জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের ঘটনায় হওয়া মামলাগুলোতে হয়রানিমূলকভাবে গণহারে আসামি করার ঘটনায় উদ্বেগ জানিয়েছে বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট)। সংস্থাটি প্রকৃত দায়ী ব্যক্তিদের দ্রুত বিচার নিশ্চিতেরও দাবি জানিয়েছে।

মঙ্গলবার ব্লাস্টের এক বিবৃতিতে বলা হয়, সাম্প্রতিক সময়ে, হয়রানিমূলক ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের ঘটনায় দায়ের করা মামলায় অনেককে সম্পৃক্ত করা হচ্ছে। এভাবে গণহারে মামলায় সম্পৃক্ত করা এবং গ্রেপ্তারের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছে ব্লাস্ট।

মানবাধিকার ও আইনি সহায়তা প্রদানকারী বেসরকারি সংস্থাটি গণগ্রেপ্তার এবং হয়রানি বন্ধে সরকারেরর প্রতি যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছে। একই সঙ্গে তারা জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে গণহত্যা এবং গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় প্রকৃত দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানিয়েছে।

অভিনেত্রী নুসরাত ফারিয়াকে আটকের বিষয়টি উল্লেখ করে বিবৃতিতে ব্লাস্ট বলেছে, ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা ছাড়া, যথাযথ প্রমাণ দাখিল না করে শুধু হয়রানি করার উদ্দেশ্যে এমন ঢালাওভাবে আসামি হিসেবে নাম অন্তর্ভুক্ত করে মামলা দায়ের করা হচ্ছে। এভাবে হয়রানিমূলক মামলা দায়ের করা হলে মামলাগুলোর তদন্ত দ্রুত সম্পন্ন এবং প্রকৃত অপরাধীদের যথাযথ বিচার নিশ্চিত করা দুরূহ হয়ে পড়বে; যা মূলত জুলাই-আগস্টে ছাত্র–জনতার গণ–অভ্যুত্থানের মূল ধারাকে বিঘ্নিত করবে।

বিবৃতিতে মামলা দায়ের এবং আসামি গ্রেপ্তারের ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ও সুষ্ঠু তদন্তের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়। একই সঙ্গে কাউকে হয়রানি না করে নিরপেক্ষ ও সুনির্দিষ্ট  প্রমাণ সাপেক্ষে দায়ী ব্যক্তির যথাযথ বিচার নিশ্চিতের দাবি জানায় বেসরকারি মানবাধিকার সংস্থাটি।

গত রোববার সকালে থাইল্যান্ডে যাওয়ার সময় হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে অভিনেত্রী নুসরাত ফারিয়াকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালে ঢাকার ভাটারা এলাকায় একজনকে হত্যাচেষ্টার মামলায় তাঁকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। পরে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটের আদেশ অনুসারে ২২ মে তাঁর জামিন শুনানির দিন ধার্য করে কাশিমপুর মহিলা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়।

মঙ্গলবার সকালে নুসরাত ফারিয়ার জামিন মঞ্জুর করেন আদালত। ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালত এ আদেশ দেন। এরপর জামিনে মুক্তি পেয়ে বেলা সাড়ে তিনটার দিকে গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় মহিলা কারাগার থেকে তিনি বেরিয়ে আসেন।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: জ ল ই আগস ট র ঘটন হয়র ন

এছাড়াও পড়ুন:

অমর একুশে বইমেলা ফেব্রুয়ারিকে স্পর্শ করুক

অমর একুশে বইমেলা বাংলাদেশের মানুষের প্রাণের মেলা। মূলত প্রকাশকদের উদ্যোগে মুক্তিযুদ্ধ উত্তর বাংলাদেশে এই বইমেলার সূত্রপাত। সম্প্রতি এই বইমেলা নানা কারণে-অকারণে ডিসেম্বরে করার কথা শোনা যাচ্ছে। এ প্রেক্ষিতে সুস্পষ্টভাবে বলতেই হচ্ছে -ডিসেম্বরে কিছুতেই মেলা করা যাবে না। কারণ সেসময় সারাদেশে শিক্ষার্থীদের বার্ষিক পরীক্ষা চলবে।

বইমেলার প্রধান পাঠক আমাদের শিক্ষার্থী। তারা ডিসেম্বরে কিছুতেই মেলায় আসতে পারবে না। প্রধান পাঠকই যদি মেলায় আসতে না পারে তাহলে মেলা প্রাণহীন হয়ে পড়বে। বইমেলায় অংশগ্রহণকারি প্রকাশকরাও ভয়াবহ ক্ষতির মুখে পড়বে। তাছাড়া একুশের চেতনাকে ধারণ করে যে অমর একুশে বইমেলা, সেটা ফেব্রুয়ারিকে স্পর্শ করুক। ভাষা শহীদদরর প্রতি বইমেলার মাধ্যমে আমাদের যে শ্রদ্ধাঞ্জলি, তা অক্ষুন্ন থাকুক। 

আরো পড়ুন:

রাজশাহীতে বইপড়ায় কৃতিত্বের পুরস্কার পেল ২৩০৩ শিক্ষার্থী

‘গল্পকারের পছন্দের ৫০ গল্প’ গ্রন্থ প্রকাশিত

সর্বোপরি ৫ জানুয়ারি থেকে ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, এই সময়ে বইমেলা হতে কোন সমস্যা হওয়ার কথা নয়। অথবা তারিখ দুই একদিন এদিক-সেদিক করে নেয়া যেতে পারে। এ সময়ে রোজা নেই, নির্বাচনও নেই। নির্বাচনী ক্যাম্পেইন চলবে। এই মাঠে বইমেলা চলাকালীন সর্বদলীয় সিদ্ধান্তে কেউ সভা-সমাবেশ না করার সিদ্ধান্ত নিলে অনায়াসে এই সময়টাতে বইমেলা করা যেতে পারে। আমার বিশ্বাস- সব দলই অমর একুশে বইমেলার জন্য এই ছাড়টুকু দেবেন।

প্রায় পঞ্চাশ বছরের অধিক সময়ের  প্রচেষ্টায় অমর একুশে বইমেলা মহিরুহ হয়ে আমাদের কাছে আবির্ভূত, হঠকারি কোন সিদ্ধান্তে তা যেনো ধ্বংস হওয়ার উপক্রম না হয়। জেনে শুনে বাঙালির এতো বড় একটি সাংস্কৃতিক উৎসবকে ভয়াবহভাবে ক্ষতিগ্রস্থ না করে বরং তা যে কোন মূল্যে আমাদের রক্ষা করা উচিত।

জানুয়ারিতে বাণিজ্যমেলায়ও হয়ে থাকে। এতে অমর একুশে বইমেলার ওপর কোনো বিরূপ প্রভাব পড়বে বলে আমি তা মনে করি না। বইমেলার প্রধান পাঠক শিক্ষার্থী। তারা বইমেলায় আসার জন্য মুখিয়ে থাকে। বাণিজ্য মেলায় যাওয়ার লোকজন বেশির ভাগই আলাদা। তবে অনেকেই বইমেলা এবং বাণিজ্যমেলা দুটোতেই যান। এটা তারা ম্যানেজ করে নিতে পারবেন বলে আমার বিশ্বাস।

আমি বলেছি শুধুমাত্র মেলার মাঠ প্রাঙ্গনে সভা-সমাবেশ না করার মাধ্যমে যদি সর্বদলীয় একটা সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় তাহলে জানুয়ারি- ফেব্রুয়ারি মিলিয়ে  বইমেলা করা সম্ভব।আমার মনে হয়, বইমেলা চলাকালীন এই মাঠ কোন দলকে সভা-সমাবেশের জন্য সরকার বরাদ্দ না দিলে, অথবা বইমেলা চলাকালীন দলগুলো নিজের থেকেই এই মাঠের বরাদ্দ না চাইলে সমস্যা আর থাকে না।

লেখক: প্রকাশক পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লিমিটেড

ঢাকা/লিপি

সম্পর্কিত নিবন্ধ