যশোর শহরের চাকচিক্যময় লাক্সারি কনভেনশন সেন্টারে সাধারণত দেখা যায় জাঁকজমক পার্টি কিংবা নানা আয়োজনের। আর যারা অংশ নেন তারাও বেশিরভাগ অভিজাত শ্রেণির মানুষ। তবে শনিবার দুপুরের দৃশ্য ছিল একটু ভিন্ন। জাঁকজমক আয়োজন থাকলেও অংশগ্রহণকারীদের কেউ রিকশাচালক, দিনমজুর, কেউ আবার শ্রমিক। তাদের চোখেমুখে ছিল অন্যরকম খুশি। সুসজ্জিত চেয়ার-টেবিলে চীনামাটির প্লেটে সাজানো অভিজাত সব খাবার। এমন অভিজাত পরিবেশে একবেলা আহার করেন একশত শ্রমজীবী মানুষ। 

বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ৪৪তম শাহাদৎবার্ষিকী উপলক্ষে শ্রমজীবী মানুষের সম্মানে ব্যতিক্রমী এ আয়োজন করে যশোর জেলা স্বেচ্ছাসেবক দল। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত কঠোর পরিশ্রম শেষে একবেলা পেটপুরে এমন খাবার খেতে পেরে খুশি এসব শ্রমজীবীরা। 

আয়োজকরা জানান, শ্রমজীবীরা অনেক সময় বিভিন্ন ব্যক্তি বা সংগঠনের কাছ থেকে ভালো খাবার পায় কিন্তু ভালো পরিবেশ পায় না। আমরা চেয়েছি তারা যাতে ভালো খাবারের পাশাপাশি একটি ভালো পরিবেশে খাবার খেতে পারে। তাই তাদের নিয়ে শহরের এমন চাকচিক্যময় কনভেনশন সেন্টারে এই আয়োজন করেছি।

যশোর শহরে দেড় দশক ধরে রিকশা চালান নুর উদ্দিন। শহরের তালতলা এলাকায় একটি বস্তিতে থাকেন। একটু মৃদু হেসে বলে উঠলেন, ‘এই সড়কের সামনের রাস্তা দিয়ে দিনে কতবার খ্যাপ মারি তার শেষ নেই। মাঝে মধ্যে তাকায় এখানে কি হয়, কি খাওয়া দাওয়া হয়। কতজনরে এখানে নামিয়েও গেছি। তবে কখনো খেতে পারেনি। আজ উপরে উঠেতেই ঘামে ভেজা শরীর শীতল হয়ে গেল। তারপর কত পদের খাবার খেলাম। মাছ মাংস, মিষ্টি-দই, কোক। এমন জায়গায় কোনোদিন খাইনি, জীবনে ভালো খাবারও খেলাম আর ইচ্ছাডাও পূরণ করলাম।’

তরিকুল নামে আরেক রিকশাচালক বলেন, ‘আমাদের ভালো খাবার দিয়েছে। খুব ভালো লাগলো।’

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির খুলনা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত। তিনি শ্রমজীবী এসব মানুষের পাত্রে খাবার পরিবেশন করার পাশাপাশি নিজেও খাবার খান তাদের সঙ্গে।
 
তিনি বলেন, বিএনপি কোনো মানুষকে ছোট ভাবে না। সব শ্রেণি পেশার মানুষের ভাগ্য উন্নয়নে কাজ করেছে তার দল। আগামীতেও করবে। বিএনপি শ্রমজীবীদের সম্মান করে।

এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন জেলা বিএনপির সভাপতি সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু, সাংগঠনিক সম্পাদক রবিউল ইসলাম, সাবেক যুগ্ম আহ্ববায়ক গোলাম রেজা দুলু, জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট মোহাম্মাদ ইসহাক, দৈনিক লোকসমাজের প্রকাশক শান্তনু ইসলাম সুমিত, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক মোস্তফা আমীর ফয়সাল, সদস্য সচিব রাজিদুর রহমান সাগর প্রমুখ।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: যশ র শ রমজ ব পর ব শ ব এনপ

এছাড়াও পড়ুন:

২২ অনাথ কাশ্মীরি শিশুর পড়াশোনার দায়িত্ব নিলেন রাহুল গান্ধী

অপারেশন সিঁদুর চলাকালীন পাকিস্তানি গোলায় ভারত–নিয়ন্ত্রিত জম্মু–কাশ্মীরে যাঁরা নিহত হয়েছিলেন, তাঁদের পরিবারের ২২ অনাথ শিশুর লেখাপড়ার পুরো দায়িত্ব নিয়েছেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী। ওই শিশুরা পুঞ্চ জেলার সীমান্তবর্তী এলাকার বাসিন্দা।

স্কুলের গণ্ডি পেরিয়ে কলেজে উঠে স্নাতক হওয়া পর্যন্ত ওই শিশুদের পড়াশোনার সব খরচ রাহুল গান্ধী বহন করবেন। সেই খরচের প্রথম কিস্তির টাকা বুধবার ওই পড়ুয়াদের স্কুলে পৌঁছে যাবে বলে জানিয়েছেন জম্মু–কাশ্মীরের কংগ্রেস সভাপতি তারিক হামিদ কাররা।

পেহেলগামে গত ২২ এপ্রিল পর্যটকদের ওপর সশস্ত্র হামলা চালিয়েছিল কয়েকজন জঙ্গি। সেই হামলায় নিহত হয়েছিলেন মোট ২৬ জন পর্যটক। প্রত্যাঘাতের জন্য ভারত শুরু করে অপারেশন সিঁদুর। চার দিনের সেই লড়াইয়ের সময় জম্মুর সীমান্তবর্তী এলাকায় প্রবল গোলাবর্ষণ করে পাকিস্তান। সেই হামলায় মারা গিয়েছিলেন ২৭ জন গ্রামবাসী। আহত হয়েছিলেন ৭০ জনের বেশি। যাঁরা নিহত হয়েছিলেন, ওই ২২ শিশু ওইসব পরিবারেরই সন্তান। তাদের কেউ বাবা, কেউ মা, কেউ–বা দুজনকেই হারিয়েছে। কারও পরিবারের একমাত্র কর্মক্ষম ব্যক্তি নিহত হয়েছেন।

রাহুল গত মে মাসে ওইসব এলাকায় গিয়েছিলেন। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারদের সঙ্গে দেখা করেছিলেন। অনাথ শিশুদের স্কুলেও গিয়েছিলেন। ওই সময় তিনি দলীয় নেতাদের নির্দেশ দিয়েছিলেন অনাথ শিশুদের তালিকা তৈরি করতে। সরকারি নথির সঙ্গে সেই নাম মিলিয়ে ২২ জনের চূড়ান্ত তালিকা প্রস্তুত হয়। পুঞ্চ জেলা সফরের সময় রাহুল তাঁর ইচ্ছার কথা জানিয়ে বলেছিলেন, ওই শিশুদের স্নাতক স্তর পর্যন্ত পড়াশোনার সব খরচ তিনি দেবেন।

পাকিস্তানের গোলার আঘাতে মারা গিয়েছিলেন ১২ বছরের দুই যমজ ভাই–বোন জাইন আলি ও উরবা ফতিমা। রাহুল তাঁদের স্কুলে গিয়েছিলেন। সেই স্কুলের পড়ুয়াদের সঙ্গে দেখা করেছিলেন। তাঁদের বলেছিলেন, তোমরা তোমাদের বন্ধুদের হারিয়েছ। সে জন্য তোমাদের মন খারাপ। ওই মৃত্যু আমাকেও দুঃখ দিয়েছে। তোমাদের দুঃখ আমি বুঝি। কিন্তু তোমাদের জন্য আমি গর্বিত। তোমরা ভয়কে জয় করেছ। রাহুল ওই শিশুদের বলেছিলেন, ভয়কে জয় করতে হবে। সুদিন আসবে। সব আবার স্বাভাবিক হবে।

ওই ২২ জনের জন্য বছরে কত খরচ হবে প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্ব তা জানাননি।

সম্পর্কিত নিবন্ধ