নগরবাসীর দুর্ভোগের কারণে দুঃখ প্রকাশ বিএনপির তিন সংগঠনের
Published: 29th, May 2025 GMT
তারণ্যের সমাবেশের ফলে রাজধানীসহ অন্যান্য শহরে যানজট ও নগরবাসীর সাময়িক দুর্ভোগের কারণে আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করেছে বিএনপির তিন সংগঠন।
বৃহস্পতিবার (২৯ মে) রাজধানীর নয়াপল্টনে জাতীয়তাবাদী যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ দুঃখ প্রকাশ করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন যুবদলের সভাপতি আব্দুল মোনায়েম মুন্না।
আরো পড়ুন:
ডিসেম্বরের মধ্যেই জাতীয় নির্বাচন হতে হবে: তারেক রহমান
জুবাইদার সাজা বাতিল, সব মামলায় খালাস তারেক রহমান
এতে বলা হয়, তরুণদের ভোটাধিকার হরণ আজো একটি জাতীয় সংকট। এটি শুধু একটি সাংবিধানিক অধিকার লঙ্ঘনের বিষয় নয়, বরং একটি প্রজন্মকে রাষ্ট্র পরিচালনায় অংশগ্রহণের মৌলিক সুযোগ থেকে বঞ্চিত করার নিষ্ঠুর উদাহরণ। ইতিহাস সাক্ষী, অতীতেও এই দেশের তরুণরাই ভোটের অধিকার ছিনিয়ে এনেছিল-তারা রাজপথে লড়েছে, রক্ত দিয়েছে, অগ্রণী ভূমিকা রেখেছে। আজ আবার তারা সেই একই সংকটে দাঁড়িয়ে।
লিখিত বক্তব্য আরো বলা হয়, দেশজুড়ে কর্মসূচির মাধ্যমে আমরা শুধু গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের একটি জাতীয় ঐক্যের ইঙ্গিত পাইনি, বরং স্পষ্টভাবে দেখতে পেয়েছি নতুন প্রজন্মের সেই লড়াইয়ের পুনর্জাগরণ-যেখানে তরুণরা নিজেদের অধিকার রক্ষায় আবারও সংগঠিত হচ্ছে, কথা বলছে, এবং নিজ অবস্থান থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছে। তারা জানে, ভোটাধিকার শুধু ভোট দেওয়ার বিষয় নয়-এটি ভবিষ্যৎ নির্মাণের শক্তি। এই জাগরণই একদিন একটি ন্যায়ভিত্তিক, গণতান্ত্রিক এবং উদার রাষ্ট্র ব্যবস্থার ভিত্তি রচনা করবে।
সংবাদ সম্মেলনে আব্দুল মোনায়েম মুন্না বলেন, “বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশনায় ঘোষিত ৩১ দফা রূপরেখার আলোকে দেশের তরুণ সমাজকে নীতি-নির্ধারণী প্রক্রিয়ায় সম্পৃক্ত করার লক্ষ্যে এক মাসব্যাপী একটি ব্যতিক্রমধর্মী কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছিল, যা গতকাল সমাপ্ত হয়। জাতীয়তাবাদী যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের যৌথ উদ্যোগে চট্টগ্রাম, খুলনা, বগুড়া ও ঢাকায় আয়োজিত দুই দিনব্যাপী প্রতিটি অনুষ্ঠানের প্রথম দিনে অনুষ্ঠিত হয় "তারুণ্যের রাজনৈতিক ভাবনা ও অর্থনৈতিক মুক্তি’ শীর্ষক সেমিনার এবং দ্বিতীয় দিনে ছিল "তারুণ্যের রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠার সমাবেশ’।
তিনি বলেন, “এই আয়োজনের মূল উদ্দেশ্য ছিল তরুণদের সৃজনশীলতা, দক্ষতা ও ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে রাজনীতি ও অর্থনীতির নতুন দিগন্ত উন্মোচন এবং তা জাতীয় উন্নয়ন কৌশলের সঙ্গে সংযুক্ত করা। লাখ-লাখ মানুষের সরব উপস্থিতিতে এবং তরুণদের প্রাণবন্ত অংশগ্রহণে কর্মসূচিগুলো অত্যন্ত সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। তরুণদের রাজনৈতিক অধিকার ও অংশগ্রহণের প্রতি অঙ্গীকার এবং গণতান্ত্রিক ভবিষ্যতের জন্য তাদের দৃঢ় সংকল্প এই আটটি অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে তা দৃঢ়ভাবে প্রতিফলিত হয়েছে।”
এই কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ ও সমর্থনের জন্য দেশের সব শ্রেণি-পেশার মানুষ-বিশেষ করে তরুণ শিক্ষার্থী, শিক্ষক, শ্রমিক, চাকরিজীবী, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, উদ্যোক্তা, পেশাজীবী ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন তিনি। মুন্না বলেন, “বিএনপি সব সময় তরুণদের কেবল ভোটার হিসেবে নয়, বরং রাষ্ট্র গঠনের স্থপতি ও রাজনৈতিক নেতৃত্বের অংশীদার হিসেবে বিবেচনা করে। এই ধারাবাহিক কর্মসূচি এবং এর পেছনে থাকা আদর্শ, আমাদের ভবিষ্যতের রাজনৈতিক দর্শন ও লক্ষ্যকে আরো স্পষ্ট করেছে।”
বিএনপির এই আয়োজন ছিল একটি দীর্ঘমেয়াদি রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির অংশ, যার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে তরুণদের ক্ষমতায়ন ও নীতি-নির্ধারণী প্রক্রিয়ায় সম্পৃক্ততা। আমরা বিশ্বাস করি, তরুণদের চিন্তা, প্রত্যাশা ও সমস্যার প্রতিফলন না থাকলে গণতন্ত্র টেকসই হতে পারে না। এই কর্মসূচির মাধ্যমে ভবিষ্যতের রাষ্ট্রচিন্তায় তরুণদের সক্রিয়ভাবে সম্পৃক্ত করার যে প্রয়াস নেওয়া হয়েছিল, তা শুধু একটি রাজনৈতিক কর্মসূচি ছিল না এটি ছিল একটি বৃহৎ নীতিগত উদ্যোগ।”
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এসএম জিলানী, যুবদলের সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম নয়ন, ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন নাছির প্রমুখ।
ঢাকা/রায়হান/সাইফ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব এনপ র র জন ত ক ব এনপ র প রক শ য বদল
এছাড়াও পড়ুন:
মশা নিধনে জোরালো পদক্ষেপ নিতে হবে
চট্টগ্রামে এডিস মশার প্রজনন ও লার্ভার ঘনত্ব গত এক বছরে দ্বিগুণ হয়েছে, আর এর সরাসরি ফল ভোগ করছেন নগরবাসী। স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের মতে, এবার ডেঙ্গুর চেয়েও চিকুনগুনিয়া ঘরে ঘরে মারাত্মক আকার ধারণ করেছে, যা এক নতুন উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে। মশা নিধনে কার্যকর ও সমন্বিত উদ্যোগের অভাবই এ রোগের দ্রুত বিস্তারের প্রধান কারণ বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। চট্টগ্রামে এভাবে জনস্বাস্থ্য ভেঙে পড়ার বিষয়টি খুবই উদ্বেগজনক।
রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) গবেষণা প্রতিবেদন বলছে, চট্টগ্রাম নগর এডিস মশাবাহিত রোগের জন্য এখন অতি ঝুঁকিপূর্ণ। গত বছর সিভিল সার্জন কার্যালয়ের কীটতত্ত্ব বিভাগ একই ধরনের জরিপ চালিয়েছিল। এই দুই জরিপের তুলনামূলক চিত্র আমাদের সামনে এক ভয়াবহ বাস্তবতা তুলে ধরে—এডিস মশার প্রজনন ও লার্ভার ঘনত্ব দুটিই আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে।
২০২৪ সালে চট্টগ্রামে এডিস মশার লার্ভার ঘনত্ব (ব্রুটো ইনডেক্স) ছিল ৩৬ শতাংশ, যা এবার আইইডিসিআরের গবেষণায় পৌঁছেছে ৭৫ দশমিক ২৯ শতাংশে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্ধারিত মান যেখানে ২০ শতাংশ, সেখানে চট্টগ্রামের এ চিত্র রীতিমতো ভয়াবহ। বাসাবাড়িতেও লার্ভার উপস্থিতি বেড়েছে। গত বছর ৩৭ শতাংশ বাড়িতে লার্ভা পাওয়া গেলেও এবার তা প্রায় ৪৮ শতাংশে পৌঁছেছে।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবার ডেঙ্গুর চেয়ে চিকুনগুনিয়ার রোগী বেশি পাওয়া যাচ্ছে। আবার অনেকের ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া দুটিই হচ্ছে। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে জিকা ভাইরাসের উপস্থিতি, যা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে। চলতি বছরেই ৭৬৪ জনের চিকুনগুনিয়া ও ৭৯৩ জনের ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছে এবং ডেঙ্গুতে আটজন প্রাণ হারিয়েছেন, যার মধ্যে ছয়জনই মারা গেছেন এই জুলাই মাসে।
সিভিল সার্জন জাহাঙ্গীর আলম বলেছেন, আইইডিসিআরের সুপারিশগুলো সিটি করপোরেশন ও জেলা প্রশাসনের কাছে পাঠানো হয়েছে এবং সে অনুযায়ী কাজ চলছে। সিটি করপোরেশনের মশক নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা শরফুল ইসলাম দাবি করছেন যে মশকনিধনে ক্রাশ কর্মসূচি চলছে এবং নতুন জরিপ অনুযায়ী হটস্পট ধরে কাজ করা হচ্ছে। তবে প্রশ্ন হলো এ উদ্যোগগুলো কি যথেষ্ট? লার্ভার ঘনত্ব যেখানে তিন-চার গুণ বেশি, সেখানে গতানুগতিক কর্মসূচির ওপর নির্ভর করলে চলবে না।
মশাবাহিত রোগ থেকে মুক্তি পেতে হলে মশার প্রজননস্থল ধ্বংস করার কোনো বিকল্প নেই। এ কাজে সিটি করপোরেশনকে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখতে হবে। বাসাবাড়িতে নানা জায়গায় জমে থাকা স্বচ্ছ পানিও এডিস মশার প্রজননের জন্য যথেষ্ট। ফলে নাগরিকদের সচেতনতা এখানে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। চট্টগ্রাম শহরকে মশাবাহিত রোগের ভয়াবহতা থেকে রক্ষা করতে হলে স্থানীয় প্রশাসন, নগর কর্তৃপক্ষকে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে; নগরবাসীকে দ্রুত তৎপর হতে হবে।