কামড় দেওয়া সাপ নিয়ে টিকটক, টিকটকার কোমায়
Published: 30th, May 2025 GMT
সিরাজগঞ্জের তাড়াশের তালম ইউনিয়নের স্কুলছাত্রী তানিয়াকে (১৫) কামড় দেয় একটি গোখরা সাপ। সেসময় সাপটিকে পিটিয়ে মেরে ফেলা হয়। এরপর সেই সাপ নিয়ে টিকটক বানায় তানিয়া। পরে বিষক্রিয়া শুরু হলে বিষয়টি তার মাকে জানায় সে।
গত রবিবার (২৫ মে) রাত ১০টার ঘটনা। তানিয়া স্থানীয় তালম উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী। পড়াশোনার পাশাপাশি টিকটক তৈরির নেশা তার।
জানা গেছে, নিজ বাড়িতে রাতে টয়লেটে যাওয়ার সময় তানিয়াকে গোখরা সাপ কামড়ে দেয়। বিষয়টি আমলে না নিয়ে বাঁশের লাঠি দিয়ে সাপটিকে পিটিয়ে মেরে ফেলে সে। এরপর মরা সাপটিকে নিয়ে টিকটকের রিল বানায় তানিয়া। পরে বিষক্রিয়া শুরু হলে বিষয়টি তার মাকে জানায় সে।
মায়ের চিৎকার শুনে তার বাবা ছুটে এসে ক্ষতস্থানের ওপরে বাঁধন দিয়ে এলাকার বিভিন্ন ওঝার কাছে নিয়ে বিষ নামানোর চেষ্টা করেন। তাতে পরিস্থিতির অবনতি হয়ে পড়ে। পরদিন সকালে তানিয়াকে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তবে ততক্ষণে মেয়েটি কোমায় চলে যায়।
তানিয়ার বাবা আবু তাহের বলেন, “সাপের কামড়ে আমার মেয়ে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে চলে যায়। আল্লাহর নাম নেওয়া ছাড়া আমাদের আর কিছু করার ছিল না। হাসপাতালে নেওয়ার পরে চিকিৎসকরা জরুরিভাবে বোর্ড বসিয়ে মৃত সাপের ছবি দেখে সাপের প্রজাতি চিহ্নিত করেন। সে অনুযায়ী তাকে অ্যান্টিভেনম দেওয়া হয়।’’
তিনি আরো বলেন, “অ্যান্টিভেনম দেওয়ার পর ধীরে ধীরে কোমা থেকে স্বাভাবিক হতে থাকে তানিয়া। ঘটনার দুই দিন পর আমার মেয়ের জ্ঞান ফিরে আসে। বর্তমানে সে সুস্থ আছে। তবে চিকিৎসকরা আরো কয়েকদিন পর্যবেক্ষণে থাকতে হবে বলে জানিয়েছেন।’’
ঢাকা/অদিত্য/এস
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
জিয়া হত্যাকাণ্ড ও তারপর কী ঘটেছিল
জিয়াউর রহমান ঘটনার আগের দিন তাঁর প্রতিষ্ঠিত দল বিএনপির স্থানীয় নেতাদের বিরোধ মেটাতে চট্টগ্রাম গিয়েছিলেন মাত্র ৪৮ ঘণ্টার নোটিশে। চট্টগ্রামে দুটি উপদলে বিভক্ত বিএনপি নেতাদের সঙ্গে বৈঠক শেষে ২৯ মে রাতে স্থানীয় সার্কিট হাউসে ঘুমিয়ে ছিলেন জিয়াউর রহমান। ভোররাতে সেখানেই তাঁকে হত্যা করা হয়।
৩০ মে ভোরে গোলাগুলির আওয়াজে ঘুম ভেঙে যায় চট্টগ্রামের তৎকালীন জেলা প্রশাসক (ডিসি) জিয়াউদ্দিন এম চৌধুরীর। ডিসির বাংলো থেকে সার্কিট হাউসের দূরত্ব মাইলখানেক হবে। সকালেই তিনি বাংলো সার্কিট হাউসে গিয়ে জিয়াউর রহমানের মৃতদেহের বীভৎস দৃশ্য দেখেছিলেন। সেই থেকে জেলা প্রশাসক হিসেবে ঘটনাপ্রবাহ কাছে থেকে দেখেছেন তিনি।
‘দুই জেনারেলের হত্যাকাণ্ড, ১৯৮১-র ব্যর্থ সামরিক অভ্যুত্থান’ এই শিরোনামে একটি বই লিখেছেন জিয়াউদ্দিন এম চৌধুরী। তিনি লিখেছেন, গোলাগুলি থেমে যাওয়ার পর ভোরেই একজন সহকারী প্রটোকল অফিসার মোশতাক তাঁকে ফোন করে কিছু তথ্য দেন।
ওই সহকারী প্রটোকল অফিসারের বরাত দিয়ে বইয়ে জিয়াউদ্দিন এম চৌধুরী লিখেছেন, ‘ভোর চারটার দিকে সেনাবাহিনীর কয়েকটি গাড়ি গুলি করতে করতে সার্কিট হাউসে প্রবেশ করে। সে (সহকারী প্রটোকল অফিসার) জানে না পুলিশ বা প্রেসিডেন্টের গার্ড তাদের বাধা দিতে পেরেছিল কি না। তবে তারা গুলি করতে করতে সার্কিট হাউসে ঢুকে যায়। মোশতাক লাউঞ্জে বসে ছিল। সেনারা প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গে সে পাশের ডাইনিং রুমের টেবিলের নিচে লুকিয়ে পড়ে। এরপর সে শুনতে পায় ভারী বুটের আওয়াজ। কয়েকজন সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠে প্রেসিডেন্টের রুমের দিকে যায়। এরপর সে আরও গুলির আওয়াজ শুনতে পায়। কয়েক মিনিট পর ওপরের লোকগুলো নিচে চলে আসে আর তার কিছুক্ষণ পর শোনে গাড়ির আওয়াজ। সে বুঝল, যারা এসেছিল, তারা চলে গেছে। সে এত ভয় পেয়েছিল যে গাড়িগুলো চলে যাওয়ার পর সে পালিয়ে এসে গ্যারেজ থেকে আমাকে ফোন করেছে। আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম, প্রেসিডেন্ট কী অবস্থায় আছেন, সে জানে কি না, উত্তরে সে জানাল, এ ব্যাপারে এখনো কিছুই জানে না সে।’
এরপর অল্প সময়ের মধ্যে চট্টগ্রামের তৎকালীন বিভাগীয় কমিশনার সাইফুদ্দিন ফোন করে জিয়াউদ্দিন এম চৌধুরীকে জানান যে, ‘প্রেসিডেন্ট জিয়া আততায়ীদের হাতে খুন হয়েছেন।’
ঘটনা সম্পর্কে এ সব তথ্য পাওয়ার পর পরই বিভাগীয় কমিশনারকে সঙ্গে নিয়ে সার্কিট হাউসে যান জিয়াউদ্দিন এম চৌধুরী। সেখানে পৌঁছে দেখেন সার্কিট হাউস প্রায় পরিত্যক্ত একটা ভবন। চারপাশে কোনো প্রহরা ছিল না, ছিল না কোনো পুলিশ, ছিল না সেনাবাহিনীর কোনো সদস্য। সার্কিট হাউসের লনে দেখতে পান দাঁড়িয়ে আছেন তৎকালীন পুলিশ কমিশনার, ডিআইজি পুলিশ ও পুলিশের গোপন শাখার সহকারী কমিশনার।
জেলা প্রশাসক হিসেবে জিয়াউদ্দিন এম চৌধুরী সে সময় পুলিশের গোপন শাখার সহকারী কমিশনার আবদুস সাত্তারকে নিয়ে সার্কিট হাউসের ওপরতলায় যান পরিস্থিতি দেখতে। সেই পরিস্থিতিরও বর্ণনা দিয়েছেন তিনি তাঁর বইয়ে।
জিয়াউদ্দিন এম চৌধুরী। তিনি জিয়াউর রহমান হত্যাকাণ্ডের সময় চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক ছিলেন