অভিজাত রেস্তোরাঁয় এক বেলা পেটপুরে খেলেন শত শ্রমজীবী মানুষ
Published: 31st, May 2025 GMT
যশোর শহরের চাকচিক্যময় লাক্সারি কনভেনশন সেন্টারে সাধারণত দেখা যায় জাঁকজমক পার্টি কিংবা নানা আয়োজনের। আর যারা অংশ নেন তারাও বেশিরভাগ অভিজাত শ্রেণির মানুষ। তবে শনিবার দুপুরের দৃশ্য ছিল একটু ভিন্ন। জাঁকজমক আয়োজন থাকলেও অংশগ্রহণকারীদের কেউ রিকশাচালক, দিনমজুর, কেউ আবার শ্রমিক। তাদের চোখেমুখে ছিল অন্যরকম খুশি। সুসজ্জিত চেয়ার-টেবিলে চীনামাটির প্লেটে সাজানো অভিজাত সব খাবার। এমন অভিজাত পরিবেশে একবেলা আহার করেন একশত শ্রমজীবী মানুষ।
বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ৪৪তম শাহাদৎবার্ষিকী উপলক্ষে শ্রমজীবী মানুষের সম্মানে ব্যতিক্রমী এ আয়োজন করে যশোর জেলা স্বেচ্ছাসেবক দল। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত কঠোর পরিশ্রম শেষে একবেলা পেটপুরে এমন খাবার খেতে পেরে খুশি এসব শ্রমজীবীরা।
আয়োজকরা জানান, শ্রমজীবীরা অনেক সময় বিভিন্ন ব্যক্তি বা সংগঠনের কাছ থেকে ভালো খাবার পায় কিন্তু ভালো পরিবেশ পায় না। আমরা চেয়েছি তারা যাতে ভালো খাবারের পাশাপাশি একটি ভালো পরিবেশে খাবার খেতে পারে। তাই তাদের নিয়ে শহরের এমন চাকচিক্যময় কনভেনশন সেন্টারে এই আয়োজন করেছি।
যশোর শহরে দেড় দশক ধরে রিকশা চালান নুর উদ্দিন। শহরের তালতলা এলাকায় একটি বস্তিতে থাকেন। একটু মৃদু হেসে বলে উঠলেন, ‘এই সড়কের সামনের রাস্তা দিয়ে দিনে কতবার খ্যাপ মারি তার শেষ নেই। মাঝে মধ্যে তাকায় এখানে কি হয়, কি খাওয়া দাওয়া হয়। কতজনরে এখানে নামিয়েও গেছি। তবে কখনো খেতে পারেনি। আজ উপরে উঠেতেই ঘামে ভেজা শরীর শীতল হয়ে গেল। তারপর কত পদের খাবার খেলাম। মাছ মাংস, মিষ্টি-দই, কোক। এমন জায়গায় কোনোদিন খাইনি, জীবনে ভালো খাবারও খেলাম আর ইচ্ছাডাও পূরণ করলাম।’
তরিকুল নামে আরেক রিকশাচালক বলেন, ‘আমাদের ভালো খাবার দিয়েছে। খুব ভালো লাগলো।’
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির খুলনা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত। তিনি শ্রমজীবী এসব মানুষের পাত্রে খাবার পরিবেশন করার পাশাপাশি নিজেও খাবার খান তাদের সঙ্গে।
তিনি বলেন, বিএনপি কোনো মানুষকে ছোট ভাবে না। সব শ্রেণি পেশার মানুষের ভাগ্য উন্নয়নে কাজ করেছে তার দল। আগামীতেও করবে। বিএনপি শ্রমজীবীদের সম্মান করে।
এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন জেলা বিএনপির সভাপতি সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু, সাংগঠনিক সম্পাদক রবিউল ইসলাম, সাবেক যুগ্ম আহ্ববায়ক গোলাম রেজা দুলু, জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট মোহাম্মাদ ইসহাক, দৈনিক লোকসমাজের প্রকাশক শান্তনু ইসলাম সুমিত, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক মোস্তফা আমীর ফয়সাল, সদস্য সচিব রাজিদুর রহমান সাগর প্রমুখ।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: যশ র শ রমজ ব পর ব শ ব এনপ
এছাড়াও পড়ুন:
তাজউদ্দীন থেকে সালেহউদ্দিন: ৫৪টি বাজেট কে, কখন, কীভাবে দিলেন
দেশের প্রথম বাজেট ছিল ছোট আকারের। আর ৫৪ বছর পর সেই বাজেটের কলেবর বড় হয়েছে, বেড়েছে প্রবৃদ্ধি। যত বাজেট দেওয়া হয়েছে, তার আকার কত ছিল, কে আর কবে তা উপস্থাপন করেছিলেন, পেশ করার সময় কী বলেছিলেন, তারই একটি বিবরণ দেওয়া হলো এখানে। বলে রাখা ভালো, বাজেট উপস্থাপন পদ্ধতির অনেক বদল হয়েছে। বাজেট পরিসংখ্যান প্রকাশের পদ্ধতিরও পরিবর্তন আনা হয়েছে। সরকারের আয় ও ব্যয়ের খাতে নতুন নতুন বিষয় যুক্ত হয়েছে। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি বা এডিপির বাইরে নতুন নতুন উন্নয়ন ব্যয়ের খাত যুক্ত হয়েছে। ফলে এডিপির তুলনায় উন্নয়ন বাজেট আরও বড় হয়েছে।
১. মুজিবনগর সরকার, ১৯ জুলাই ১৯৭১
রাজস্ব আয় ৭,৭৪, ১৮,৯৯৮ টাকা, ব্যয় ৮,৬২, ৪৮,২০৪ টাকা। বাজেট ঘাটতি ৮৮,২৯, ২০৬ টাকা।
প্রথম বাজেটটি দিয়েছিল মুজিবনগর সরকার। তখন অর্থমন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন এম মনসুর আলী। অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম এর অনুমোদন দিয়েছিলেন। সেই বাজেটের ব্যাখ্যামূলক টিকায় বলা ছিল, ‘আমাদের এখন স্বাধীনতা যুদ্ধের জন্য দরকারি, অপরিহার্য ব্যয় মেটাতে বাজেট তৈরি করতে হচ্ছে। যেটা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে যুদ্ধ প্রক্রিয়ায় সাহায্য করবে। বাজেট জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর, ১৯৭১- এই তিন মাস সময়ের জন্য তৈরি করা হয়েছে। এই আশায় এটা করা হয়েছে যে আমরা এই সময়ের মধ্যেই দেশকে স্বাধীন করতে পারব।’
২. তাজউদ্দীন আহমদ, ১৯৭২ / ১৯৭১-৭২ ও ১৯৭২-৭৩ অর্থবছর, শনিবার, ৩০ জুন, ১৯৭২
একই সঙ্গে দুই অর্থবছরের বাজেট পেশ করা হয়েছিল। ১৯৭১-৭২ অর্থবছরের বাজেটের মেয়াদকাল ছিল ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ থেকে ৩০ জুন, ১৯৭২।
ক.১৯৭১-৭২ অর্থবছর: রাজস্ব আয় ৪৮.৫২ কোটি টাকা, রাজস্ব ব্যয় ৯৯.১৩ কোটি টাকা, উন্নয়ন ব্যয় ৫১.৪৬ কোটি টাকা
খ.১৯৭২-৭৩ অর্থবছর: রাজস্ব আয় ২৯১.৫৮ কোটি, রাজস্ব ব্যয় ২১৮.৪৩ কোটি টাকা, উদ্বৃত্ত ৭৩.১৫ কোটি, উন্নয়ন, পুনর্নির্মাণ ও পুনর্বাসন ব্যয় ৫০১ কোটি টাকা, এর মধ্যে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) ৩১৮.৩০ কোটি টাকা।
মোট বাজেট ৭১৯.৪৩ কোটি, মোট আয় ২৮৫.৩৮ কোটি, মোট ঘাটতি ৪২৭.৮৫ কোটি টাকা।
সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম বাজেট দিয়েছিলেন দেশের প্রথম অর্থমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমেদ। প্রথম বাজেট বক্তৃতা তেমন দীর্ঘ ছিল না। পুনর্গঠন ও পুনর্বাসনের পরিকল্পনার কথাই বেশি বলেছিলেন অর্থমন্ত্রী।
বাজেট বক্তৃতার শুরুতেই অর্থমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ বলেছিলেন, ‘বেতার ও টেলিভিশনের মাধ্যমে এই বাজেট প্রচার না করে নির্বাচিত গণপ্রতিনিধিদের সামনে উপস্থাপন করতে পারলে আমি সুখী হতাম। তবে আমি আশা করি যে এর পরে আর কোনো দিন এইভাবে আমাদের বাজেট প্রচার করতে হবে না।’
তাজউদ্দীন আহমদ