দ্রুত নির্বাচন নিয়ে ভারতীয়দের সঙ্গে একটি দলের প্রত্যাশা মিলে যাওয়ায় ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ শঙ্কিত বলে মন্তব্য করেছেন দলটির আমির চরমোনাই পীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম। তিনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, ভারতীয়দের কোনো চাওয়া ও প্রত্যাশা বাংলাদেশে বাস্তবায়ন করতে দেওয়া হবে না।

বৃহস্পতিবার বগুড়ার ধুনট শহীদ মিনার চত্বরে এক গণসমাবেশে এসব কথা বলেন সৈয়দ রেজাউল করীম। জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচার, সংখ্যানুপাতিক (পিআর) নির্বাচনব্যবস্থা, বিতর্কিত নারী সংস্কার কমিশন বাতিলসহ বিভিন্ন দাবিতে ইসলামী আন্দোলন ধুনট উপজেলা শাখা এ গণসমাবেশের আয়োজন করে। এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

ইসলামী আন্দোলনের আমির বলেন, দেশের রাজনৈতিক দলগুলো এখন দুই ভাগে বিভক্ত। দেশপ্রেমী ও ক্ষমতাপ্রেমী। দেশপ্রেমীরা সংস্কার, বিচার ও নির্বাচন চাইছে; আর ক্ষমতাপ্রেমীরা দ্রুত নির্বাচন চাইছে। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে দ্রুত নির্বাচন আয়োজনের জন্য ভারতীয়রাও আগ্রহী। আমাদের দেশের কিছু দলও আগ্রহী। ভারতীয়দের সঙ্গে এদের আগ্রহ মিলে যাওয়ায় আমরা শঙ্কিত।’

এ সময় হুঁশিয়ারি দিয়ে চরমোনাইর পীর বলেন, ভারতীয়দের কোনো চাওয়া ও প্রত্যাশা বাংলাদেশে বাস্তবায়ন করতে দেওয়া হবে না। বিএনপির প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, ‘যারা নির্বাচন করছে, তাদের অতীত জানি। বাংলাদেশ দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন এদের নেতৃত্বেই হয়েছিল। জুলাই অভ্যুত্থানের পরে সেই সুযোগ আর কাউকে দেওয়া হবে না।’

এ সময় সৈয়দ রেজাউল করীম বলেন, পতিত স্বৈরাচারের লোকপ্রশাসনসহ সর্বত্র ঘাপটি মেরে আছে। তাঁরা সুযোগ খুঁজছে। এরা অন্তর্বর্তী সরকারকে কাজ করতে দিচ্ছে না। অন্তর্বর্তী সরকারের কাজ সংস্কার, বিচার ও নির্বাচন আয়োজন করা।

ইসলামী আন্দোলনের আমির বলেন, ‘সেই কাজে প্রত্যাশা পূরণ না হলেও তারা (সরকার) সংস্কার ও বিচারের কাজে এগিয়ে নিচ্ছে। এখানে কোনো অবহেলা হলে আমরা প্রতিবাদ করব; কিন্তু নির্বাচন নির্বাচন করে দেশকে অস্থিতিশীল করার কোনো অর্থ হয় না।’

সমাবেশে অন্যদের মধে৵ বক্তব্য দেন ইসলামী আন্দোলনের নায়েবে আমির আবদুল হক আজাদ, যুগ্ম মহাসচিব আশরাফুল আলম প্রমুখ।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ইসল ম

এছাড়াও পড়ুন:

নির্বাচনের আগেই জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি দিতে হবে

জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেই দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির চরমোনাই পীর সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম। তিনি বলেন, পিলখানা হত্যাকাণ্ড ও শাপলা চত্বরের গণহত্যাসহ উল্লেখযোগ্য বিষয়গুলোকে জুলাই সনদে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।

আজ সোমবার বিকেলে ঢাকার জুরাইন রেলগেট–সংলগ্ন বিক্রমপুর প্লাজা চত্বরে এক গণসমাবেশে ইসলামী আন্দোলনের আমির এ কথা বলেন।

পিআর (সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব) পদ্ধতিতে জাতীয় নির্বাচন আয়োজন, প্রয়োজনীয় রাষ্ট্রসংস্কার ও জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি প্রদান এবং অপরাধী ও খুনিদের দৃশ্যমান বিচারের দাবিতে এই গণসমাবেশের আয়োজন করে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ কদমতলী-শ্যামপুর থানা।

সমাবেশে ইসলামী আন্দোলনের আমির রেজাউল করীম বলেন, পিআর পদ্ধতিতে জাতীয় নির্বাচন দিতে হবে। বাংলাদেশের মানুষ এখন পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন চায়।

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার উদ্দেশে ইসলামী আন্দোলনের আমির বলেন, ‘নতুনভাবে আবার এই নির্বাচনের মাধ্যমে দেশের মানুষকে আপনি কী মেসেজ দিতে চান? আবার সেই স্বৈরাচার আসবে? আবার সেই চাঁদাবাজ আসবে? আবার সেই মায়ের কোলগুলো খালি হবে? দেশের টাকা বিদেশে পাচার হবে? আয়নাঘর তৈরি হবে? পিলখানা হত্যা হবে?’ তিনি বলেন, ‘এটা বাংলাদেশের মানুষ আমরা আর দেখতে চাই না। পরিবর্তন করতে হবে, সংস্কার করতে হবে।’

বিভিন্ন মৌলিক সংস্কারে বিএনপির নোট অব ডিসেন্ট দেওয়ার (দ্বিমত পোষণ করার) বিষয়ে ইসলামী আন্দোলনের আমির বলেন, সরকার গঠনের পরে দুই বছরের ভেতরে সংস্কার করার কথা বলা হচ্ছে। অন্ধকে হাইকোর্ট দেখিয়ে লাভ নেই। হাইকোর্ট এখন সবাই চেনে।

একটি রাজনৈতিক দল জুলাই অভ্যুত্থানের চেতনা এখনো বুঝতে পারেনি উল্লেখ করে সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে দলটির কলঙ্ক রচিত হয়েছে। সামনে নির্বাচনেও বাংলাদেশের মানুষ একই কলঙ্ক রচনা করবে। বাংলাদেশের ভেতরে তারা মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারবে না।

সমাবেশে জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার সব রাজনৈতিক দলের মধ্যে ঐকমত্য সৃষ্টি করে দলগুলোকে নির্বাচনমুখী করার পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারছে না।

জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, ‘সবাই বলেছে, জুলাই সনদকে আইনি ভিত্তি দিতে হবে। একটি বড় দল বলেছে সংবিধানের সংশোধন, আইনি ভিত্তি দেওয়ার এই কাজগুলো এখন হবে না। নির্বাচনের পরে যে সংসদ আসবে, তারাই এসে নাকি সেই কাজগুলো করবে। তাহলে কেন জুলাই সনদের জন্য দুই মাস সময় নষ্ট করা হলো? এর পেছনে নিশ্চয়ই অসৎ উদ্দেশ্য আছে।’

মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, পিআর পদ্ধতি ছাড়া বাংলাদেশে নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে না। উচ্চকক্ষ ও নিম্নকক্ষ দুটিতেই পিআর মানতে হবে, তা না হলে দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত রাজপথের আন্দোলন অব্যাহত থাকবে। দেশবাসীকে আন্দোলনের প্রস্তুতি নেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

গণসমাবেশে সভাপতিত্ব করেন ইসলামী আন্দোলনের প্রেসিডিয়াম সদস্য মাওলানা সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানী। সঞ্চালনা করেন দলটির সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা কে এম শরীয়াতুল্লাহ ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের যুগ্ম সম্পাদক মাওলানা আবদুর রাজ্জাক। সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন জামায়াতে ইসলামীর কর্মপরিষদ সদস্য মাওলানা খলিলুর রহমান মাদানী, ইসলামী আন্দোলনের প্রেসিডিয়াম সদস্য মাওলানা আশরাফ আলী আকন প্রমুখ।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • নির্বাচনের আগেই জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি দিতে হবে