জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহত মোহাম্মদ হাসান (২৩) থাইল্যান্ডে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। গত বৃহস্পতিবার রাত ১১টার দিকে তার মৃত্যু হয়। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা নূরজাহান বেগমের ব্যক্তিগত সহকারী ডা. মাহমুদুল হাসান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

তিনি বলেন, মোহাম্মদ হাসানের মরদেহ আগামীকাল শনিবার সন্ধ্যা ৬ টা ১৫ মিনিটে বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইটে আনা হবে। বিমানবন্দর থেকে মরদেহ নেওয়া হবে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। সেখানে প্রথম জানাযার নামাজ অনুষ্ঠিত হবে। এরপর চট্টগ্রামে পাঠানো হবে। মোহাম্মদ হাসান কুরআনের হাফেজ ছিলেন। হিফজ শেষ করে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরির জন্য প্রশিক্ষণ নিচ্ছিলেন।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় তথ্য বলছে, গত ৫ আগস্ট চট্টগ্রাম নগরের টাইগারপাসে আন্দোলনের সময় মাথার ডান পাশে গুলিবিদ্ধ হন হাসান। প্রথমে চট্টগ্রাম মেডিকেলে চিকিৎসাধীন ছিলেন। উন্নত চিকিৎসার জন্য দ্রুত ঢাকা সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) নেওয়া হয়। গত অক্টোবর উন্নত চিকিৎসার জন্য থাইল্যান্ডে নেওয়া হয়। সেখানেই দীর্ঘদিন লাইফসাপোর্টে চিকিৎসাধীন ছিলেন। গত ১০ এপ্রিল তাকে লাইফসাপোর্ট থেকে সরিয়ে সাধারণ শয্যায় নেওয়া হয়। ২৫ এপ্রিল তার অবস্থার অবনতি ঘটায় তাকে পুনরায় লাইফসাপোর্টে নেওয়া হয়।

বৃহস্পতিবার রাত ১২টা ১৭ মিনিটের দিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় মুখপাত্র উমামা ফাতেমার এক ফেসবুক পোস্টে তিনি বলেন, ‘জুলাই অভ্যুত্থানে আহত হাসান ভাই একটু আগে মারা গেছেন। হাসান ভাই আহত হওয়ার পর থেকে এম্পাওয়ারিং আওয়ার ফাইটারসের মাধ্যমে তার সঙ্গে কলি আপু সার্বক্ষণিক যুক্ত ছিলেন। কিছুদিন আগে কলি কায়েয আপু বলছিলেন হাসানের অবস্থা বেশি ভালো না। আমি ভাবছিলাম দেশে আসলে দেখতে যাব। কি বলব!’

.

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

আন্তঃকলেজ দ্বন্দ্ব নিরসনে করণীয়

ধানমন্ডি এলাকায় প্রায়ই আন্তঃকলেজ দ্বন্দ্বের ঘটনা ঘটে। ঢাকা কলেজ এলাকায় সম্প্রতি সংঘটিত আন্তঃকলেজ সহিংসতায় এ কলেজের একজন অধ্যাপককে গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে হয়। একই ঘটনায় বেশ কয়েক শিক্ষার্থীও আহত হয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছিলেন। এ ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত, দুঃখজনক এবং শিক্ষার পরিবেশবিরোধী ঘটনার ফলে শুধু প্রতিষ্ঠান নয়, পুরো সমাজ ব্যবস্থাই প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে।
ধানমন্ডি এলাকার সচেতন নাগরিকরা এসব অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার পুনরাবৃত্তি দেখে উৎকণ্ঠিত ও ক্ষুব্ধ। তারা একটি স্থায়ী, কার্যকর ও প্রাতিষ্ঠানিক সমাধান প্রত্যাশা করছেন। একজন শিক্ষক হিসেবে আমি গভীরভাবে লজ্জিত, ব্যথিত ও আন্তরিকভাবে ক্ষমাপ্রার্থী। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, শিক্ষা ক্যাডারের দায়িত্বশীল, বিচক্ষণ ও কর্তব্যনিষ্ঠ প্রতিনিধিরা ধানমন্ডি এলাকার প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার পরিবেশ পুনঃস্থাপন করতে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারেন। এ লক্ষ্যে একটি প্রস্তাবিত রূপরেখা তুলে ধরছি। 
প্রথমত, উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন শৃঙ্খলা কমিটি গঠন করতে হবে। ধানমন্ডি এলাকায় শিক্ষার পরিবেশ সুরক্ষায় ঢাকা শিক্ষা বোর্ড, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডির আদলে একটি কেন্দ্রীয় শৃঙ্খলা কমিটি গঠন করা হোক। এ কমিটিতে প্রতিটি কলেজ থেকে পাঁচজন দক্ষ ও চৌকস শিক্ষক প্রতিনিধি অন্তর্ভুক্ত থাকবেন। কমিটির দায়িত্ব হবে কোনো ঘটনা ঘটলে তাৎক্ষণিক ও নিরপেক্ষ তদন্ত করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে রিপোর্ট পেশ করা। এর মধ্যে থাকবে ঘটনার কারণ, জড়িতদের পরিচয় এবং অপরাধের মাত্রা অনুযায়ী শাস্তির সুপারিশ।
কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট কলেজ তা দ্রুত কার্যকর করবে। কোনো ব্যত্যয় হবে না। এ বিষয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে সচেতনতা তৈরির লক্ষ্যে ব্যাপক প্রচার চালানো হবে। এ ছাড়া শাস্তি স্থগিত, বাতিল বা মওকুফের ক্ষমতা শুধু মাউশির থাকবে– এ তথ্যও শিক্ষার্থীদের জানিয়ে দিতে হবে। গুরুতর ফৌজদারি অপরাধের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট আইন প্রয়োগকারী 
সংস্থা ব্যবস্থা নেবে।
দ্বিতীয়ত, ভিডিও পর্যবেক্ষণ ও তদন্তে প্রযুক্তির ব্যবহার করতে হবে। নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু তদন্ত নিশ্চিত করার জন্য অপরিহার্য হলো সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ। এতে কমিটির কাছে অপরাধ-সংক্রান্ত ভিডিও ফুটেজ সহজেই পৌঁছে যাবে। তদন্ত হবে প্রমাণভিত্তিক এবং দ্রুত। এর ফলে নিরপেক্ষ সিদ্ধান্ত গ্রহণ সহজ হবে। পাশাপাশি সায়েন্স ল্যাব এলাকার অপরাধপ্রবণতাও উল্লেখযোগ্যভাবে কমে আসবে বলে প্রত্যাশা। 
 
nড. মো. নাজমুল কবির চৌধুরী: সহযোগী
অধ্যাপক, রসায়ন বিভাগ, ঢাকা কলেজ
chowdhurynajmul76@gmail.com

সম্পর্কিত নিবন্ধ