আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদ পরিবার ও আহত ব্যক্তিদের জন্য বিশেষ তহবিল করা হচ্ছে। এ তহবিলের আকার হতে পারে দেড় হাজার কোটি টাকার মতো। তহবিল থেকে অভ্যুত্থানে শহীদ ও আহত পরিবারগুলোকে এককালীন অর্থ, মাসিক ভাতা, দেশে-বিদেশে চিকিৎসা খরচ এবং কর্মসংস্থানের জন্য প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। একই তহবিলের অর্থে তাঁদের জন্য ফ্ল্যাটও তৈরি হবে ঢাকার মিরপুরে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

সরকারের পক্ষ থেকে বাজেটে বিশেষ যে তহবিল গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, তার মধ্যে সর্বোচ্চ ৭৬১ কোটি টাকা বরাদ্দ থাকবে শহীদ পরিবার ও আহত ব্যক্তিদের জন্য ফ্ল্যাট নির্মাণে। আর এককালীন অনুদানের জন্য বরাদ্দ রাখা হতে পারে ২৫০ কোটি টাকা। এর বাইরে বাকি রবাদ্দ রাখা হবে চিকিৎসা, প্রশিক্ষণ ও সম্মানী খরচ বাবদ।

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের গেজেটভুক্ত জুলাই শহীদ পরিবার ৮৩৪টি। আর ১০ বিভাগে গেজেটভুক্ত আহত ১২ হাজার ৪৩ জন। জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদ পরিবার ও আহত ব্যক্তিদের এককালীন আর্থিক সহায়তা দিতে চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ২৩২ কোটি ৬০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় ও অর্থ বিভাগ মিলে ঠিক করেছে আগামী অর্থবছরে তা বাড়িয়ে তিন গুণ করা হবে। যার পরিমাণ হতে পারে ৬৩৮ কোটি টাকার মতো।

প্রতিটি শহীদ পরিবারকে এককালীন ৩০ লাখ টাকা করে দেওয়া হবে, এ সিদ্ধান্ত আগেই হয়েছে। এতে মোট ব্যয় হবে ২৫০ কোটি ২০ লাখ টাকা। অর্থ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, আহত ব্যক্তিদের দেশে-বিদেশে চিকিৎসা এবং মাসিক অনুদান ও পুনর্বাসনে লাগবে আরও ৩৯০ কোটি টাকা। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীন যে জুলাই গণ-অভ্যুত্থান অধিদপ্তর হবে, তার মাধ্যমে এসব উদ্যোগ বাস্তবায়ন করা হবে।

চলতি মাসের শুরুর দিকে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় বাজেট নিয়ে একটি সভা হয়। ওই সভায় গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ পরিবার এবং আহত ব্যক্তিদের মাসিক সম্মানী ভাতা দেওয়ার সিদ্ধান্তও হয়েছে বলে জানা গেছে। এই সম্মানী ভাতা ও এককালীন নগদ সহায়তা সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় আনার চিন্তা রয়েছে সরকারের।

জুলাই অভ্যুত্থানে আহত ব্যক্তিদের তিনটি শ্রেণিতে ভাগ করে বিভিন্ন ধরনের সুবিধা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ কাজ যৌথভাবে করেছে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। শহীদ পরিবারগুলোকে চলতি অর্থবছরেই ১০ লাখ টাকা করে দেওয়ার কাজ চলমান। আগামী অর্থবছরে তাদের আরও ২০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র কিনে দেওয়া হবে।

চলতি অর্থবছরের বাজেটে আহত ব্যক্তিদের এককালীন চিকিৎসা সহায়তা বাবদ অনুদান খাতে প্রায় ১৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়। নতুন বাজেটেও একই পরিমাণ অর্থ রাখা হতে পারে। চলতি অর্থবছরে অবশ্য শহীদ পরিবার ও আহত ব্যক্তিদের জন্য মাসিক সম্মানী ভাতা বাবদ বরাদ্দ রাখা হয়নি। আগামী অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ রাখা হতে পারে ১৫০ কোটি টাকা।

মাসিক ভাতা ও অনুদান আসছে

গণ-অভ্যুত্থানে অতি গুরুতর আহতদের জন্য ক, গুরুতর আহতদের জন্য খ এবং আহতদের জন্য গ-নামে তিনটি শ্রেণি করা হয়েছে। ক শ্রেণির ৪৯৩ জনকে মাসিক সম্মানী দেওয়া হতে পারে ২০ হাজার টাকা করে। যাঁরা উভয় হাত–পা হারিয়েছেন, দৃষ্টিশক্তি সম্পূর্ণ হারিয়েছেন, মানসিক ভারসাম্য হারিয়েছেন বা স্বাভাবিক কাজ করার সম্পূর্ণ অক্ষম হয়েছেন, তাঁদের ক শ্রেণিতে রাখা হচ্ছে।

এ ছাড়া খ শ্রেণির ৯০৮ জনকে দেওয়া হতে পারে প্রতি মাসে ১৫ হাজার টাকা করে। যাঁরা একটি অঙ্গ হারিয়েছেন বা আংশিক অক্ষম হয়েছেন, তাঁদের খ শ্রেণিতে রাখা হয়েছে। আর গ শ্রেণির ১০ হাজার ৬৪৮ জন পেতে পারেন প্রতি মাসে ১০ হাজার টাকা করে। যাঁরা চিকিৎসার মাধ্যমে সুস্থ হয়ে উঠেছেন, তাঁরা এই শ্রেণিতে রয়েছেন।

অনেক আহত আছেন, যাঁদের কোনো শ্রেণিতে ফেলা হচ্ছে না। তাঁদের কাউকে এককালীন ৩ লাখ, কাউকে এককালীন ২ লাখ টাকা করে দেওয়া হতে পারে। তাঁদের জন্য বরাদ্দ রাখা হচ্ছে শতকোটি টাকার বেশি।

এ ছাড়া শ্রেণিওয়ারি দুই লাখ, এক লাখ ও ৫০ হাজার টাকা করে চিকিৎসা অনুদান দেওয়ার কাজ চলমান থাকবে আগামী অর্থবছরেও। ক শ্রেণির জন্য এককালীন অনুদান ৫ লাখ এবং খ শ্রেণির ৩ লাখ টাকা করার উদ্যোগ রয়েছে। তবে গ শ্রেণির কেউ এককালীন অনুদান পাবেন না। তবে সরকারি চাকরি ও পুনর্বাসন কর্মসূচিতে অগ্রাধিকার দেওয়া হতে পারে তাঁদের।

ফ্ল্যাট দেওয়ার উদ্যোগ

জুলাইয়ে শহীদ ও গুরুতর আহত ব্যক্তিদের জন্য ঢাকায় একটি করে ফ্ল্যাট দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। ঢাকার মিরপুরে এ জন্য পাঁচ একর জায়গাও চিহ্নিত করা হয়েছে। জায়গা হবে মিরপুর-১৪ নম্বর সেক্টরে পুলিশ স্টাফ কলেজের উল্টো পাশে এবং মিরপুর-৯ নম্বর এলাকার পল্লবী থানার পেছনে। ১৪ তলাবিশিষ্ট ২৫টি ভবন নির্মাণ করা হবে, যেসব ভবনে থাকবে ১ হাজার ২৫০ ও ১ হাজার বর্গফুটের ফ্ল্যাট। আগামী অর্থবছরে এ জন্য ৭৬১ কোটি টাকা বরাদ্দ থাকতে পারে।

জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষকে এ ধরনের কাজে বাজেট থেকে ঋণ হিসেবে অর্থ দেওয়া হলেও এবার দেওয়া হতে পারে অনুদান হিসেবে। শহীদ পরিবার ও গুরুতর আহত ব্যক্তিদের কাছে বিনা মূল্যে দেওয়া হতে পারে এসব ফ্ল্যাট। বাজেট পাস হওয়ার পর এ ব্যাপারে দরপত্র আহ্বান করা হবে। শহীদ পরিবারকে ১ হাজার ২৫০ বর্গফুট এবং ক শ্রেণির আহতদের জন্য ১ হাজার বর্গফুটের ফ্ল্যাট দেওয়া হতে পারে। প্রকল্প এলাকায় থাকবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, মসজিদ, মার্কেট, কমিউনিটি সেন্টার, খেলার মাঠ, সড়ক, পানি, গ্যাস ও বিদ্যুৎ–সুবিধা থাকবে। দুই বছরের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ করার চিন্তা সরকারের।

কর্মসংস্থানের জন্য প্রশিক্ষণ

আহত ব্যক্তিদের কর্মসংস্থানের ওপর বেশি জোর দিচ্ছে সরকার। বাজেট বক্তব্যে এ নিয়ে কথা থাকার কথা অর্থ উপদেষ্টার। পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ) ছাড়াও বেসরকারি বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সরকার আহত ব্যক্তিদের প্রশিক্ষণ ও কর্মসংস্থানের ব্যাপারে আলোচনা শুরু করেছে। গণ-অভ্যুত্থানে আহতদের মধ্যে খ এবং গ শ্রেণিভুক্তদের শিক্ষাগত যোগ্যতা, শারীরিক অবস্থা ও সামাজিক অবস্থানের ভিত্তিতে উপযুক্ত কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করবে সরকার। আজীবন বিনা মূল্যে চিকিৎসা–সুবিধা ও বিনা মূল্যে উচ্চশিক্ষার সুযোগও দেওয়ার চিন্তা রয়েছে সরকারের।

আহত ব্যক্তির শিক্ষাগত যোগ্যতা, শারীরিক অবস্থা ও সামাজিক অবস্থান বিবেচনায় উপযুক্ত বিষয়ে অর্থাৎ কম্পিউটার ট্রেড, ফ্রিল্যান্সিং, গবাদিপশু পালন, মৎস্য খামার, পোলট্রি ফার্মিং, মোবাইল সার্ভিসিং, ড্রাইভিং ইত্যাদি বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেবে সরকার। সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে এ জন্য তাদের অনুদান নেওয়া হবে। অন্যদিকে শহীদের সন্তানেরা বিনা মূল্যে শিক্ষা সহায়তা পাবেন। যেকোনো ধরনের আর্থিক সহায়তা দেওয়া হবে সুবিধাভোগীর ব্যাংক হিসাবে। বিকাশ, নগদ, রকেট ইত্যাদি মাধ্যমে নেওয়ারও সুযোগ থাকবে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আহতদ র জন য বর দ দ র খ সরক র র ক অবস থ একক ল ন অন দ ন তহব ল

এছাড়াও পড়ুন:

বৈষম্য নিরসন ও নারীর ক্ষমতায়নে বাজেটে পর্যাপ্ত বরাদ্দ দাবি

নারীকে বৈষম্য-নির্যাতন থেকে সুরক্ষা দেওয়া ও নারীর ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে রাষ্ট্র কর্তৃক গৃহীত আইন, নীতি ও পরিকল্পনা বাস্তবায়নে পর্যাপ্ত বরাদ্দ নিশ্চিতকরাসহ ১৬ দফা সুপারিশ জানিয়েছেন বিশিষ্টজনরা।

আজ বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘ (বিএনপিএস) কর্তৃক ‘নারীর ক্ষমতায়নে বরাদ্দ করা জেন্ডার বাজেটের কার্যকর বণ্টন, বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন চাই’ শীর্ষক বৈঠকে এসব সুপারিশ জানানো হয়।

গোলটেবিল বৈঠকে মূল প্রবন্ধ তুলে ধরেন সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনোমিক মডেলিংয়ের (সানেম) উপ-পরিচালক ইশরাত শারমীন।

মূল প্রবন্ধে বলা হয়, জেন্ডার বাজেট নারীর অর্থনৈতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের সঙ্গে যুক্ত। বাজেটে সুনির্দিষ্ট বরাদ্দ না থাকলে কোনও নীতিমালাই নারীর ক্ষমতায়ন প্রক্রিয়ায় কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে না।

প্রবন্ধে জেন্ডার বাজেট ও বাংলাদেশ প্রসঙ্গে বলা হয়, ২০২২-২৩ অর্থবছরে মোট ৪৪টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের জন্য চতুর্দশতম জেন্ডার বাজেট পেশ করা হয় এবং ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে নারী উন্নয়নে ২ লাখ ২৯ হাজার ৪৮৪ কোটি টাকার জেন্ডার বাজেট পেশ করা হয়। এই বরাদ্দ আগের অর্থবছরের তুলনায় ৩০ হাজার ৮৯৭ কোটি টাকা বেশি ছিল। ওই বাজেটের উল্লেখযোগ্য দিক ছিল, জেন্ডার বাজেটকে তিনটি থিমেটিক এরিয়ায় ভাগ করে বাজেট বরাদ্দ দেওয়া হয়। প্রথম অংশে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছিল 'নারীর ক্ষমতায়ন ও সামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধি' খাতে। এ খাতে নারী উন্নয়নে ৪১ শতাংশ বরাদ্দ দেওয়া হয়। 'উৎপাদন, শ্রমবাজার ও আয়বর্ধক কাজে নারীর অধিকতর অংশগ্রহণ' খাতে বরাদ্দ রাখা হয় ৭ শতাংশ। দ্বিতীয় অংশে 'উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধি এবং শ্রমবাজার ও আয়বর্ধক কাজে নারীর অধিকতর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা'র লক্ষ্যে ৯টি মন্ত্রণালয় ও দুইটি বিভাগের জন্য বাজেট প্রস্তাব করা হয়। জেন্ডার বাজেটের তৃতীয় অংশে সরকারি সেবা প্রাপ্তিতে নারীর সুযোগ বৃদ্ধির ওপর জোর দেওয়া হয়। এতে দেখানো হয়, 'সরকারি সেবা প্রাপ্তিতে নারীর সুযোগ বৃদ্ধি' খাতে সর্বোচ্চ ৫২ শতাংশ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

বাজেটে ১২টি মন্ত্রণালয় ও ৯টি বিভাগের জন্য জেন্ডার বাজেটের প্রস্তাব করা হয়। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে নারী উন্নয়নে ২ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৭ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়, যা আগের বছরের তুলনায় ৩২ হাজার ১১০ কোটি টাকা বাড়লেও মন্ত্রণালয় ও বিভাগভিত্তিক বণ্টন একই থেকে যায়। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতি ২০১১ অনুসরণে বিভিন্ন কার্যক্রম বাস্তবায়নের মাধ্যমে নারীর রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষমতায়ন, জেন্ডার বৈষম্য দূরীকরণ, শিশুর অধিকার, নারীর জন্য কর্ম, নারীর নিরাপত্তা ও জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় নারীর ক্ষমতায়নকে জোরদার করার প্রত্যয় ব্যক্ত করা হয়েছিল।

সর্বশেষ ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের জন্য ৫ হাজার ২২২ কোটি টাকা বরাদ্দ ছিল, যেখানে ২০২৩-২৪ সালে অর্থবছরে ছিল ৪ হাজার ৭৫৫ কোটি টাকা। এছাড়া 'সমতার পথে অগ্রযাত্রা' শিরোনামে জেন্ডার বাজেট প্রতিবেদন ২০২৪-২৫ প্রকাশ করা হয়। 

এসময় বক্তারা বলেন, বাজেটে বরাদ্দ বাড়লেও যে প্রক্রিয়ায় বাজেট প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন হচ্ছে, তা নারী-পুরুষ সমতা প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে যথেষ্ট সহায়ক হচ্ছে কি না, এ প্রশ্ন থেকেই যায়। সরকার জেন্ডারবান্ধব বাজেট করলেও বাস্তব অগ্রগতি নিয়ে উল্লেখযোগ্য কোনও পর্যালোচনা বা সমীক্ষা পাওয়া যায় না। পর্যবেক্ষণের অভাবে বাজেটে বরাদ্দের কতটুকু নারীর জীবনের কোন ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি বয়ে আনলো, সে বিষয়ে কোনও তথ্য-উপাত্ত পাওয়া যায় না।

এ সময় তাদের ১৬ দফা সুপারিশ তুলে ধরা হয়। সেগুলো হলো—

বরাদ্দকৃত বাজেটের মাধ্যমে নারীর জীবনের কোন ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হলো, সে বিষয়ক তথ্য-উপাত্ত/খতিয়ান আগামী অর্থবছরের জাতীয় বাজেট উপস্থাপনের সময় উত্থাপন করতে হবে; মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোর বরাদ্দ করা জেন্ডার বাজেটের কার্যক্রমগুলো কীভাবে সরাসরি নারীর ক্ষমতায়ন ও জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতিমালার কর্মপরিকল্পনার সাথে সম্পর্কিত, তার অগ্রগতি সংক্রান্ত রিপোর্ট প্রতি বছর তৈরি ও জনসমক্ষে পেশ করতে হবে; নারীর ক্ষমতায়নের জন্য নেওয়া কৌশলগুলো কতটুকু জেন্ডার চাহিদা পূরণ করছে এবং এর অগ্রগতি কতটুকু সে বিষয়ক সংখ্যাতাত্ত্বিক বিশ্লেষণের পাশাপাশি গুণগত বিশ্লেষণের পরিমাপক নির্ধারণ করতে হবে; প্রতিটি মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের জেন্ডার বাজেট বিষয়ে ধারণাগত স্পষ্টতা এবং পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন বিষয়ে দক্ষতা বৃদ্ধির ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

এছাড়া বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের জেন্ডার বাজেট ফোকাল পয়েন্টদের তথ্য মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে থাকতে হবে; লিড মন্ত্রণালয় হিসেবে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের জেন্ডার বাজেট বিষয়ে ধারণাগত এবং মনিটরিং দক্ষতা বাড়ানোর ব্যবস্থা করতে হবে; সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিদের জেন্ডার ও জেন্ডার বাজেট বিষয়ক প্রশিক্ষণের আওতায় আনতে হবে এবং জেন্ডার সংবেদনশীল পরিবেশ নিশ্চিত করে তাদের সেবাদানের দক্ষতাকে বাৎসরিক কর্মমূল্যায়নের সাথে যুক্ত করতে হবে; নারীর জন্য জামানতমুক্ত ঋণ সুবিধা বাড়ানোর পাশাপাশি উত্তরাধিকার আইনে পরিবর্তন আনতে হবে; সহিংসতার শিকার নারীদের জন্য সেবা বাড়ানো বিশেষ করে আইনি সহায়তা প্রদান, শেল্টার হোম তৈরি করা এবং সেখানে রেখে তাদের যথাযথ প্রশিক্ষণসহ কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে।

সুপারিশে আরও বলা হয়, জেন্ডার বাজেট বিষয়ক গবেষণার উদ্যোগ নিতে হবে। বিশেষ করে বিআইডিএসসহ গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলোকে জেন্ডার বাজেট বিশ্লেষণের উদ্যোগ নেওয়ার জন্য উৎসাহিত করা যেতে পারে; নারীর ক্ষমতায়ন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সুরক্ষা নিশ্চিত করতে প্রান্তিকতা, নারীর চাহিদা, বর্তমান বাজার বিবেচনায় উপবৃত্তি, বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতার পরিমাণ বাড়াতে হবে; কৃষক নারীদের 'কৃষক' হিসেবে স্বীকৃতি প্রদানসহ তাদের সহজশর্তে ঋণ প্রদানে ব্যবস্থা থাকতে হবে; সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের জেন্ডার সংবেদনশীলতা বাড়াতে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাসহ লোকবল বাড়াতে হবে; সোশ্যাল মিডিয়াসহ বিভিন্ন মাধ্যমে নারীবিদ্বেষী ঘৃণ্য বক্তব্য প্রচার বন্ধে বাজেটে বরাদ্দ রাখতে হবে; প্রান্তিক নারীদের উপার্জনমূলক কাজে যুক্ত করবার জন্য কর্মসূচি গ্রহণ করতে বাজেটে প্রয়োজনীয় বরাদ্দ রাখতে হবে; এবং নারীকে বৈষম্য-নির্যাতন থেকে সুরক্ষা দেওয়া ও নারীর ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে রাষ্ট্র কর্তৃক গৃহীত আইন, নীতি ও পরিকল্পনা বাস্তবায়নে পর্যাপ্ত বরাদ্দ নিশ্চিত করতে হবে।

আয়োজক সংগঠনের সহ-সভাপতি ডা. মাখদুমা নার্গিস রত্নার সভাপতিত্বে ও উপ-পরিচালক শাহনাজ সুমীর সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য দেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম, অ্যাকশন এইড বাংলাদেশ লিড-উইমেন রাইটস অ্যান্ড জেন্ডার ইকুইটি মরিয়মনেসা, জেন্ডার বাজেট ও প্লানিং বিশেষজ্ঞ নিলুফার করীম, প্রাগ্রসরের নির্বাহী পরিচালক ফৌজিয়া খন্দকার ইভা, আমরাই পারি পারিবারিক নির্যাতন প্রতিরোধ জোটের (উই ক্যান) প্রধান নির্বাহী জিনাত আরা হক প্রমুখ।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • নিরাপত্তাহীনতার কথা বলে রোগীদের কাছে দুঃখ প্রকাশ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের
  • প্রণোদনা দিয়ে বিদেশি বিনিয়োগ আনতে চায় সরকার, ৫ সদস্যের কমিটি গঠন
  • কুষ্টিয়ায় বাস-ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষ, আহত ৩০
  • চক্ষু হাসপাতালে অচলাবস্থা কাটেনি
  • সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে পরিবর্তন আসছে
  • জুলাই অভ্যুত্থানে আহতদের বেশির ভাগ বিষণ্নতা ও মানসিক সমস্যায় ভুগছেন
  • সোমবার বিকেল চারটায় বাজেট দেবেন অর্থ উপদেষ্টা, বিটিভিতে সম্প্রচার হবে
  • বাজেটে টেকসই প্রবৃদ্ধির বার্তা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের
  • বৈষম্য নিরসন ও নারীর ক্ষমতায়নে বাজেটে পর্যাপ্ত বরাদ্দ দাবি