মোহাম্মদ জাবের হোসেন গত বছর হাট থেকে ঈদের কয়েক দিন আগে মোটাতাজা গরু কিনে এনেছিলেন কোরবানির জন্য। স্বাস্থ্যবান গরু দেখে বাড়ির সবাই খুশি। খুশিতে সবাই গরুকে অতিরিক্ত খাবার খাওয়াতে শুরু করলেন। কিন্তু ঈদের দুই দিন আগে গরুটা হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ে। মুখ দিয়ে অতিরিক্ত লালা ঝরতে থাকে। সবাই খুবই চিন্তিত হয়ে পড়েন। স্থানীয় পশু চিকিৎসকের মাধ্যমে চিকিৎসা দিয়েও গরুটিকে বাঁচাতে পারেননি। ঈদের দিন গরুটি মারা যায়।

সত্যিকারের এ রকম বাস্তব চিত্র প্রতিবছর পবিত্র ঈদুল আজহায় দেখা যায়। এমনকি গরুর হাটেও। আবার অসুস্থ হয়ে কিছু গরু হাটে পড়ে থাকতে দেখা যায়। এর কারণ হচ্ছে, অল্প সময়ে বেশি মুনাফার আশায় একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী পশু মোটাতাজা করতে বিভিন্ন ধরনের ওষুধ, ইনজেকশন ও রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহার করে থাকে, যা হার্ট ও কিডনির জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। অসুস্থ পশুর মাংস খেলে শরীরে মারাত্মক ব্যাধি বাসা বাঁধতে পারে। তাই পশু বিশেষ করে গরু কেনার সময় মাথায় রাখতে হবে যে মোটা মানেই কিন্তু সুস্থ নয়। এখন প্রশ্নটা হচ্ছে, এই ভেজালের মধ্যে কীভাবে খাঁটি গরু কেনা যাবে?

আসলে, ভেজালে যদিও আমরা অভ্যস্ত! তারপরও কোরবানির গরুতে ভেজালের কথা অনেকে চিন্তাও করতে পারেন না। কিন্তু ভেজাল সেখানেও! যেখানে ব্যক্তি ত্যাগের নিদর্শনস্বরূপ পশু জবাই করেন, সেখানে পশু সরবরাহকারী ভেজাল পশু দেবেন, তা স্বাভাবিকভাবে অবিশ্বাস্য। তারপরও যখন তা ঘটছে, তখন আমরা কোন অবস্থায় আছি বলার অপেক্ষা রাখে না। ত্যাগের মহিমায় ও ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে আগামী ৭ জুন পবিত্র ঈদুল আজহা উদ্‌যাপিত হবে।

ইতিমধ্যে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে জমতে শুরু করেছে পশুর হাট। এ ছাড়া বর্তমান প্রেক্ষাপটে হাটের পাশাপাশি অনলাইনে গরু কেনাবেচাও চলে। এ সময় যাঁরা কোরবানির পশু কিনতে বিভিন্ন হাটে যান, তাঁদের মধ্যে বেশির ভাগেরই পশু পছন্দ বা দরদাম করার পূর্ব অভিজ্ঞতা থাকে না বললেই চলে। কোরবানি–সংক্রান্ত সব মাসআলা-মাসায়েল আমাদের সঠিকভাবে যেমন জানতে হবে, তেমনি কোরবানির উপযুক্ত একটি ভালো গরু কীভাবে বাছাই করতে হয় সেই ব্যাপারেও আমাদের জ্ঞান রাখতে হবে।

সম্প্রতি পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে আইনশৃঙ্খলা–সংক্রান্ত সভা স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.

) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী কোনোভাবেই যেন অসুস্থ গরু বিক্রি না হয় সেদিকে সংশ্লিষ্ট সবাইকে সচেতন থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। বর্তমানে অনেক সচেতনতা রয়েছে। সঠিক খাদ্যাভ্যাস এবং নির্দিষ্ট পরিচর্যার মাধ্যমে অনেক খামারি গরু হৃষ্টপুষ্ট করে থাকেন।

বর্তমানে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের নিরলস প্রচেষ্টা ও বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে খামারিদের প্রশিক্ষণ প্রদানের ফলে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি ব্যবহার করে প্রাকৃতিক ও নিরাপদ উপায়ে গরু মোটাতাজা করা হচ্ছে। কোরবানির পশু সুস্থ-সবল হওয়া চাই, যা ধর্মীয় বিধানে আছে। তাই কোরবানির জন্য যে পশুটি আমরা কিনছি, সেটা কি সুস্থ, তার মাংস খাওয়া নিরাপদ হবে কি না,Ñএসব বিষয়ে আমাদের ভাবতে হবে।

ঈদুল আজহার কোরবানির পশু অবশ্যই চতুষ্পদ জন্তু হতে হবে। এখানে চতুষ্পদ প্রাণী বলতে যেসব প্রাণীর চারটি পা রয়েছে তাদের বোঝানো হয়। বাংলাদেশ এবং অন্যান্য মুসলিম দেশের প্রেক্ষাপটে সাধারণত গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া, উট কিংবা দুম্বা কোরবানি দেওয়া হয়। আর এই কোরবানি অবশ্যই মহান আল্লাহ তাআলার নামে হবে এবং তাঁর নৈকট্য অর্জনের উদ্দেশ্যে। গরু কেনার ক্ষেত্রে দেশি গরু কেনা ভালো। সাধারণত বড় সাইজের গরুগুলোকে ইনজেকশন বা হরমোন ট্যাবলেট খাওয়ানো হয় বেশি। তাই কোরবানির জন্য বড় গরু না কিনে মাঝারি ধরনের গরু কেনা নিরাপদ। দিনের আলো থাকতেই পশু কেনা ভালো। কেননা, রাতের বেলায় পশু রোগাক্রান্ত নাকি সুস্থ তা ভালোভাবে বোঝা যায় না।

কোরবানির জন্য সুস্থ ও উপযুক্ত পশু নির্বাচন করা জরুরি। কাজটা সহজ নয়। সাধারণ কিছু বিষয় জানা থাকলে পশু কিনতে কোনো সমস্যা হবে না। স্বাভাবিকভাবেই গরুর গায়ে আঙুল দিয়ে চাপ দিলে চাপ দেওয়ার পর যদি আঙুলের ছাপ লেগে থাকে। শিগগির চামড়াটা আগের অবস্থায় ফিরে না আসে, তাহলে বুঝতে হবে গরুটিকে মোটাতাজা করতে গিয়ে অবৈধ উপায়ে হরমোন বা ওষুধ ব্যবহার করা হয়েছে। সুস্থ গরুর ক্ষেত্রে এই চাপ ছেড়ে দিলেই স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে। তবে কৃত্রিম প্রক্রিয়ার মোটাতাজা করা গরুর গায়ে আঙুলের চাপ দিলে তা স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরতে বেশি সময় নেবে।

পাশাপাশি দেখতে হবে গরু চটপটে কি না। শরীরে পানি জমার কারণে কৃত্রিম উপায়ে মোটাতাজা করা গরুগুলো এক জায়গায় বসে থাকে, নড়াচড়া কম করে। আবহাওয়া খুব গরম না থাকলে যদি গরুর মুখে লালা বা ফেনা বেশি থাকে তাহলে তা কৃত্রিম উপায়ে মোটাতাজা করা বলে ধারণা করা হয়। তবে সাময়িকভাবে খাবারের সমস্যার কারণেও অতিরিক্ত লালা বা ফেনা এবং পেট ফাঁপা দেখা যায়। যেসব গরুর মুখে কম লালা বা ফেনা থাকে, সেই গরু কেনার চেষ্টা করুন।

গরুকে ট্যাবলেট খাওয়ানো হয়েছে কি না, তা নিশ্চিত হতে গরুর শ্বাস-প্রশ্বাস দেখতে হবে। ট্যাবলেট খাওয়ানো গরুর শ্বাস-প্রশ্বাস দ্রুত হয়, মনে হয় যেন হাঁপাচ্ছে আর প্রচণ্ড ক্লান্ত দেখায়। পাশাপাশি ট্যাবলেট খাওয়ানো গরুর গায়ে পানি জমার কারণে মাংস অত্যন্ত নরম হয়ে যায়। এই বিষয়ে নিশ্চিত হতে পেছনের রানের মাংস পরীক্ষা করতে হবে। সুস্থ গরুর রানের মাংস থাকবে শক্ত। আর ট্যাবলেট খাওয়ানো গরুর ক্ষেত্রে তা হবে নরম। এই ধরনের গরুর প্রস্রাবের পরিমাণও কমে যায়। রোগাক্রান্ত হলে তার কানের গোড়ায় হাত দিয়ে স্পর্শ করলে জ্বরের মতো অস্বাভাবিক গরম অনুভূত হতে পারে।

স্বাভাবিক গরু চঞ্চল না হলেও নড়াচড়ার মধ্যে থাকে। অনবরত লেজ নাড়াতে থাকে। আশপাশে কী হচ্ছে তা নিয়ে বেশ সচেতন থাকে। শব্দ শুনলে বা কেউ স্পর্শ করলে প্রতিক্রিয়া দেখায়। কেউ কাছে গেলে চোখ তুলে তাকায়। আর চোখটা খুব উজ্জ্বল থাকবে। অসুস্থ গরুর মাজেল বা নাকের ওপরের অংশ শুষ্ক থাকে। কিন্তু সুস্থ উপায়ে বেড়ে ওঠা গরুর মাজেল বা নাকের ওপরের অংশ ভেজা ভেজা থাকে। পশু খাওয়াদাওয়ায় অনীহা দেখাবে, সুস্থ পশু দেখতে যেমনি হোক না কেন তার মুখের সামনে খাবার ধরলে সে বেশ উৎসাহ নিয়েই খাবে। কিন্তু স্টেরয়েড দেওয়া পশু অসুস্থ থাকার কারণে সে খাওয়াদাওয়া করতে চায় না। সুস্থ ও স্বাভাবিক উপায়ে বেড়ে ওঠা গরু খাবার দেখতেই জিব দিয়ে টেনে খাওয়ার চেষ্টা করবে। অন্য সমস্যা থাকলে খাবারে অনাগ্রহ দেখায়।

তাই পশু কেনার আগে এর শরীরের কোথাও ক্ষত আছে কি না পরীক্ষা করে নিতে হবে। এ জন্য শিং ভাঙা, লেজ কাটা কিংবা মুখ, জিহ্বা, শরীর, পা, ক্ষুর, গোড়ালিতে কোনো ক্ষত আছে কি না দেখে নিতে হবে। কোরবানির পশুর ক্ষেত্রে বয়স গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। যদি উট হয় তাহলে তার বয়স হতে হবে সর্বনিম্ন পাঁচ বছর। গরু কিংবা মহিষের ক্ষেত্রে বয়স হতে হবে সর্বনিম্ন দুই বছর। ছাগল ভেড়া কিংবা দুম্বার ক্ষেত্রেও সর্বনিম্ন এক বছর হতে হবে। তবে ভেড়া এবং দুম্বার ক্ষেত্রে যদি দেখতে এক বছরের মতো হয় কিন্তু বয়স এক বছরের কিছু কম তাহলে সেটি দ্বারাও কোরবানি দেওয়া যাবে।

কিন্তু এক বছরের কম বয়সী কোনো ছাগল কোরবানি দেওয়া যাবে না। এ ক্ষেত্রে গরুর দাঁত দেখে বয়স যাচাই করে নিতে হবে। গরুর নিচের পাটিতে যদি দুধ দাঁতের পাশাপাশি সামনে অন্তত দুটি কোদালের মতো স্থায়ী দাঁত থাকে তাহলে বুঝতে হবে গরুটি কোরবানির উপযুক্ত হয়েছে। ৩ বছর বয়সে চারটি, ৪ বছর বয়সে ছয়টি ও ৫ বছর বয়সে পুরো মুখে সর্বমোট আটটি স্থায়ী কর্তন দাঁত থাকবে। গাভি কোরবানির দেওয়া গেলেও তার আগে অবশ্যই নিশ্চিত হবে যে গাভিটি গর্ভবতী কি না। গর্ভবতী গাভি কোনো অবস্থাতেই কোরবানি দেওয়া যাবে না। সাধারণত গর্ভবতী গাভির পেট ও ওলান স্ফীত থাকে।

হাট থেকে গরু কিনে বাড়ি নেওয়ার পর বেশির ভাগ গরু একবার বসলে আর দাঁড়াতে চায় না। কোনো কিছু খেতে চায় না। তখন অনেকেই মনে করে পশুটি অসুস্থ। প্রকৃত অর্থে পশুটি তখন বেশ ক্লান্ত। তাই তাকে বিরক্ত না করে অথবা খাবার খাওয়ানোর জন্য জোর না করে ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা বিশ্রাম দিতে হবে। এ সময় পশুর সামনে ঘাস ও পানি রাখা যেতে পারে। নিজের প্রয়োজনে পশু সেটি খাবে। পশু কেনার সময় বিক্রেতার কাছ থেকে পশুর পছন্দের খাবার সম্পর্কে জেনে নেওয়া যেতে পারে। ইসলামে হৃষ্টপুষ্ট পশু কোরবানির কথা বলা হয়েছে। এখন অনেকের মধ্যে মোটাতাজা, বড়, দামি গরু কোরবানি নিয়ে প্রতিযোগিতা দেখা যায়। অনেকের জন্য তা যেন সামাজিক মর্যাদার পরিচায়ক। সেটাও কিন্তু ব্যক্তির ভেজাল নিয়ত। এ রকম ভেজাল নিয়ে কোরবানি তার আসল উদ্দেশ্যই হারায়।

সরকারি হিসাবে এ বছর কোরবানির পরও ২০ লাখ ৬৮ হাজার ১৩৫টি গবাদিপশু উদ্বৃত্ত থাকবে, তাই কোরবানি ঈদের জন্য কোনো গবাদিপশু আমদানি ও অবৈধভাবে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না বলে জানিয়েছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার। প্রতিবছরের ন্যায় এ বছরও প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় দেশে কোরবানিযোগ্য গবাদিপশুর সংখ্যা নিরূপণ করেছে। এ বছরে কোরবানিযোগ্য হৃষ্টপুষ্ট গবাদিপশুর মধ্যে ৫৬ লাখ ২ হাজার ৯০৫টি গরু-মহিষ, ৬৮ লাখ ৩৮ হাজার ৯২০টি ছাগল-ভেড়া এবং ৫ হাজার ৫১২টি অন্যান্য প্রজাতিসহ সর্বমোট ১ কোটি ২৪ লাখ ৪৭ হাজার ৩৩৭টি গবাদিপশুর প্রাপ্যতা আশা করা যাচ্ছে।

আতঙ্কিত না হয়ে একটু দেখেশুনে কিনলেই বিপদের ঝুঁকি এড়ানো যাবে। আশার কথা হচ্ছে, কৃত্রিম উপায়ে মোটাতাজা করা গরুর মাংস খাওয়ার নেতিবাচক প্রভাব নিয়ে ব্যাপক প্রচারের পর এ নিয়ে জনসচেতনতাও তৈরি হয়েছে। ফলে মানুষজন হাটে গিয়ে পছন্দের পশুটি খোঁজার পাশাপাশি এটির স্বাস্থ্যগত তথ্যও জানতে চান। তাই ভেজাল গরু চেনার উপায় জানা থাকলে চিন্তার কোনো কারণ নেই।

মো. বশিরুল ইসলাম উপপরিচালক, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ত ই ক রব ন অবস থ য় এক বছর র বয়স বছর র

এছাড়াও পড়ুন:

চুয়াডাঙ্গায় পাউবোর কর্মচারীকে ট্রেন থেকে ফেলে হত্যার অভিযোগে ট্রেন আটকে বিক্ষোভ

চুয়াডাঙ্গার জীবননগরে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) কর্মচারী আবদুল গাফ্ফারকে ট্রেন থেকে ফেলে হত্যার অভিযোগে জড়িত ব্যক্তিদের শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন ও রেলপথ অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন স্বজন ও এলাকাবাসী। আজ রোববার সকালে উপজেলার উথলী রেলওয়ে স্টেশনে এ কর্মসূচি পালিত হয়।

উথলী ইউনিয়নবাসী ও শোকাহত পরিবারের ব্যানারে এই মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি হয়। এতে নিহত গাফ্ফারের ১১ মাস বয়সী শিশুসন্তানকে নিয়ে তাঁর স্ত্রী রুবাইয়া আক্তার, বাবা জিন্নাত আলী, মা তহমিনা খাতুনসহ হাজারো নারী-পুরুষ অংশ নেন। কর্মসূচি ঘিরে সকাল থেকেই সেনাবাহিনী ও থানা-পুলিশের সদস্য উথলী রেলস্টেশন এলাকায় ছিলেন।

কর্মসূচি চলাকালে খুলনা থেকে রাজশাহীগামী ৭১৫ কপোতাক্ষ এক্সপ্রেস ট্রেন উথলী রেলস্টেশনে পৌঁছালে বিক্ষোভকারীরা প্রায় ২০ মিনিট ট্রেন আটকে বিক্ষোভ করেন। এ সময় তাঁরা গাফ্ফার হত্যার ঘটনায় করা মামলার এজাহারভুক্ত আসামি টিটিই লালন চক্রবর্তী, অ্যাটেনডেন্ট মিলন ও সোহাগ মিয়া এবং জিআরপি পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) পারভেজ ও কনস্টেবল কাদেরের শাস্তির দাবি জানান।

উথলী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক চেয়ারম্যান ও নাগরিক সংগঠন জীবননগর উপজেলা লোকমোর্চার সভাপতি আবুল কালাম আজাদের সভাপতিত্বে কর্মসূচিটি হয়। এতে জেলা জামায়াতের শুরা সদস্য মাওলানা মো. মহিউদ্দিন, স্থানীয় বিএনপি নেতা ফয়সাল মাহাতাব, নিহত ব্যক্তির বাবা জিন্নাত আলী, মা তহমিনা খাতুন বিউটি ও স্ত্রী রুবাইয়া আক্তার বক্তব্য দেন।

বক্তারা বলেন, গাফ্ফার বরাবরই প্রতিবাদী মানুষ। গত ২১ মে বিকেলে তিনি চুয়াডাঙ্গা রেলওয়ে স্টেশন থেকে উথলীর উদ্দেশে কপোতাক্ষ এক্সপ্রেস ট্রেনে ওঠেন। ওই দিন ট্রেনের টিটিই, অ্যাটেনডেন্ট ও জিআরপি পুলিশ যাত্রীদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করছিলেন। গাফ্ফার প্রতিবাদ করলে তাঁকে জোর করে পাশের বগিতে নেওয়ার চেষ্টা করা হয়। অন্য যাত্রীরা কারণ জানতে চাইলে তাঁরা গাফ্ফারকে ছিনতাইকারী বলে পরিচয় দেন ও গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানান। কয়েক মিনিটের মাথায় জয়রামপুর স্টেশন এলাকায় তাঁকে ট্রেন থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিলে ঘটনাস্থলেই মারা যান। সহযাত্রীরা বাড়িতে এসে ঘটনার বর্ণনা দিলে ঘটনাস্থল থেকে লাশ উদ্ধার করা হয়।

এ ঘটনায় গাফ্ফারের বাবা বাদী হয়ে রেলওয়ে ও জিআরপি পুলিশের পাঁচজনের নাম উল্লেখ করে ২৭ মে জীবননগর আমলি আদালতে হত্যা মামলার আবেদন করেন। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে তদন্তের জন্য জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখাকে (ডিবি) দায়িত্ব দেন।

গাফ্ফারের মা তহমিনা খাতুনের অভিযোগ, মামলার ছয় দিন পেরিয়ে গেলেও ডিবি এখনো কোনো যোগাযোগ করেনি। অথচ মামলা করায় জিআরপি পুলিশের কর্মকর্তারা ফোন দিয়ে তাঁদের হুমকি দিচ্ছেন।

জীবননগর উপজেলা লোকমোর্চার সভাপতি আবুল কালাম আজাদ বলেন, গাফ্ফার হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদ জানাতে হাজারো মানুষ আজ সমবেত হয়েছেন। এ ঘটনায় মামলার পাশাপাশি জেলা প্রশাসক ও রেলওয়ে পুলিশের পুলিশ সুপারকে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। মামলা নিয়ে কোনো গড়িমসি করলে এলাকাবাসীকে নিয়ে বৃহত্তর আন্দোলনের ডাক দেওয়া হবে।

এ বিষয়ে জিআরপি পুলিশের চুয়াডাঙ্গা ফাঁড়ির এসআই জগদীশ চন্দ্র প্রথম আলোকে বলেন, ২১ মে বিকেলে জয়রামপুর থেকে গাফ্ফার লাশ উদ্ধারের পর পোড়াদহ রেলওয়ে থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা হয়। ওই দিন নিহত ব্যক্তির স্বজনেরা কোনো অভিযোগ নেই মর্মে লিখিত দিয়ে লাশ নিয়েছিলেন। পরে ২৭ তারিখে পাঁচজনের নামে মামলার বিষয়টি জেনেছেন। তিনি বলেন, মামলার আসামিরা বিষয়টি জেনেছেন। আইনগতভাবেই তা নিষ্পত্তি করবেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ