এক নিদারূণ শোক আর অব্যক্ত বেদনার ছবি হয়ে থাকলো ময়মনসিংহ জেলা পরিষদ মিলনায়তনের চেক বিতরণ অনুষ্ঠান। গণঅভ্যুত্থানের শহীদ পরিবারগুলোর জন্য সরকারি অনুদানের চেক নিতে এসে কান্নায় ভেঙে পড়লেন শহীদ শাহজাহানের মা মোছা. সাজেদা খাতুন। 

ছেলের জন্য বরাদ্দের ২ লাখ টাকার চেক হাতে নিয়ে কেবলই আহাজারি করছিলেন আর বলছিলেন, ‘অনেক কষ্ট করে পোলাডারে বড় করেছি। ট্যাকা দিয়া আমি কীতা করবাম, তোমরা আমার শাহজাহানরে আমার কোলে ফিরাইয়্যা দেও।’ একজন মায়ের এমন আকুল আর্তনাদ অনুষ্ঠানে উপস্থিত সবার হৃদয় ছুঁয়ে যায়, মুহূর্তেই শোকাবহ স্তব্ধতা নেমে আসে পুরো মিলনায়তনে।

আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে ময়মনসিংহ জেলা পরিষদ মিলনায়তনে ‘জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থান-২০২৪’ এর শহীদ পরিবারে চেক বিতরণ অনুষ্ঠানে এই হৃদয়বিদারক ঘটনা ঘটে। শুধু শহীদ শাহজাহানের মা নন, ময়মনসিংহের প্রথম শহীদ কলেজ শিক্ষার্থী রেদোয়ান হাসান সাগারের বাবা আসাদুজ্জামান আসাদও কান্নায় ভেঙে পড়েন। তাঁর বুকফাটা আর্তনাদ দেখে সান্ত্বনা দিতে গিয়ে অশ্রুসজল হয়ে পড়েন স্বয়ং বিভাগীয় কমিশনার মোখতার আহমেদ।

শহীদ শাহজাহান ধোবাউড়া উপজেলার জৈকাপাড়া গ্রামের বাসিন্দা। মোছা.

সাজেদা খাতুনের একমাত্র অবলম্বন ছিলেন তিনি। গত ১১ বছর ধরে তার বাবা মিল্লাহ হোসেন নিখোঁজ থাকায়, দুঃখী মায়ের আঁচলের ছায়াতেই বেড়ে উঠেছিলেন শাহজাহান। তাঁর স্বল্প উপার্জনেই চলতো সংসার। শাহজাহানকে হারানোর পর ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ুয়া একমাত্র মেয়ে লামিয়াকে নিয়ে দুঃখের সাগরে হাবুডুবু খাচ্ছেন সাজেদা খাতুন। 

তিনি জানান, কার্টন ফ্যাক্টরির কর্মচারী মো. শাহজাহান গত বছরের ৫ আগস্ট আন্দোলনের সময় ঢাকার মহাখালী রেলস্টেশন এলাকায় শহীদ হন। সাজেদা বলেন, আন্দোলনের অনেক আগেই শাহজাহান চাকরি ছেড়ে গ্রামে চলে এসেছিলেন। কিন্তু মার্চ ফর ঢাকা আন্দোলনের খবর পেয়ে পরিবারের কাউকে কিছু না জানিয়েই ঢাকায় যান এবং সেখানেই শহীদ হন। পরে খবর পেয়ে তাঁর নিথর দেহ নিজ এলাকায় এনে দাফন করা হয়।

ময়মনসিংহ বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ের তথ্যমতে, গণঅভ্যুত্থানে শহীদ হওয়া জেলার ৪১টি পরিবারের অনুকূলে ২ লাখ টাকা করে সরকারি অনুদানের চেক বিতরণ করা হয়েছে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন জেলা শাখার সদস্য সচিব আলী হোসেন সমকালকে বলেন, ‘আমাদের আন্দোলন নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখিয়েছে। শহীদদের রক্ত আর ত্যাগের ওপর দাঁড়িয়ে আমরা সেই স্বপ্ন পূরণ করব। যতদিন পর্যন্ত জনগণের সব অধিকার নিশ্চিত না হবে, ততদিন আমাদের সংগ্রাম চলবে। আমরা সরকারের প্রতি আহ্বান জানাই, শুধু আর্থিক অনুদান নয়, শহীদ পরিবারের সদস্যদের পুনর্বাসনের জন্য সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা গ্রহণ করুন।’

জেলা পরিষদ আয়োজিত চেক বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন ময়মনসিংহের বিভাগীয় কমিশনার মোখতার আহমেদ। বিশেষ অতিথি ছিলেন অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (রাজস্ব) তাহমিনা আক্তার, অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (সার্বিক) জিয়া আহমেদ সুমন, জেলা প্রশাসক মুফিদুল আলম, বিভাগীয় কমিশনারের ব্যক্তিগত সহকারী ইবনে মিজান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন জেলা শাখার সদস্য সচিব আলী হোসেন প্রমুখ।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ময়মনস হ চ ক ব তরণ শ হজ হ ন অন ষ ঠ ন পর ব র

এছাড়াও পড়ুন:

ওসির বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে ছেলের মুক্তি চেয়ে কাঁদলেন মা

জমিসংক্রান্ত বিরোধে ময়মনসিংহ কোতোয়ালী মডেল থানায় সালিশ ডেকে আল-আমিন (২৮) নামে এক যুবককে আটকের পর নগরীর কেওয়াটখালীতে গ্রেপ্তার দেখিয়ে রাজনৈতিক মামলায় জেলে পাঠিয়েছেন থানার ভারপ্রাপ্ত (ওসি) কর্মকর্তা মুহাম্মদ শিবিরুল ইসলাম। সংবাদ সম্মেলনে এমন অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগীর মা আনোয়ারা বেগম। 

মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) দুপুরে ময়মনসিংহ প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করে প্রতিকার চেয়ে অঝোরে কাঁদেন তিনি। 

আল-আমিন নগরীর বলাশপুর এলাকার মৃত নুরুল ইসলাম ও আনোয়ারা বেগম দম্পতির সন্তান। ২০২১ সাল থেকে জমি নিয়ে আনোয়ারা বেগম ও প্রকৌশলী মনিরুজ্জামানের দ্বন্দ্ব চলে আসছে। মনিরুজ্জামান বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের যন্ত্র প্রকৌশল বিভাগের উপ-প্রধান প্রকৌশলী। সেই দ্বন্দ্বের জের ধরে ঘটনাটি ঘটেছে বলে আনোয়ারা বেগমের অভিযোগ। 

আনোয়ারা বেগম সংবাদ সম্মেলনে জানান, ২০২১ সালে বলাশপুরে স্বামীর পেনশনের টাকায় তিনি জমি কেনেন। এর আগে ২০০৮ সালে একই দাগে ৪ শতাংশ জমি কেনার দাবি করে ২০২২ সালে জোরপূর্বক জমিতে প্রাচীর দেন মনিরুজ্জামান। এ নিয়ে স্থানীয়ভাবে সালিশ হলেও সুরাহা হয়নি। ৫ আগস্টের পর জমিতে বাড়ি করার উদ্যোগ নিলে বাধা দেন মনিরুজ্জামান। 

আনোয়ারা বেগম বলেন, ‘‘আমার ছেলে আল-আমিনসহ আরও কয়েকজনকে অভিযুক্ত করে মনিরুজ্জামান কোতোয়ালি মডেল থানাসহ প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে চাঁদাবাজির অভিযোগ করেন। বিষয়টি সমাধানের লক্ষ্যে কোতোয়ালি থানার ওসি  শিবিরুল ইসলাম থানায় উভয় পক্ষকে ডাকেন।’’

‘‘শনিবার (২৬ জুলাই) রাত আটটায় থানার মধ্যেই দরবার শুরু হয়। চলে রাত ১২টা পর্যন্ত। দরবারে যখন জমির কাগজপত্র আমাদেরগুলো ঠিক প্রমাণিত হয় তখন ওসি আল-আমিনকে তার রুমে নিয়ে পিটিয়ে হাড়গোড় ভেঙে ফেলার হুমকি দেন। পিছন পিছন আমি গিয়ে প্রতিবাদ করলে আমার সাথেও খারাপ ব্যবহার করেন তিনি। এরপর আল-আমিনকে লকাপে ঢুকিয়ে সাদা স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করার জন্য চাপ দেন। ছেলে রাজি না হওয়ায় সাজানো রাজনৈতিক মামলায় তাকে জেল পাঠানো হয়েছে।’’ বলে অভিযোগ করেন আনোয়ারা বেগম। 

আনোয়ারা বেগম এ সময় কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘‘স্বামী মারা যাওয়ার পর মাথার ঘাম পায়ে ফেলে সন্তানদের মানুষ করেছি। আল-আমিন ক্রোকারিজের ব্যবসা করে পুরো সংসার চালায়। রাজনীতির সাথে কোনোভাবেই সে জড়িত নয়। অথচ ওসি তাকে রাজনৈতিক মামলায় জেলে ঢুকিয়েছে। মনিরুজ্জামানের টাকা ও ক্ষমতার কাছে আমি হেরে গেছি। এই দেশে কোনো বিচার নাই। আমার ছেলে যদি মুক্তি না পায় তাহলে অদূর ভবিষ্যতে সে বিপথে গেলে পুলিশ, সমাজ এবং রাষ্ট্র এ জন্য দায়ী থাকবে।’’

‘‘ওসি সালিশের এক পর্যায়ে প্রভাবিত হয়ে আল-আমিনকে সালিশ থেকে আটক করে রাজনৈতিক মামলায় জেলে ঢুকিয়েছে। এ সময় হাতে-পায়ে ধরেও লাভ হয়নি,’’ উল্লেখ করে আনোয়ারা বেগম কড়জোরে ঘটনার সঠিক বিচারের পাশাপাশি আল-আমিনের মুক্তি দাবি করেন। 

এ দিকে আল-আমিনের বিরুদ্ধে মামলার বিবরণে জানা যায়, গত ১৮ ফেব্রুয়ারি রাত ১টা ৩৫মিনিটে পুলিশের টহল টিম আকুয়া ভাঙ্গাপুল এলাকায় অবস্থানকালে পুলিশ গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানতে পারে, সদরের উত্তর দাপুনিয়ার সরকারি পুকুরপাড়ে একদল সন্ত্রাসী রাস্তা বন্ধ করে গাড়ি ভাংচুর ও দাঙ্গাহাঙ্গামা করছে। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ সময় ঘটনাস্থল থেকে ৫টি মশাল, ২০টি লাঠি, ৩০টি ইটের টুকরো, ২৫টি কাচের টুকরো জব্দ করে। এ ঘটনার পরদিন পুলিশ কোতোয়ালী মডেল থানায় অজ্ঞাতনামা আসামি করে মামলা দায়ের করে। ওই মামলায় আল-আমিনকে সন্দিগ্ধ আসামি হিসেবে গ্রেপ্তার দেখায় পুলিশ।  

এ প্রসঙ্গে ওসি মুহাম্মদ শিবিরুল ইসলাম বলেন, ‘‘আল-আমিন যুবলীগ করে। কারণ যুবলীগের নেতাকর্মীদের সাথে তার ছবি রয়েছে।’’

আল-আমিনকে থানায় সালিশ ডেকে পরে আটক করা হয়েছে কিন্তু মামলায় দেখানো হয়েছে তাকে কেওয়াটখালী থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ওসি বলেন, ‘‘এ
বিষয়ে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ভালো বলতে পারবে।’’

জেলা পুলিশ সুপার কাজী আখতার উল আলম বলেন, ‘‘আল-আমিনের মা ছেলের মুক্তির দাবিতে ময়মনসিংহ প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেছে। আমি শুনেছি। তার অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’
 

মিলন//

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সাগরে ৩ নম্বর সতর্কসংকেত, ঢাকাসহ ৪ বিভাগে বৃষ্টির পূর্বাভাস
  • ময়মনসিংহের সেই মিনি চিড়িয়াখানা ও শিশুপার্কের চুক্তি বাতিল, অপসারণের উদ্যোগ
  • ময়মনসিংহে বন্ধুর বাড়িতে যুবকের রক্তাক্ত মরদেহ
  • টাঙ্গাইলে কুকুরের কামড়ে ২৫ জন আহত
  • জমিজমার বিরোধে থানায় সালিসে গিয়ে ‘রাজনৈতিক মামলায়’ গ্রেপ্তার যুবক
  • ওসির বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে ছেলের মুক্তি চেয়ে কাঁদলেন মা
  • ২৪ ঘণ্টায় ঢাকায় ২৫ মিলিমিটার বৃষ্টি, আজও বজ্রসহ বৃষ্টির আভাস
  • এনসিপির নাম ব্যবহার করে চাঁদাবাজি হচ্ছে: হাসনাত
  • প্রাইভেট কারে ঘুরে ফাঁদ পেতে চুরি করতেন অটোরিকশা, আটক ৪
  • বিকেলে এনপিপির পদযাত্রা-সমাবেশ, প্রস্তুত ময়মনসিংহ