তালিকায় কৃষকের নাম নেই যন্ত্রেরও খোঁজ নেই
Published: 27th, May 2025 GMT
২০২২-২৩ অর্থবছরে খুলনার কয়রা উপজেলার হড্ডা গ্রামের আবুল কালামের নামে একটি কম্বাইন হারভেস্টার যন্ত্র বরাদ্দ দেখায় কৃষি বিভাগ। গ্রামটিতে এ নামে কৃষক খুঁজে পাওয়া যায়নি। তালিকায় দেওয়া ফোন নম্বরে যোগাযোগ করা হলে তিনি ২ নম্বর কয়রা গ্রামের বাসিন্দা বলে জানান। কাগজে তাঁকে ভর্তুকি দেওয়া হয়েছে ২২ লাখ ৪০ হাজার টাকা (৭০ শতাংশ)। তাঁর কাছে যন্ত্র নেই। তিনি বলেন, ‘সই করার জন্যি কৃষি অফিসে গেলাম। কিছু টাকা দেয়, যন্ত্র সম্পর্কে জানা নেই।’
কয়রায় গত পাঁচ বছরে ‘সমন্বিত ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে কৃষি যান্ত্রিকীকরণ প্রকল্পে’র মাধ্যমে ৭০ শতাংশ পর্যন্ত ভর্তুকি দেওয়া হয়েছে। প্রায় ৩০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিলেও বড় অংশ নয়ছয় হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। শতাধিক সুবিধাভোগীর কাছে সরেজমিন গিয়ে বা ফোনে খোঁজ নিয়ে হাতেগোনা কয়েকজনের কাছে যন্ত্র পাওয়া গেছে।
পাঁচ বছরে দুর্নীতির এ চক্রে কৃষি কর্মকর্তাসহ স্থানীয় সাবেক এমপি, রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী ও কোম্পানির প্রতিনিধিদের যুক্ত থাকার অভিযোগ রয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আগের সরকারের সময় রাজনৈতিক নেতাকর্মীর সুপারিশে লোকজনকে কৃষক সাজিয়ে তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়। সে তালিকা প্রকল্প পরিচালকের অনুমোদনের পর কোম্পানির প্রতিনিধির মাধ্যমে যন্ত্র সরবরাহের কাগজ প্রস্তুত করে ভর্তুকির অর্থ তুলে নেওয়া হয়।
কৃষি অফিসের তথ্য অনুযায়ী, বাণিজ্যিকীকরণ ও আধুনিকায়নের মাধ্যমে কৃষিকে লাভজনক করে তোলার উদ্দেশ্যে প্রকল্পটি হাতে নেওয়া হয়। এর মাধ্যমে ১২ ধরনের যন্ত্র দেওয়ার কথা। উপকূলীয় উপজেলায় ৭০ শতাংশ ভর্তুকিতে এসব দেওয়া হয়েছে। প্রকৃত কৃষক এ থেকে বঞ্চিত। ২০২০ সালে শুরু হওয়া প্রকল্পটি শেষ হবে এ বছরের জুনে। ৫ ধরনের ৬৩৩টি যন্ত্র বিতরণের তথ্য মিলেছে। ভর্তুকি হিসেবে তুলে নেওয়া হয়েছে প্রায় ৩০ কোটি টাকা।
ভাগবা গ্রামের তাপস মণ্ডল ২০২৩ সালে পাওয়ার থ্রেসার যন্ত্র পেয়েছেন। এক লাখ ২০ হাজারে এ যন্ত্র কিনতে ভর্তুকি বাদে তাঁর ২৬ হাজার টাকা দেওয়ার কথা। তিনি বলেন, এ যন্ত্র নিতে তাঁকে অতিরিক্ত ১০ হাজার টাকা দিতে হয়েছে।
কৃষকের সঙ্গে কথা বলে, সংশ্লিষ্ট সূত্র এবং সরেজমিন জানা গেছে, ভর্তুকিতে ভাগ বসিয়েছেন অসাধু কর্মকর্তা, কোম্পানি ও দালাল। আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন দালালরা। তারা ভর্তুকিতে যন্ত্র কিনেও বিক্রি করেছেন।
২০২২-২৩ অর্থবছরে মহেশ্বরীপুর গ্রামের কমলেশ মণ্ডল ও বিনয় কৃষ্ণ মণ্ডল, ৪ নম্বর কয়রার আল আমীন ও দক্ষিণ বেদকাশির মোশাররফ হোসেনের নামে ৩২ লাখ টাকার হারভেস্টার বরাদ্দ দেখিয়ে ভর্তুকির ৮৯ লাখ ৬০ হাজার টাকা তোলা হয়। তারা কেউই যন্ত্রের বিষয়ে জানেন না। এমন ৫০টি যন্ত্র বিতরণের তথ্য পাওয়া গেছে। এর প্রতিটির বিক্রয়মূল্য ৩০-৩২ লাখ টাকা। ভর্তুকি হিসেবে তুলে নেওয়া হয়েছে প্রায় ১১ কোটি টাকা।
সরাসরি কৃষিকাজে যুক্ত না থাকলেও ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৭০ শতাংশ ভর্তুকিতে পাওয়ার থ্রেসার ও পাওয়ার টিলার যন্ত্রের বরাদ্দপত্রে নাম রয়েছে ১ নম্বর কয়রা গ্রামের রফিকুল ইসলাম গাজী, তাঁর স্ত্রী ও ছেলে সাইফুল্লাহ গাজীর। তাদের বাড়ি যন্ত্র পাওয়া যায়নি। রফিকুল বলেন, ‘যন্ত্র বরাদ্দ নিয়েছিলাম; কিন্তু কাজে না লাগায় বিক্রি করে দিয়েছি।’
একই অর্থবছরে মহারাজপুর গ্রামের শাহাজান সিরাজের নামে দুটি কম্বাইন হারভেস্টার বরাদ্দ হয়েছে। সরকার পতনের পর থেকে পলাতক রয়েছেন। তাঁর বাড়িতে গিয়ে যন্ত্রের হদিস মেলেনি। মোবাইল ফোনে শাহাজান বলেন, ‘একটি যন্ত্র আমার আত্মীয়র বাড়িতে আছে, আরেকটি নেওয়া হয়নি।’
জানা গেছে, এ প্রকল্পের আওতায় ২০২২-২৩ অর্থবছরে সবচেয়ে বেশি যন্ত্র বিতরণ দেখানো হয়। সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার চণ্ডিপুর গ্রামের বনি আমিনের প্রতিষ্ঠান উত্তরণ ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের মাধ্যমে বেশির ভাগ যন্ত্র সরবরাহ দেখানো হয়েছে। কয়রা উপজেলা কৃষি অফিসের উন্নয়ন শাখার উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা গুরুদাস কুমার ও অনুতাব সরকারের মাধ্যমে কাগজে বিভিন্ন কোম্পানির যন্ত্র সরবরাহ দেখিয়েছেন তিনি।
প্রকল্পের শুরু থেকে এখনও এ দু’জন উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা একই কর্মস্থলে রয়েছেন। বেশির ভাগ সময় উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার দায়িত্বে ছিলেন অসীম কুমার দাস। প্রকল্পে অনিয়মের অভিযোগে তাঁকে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরে সরিয়ে নেওয়া হয়। অভিযোগের বিষয়ে তাঁর ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও বন্ধ পাওয়া যায়।
উত্তরণ ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের স্বত্বাধিকারী বনি আমিন ৫ আগস্টের পর কয়রা থেকে তাঁর অফিস সরিয়ে নিয়েছেন। তাঁকে ফোনে পাওয়া যায়নি। উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা গুরুদাস কুমার বলেন, কৃষি কর্মকর্তার নির্দেশনা অনুযায়ী দায়িত্ব পালন করতে হয়েছে।
একই কথা বলেন আরেক কর্মকর্তা অনুতব সরকার। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সঞ্জয় কুমার বলেন, ‘আমি যোগদানের পর যন্ত্র বিতরণ করা হয়নি। অনিয়মের একটি অভিযোগের তদন্ত চলছে।’
প্রকল্পে অনিয়ম-দুর্নীতি হয়েছে স্বীকার করে খুলনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো.
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: কর মকর ত র বর দ দ ভর ত ক ত প রকল প সরক র উপজ ল র কয়র
এছাড়াও পড়ুন:
৪ কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদনে অনিয়ম: ৭ অডিটর নিষিদ্ধ
পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত চারটি কোম্পানির সমাপ্ত অর্থবছরের আর্থিক প্রতিবেদনে গুরুতর আর্থিক অনিয়ম ও আইনের লঙ্ঘন থাকা সত্ত্বেও তা নিরীক্ষা প্রতিবেদনে উত্থাপন না করায় সাত নিরীক্ষক (অডিটর) প্রতিষ্ঠানকে পাঁচ বছরের জন্য অডিট এবং অ্যাসিউর্যান্স কার্যক্রমে অংশগ্রহণের উপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।
সেইসঙ্গে ওই নিরীক্ষা ফার্ম এবং নিরীক্ষকদের কেন অযোগ্য ঘোষণা করা হবে না, সেই মর্মে ব্যাখ্যা তলব করে তাদের শুনানিতে ডাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন।
আরো পড়ুন:
সোনালী পেপারের শেয়ার কারসাজি: ১১ কোটি ৮২ লাখ টাকা জরিমানা
পুঁজিবাজার উন্নয়নে ডিএসই ও ডিসিসিআইয়ের যৌথ সভা
গত মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) বিএসইসির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের সভাপতিত্বে ৯৭৩তম কমিশন সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) বিএসইসির পরিচালক ও মুখপাত্র আবুল কালাম স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, সুহৃদ ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ৩০ জুন, ২০১৯ সমাপ্ত অর্থবছরের নিরীক্ষা ফার্ম ও নিরীক্ষক এ হক অ্যান্ড কোং চার্টার্ড এ্যকাউন্ট্যান্টস; রিংসাইন টেক্সটাইল লিমিটেডের ৩০ জুন, ২০১৭, ২০১৮, ২০১৯ এবং ২০২০ সমাপ্ত অর্থবছরের নিরীক্ষা ফার্ম ও নিরীক্ষক যথাক্রমে: আহমেদ অ্যান্ড আক্তার, মাহফেল হক অ্যান্ড কোং, আতা খান অ্যান্ড কোং এবং সিরাজ খান বসাক অ্যান্ড কোং চার্টার্ড এ্যকাউন্ট্যান্টস; আমান কটন ফাইব্রাস লিমিটেডের ৩০ জুন, ২০২০ সমাপ্ত অর্থবছরের নিরীক্ষা ফার্ম ও নিরীক্ষক ইসলাম কাজী শফিক অ্যান্ড কোং চার্টার্ড এ্যকাউন্ট্যান্টস এবং ফারইষ্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের ৩০ জুন, ২০১৮ ও ২০১৯ সমাপ্ত অর্থবছরের নিরীক্ষা ফার্ম ও নিরীক্ষক মাহফেল হক অ্যান্ড কোং চার্টার্ড এ্যকাউন্ট্যান্টস আর্থিক প্রতিবেদনে গুরুতর আর্থিক অনিয়ম ও সিকিউরিটিজ আইনের লঙ্ঘন থাকা সত্ত্বেও নিরীক্ষা প্রতিবেদনে উত্থাপন করেনি।
এ সকল নিরীক্ষা ফার্ম এবং নিরীক্ষককে পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত সকল কোম্পানি, সকল ধরনের বিনিয়োগ স্কিম (যথা- মিউচ্যুয়াল ফান্ড, অল্টারনেটিভ ইনভেস্টমেন্ট ফান্ড ও এক্সচেঞ্জ ট্রেডেড ফান্ড) এবং পুঁজিবাজারে মধ্যস্থতাকারী সকল প্রতিষ্ঠানের অডিট ও অ্যাসিউর্যান্স কার্যক্রম পরিচালনার উপর নিষেধাজ্ঞা তথা পাঁচ বছরের জন্য অডিট ও অ্যাসিউর্যান্স কার্যক্রমে অংশগ্রহণে কেন অযোগ্য ঘোষণা করা হবে না এই মর্মে ব্যাখ্যা তলব করে শুনানি করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
ঢাকা/এনটি/বকুল