হবিগঞ্জ জেলার বানিয়াচং উপজেলার ইকরাম গ্রামে ফুটবল খেলা নিয়ে ঝগড়ার জেরে দুইদল লোকের সংঘর্ষে নারীসহ ৩০ জন আহত হয়েছে।
শুক্রবার (২৩ মে) বিকেলে এ ঘটনা ঘটে। গুরুতর আহত টেঁটাবিদ্ধ আমির আলী, বাবুল মিয়া ও তামিম মিয়াসহ কয়েকজনকে হবিগঞ্জ ২৫০ শয্যা জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। সেখান থেকে আমির আলীকে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। বাকীরা স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা নিয়েছেন।
স্থানীয়রা জানান, ওই গ্রামের সাহাবুদ্দিনের ছেলে আমির আলী ও সাত্তার মিয়ার ছেলের মধ্যে ফুটবল খেলার সময় ঝগড়া হয়। এক পর্যায়ে উভয়পক্ষ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। খবর পেয়ে স্থানীয় লোকজন ও মুরুব্বিরা গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
বানিয়াচং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গোলাম মোস্তফা বলে, “অভিযোগ সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে।”
ঢাকা/মামুন/এস
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
মেয়েদের জন্য সবার আগে দরকার অর্থনৈতিক স্বাধীনতা: মিথিলা
বহু পরিচয়ে তিনি আমাদের সামনে এসে দাঁড়ান–অভিনেত্রী, গায়ক, মডেল, শিক্ষক, উন্নয়নকর্মী, মা। একেকটি পরিচয়ের ছায়া পেরিয়ে যে কাহিনি তাঁর জীবনগাথার অন্তরালে জ্বলজ্বলে হয়ে ওঠে, তা হলো–একজন নারীর আত্মপ্রতিষ্ঠার অদম্য সংগ্রাম। তিনি রাফিয়াত রশিদ মিথিলা। বাংলাদেশের বিনোদন জগতে, যিনি দীর্ঘদিন ধরে নিজের অবস্থান দৃঢ় করে রেখেছেন। মিথিলার পরিচয় শুধু শোবিজ তারকা নন বরং নারীর প্রেরণার প্রতীকও। তিনি জানেন কীভাবে ব্যক্তিগত ঝড়ের মুখে দাঁড়িয়েও নিজের স্বপ্নগুলো আঁকড়ে ধরে এগিয়ে যেতে হয়। যেমন গানে, যেমন পর্দায়, তেমনই বাস্তব জীবনের দৃঢ়তায়।
সাম্প্রতিক সময়ে যখন তাঁর ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে জনমনে কৌতূহল তুঙ্গে, তখন মিথিলা নীরবে উচ্চারণ করেছেন অন্য এক বার্তা–নারীর অর্থনৈতিক স্বাধীনতার। তাঁর নিজের কথাতেই উঠে এসেছে জীবনের কঠিন অধ্যায়গুলো। ২৩ বছর বয়সে বিয়েবন্ধনে আবদ্ধ হওয়া, অল্প বয়সেই মা হয়ে ওঠা, স্বপ্নের সংসারের ভেঙে যাওয়া, নতুন করে শুরু করার সংগ্রাম–সবই যেন তাঁকে তৈরি করেছে এক নতুন রূপে।
মিথিলা বলেন, ‘২৩ বছর বয়স থেকে আমি আমার জীবনটাকে অন্যরকম ভাবে দেখে এসেছিলাম। হঠাৎ করে সেটি পাল্টে গেল... মেয়েদের নিজেদের কোনো আসল জায়গা থাকে না। নয় শ্বশুরবাড়ি, নয় বাপের বাড়ি। এখন এত বছর পর আমার নিজের একটা জায়গা আছে। এর কৃতিত্ব কিন্তু সম্পূর্ণ আমার।’ এই কৃতিত্ব কেবল কথায় নয়, কর্মেও ধরা পড়ে। ইউনিসেফ, ব্র্যাক কিংবা ইউনেস্কোর মতো আন্তর্জাতিক সংস্থায় তাঁর কাজ, তাঁর গবেষণা, তাঁর শিশু মনোবিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা, এমনকি পিএইচডি পর্যায়ের একাডেমিক পথচলা–সব মিলিয়ে তিনি আলাদা।
অভিনয় থেকেও তিনি কখনও দূরে যাননি। ২০২৪ সালের শুরুতেই মুক্তি পায় ‘জলে জ্বলে তারা’। এরপর ‘অ্যালেন স্বপন ২’-এ তাঁর অভিনয় দর্শককে মুগ্ধ করে। ফিচার ফিল্ম থেকে নাটক, আন্তর্জাতিক প্রজেক্ট থেকে সীমান্ত পেরোনো সংলাপ–সবখানেই তাঁর সরব উপস্থিতি।
তবে এই আলোকিত পথচলা খুব সহজ ছিল না। বিচ্ছেদের পর জীবনের দায়ভার একাই নিতে হয়েছিল তাঁকে। আর্থিক সচ্ছলতা ছিল না, ছিল অনিশ্চয়তা। একসময় নিজের ও সন্তানের জন্য একটি গাড়িও ছিল না তাঁর হাতে। অথচ অভ্যাস ছিল ভিন্ন। তখন বুঝেছিলেন, একজন নারীর নিজের অর্থনৈতিক সক্ষমতা কতটা জরুরি। তাঁর ভাষায়, ‘আমার একটা গাড়িও ছিল না। আমি গাড়িতে চলাফেরায় অভ্যস্ত ছিলাম, আমার বাচ্চাও তাই ছিল। আমি তখন বুঝে গিয়েছিলাম, জীবনে নিজের জায়গা থাকাটা খুব দরকার। মেয়েদের জন্য সব থেকে আগে দরকার অর্থনৈতিক স্বাধীনতা। এই স্বাধীনতা না থাকলে মেয়েরা অনেক সময় কঠিন সিদ্ধান্ত দিতে পারে না।’
আজকের মিথিলা সেই সব বাধা টপকে দাঁড়িয়ে আছেন অনন্য উচ্চতায়। একদিকে সংসার সামলাচ্ছেন, অন্যদিকে কাজ করছেন আন্তর্জাতিক মঞ্চে। একই সঙ্গে মাতৃত্ব, ক্যারিয়ার, পড়াশোনা আর সমাজ নিয়ে সচেতন ভাবনা–সবকিছুই নিজের মতো করে সামলে নিচ্ছেন। তাঁকে ঘিরে মানুষের কৌতূহল যতটা তাঁর ব্যক্তিগত জীবনকে ঘিরে, তার চেয়েও বেশি আলোচনার দাবিদার তাঁর কর্মজীবন। কারণ, আজকের এই ‘মিথিলা’ হয়ে ওঠার পেছনে আছে শ্রম, সাহস, আত্মবিশ্বাস আর স্বপ্নকে আঁকড়ে ধরে টিকে থাকার এক অসামান্য যাত্রা। তবে এই মিথিলারও গুঞ্জন পিছু ছাড়ছে না। এসব জল্পনা বা গুঞ্জন মোটেই কানে নেন না মিথিলা। অভিনেত্রীর কথায়, ‘এত ব্যস্ত থাকি আমার সময় নেই এগুলো মাথায় নেওয়ার। নিজের কাজ নিজে করতে পছন্দ করি। আমার স্বামীও তাই। যারা কাজের মানুষ তারা ঠিকই বোঝে। তারা নিজের কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকে, অন্যের কাজেও ঝামেলা করে না।’
মিথিলা বলেন, ‘যাদের কোনো কাজ নেই তারাই সারাক্ষণ এসব নিয়ে মেতে থাকে। মানুষ কী ভাবছে সেগুলো নিয়ে আমি কখনোই চিন্তিত নই। আমার পরিবার, সন্তান, আশপাশের মানুষগুলোই আমার সাপোর্ট সিস্টেম, তারা সবাই আমাকে বোঝে।’