পশ্চিম তীরে আরও ২২টি বসতি স্থাপনের ঘোষণা ইসরায়েলের
Published: 29th, May 2025 GMT
দুই দিনে গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশনের (জিএইচএফ) একটি ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে অন্তত ১০ জন নিহত হয়েছেন। গতকাল বৃহস্পতিবারও যুক্তরাষ্ট্র-ইসরায়েলের উদ্যোগে সম্প্রতি চালু হওয়া ফাউন্ডেশনটির ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। জাতিসংঘ ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থার অভিযোগ, জিএইচএফ গাজায় ত্রাণ বিতরণে নিরপেক্ষতার নীতি লঙ্ঘন করছে এবং ত্রাণ বিতরণের মাধ্যমে গাজা খালি করার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছে।
গাজা হামলার ৫৯৯তম দিনে গতকাল অধিকৃত পশ্চিম তীরে নতুন করে আরও ২২টি বসতি স্থাপনের ঘোষণা দিয়েছে ইসরায়েল। কয়েক দশকের মধ্যে এটি ইসরায়েলের সবচেয়ে বড় বসতি স্থাপনের ঘোষণা। এর মধ্য দিয়ে স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সম্ভাবনা আরও কঠিন হয়ে দাঁড়াল।
গতকাল সকাল পর্যন্ত পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় গাজার বিভিন্ন স্থানে ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ৫৫ জন প্রাণ হারিয়েছেন। ফিলিস্তিনের সরকারি সংবাদ সংস্থা ওয়াফা জানিয়েছে, গতকাল ভোরে উত্তর গাজার জাবালিয়ায় একটি কিন্ডারগার্টেন ও আজ্জাম পরিবারের বাড়িতে ইসরায়েলি হামলায় অন্তত সাতজন নিহত হয়েছেন। গাজার স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্যমতে, মধ্য গাজার বুরেইজ শরণার্থীশিবিরের আবাসিক ভবনে ইসরায়েলের কয়েক দফা বিমান হামলায় মারা গেছেন অন্তত ১৯ জন।
গতকাল মধ্য গাজার নেটজারিম করিডরে জিএইচএফের একটি ত্রাণ কেন্দ্রের কাছে একাধিক বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। বিস্ফোরণের কারণ ও হতাহতের খবর তাৎক্ষণিকভাবে নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
গাজার সরকারি সংবাদমাধ্যম কার্যালয় জানিয়েছে, দক্ষিণ গাজায় মঙ্গল ও বুধবার জিএইচএফের কেন্দ্র থেকে খাবার আনতে গিয়ে ইসরায়েলি সেনাদের গুলিতে ১০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। একই সময়ে সেখানে আরও প্রায় ৬২ জন আহত হয়েছেন।
জাতিসংঘ ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক ত্রাণ সংস্থাগুলো জিএইচএফকে বর্জন করেছে। তাদের অভিযোগ, মানবিক সহায়তা কোনো ধরনের পক্ষপাত ছাড়া প্রয়োজনের ভিত্তিতে বণ্টন করতে হয়। কিন্তু মানবিক সহায়তা দেওয়ার সেই নীতিকে লঙ্ঘন করছে জিএইচএফ।
অধিকৃত ফিলিস্তিন অঞ্চলে জাতিসংঘের জ্যেষ্ঠ সহায়তা কর্মকর্তা জনাথন হুইটল জেরুজালেমে সাংবাদিকদের বলেন, নজরদারি করে নতুন পদ্ধতিতে ত্রাণ দিচ্ছে জিএইচএফ। এর মধ্য দিয়ে ফিলিস্তিনিদের পরিকল্পিতভাবে বঞ্চনা করার নীতিকে বৈধতা দেওয়া হচ্ছে।
জনাথন হুইটল আরও বলেন, জাতিসংঘ এই পরিকল্পনায় অংশ নিতে রাজি হয়নি। কারণ, বাস্তবতার দিক থেকে এটি অকার্যকর এবং মানবিক নীতির লঙ্ঘন। তারা ত্রাণকে গাজার নির্দিষ্ট এলাকা খালি করার বৃহত্তর ইসরায়েলি পরিকল্পনার একটি হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে।
গাজার নির্দিষ্ট কিছু এলাকায় মঙ্গলবার থেকে ত্রাণ বিতরণ শুরু করেছে জিএইচএফ।
খাদ্যগুদামে ‘ক্ষুধার্ত মানুষের’ ঢল
জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির (ডব্লিউএফপি) বরাতে বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দলে দলে ‘ক্ষুধার্ত মানুষ’ বুধবার মধ্য গাজার একটি খাদ্যগুদামে ঢুকে পড়েছেন।
এ ঘটনায় দুজন নিহত এবং বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। ডব্লিউএফপি জানিয়েছে, তারা বিস্তারিত তথ্য যাচাই-বাছাই করে দেখছে।
বার্তা সংস্থা এএফপির ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, দেইর আল-বালাহ শহরের আল-ঘাফারি গুদামে ক্ষুধার্ত লোকজন ঢুকে খাদ্যের বস্তা ও ময়দার প্যাকেট নিয়ে যাচ্ছেন। সেই সময় গুলির শব্দ শোনা যায়। গুলি কোথা থেকে এসেছে, তা তখন স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছিল না।
ডব্লিউএফপি এক বিবৃতিতে বলেছে, প্রায় তিন মাস ধরে চলা ইসরায়েলি অবরোধের পর মানবিক সংকট ‘নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে’। গত সপ্তাহে এ অবরোধ কিছুটা শিথিল করা হয়েছে।
ডব্লিউএফপি সতর্ক করে বলেছে, গাজায় অবিলম্বে খাদ্যসহায়তা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। মানুষকে নিশ্চিত করতে হবে যে তাঁরা অনাহারে মরবেন না। পরিস্থিতি দ্রুত খারাপের দিকে যাচ্ছে। সাহায্য সীমিত করার কারণে ক্ষুধার্ত মানুষের জীবন আরও হুমকির মুখে পড়ছে।
ফিলিস্তিনি পুরুষেরা গম সংগ্রহ করছেন, ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারীদের হামলার পর নিজের খেত থেকে গম সংগ্রহ করছেন এক ফিলিস্তিনি। ইসরায়েল অধিকৃত পশ্চিম তীরে, ২৮ মে, ২০২৫.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ত র ণ ব তরণ ইসর য় ল র জ এইচএফ গতক ল
এছাড়াও পড়ুন:
চট্টগ্রামে বছর শেষে বাড়ছে ডেঙ্গু, কমেছে চিকুনগুনিয়া
চট্টগ্রামে বছরের শেষে এসে আবারও বাড়ছে ডেঙ্গুর সংক্রমণ। চলতি নভেম্বর মাসের প্রথম দুই দিনেই ৮৭ জনের ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছে। গতকাল রোববার বেলা একটা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ৪১ জনের ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছে। গত বছরও এই সময়ে ডেঙ্গুর সংক্রমণ বেড়েছিল। এদিকে বছরের শেষ দিকে এসে চিকুনগুনিয়ার সংক্রমণ কমেছে। গতকাল ২৪ ঘণ্টায় চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা ছিল শূন্য।
ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া—দুটিই মশাবাহিত ভাইরাসজনিত রোগ। দুটিই এডিস মশার কামড়ে হয়। এডিসের বংশ বৃদ্ধিতে বড় ভূমিকা রাখে বৃষ্টি। আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, নভেম্বরের শুরুতে লঘুচাপের কারণে বৃষ্টি হতে পারে। ফলে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
চট্টগ্রামে বছরের শুরু থেকে গতকাল বেলা একটা পর্যন্ত ৩ হাজার ৫৯২ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হন। সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, এ বছর সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছে গত অক্টোবর মাসে। পুরো জেলায় ওই মাসে আক্রান্ত হয়েছিলেন ৯৯০ জন। এর আগের মাসে অর্থাৎ সেপ্টেম্বরে আক্রান্তের সংখ্যা ৯৩৫। চলতি নভেম্বর মাসে এ সংখ্যা নির্ভর করছে বৃষ্টির ওপর। কারণ, শীত শুরু হলে এডিসের বংশবৃদ্ধির আশঙ্কা কম। তবে বৃষ্টি হলে সেটি বাড়তে পারে।
সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রামে ডেঙ্গুতে সর্বশেষ মৃত্যু গত ৩০ সেপ্টেম্বর। এদিন বেলা সাড়ে তিনটার দিকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় জয় তারা (১৬) নামের এক কিশোরীর মৃত্যু হয়। এ নিয়ে চলতি বছর চট্টগ্রামে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে নিহতের সংখ্যা ২০।এদিকে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়লেও চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত কমেছে। গতকাল পর্যন্ত জেলায় চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৩ হাজার ৬৬৯। তবে চিকুনগুনিয়ায় মাসভিত্তিক তথ্য দেয়নি সিভিল সার্জন কার্যালয়। যদিও প্রতিদিনের আক্রান্তের হিসাব দেয় তারা। প্রাথমিক হিসাবে, গত সেপ্টেম্বর মাসে চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৭০৪। গত অক্টোবর মাসে আক্রান্ত হয়েছেন ১২১ জন। এ মাসে কেবল একজন।
সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রামে ডেঙ্গুতে সর্বশেষ মৃত্যু গত ৩০ সেপ্টেম্বর। এদিন বেলা সাড়ে তিনটার দিকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় জয় তারা (১৬) নামের এক কিশোরীর মৃত্যু হয়। এ নিয়ে চলতি বছর চট্টগ্রামে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে নিহতের সংখ্যা ২০।
এদিকে গত বছরের তুলনায় এ বছর হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের অবস্থা গুরুতর। তাঁদের উপসর্গগুলোও কিছুটা ভিন্ন বলে জানা গেছে। গতকাল দুপুর পর্যন্ত ৪১ জন রোগী জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে ডেঙ্গুর চিকিৎসা নিতে ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে ১৩ জন ভর্তি হয়েছেন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেসে (বিআইটিআইডি) এবং ১২ জন ভর্তি হয়েছেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।
আমাদের হাসপাতালে ১৫ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি আছেন। ডায়রিয়া ও বমি হলো ডেঙ্গু ওয়ার্নিং সাইন (সতর্ক সংকেত)। এগুলো দেখলে বোঝা যায় রোগীর অবস্থা গুরুতর হচ্ছে।এ এস এম লুৎফুল কবির, মেডিসিন বিভাগের প্রধান, চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালচিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, গত বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে শ্বাসকষ্ট দেখা গেছে। তবে এ বছর যাঁরা আসছেন, তাঁদের মধ্যে শক সিনড্রোম বেশি। পাশাপাশি ডায়রিয়ার উপসর্গও আছে। শক সিনড্রোম হলে রোগীর রক্তচাপ বোঝা যায় না। এই দুটি উপসর্গ গুরুতর। কারণ, সময়মতো ফ্লুইড (তরল খাবার) না পেলে রোগীর অবস্থা আরও গুরুতর হতে পারে।
চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের প্রধান এ এস এম লুৎফুল কবির প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের হাসপাতালে ১৫ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি আছেন। ডায়রিয়া ও বমি হলো ডেঙ্গু ওয়ার্নিং সাইন (সতর্ক সংকেত)। এগুলো দেখলে বোঝা যায় রোগীর অবস্থা গুরুতর হচ্ছে।’
চলতি বছর এপ্রিল থেকে মোটামুটি বৃষ্টি হচ্ছে। জুনে স্বাভাবিকের চেয়ে কম বৃষ্টি হলেও পরের মাসগুলোয় স্বাভাবিক বৃষ্টি হয়। আর থেমে থেমে বৃষ্টির সঙ্গে গরম কিন্তু কমেনি। এই বৃষ্টি ও উচ্চ তাপমাত্রা চলতি বছর ডেঙ্গুর বিস্তারে বড় ভূমিকা রেখেছে বলে মনে করেন কীটতত্ত্ববিদেরা। তবে সংক্রমণ কমাতে সিভিল সার্জন কার্যালয় ও সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
নগরের ২৫টি এলাকাকে ডেঙ্গু ও ২৫টি এলাকাকে চিকুনগুনিয়ার জন্য হটস্পট হিসেবে চিহ্নিত করেছে সিভিল সার্জন কার্যালয়। এর মধ্যে বন্দর, ইপিজেড, হালিশহর, কোতোয়ালি, বায়েজিদ, পাহাড়তলী, কাট্টলী, খুলশী, ডবলমুরিং, লালখান বাজার, আগ্রাবাদ, চান্দগাঁও, দেওয়ানহাট, আন্দরকিল্লা, মুরাদপুর, সদরঘাট—এসব এলাকায় ডেঙ্গু-চিকুনগুনিয়ার ঝুঁকি রয়েছে। এসব এলাকায় সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে মশার ওষুধ ছিটানো হচ্ছে।
সিটি করপোরেশনের ম্যালেরিয়া ও মশক নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা সরফুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের বিশেষ দল করা হয়েছে ডেঙ্গু-চিকুনগুনিয়ার জন্য। নিয়ম করে এলাকা ভাগ করে রুটিন অনুযায়ী ওষুধ ছিটানো হচ্ছে।’
চট্টগ্রামের ডেপুটি সিভিল সার্জন মোহাম্মদ তৌহিদুল আনোয়ার প্রথম আলোকে বলেন, সাধারণত বৃষ্টি হওয়ার ২৮ দিন পর্যন্ত মশার প্রকোপ থাকে বলে ধারণা করা হয়। থেমে থেমে বৃষ্টির কারণে শঙ্কা থেকে যাচ্ছে। এ মাসে বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানা গেছে। এতে ডেঙ্গু বাড়তে পারে।