দেশে অনলাইন জুয়া সংক্রান্ত কার্যক্রম বেড়ে চলছে। ফলে সামাজিক অবক্ষয় ও অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। এমন পরিস্থিতিতে এসব কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণে রেখে আর্থিক খাতে শৃঙ্খলা বজায় রাখতে অনলাইন জুয়া তদারকিতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি ব্যবহারের নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

বুধবার (২৮ মে) বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রেমেন্ট সিস্টেমস ডিপার্টমেন্ট থেকে এ সংক্রান্ত একটি সার্কুলার জারি করা হয়েছে।

নির্দেশনায় বলা হয়েছে, সংশ্লিষ্ট কার্যক্রমে কোনো মার্চেন্ট বা সাধারণ গ্রাহক জড়িত রয়েছে কিনা, তা সার্বক্ষণিকভাবে তদারকির আওতায় রাখতে হবে। এ ক্ষেত্রে প্রয়োজন হলে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তির সহায়তা গ্রহণ করতে হবে।

আরো পড়ুন:

দুর্বল ব্যাংকগুলো একীভূত করার আগে নিয়ন্ত্রণে নেবে সরকার: গভর্নর

ব্যাংক খাতে সন্দেহজনক লেনদেন বেড়েছে ২৩ শতাংশ

এছাড়া, কোনো গ্রাহক বা মার্চেন্ট অনলাইন জুয়ার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বলে প্রতীয়মান হলে তাৎক্ষণিকভাবে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে অবহিত করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলেছে, এ ধরণের অনলাইন জুয়ার ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে গ্রাহকদের সচেতন করতে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। সেই সঙ্গে, যেসব মার্চেন্ট নির্দিষ্ট ভৌগোলিক এলাকায় ব্যবসা পরিচালনার তথ্য দিয়ে গ্রাহক হয়েছেন, তারা উক্ত স্থানেই কার্যক্রম পরিচালনা করছেন কিনা তা নিশ্চিত করতে হবে।

এক্ষেত্রে ‘সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ, ২০২৫’ অনুসরণ করারও নির্দেশনা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

নির্দেশনাগুলো অবিলম্বে কার্যকর হবে এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে কঠোরভাবে তা বাস্তবায়ন করতে হবে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

ঢাকা/এনএফ/মাসুদ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর

এছাড়াও পড়ুন:

চার মাসেও তালা খোলেনি বেগম রোকেয়া টেকনিক্যাল কলেজের

চার মাস আগে সুপারের বিরুদ্ধে নিয়োগবাণিজ্যসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ এনে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছেন ভুক্তভোগীরা। বিষয়টি নিয়ে তদন্ত হয়েছে। সত্যতাও পাওয়া গেছে। কিন্তু তালা খোলা হয়নি। দীর্ঘদিন লেখাপড়া থেকে দূরে থাকায় ৩৫০ শিক্ষার্থীর জীবন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। মিঠাপুকুর উপজেলার বড় হযরতপুর ইউনিয়নের নানকর বেগম রোকেয়া টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড বিএম কলেজে এ ঘটনা ঘটেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক অভিভাবক বলেন, ভুক্তভোগীরা প্রতিষ্ঠানে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছেন চার মাস আগে। এক শিক্ষক বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগও দিয়েছেন। তদন্ত চলছে। সব ঠিক আছে। প্রতিষ্ঠান কেন বন্ধ থাকবে? কেন কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠান চালু রাখার ব্যবস্থা করেনি? আমাদের সন্তানদের জীবন থেকে চার মাস চলে গেলে এ দায় কার? এসব প্রশ্নের জবাব আমরা কার কাছে পাব? 
মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুল মমিন মণ্ডল বলেন, তদন্তে অনিয়মের সত্যতা পাওয়া গেছে। সুপারের বিরুদ্ধে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হয়েছে। এতদিনেও কেন প্রতিষ্ঠানের তালা খুলে দেওয়ার ব্যবস্থা হলো না জানতে চাইলে কোনো উত্তর দেননি এ কর্মকর্তা। এক পর্যায়ে ফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। 
শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চাকরি দেওয়ার কথা বলে প্রার্থীদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন সুপার জাহিদুল ইসলাম। চাকরি না পেয়ে ভুক্তভোগীরা চলতি বছরের ৪ ফেব্রুয়ারি সুপারের কার্যালয় ও শ্রেণিকক্ষে তালা ঝুলিয়ে দেন। এরপর থেকে পাঠদান বন্ধ রয়েছে। সুপারও পাওনাদারের চাপের মুখে প্রতিষ্ঠানে যাচ্ছেন না। অন্য শিক্ষকেরা মাঝেমধ্যে অফিসে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করে চলে যান। 
নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী রাব্বি মিয়া ও দ্বাদশ শ্রেণির জেসমিন খাতুন জানায়, ফেব্রুয়ারি মাস থেকে শ্রেণিকক্ষে তালা ঝুলছে। শিক্ষকরাও আসেন না। বছরের প্রায় অর্ধেক চলে গেছে। এভাবে চলতে থাকলে পড়ালেখার কী হবে? তারা এর সমাধান চায়। 
একাদশের নয়ণ চন্দ্র বর্মণ আক্ষেপ করে বলে, ‘সুপারের কারণে আজ আমাদের এ অবস্থা। তার অপরাধের শাস্তি পাচ্ছি আমরা। কর্তৃপক্ষ কেন এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিচ্ছে না বুঝতে পারছি না। এভাবে কতদিন আমাদের পড়ালেখা বন্ধ থাকবে?’ 
জানা গেছে, জাহিদুল ইসলাম ২০১৮ সালে যোগদান করেন। এরপর থেকে অনিয়ম-দুর্নীতির আঁতুড়ঘরে পরিণত হয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। বিভিন্ন পদে চাকরি দেওয়ার কথা বলে স্থানীয় বেকার যুবকদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা নিয়েছেন। অনেককে ভুয়া নিয়োগপত্রও দিয়েছেন। ভর্তি ও ফরম পূরণ ফি বাবদ আদায় করা ৩০ লাখ টাকা, রিজার্ভ ও জেনারেল তহবিলের লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। এছাড়াও নানা অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। প্রতিনিয়ত লোকজন প্রতিষ্ঠানে এসে টাকার জন্য তাঁকে চাপ দিচ্ছিলেন। পাওনাদারের চাপের মুখে সুপার ফেব্রুয়ারি মাস থেকে প্রতিষ্ঠানে আসছেন না। 
ভুক্তভোগী শাহীন মিয়া জানান, ২০১৯ সালের মাঝামাঝি সময়ে নৈশপ্রহরী পদে লোক চেয়ে পত্রিকায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। সুপার তাঁকে চাকরি দেবেন বলে জানান। বিনিময়ে ৭ লাখ টাকা ঘুষ দাবি করেন। জমি বিক্রি করে ৬ লাখ ২৫ হাজার টাকা সুপারকে দেন। নিয়োগপত্র নিয়ে যোগদান করতে গেলে জানতে পারেন সেটি ভুয়া। টাকা ফেরত চাইলে টালবাহানা শুরু করেন সুপার। 
একই ঘটনা ঘটেছে স্থানীয় আব্দুল মোত্তালিবের ক্ষেত্রেও। চাকরি দেওয়ার কথা বলে তাঁর কাছ থেকে দেড় লাখ টাকা নেন সুপার। কিন্তু, চাকরি দেননি। টাকাও ফেরত দেননি। আব্দুল মোত্তালিব বলেন, ‘মুই গরিব মানুষ। কোনোমতে বউ ছইলোক নিয়া করি খাও। চাকরি দিবার চায়া মোর কাছে জাহিদুল সুপার দেড় লাখ টাকা নেচে। চাকরিও দেয় নাই, ট্যাকাও দেওচে না। মুই এর বিচার চাও।’
এদিকে ভুয়া নিয়োগপত্র দিয়ে টাকা আত্মসাৎ, ভর্তি ও ফরম পূরণের টাকা আত্মসাৎ, দিনের পর দিন প্রতিষ্ঠানে অনুপস্থিতসহ ৮টি অভিযোগ এনে শিক্ষক প্রতিনিধি শরিফুল ইসলাম ইউএনওসহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুল মমিন মণ্ডল তদন্ত করেছেন। তিনি গত ১৫ এপ্রিল ইউএনওর কাছে প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন। তদন্তে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলেও এখনও পর্যন্ত সুপারের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। 
অভিযোগের বিষয়ে সুপার জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে করা অভিযোগের ৮০ ভাগই মিথ্যা। সত্য হলো কয়েকজনের কাছে টাকা ধার নিয়েছিলাম। দ্রুত পরিশোধ করব। কাউকে ভুয়া নিয়োগপত্র দিইনি।’ লাখ লাখ টাকা আত্মসাতের বিষয়ে বলেন, ‘একটি মহল ষড়যন্ত্র করছে। তাদের কারণে প্রতিষ্ঠানে যেতে পারছি না। সব ঝামেলা মিটিয়ে শিগগিরই প্রতিষ্ঠানে নিয়মিত হবো।’
ইউএনওর (অতিরিক্ত) দায়িত্বে থাকা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মুলতামিস বিল্লাহ্ বলেন, ‘শিক্ষা কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে ব্যবস্থা নেব।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ