পদ্মানদীর চরে আট কৃষককে পিটিয়ে ২ গরু জবাই করে পিকনিক
Published: 26th, May 2025 GMT
পাবনার ঈশ্বরদীতে পদ্মানদী থেকে বালু উত্তোলনকে কেন্দ্র করে বিবাদমান দুই গ্রুপের দ্বন্দ্বের জেরে এবার ৮ কৃষককে পিটিয়ে জখম এবং চর থেকে কৃষকের দুইটি গরু ছিনিয়ে নিয়ে জবাই করে পিকনিক করার ঘটনা ঘটেছে। রোববার দুপুরে ঈশ্বরদীর সাঁড়া ইউনিয়নের আড়মবাড়িয়ার পদ্মাচরে এসব ঘটনা ঘটে। চর এলাকায় এ নিয়ে উত্তেজনা বিরাজ করছে।
আহত কৃষকরা হলেন- উপজেলার সাঁড়া ঝাউদিয়া এলাকার মৃত আইযুব আলীর ছেলে আনছার মাঝি, আনছার মাঝির ছেলে মজনু মাঝি, একই উপজেলার মাঝদিয়া এলাকার সাদেক হোসেনের ছেলে মাছিদুল ইসলাম ও মজিদুল ইসলাম, দুলাল খাঁর ছেলে লিটন খাঁ, সোহান হোসেন, আরাফাত ও এজাজুল হক।
আহতদের মধ্যে লিটনের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় ঈশ্বরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (রামেক) ভর্তি করা হয়েছে। জানা গেছে, আহতরা সবাই প্রান্তিক কৃষক, তারা পদ্মা নদীতে জেগে উঠা নিজস্ব ও লিজ নেওয়া জমিতে দীর্ঘদিন ধরে চাষাবাদ করে আসছিলেন।
আহত আনছার মাঝি, মজনু, মাছিদুল, সোহান ও আরাফাত অভিযোগ করে বলেন, পদ্মা নদী থেকে বালু উত্তোলন করাকে কেন্দ্র করে ঈশ্বরদী উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক সুলতান আলী বিশ্বাস টনির সঙ্গে তার প্রতিপক্ষ ভেড়ামারার বাহাদুরপুর এলাকার ইঞ্জিনিয়ার কাকনের মধ্যে সম্প্রতি গোলাগুলি ও হামলার ঘটনা ঘটে। কিন্তু আমরা কৃষক। আমরাতো কারও পক্ষের লোক না। পদ্মা নদীতে জেগে ওঠা আমাদের পৈত্রিক জমিতে চাষাবাদ করি। গতকাল রোববার আমরা নৌকা যোগে চরে গিয়ে আমাদের জমিতে চাষাবাদ করার জন্য যাই। এসময় একদল দুর্বৃত্ত আমাদের ওপর হামলা চালিয়ে বেদম মারপিট করে আহত করে। তারা আমাদের দুটি গরু ছিনিয়ে নিয়ে জবাই করে পিকনিক করে খেয়েছেন। আমরা সাধারণ খেটে খাওয়া কৃষক, আমরা এ ঘটনার সুষ্ঠ বিচার দাবি করছি।
ঈশ্বরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসক সাহিদুল ইসলাম শিশির বলেন, আহতদের মধ্যে লিটনের অবস্থা খারাপ হওয়ায় তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে। অন্যদের ঈশ্বরদী হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে ঈশ্বরদীর লক্ষ্ণীকুন্ডা নৌ-পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ (ওসি) এমরান মাহমুদ তুহিন বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। খোঁজ নিয়ে দেখতে হবে। এ ব্যাপারে কেউ অভিযোগও দেয়নি। অভিযোগ প্রাপ্তি সাপেক্ষে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
ট্রেনের ছাদে ভ্রমণকালে বৈদ্যুতিক লাইনের নেটের আঘাতে নিহত ১, আহত ৫
টাঙ্গাইলে ট্রেনের ছাদে অবৈধভাবে ভ্রমণের সময় বৈদ্যুতিক সঞ্চালন লাইনের নেটের সঙ্গে ধাক্কা লেগে একজন নিহত ও পাঁচজন আহত হয়েছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহত ব্যক্তির নাম রিপন আলী (৩৭)। তিনি রাজশাহীর পবা উপজেলার কালিয়ানপাড়া গ্রামের বাসিন্দা। আহতদের মধ্যে অজ্ঞাতপরিচয়ের এক ব্যক্তি টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
রেলওয়ে পুলিশের টাঙ্গাইল ফাঁড়ির দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হারুন অর রশীদ জানান, ঢাকা থেকে রাজশাহীগামী আন্তনগর সিল্কসিটি এক্সপ্রেস ট্রেনটি বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টার দিকে টাঙ্গাইল স্টেশনে পৌঁছানোর পর ছাদে রক্তাক্ত অবস্থায় ছয়জনকে পাওয়া যায়। আহত যাত্রীরা পুলিশকে জানান, তাঁরা ঢাকা থেকে ট্রেনের ছাদে উঠেছিলেন। টাঙ্গাইল স্টেশনে পৌঁছানোর ১৫–২০ মিনিট আগে রেলপথের ওপর দিয়ে অতিক্রম করা একটি বৈদ্যুতিক সঞ্চালন লাইনের নিচের নেটের সঙ্গে ধাক্কা লেগে তাঁরা আহত হন।
আহত ছয়জনকে পুলিশ উদ্ধার করে টাঙ্গাইল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত ১০টার দিকে রিপন আলীর মৃত্যু হয়। আহতদের মধ্যে আশরাফুলকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। আহত আমিরুল ইসলাম (২৫), আলিম (২৫) ও ফয়সাল (২৭) চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন। অজ্ঞাতপরিচয়ের এক কিশোর (১৫–১৬) এখনো টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালের ৬ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন। দুপুরে গিয়ে দেখা যায়, তার হাতে ব্যান্ডেজ বাঁধা অবস্থায় শুয়ে আছে। কর্তব্যরত নার্স জানান, ছেলেটি কথা বলতে পারছে না।
এদিকে নিহত রিপন আলীর রাজশাহীর বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। আজ শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে কালিয়ানপাড়া গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, বাড়ির ভেতরে স্বজন ও প্রতিবেশীরা আহাজারি করছেন। বাইরে রিপনের দাফনের জন্য কবর খোঁড়া হচ্ছে, কেউ বাঁশ কাটছেন।
রিপনের বাবা ইসরাফিল হোসেন জানান, রিপন ঢাকার একটি ইলেকট্রনিকস কোম্পানিতে চাকরি করত। কয়েক মাস আগে চাকরি ছেড়ে দিয়ে নতুন কাজ খুঁজছিল। গত বুধবার (২৯ অক্টোবর) দুপুরে কাউকে কিছু না বলে বাড়ি থেকে বের হয়। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় টাঙ্গাইল হাসপাতাল থেকে রিপনের মোবাইল নম্বর ব্যবহার করে তার ছোট ছেলের ফোনে যোগাযোগ করা হয়। তখনই তাঁরা জানতে পারেন, রিপন ট্রেন দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন।