পাকিস্তানে বৃষ্টিজনিত দুর্ঘটনায় দুইদিনে ২২৫ জনের মৃত্যু
Published: 16th, August 2025 GMT
পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশে গত ৪৮ ঘণ্টায় বৃষ্টিজনিত পৃথক দুর্ঘটনায় মোট ২২৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। এতে করে গত ২৬ জুন বর্ষা মৌসুম শুরু হওয়ার পর থেকে দেশটিতে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৫৪১ জনে দাঁড়িয়েছে।
শনিবার (১৬ আগস্ট) পাকিস্তানের জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ (এনডিএমএ) এ তথ্য জানিয়েছে। খবর সিনহুয়ার।
উদ্ধারকারী সংস্থাগুলোর মতে, প্রবল বৃষ্টিপাত, আকস্মিক বন্যা এবং বজ্রপাত খাইবার পাখতুনখেয়া প্রদেশের কিছু অংশে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে, যার ফলে অনেক নিখোঁজ ও ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞের ঘটনা ঘটেছে।
আরো পড়ুন:
পঞ্চগড়ে রাতভর বর্ষণে স্লুইসগেটের সংযোগ সড়কে ধস
সাগরে লঘুচাপ, ৩ নম্বর সতর্ক সংকেত
বেসরকারি সংস্থা আলখিদমত ফাউন্ডেশনের স্বেচ্ছাসেবক মুহাম্মদ খালিদ সিনহুয়া বলেন, “বন্যায় গ্রামগুলো ডুবে যাওয়ায় পুরো পরিবার ভেসে গেছে, অন্যদিকে অবিরাম বৃষ্টিপাতের ফলে সৃষ্ট ভূমিধসের ফলে গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাঘাট বন্ধ হয়ে গেছে এবং প্রত্যন্ত অঞ্চলে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।”
এনডিএমএর মতে, এবারের বর্ষা মৌসুমে খাইবার পাখতুনখেয়া প্রদেশ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মেঘ ভাঙনের ফলে সৃষ্ট আকস্মিক বন্যায় গত দুই দিনে বেশ কয়েকটি এলাকা ভেসে গেছে।
এনডিএমএ আরো জানিয়েছে, জুনের শেষের দিক থেকে এখন পর্যন্ত এ অঞ্চলে বৃষ্টিজনিত দুর্ঘটনায় ২৮৫ জন মারা গেছে। এছাড়া পূর্ব পাঞ্জাব প্রদেশে ১৬৪ জন, দক্ষিণ সিন্ধুতে ২৮ জন এবং উত্তর গিলগিট-বালতিস্তান অঞ্চলে ২৪ জন মারা গেছে, আরো ৪০ জন মারা গেছে অন্যান্য প্রদেশ এবং ইসলামাবাদে।
নাগরিকদের সতর্ক থাকার, বৃষ্টিপাত এবং বন্যার সময় সতর্কতা অবলম্বন করার এবং ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় অপ্রয়োজনীয় ভ্রমণ এড়াতে অনুরোধ করা হয়েছে। বিশেষ করে পর্যটকদের, তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য আগামী পাঁচ থেকে ছয় দিন উত্তরাঞ্চলে ভ্রমণ থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
দেশটির আবহাওয়াবিদরা জানিয়েছেন, উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে ২১ আগস্ট পর্যন্ত ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে, সেখানে বেশ কয়েকটি এলাকাকে ইতিমধ্যে দুর্যোগপূর্ণ অঞ্চল ঘোষণা করা হয়েছে।
ঢাকা/ফিরোজ
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
এন্নিও মোররিকোনে, শোনাতেন ছুটন্ত ঘোড়ার খুরের সুর
বাংলা সিনেমার এক টিপিক্যাল দৃশ্য দিয়ে শুরু করা যাক। ধরলাম, সিনেমার নায়ক জসিম। পাহাড়ের পাদতলে ঘোড়া ছুটিয়ে তিনি ছুটে যাচ্ছেন ভিলেন জাম্বুকে পাকড়াও করতে। ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক বাজছে। এক ভুতুড়ে-রহস্যময় সুর। ড্রামের মৃদু তালে তালে ঠোঁটের শিস। ট্রাম্পেটের ঢেউ। কখনো সেই সুর মিলিয়ে যাচ্ছে হ্রেষায়, কখনো খুরের টগবগে (সুরকে যদি ভাষায় প্রকাশ করা যেত!)। ক্ষণে ক্ষণে গা শিউরে উঠছে দৃশ্য ও সুরের পরম্পরায়, ঘটনার উত্তেজনায়। কিন্তু তখন কি জানতাম, বাংলা সিনেমায় এমন জাদুকরি সুর নেওয়া হয়েছে ‘দ্য গুড, দ্য ব্যাড অ্যান্ড দ্য আগলি’ থেকে!
কিংবদন্তি ইতালিয়ান কম্পোজার প্রয়াত এন্নিও মোররিকোনের এই ব্যাকগ্রাউন্ড স্কোর বিশ্ব সিনেমার জগতে অনন্য হয়ে থাকবে সব সময়। তেমনি ‘স্পেগেত্তি ওয়েস্টার্নের’ স্রষ্টা সার্জিও লিওনের ‘ডলার্স ট্রিলজি’। ‘দ্য গুড, দ্য ব্যাড অ্যান্ড দ্য আগলি’র শেষ দৃশ্যে কবরস্থানে যখন ত্রিমুখী হয়ে বন্দুক হাতে ‘ম্যান উইথ নো নেম’ (ক্লিন্ট ইস্টউড), ‘টুকো’ (এলি ওয়ালাচ) ও ‘অ্যাঞ্জেল আইস’ (লি ফন ক্লিফ) দাঁড়ায়, তখন ব্যাকগ্রাউন্ডে বাজতে থাকে সেই বিখ্যাত সাসপেন্স-থ্রিলারমাখা সুর। সেই সুরের কথাই বলেছি মূলত শুরুতে। মোররিকোনের মিউজিক কেবল ঢালিউডে নয়; বলিউডের বহু চলচ্চিত্রেও হুবহু ব্যবহার করা হয়েছে। ‘ডলার্স’ সিরিজসহ লিওনের আরও দুই মাস্টারপিস ছবি ‘ওয়ানস আপন আ টাইম ইন ওয়েস্ট’ ও ‘ওয়ানস আপন আ টাইম ইন আমেরিকা’র মিউজিকও কম্পোজ করেন মোররিকোনে।
চলচ্চিত্রের শুরুর দিককার সময় কোনো সুর ছিল না। নির্বাক যুগ পেরিয়ে সিনেমা এখন এত দূর বিস্তৃত, যা এক শতকের মধ্যেই শিল্পের সবচেয়ে প্রভাবশালী মাধ্যম হয়ে উঠেছে। ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক ছাড়া তো এখন সিনেমার কথা চিন্তাই করা যায় না!চলচ্চিত্রের শুরুর দিককার সময় কোনো সুর ছিল না। নির্বাক যুগ পেরিয়ে সিনেমা এখন এত দূর বিস্তৃত, যা এক শতকের মধ্যেই শিল্পের সবচেয়ে প্রভাবশালী মাধ্যম হয়ে উঠেছে। ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক ছাড়া তো এখন সিনেমার কথা চিন্তাই করা যায় না! এখন দর্শক কেবল পর্দার দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বসে থাকেন না; কানকেও কাজে লাগান সিনেমাবোধের জন্য। কাহিনিকে যদি আমার শরীর ধরি, তবে অভিনয় হচ্ছে সিনেমার প্রাণ। আর সংগীত যেন এই দুইয়ের সংযোগস্থল। কাহিনি ও অভিনয়কে আরও বেগবান করে তোলে সংগীত।
এন্নিও মোররিকোনে (১০ নভেম্বর ১৯২৮—৬ জুলাই ২০২০)