ঈদের ছুটিতে এটিএম বুথে পর্যাপ্ত টাকা রাখার নির্দেশ
Published: 30th, May 2025 GMT
ঈদুল আজহা উপলক্ষ্যে ব্যাংক-আর্থিক প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে ১০ দিন। ছুটির সময় যেন গ্রাহক ভোগান্তিতে না পড়েন তাই আগেই ব্যাংকগুলোকে প্রস্তুতি নিতে বলা হয়েছে। গ্রাহককে নির্বিঘ্নে আর্থিক লেনদেনের সুযোগ দিতে দেশের ব্যাংকগুলোর এটিএম বুথগুলোতে পর্যাপ্ত পরিমাণ টাকা সরবরাহের নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
শুধু এটিএম বুথেই নয়, পয়েন্ট অব সেল (পিওএস), ই-পেমেন্ট গেটওয়ে, মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসের (এমএফএস) মাধ্যমে নিরবিচ্ছিন্ন লেনদেনের ক্ষেত্রে বেশ কিছু নির্দেশনা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
বৃহস্পতিবার (২৯ মে) বাংলাদেশ ব্যাংকের পেমেন্ট সিস্টেমস ডিপার্টমেন্ট থেকে এ সংক্রান্ত নির্দেশনা পাঠানো হয়।
নির্দেশনায় বলা হয়েছে, ব্যাংকগুলোকে সার্বক্ষণিক এটিএম সেবা নিশ্চিত করতে হবে; এটিএম বুথে কোনো ধরনের কারিগরি ত্রুটি দেখা দিলে দ্রুততম সময়ে সমাধান করতে হবে; পর্যাপ্ত টাকা সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে; বুথে সার্বক্ষণিক পাহারাদারের সতর্ক অবস্থানসহ অন্যান্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
পয়েন্ট অব সেলের ক্ষেত্রে সার্বক্ষণিক পিওএস সেবা নিশ্চিত করা এবং জাল-জালিয়াতি রোধে মার্চেন্ট এবং গ্রাহককে সচেতন করতে হবে।
ই-পেমেন্ট গেটওয়ের ক্ষেত্রে কার্ডভিক্তিক ‘কার্ড নট প্রেজেন্ট’ লেনদেনের ক্ষেত্রে টু ফ্যাক্টর অথেনটিকেশন ব্যবস্থা চালু রখতে বলা হয়েছে। একইসঙ্গে মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস প্রদানকারী সব ব্যাংক এবং তাদের সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠানকে নিরবিচ্ছিন্ন লেনদেন নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে।
এ ছাড়া ঈদের ছুটি চলাকালীন যে কোনো অঙ্কের লেনদেনের তথ্য এসএমএস এলার্ট সার্ভিসের মাধ্যমে গ্রাহককে জানাতে হবে। ইলেক্ট্রনিক পদ্ধতিতে সব ধরনের পরিশোধ সেবার ক্ষেত্রে গ্রাহকদের সতর্ক করতে প্রচারণা চালানো এবং গ্রাহককে সার্বক্ষণিক হেল্প লাইন সহায়তা দেওয়ার কথা উল্লেখ রয়েছে নির্দেশনায়। ইতোপূর্বে জারীকৃত এ সংক্রান্ত পরিপত্রের নির্দেশনা যথাযথভাবে পরিপালন করতেও নির্দেশনা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
ঢাকা/এনএফ//
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ন শ চ ত করত ল নদ ন র গ র হকক
এছাড়াও পড়ুন:
১০০ কম্পিউটার চালু হচ্ছে না
১২তম প্রজন্মের ২০০ কম্পিউটার দেওয়ার কথা। একেকটির দাম লাখ টাকা। এর বদলে দিয়েছে ষষ্ঠ প্রজন্মের। এর মধ্যে প্রায় ১০০টি চালু হচ্ছে না। এ সব কম্পিউটার নিয়ে বিপাকে পড়েছে কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
দরপত্র অনুযায়ী, ডেস্কটপ হবে এইচপি ব্র্যান্ডের। কোরআই থ্রি প্রসেসর। ৪ জিবি (গিগাবাইট) র্যাম। এক হাজার জিবি হার্ডডিস্ক ড্রাইভ। ৪৫০ ওয়াট পাওয়ার সাপ্লাই। মনিটর ২১.৫ ইঞ্চি এফএইচডি ও এলইডি। কিন্তু সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান পুরোনো ও নিম্নমানের ২০০টি কম্পিউটার সরবরাহ করেছে। ফলে অর্ধেক কম্পিউটার এখনও চালু করতে পারেনি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
হাসপাতালের একটি সূত্র জানায়, কোনো ব্র্যান্ডের কম্পিউটার দেওয়া হয়নি। ১২তম প্রজন্মের বদলে ষষ্ঠ প্রজন্মের যন্ত্র সরবরাহ করা হয়েছে। দরপত্রে যেসব শর্ত উল্লেখ করা হয়েছে, তার কোনোটি মানেননি ঠিকাদার। এতে সরকারের ২ কোটি টাকা গচ্চা গেছে।
সরেজমিন দেখা গেছে, ক্যান্টিন ও স্টোরের কয়েকটি কক্ষে বিকল কম্পিউটারগুলো তালাবদ্ধ করে ফেলে রাখা হয়েছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ফেরত নেওয়ার কথা বললেও তা নেয়নি।
স্টোরকিপার আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘২০০ কম্পিউটারের অর্ধেক অচল। চালু করা যায়নি। টুয়েলভ জেনারেশনের ক্ষেত্রে যদি সিক্সথ জেনারেশন দেয়, তাহলে কি হবে?’ এগুলো তারা প্রকল্প পরিচালককে ফেরত দিয়েছেন।
ছয় হাজারের বদলে ১২০০ জিপিডি: পানি শোধন যন্ত্র কেনায় নীতিমালা মানা হয়নি। ছয় হাজার জিপিডি (গ্যালন পার ডে) সক্ষমতার পরিবর্তে ১ হাজার ২০০ জিপিডির যন্ত্র সরবরাহ করেছে ঠিকাদার। যন্ত্রটি এখন পর্যন্ত স্থাপন করা হয়নি। এতে সরকারের আর্থিক ক্ষতি হয়েছে প্রায় ৫০ লাখ টাকার বেশি।
ডুপ্লিকেটের বদলে ফটোকপি: উচ্চ রেজুলেশনের কয়েকটি ডিজিটাল ডুপ্লিকেট যন্ত্র কেনার জন্য দরপত্র দেওয়া হয়। এর বদলে সরবরাহ করা হয়েছে নিম্নমানের ফটোকপি যন্ত্র। এতে সরকারের ৪ লাখ টাকা অপচয় হয়েছে। এ তিনটি সরঞ্জাম সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ঢাকার এশিয়া ট্রেডিং করপোরেশন। প্রতিষ্ঠানটির মালিক সজিব আল হাসান। নিম্নমানের সরঞ্জাম সরবরাহের বিষয়ে জানতে প্রতিষ্ঠানটির ঠিকানা ও নম্বরে যোগাযোগ করলেও কেউ সাড়া দেয়নি।
তড়িঘড়ি বিল প্রদান: ২০২৩ সালের ৭ মে ১৩ কোটি ৮৫ লাখ টাকা ব্যয়ে নিউরোসার্জারি বিভাগের ১৯টি যন্ত্র কেনার জন্য দরপত্র ডাকা হয়। তৎকালীন মন্ত্রী ও স্থানীয় সংসদ সদস্যের সুপারিশে কাজ পায় ঢাকার প্রতিষ্ঠান এম/এস এসপি ট্রেডিং হাউস। ওই বছরের ৩০ জুনের মধ্যে সব যন্ত্রপাতি সরবরাহ করার কথা। কয়েকবার সময় বাড়িয়ে ২ নভেম্বর পর্যন্ত ৬টি যন্ত্র সরবরাহ করে। পরে বাকিগুলো সরবরাহ করে। এর মধ্যে রয়েছে ২ কোটি ৭৬ লাখ টাকার ইমেজ গাইডেড নিউরো নেভিগেশন সিস্টেম ফর ক্রানিয়াল অ্যান্ড স্পাইনাল সার্জারি। ৪১ লাখ টাকার ইলেক্ট্রিক ড্রিল সিস্টেম উইথ ক্রানিটিমি অ্যান্ড মাইক্রো ডিভাইডার হ্যান্ড পিচ ক্রানিয়াল। স্পাইনাল অ্যান্ড পিটুইটারি সেট, থ্রিডি ভিজ্যুয়ালাইজেশন মাইক্রোস্কোপ সিস্টেম ফর মাইক্রো নিউরোসার্জারি সেট কেনা হয়েছে ৩ কোটি ৪২ লাখ টাকায়। মিনিমালি ইনভেসিভ স্পাইন সার্জারি ৮৫ লাখ ৯১ হাজার টাকা। প্রিকিটেনিয়াস ভরসো লাম্বার পেডিকল স্ক্রু ডোনেশন অ্যান্ড ইন্টার বডি ফাংশন সেট ৩০ লাখ ৩৭ হাজার টাকা। এসিডিএফ স্পাইন সার্জারি ইনস্ট্রুমেন্ট সেট ৪৮ লাখ ৭১ হাজার টাকা।
মেডিকেলের একাধিক সূত্র জানায়, যন্ত্রপাতি কেনার পর নিয়ম অনুযায়ী এক সদস্যের সার্ভে কমিটি সেটি প্রথমে বুঝে নেবে। অথচ স্টোরের স্টক লেজারে না তুলে সার্ভে প্রতিবেদন আসার আগে তড়িঘড়ি ৭ কোটি ৫ লাখ টাকা বিল প্রদান করা হয় ওই বছরের ১৮ ডিসেম্বর। এর ৩ মাস পর সার্ভে প্রতিবেদন আসে ২০২৪ সালের মার্চ মাসে। এটি দেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের টেকনিক্যাল ম্যানেজার (ট্রেনিং) নিমিউ অ্যান্ড টিসির কর্মকর্তা সার্ভে কমিটির সদস্য এম এন নাশিদ রহমান।
এক ভবন থেকে ৫ কোটি টাকা লোপাট: ২০১২ সালে কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল ভবন নির্মাণ প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। শেষ হয় ২০২৩ সালে। ৬১৪ কোটি টাকার মধ্যে ৪৮৫ কোট ৮৮ লাখ টাকা ব্যয়ে কলেজের একাডেমিক, হাসপাতালসহ কয়েকটি ভবন নির্মাণ করা হয়। আর যন্ত্রপাতি ও ফার্নিচার কেনায় ব্যয় হয় ১২৯ কোটি টাকা। একাডেমিক ভবনের প্রথম ৪ তলা নির্মাণে ৩০ কোটি ও পরে বর্ধিত ২ তলা নির্মাণে আরও ৯ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়।
একটি সূত্র জানায়, একাডেমিক ভবনের বেজমেন্ট, টাইলস লাগানোসহ অন্যান্য কাজে সাড়ে ৫ কোটি টাকা লোপাট হয়েছে। এতে কুষ্টিয়া গণপূর্ত বিভাগের তৎকালীন নির্বাহী প্রকৌশলী শহিদ মো. কবিরসহ একাধিক উপবিভাগীয় প্রকৌশলী, উপসহকারী প্রকৌশলী ও ঠিকাদারের যোগসাজশ ছিল বলে অভিযোগ রয়েছে।
সংশ্লিষ্টদের বক্তব্য: এ বিষয়ে প্রকল্প পরিচালক ডা. সরোয়ার জাহান চৌধুরী বলেন, ‘ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান যেসব নিম্নমানের কম্পিউটার দিয়েছে, সেগুলো ফেরত নেবে বলে জানিয়েছে। ২০০ কম্পিউটারের অর্ধেক খারাপ পাওয়া গেছে। আমরা ফেরত দেওয়ার চেষ্টা করছি। এ ছাড়া পিউরিফায়ার ও ডুপ্লিকেট মেশিনের বিষয়েও কথা হচ্ছে।’ যন্ত্রপাতি বছর ধরে পড়ে আছে কেন? জানতে চাইলে বলেন, ‘পরিচালকের দপ্তর বুঝে না নেওয়ায় আমরা যন্ত্রপাতি নিয়ে সমস্যায় আছি। বুঝে দেওয়ার জন্য বারবার চিঠি দিলেও তারা সাড়া দিচ্ছেন না। এখন এসব যন্ত্রপাতি অচল হয়ে গেলে কে দায় নেবে?’
কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপপরিচালক ডা. আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ‘অনেক দিন ধরে যন্ত্রপাতিগুলো পড়ে আছে। এগুলো বুঝে নেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। আশা করছি, দ্রুত সমস্যার সমাধান হবে।’ নিম্নমানের যন্ত্রপাতি কেনা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে বলেন, ‘নিম্নমানের কম্পিউটারসহ অন্যান্য কিছু সারঞ্জাম আমরা নিইনি।’
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এসপি ট্রেডিং হাউসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হাফিজুর রহমান পুলক বলেন, ‘আমরা শুধু নিউরো বিভাগের ১৯টি যন্ত্রপাতি সরবরাহ করেছি। সরকারের ক্রয় নীতিমালা শতভাগ মেনেছি। সেগুলো আমরা বুঝিয়েও দিয়েছি। এখানে কোনো অনিয়ম হয়নি।’
তবে অনিয়মের অভিযোগে এরই মধ্যে তদন্তে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন কুষ্টিয়া কার্যালয়ের কর্মকর্তারা। অনুসন্ধানে ভবন নির্মাণ ও যন্ত্রপাতি ক্রয়ে অনিয়মের সত্যতা মিলেছে বলে জানান উপপরিচালক মাঈনুল হাসান রওশনী। তিনি বলেন, ‘অনুসন্ধান চলছে। এ বিষয়ে তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’