই আলোচনায় রাজনৈতিক দলগুলো অনেক কাছাকাছি এসেছে। এ বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে যে আলোচনা হয়েছে, তা অত্যন্ত ইতিবাচক।
তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়াও আজ নির্বাচনী এলাকার সীমানা নির্ধারণ নিয়েও আলোচনা হয়েছে বলে জানান অধ্যাপক আলী রীয়াজ। আলোচনায় এ বিষয়েও উল্লেখযোগ্য ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বলে জানান তিনি।
সীমানা নির্ধারণ বিষয়ে আশু এবং দীর্ঘ মেয়াদে ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে বলে জানান অধ্যাপক আলী রীয়াজ। তিনি বলেন, আশু ব্যবস্থা হিসেবে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশনের সহায়তায় যথাযথ দক্ষতাসম্পন্ন ব্যক্তিদের নিয়ে বিশেষায়িত কমিটি গঠন। যদি কমিটি গঠন হয়ে থাকে, তাহলে পরিবর্তন সাধন করে সেই কমিটি দ্বারা সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণ করা। বর্তমান যে কমিটি করা, সেটা যাতে পরিবর্তন করে রাজনৈতিক দলের ঐকমত্যের প্রতিফলন ঘটে। তাঁরা এ বিষয়ে সরকার ও নির্বাচন কমিশনকে অবহিত করবেন।
আর দীর্ঘমেয়াদি ও স্থায়ী সমাধানে যে ঐকমত্য হয়েছে, তা হলো প্রতি আদমশুমারি বা অনধিক ১০ বছর পরে সংসদীয় নির্বাচনী এলাকার সীমানা নির্ধারণের জন্য সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১১৯–এর দফা ১–এর (গ) এর শেষে উল্লেখিত ‘এবং’ শব্দটির পর ‘আইনের দ্বারা নির্ধারিত একটি বিশেষায়িত কমিটি গঠনের বিধান’ যুক্ত করা হবে। সংশ্লিষ্ট জাতীয় সংসদের সীমানা নির্ধারণ আইন ২০২১, যা ২০২৫ সালে সংশোধিত হয়েছে, তার ৮(৩) সঙ্গে যুক্ত করে ওই কমিটির গঠন ও কার্যপরিধি নির্ধারণ করা হবে।
আলী রীয়াজ বলেন, ‘আমরা সংবিধানে কিছু বিষয় যুক্ত করার কথা বলেছি। তার পাশাপাশি সেটাকে বাস্তবায়ন করার জন্য আইনের মধ্য দিয়ে কমিটির পরিধি ও কার্যপরিধি গঠন নিয়ে সুনির্দিষ্ট আইন যেন থাকে, তা বলেছি। দীর্ঘমেয়াদি স্থায়ী সমাধানের জন্য এ ব্যাপারে সব রাজনৈতিক দল একমত হয়েছে।’
খুব দ্রুত এসব বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছানো যাবে বলে আশা প্রকাশ করেন আলী রীয়াজ। রাজনৈতিক দলগুলোর সহযোগিতা থাকলে চলতি জুলাই মাসের মধ্যেই একটি জুলাই সনদ তৈরি করতে পারবেন বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে আজকের আলোচনায় বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), ইসলামী আন্দোলনসহ ৩০টি রাজনৈতিক দল অংশ নিয়েছিল। আলোচনার শুরুতে জুলাই শহীদদের স্মরণে সবাই দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করেন।
প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দারের সঞ্চালনায় আজকের আলোচনায় আরও উপস্থিত ছিলেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্য বদিউল আলম মজুমদার, বিচারপতি মো. এমদাদুল হক, ইফতেখারুজ্জামান ও মো. আইয়ুব মিয়া।