স্ট্যান্ডার্ড এশিয়াটিক অয়েল কোম্পানি (এসএওসিএল) থেকে এলপিজি কিনে ব্যবসা করতেন ফরিদুল আলম। কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার পুরোনো বাসস্টেশন এলাকায় তাঁর ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বস অ্যান্ড কোং। ২০২০ সালের ৪ মার্চ এই ব্যবসায়ীর মৃত্যু হয়। এরপর প্রতিষ্ঠানটি সিলিন্ডার বিক্রিই বন্ধ করে দেয়। কেউ গ্যাস সিলিন্ডার নিতে এসএওসিএলে যাননি। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটির নামে ২০২০ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত ১ হাজার ৪০০ সিলিন্ডার খালাস হয়েছে।

ফরিদুল আলমের মৃত্যুর পর বস অ্যান্ড কোং পরিচালনার দায়িত্ব নেন তাঁর ছেলে এ এম আরিফুল আলম। তাঁদের এখন ফিলিং স্টেশন রয়েছে। প্রতিষ্ঠানের নামে গ্যাস খালাস হওয়ার বিষয়টি জানতেন না আরিফুল। জানার পর গত ২২ মে এসএওসিএলে গিয়ে তিনি লিখিত অভিযোগ দেন।

শুধু মৃত ব্যবসায়ীর প্রতিষ্ঠানের নামে নয়, এসএওসিএলের এলপিজি সিলিন্ডার বিক্রিতে তিন ধরনের অনিয়ম খুঁজে পেয়েছে বিপিসি ও এসএওসিএল। তদন্তে উঠে এসেছে, অস্তিত্বহীন ২১টি, নিষ্ক্রিয় ৫টি ও মেয়াদোত্তীর্ণ লাইসেন্সধারী ৫৪টি প্রতিষ্ঠানের নামে সিলিন্ডার খালাস হয়েছে। গত ৫ বছরে ৮০টি প্রতিষ্ঠানের নামে ৬৯ হাজার সিলিন্ডার বের হয়েছে, যার বাজারমূল্য প্রায় সাড়ে ৪ কোটি টাকা।

ফরিদুল আলমের মৃত্যুর পর বস অ্যান্ড কোং পরিচালনার দায়িত্ব নেন তাঁর ছেলে এ এম আরিফুল আলম। তাঁদের এখন ফিলিং স্টেশন রয়েছে। প্রতিষ্ঠানের নামে গ্যাস খালাস হওয়ার বিষয়টি জানতেন না আরিফুল। জানার পর গত ২২ মে এসএওসিএলে গিয়ে তিনি লিখিত অভিযোগ দেন।

অভিযোগ আছে, এলপিজি বিভাগের কিছু কর্মকর্তা টাকার বিনিময়ে পছন্দের পরিবেশকদের এসব সিলিন্ডার দিয়েছেন। কারণ, একজন পরিবেশক মাসে সর্বোচ্চ ১০০টি সিলিন্ডার নিতে পারেন। ফলে বেশি লাভের জন্য বাড়তি সিলিন্ডার নিয়েছেন ওই পরিবেশকেরা। তবে কাদের এসব সিলিন্ডার দেওয়া হয়েছে, তা এখনো চিহ্নিত করা যায়নি।

বাজারে সরকার নির্ধারিত মূল্য ৮২৫ টাকায় এলপিজি পাওয়া যায় না। ভোক্তাদের ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা বেশি দামে কিনতে হয়। ফলে পরিবেশকেরা প্রতিটি সিলিন্ডারে অন্তত ৫০০ টাকা অতিরিক্ত লাভ করেছেন।

স্ট্যান্ডার্ড এশিয়াটিক অয়েল কোম্পানি লিমিটেড বা এসএওসিএল হলো বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) অঙ্গপ্রতিষ্ঠান। বর্তমানে কোম্পানিটিতে ৩৬৬ জন এলপিজির পরিবেশক আছেন। অনিয়মের পরিপ্রেক্ষিতে ৬ আগস্ট থেকে এসএওসিএলে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করেছে বিপিসি।

অনিয়মের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান প্রথম আলোকে বলেন, এসএওসিএলে কোনো অনিয়ম হলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তদন্তের মাধ্যমে অনিয়মে জড়িত ব্যক্তিদের শাস্তি পেতে হবে।

অস্তিত্বহীন কিংবা বিস্ফোরক লাইসেন্সের মেয়াদ না থাকার পরও কীভাবে সিলিন্ডার খালাস হলো, এই সিলিন্ডার কোথায় গেল, তা খতিয়ে দেখতে হবে। এম শামসুল আলম, জ্বালানি উপদেষ্টা, ক্যাবঅস্তিত্বহীন প্রতিষ্ঠানের খোঁজে

নথিপত্রে মেসার্স সামিয়া এন্টারপ্রাইজের ঠিকানা-চকরিয়ার জনতা মার্কেট। এসএওসিএলের কর্মকর্তারা সম্প্রতি এ ঠিকানায় গিয়ে প্রতিষ্ঠানটির অস্তিত্ব পাননি। ঠিকানায় যাওয়ার আগে প্রতিষ্ঠানটির কর্ণধার মো.

ফরিদুল ইসলামকে ফোন করেন কর্মকর্তারা। শুরুতে তিনি বলেন, জনতা মার্কেটে তাঁর দোকান রয়েছে। এরপর জনতা মার্কেটে গেলে প্রতিষ্ঠানটি খুঁজে পাওয়া যায়নি। কর্মকর্তারা মার্কেটে দাঁড়িয়ে বারবার ফোন করলেও মো. ফরিদুল ইসলাম সাড়া দেননি। মার্কেটের ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, এ নামের কোনো প্রতিষ্ঠান সেখানে নেই।

২৯ জুলাই ফরিদুল ইসলামকে ফোন করেন এ প্রতিবেদক। পরিচয় জানার পর তিনি সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। এই প্রতিষ্ঠানটির নামে ১ হাজার ২৯০টি সিলিন্ডার খালাস করা হয়েছে।

এসএওসিএলের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা (হিসাব) মো. কামরুল হুদা ও কর্মকর্তা (বিক্রয় ও বিপণন) রাফিকুল ইসলাম গত ১৯ ও ২০ মে সরেজমিন পরিদর্শন করে মেসার্স সামিয়া এন্টারপ্রাইজসহ সাতটি প্রতিষ্ঠানের অস্তিত্ব পাননি। পরে তাঁরা এ নিয়ে প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন। এই ৭ প্রতিষ্ঠানের নামে গত ৫ বছরে ১০ হাজার ৮৫টি সিলিন্ডার খালাস হয়েছে। অন্যদিকে বরিশাল, খুলনা ও ঝালকাঠিতে ১৪টি অস্তিত্বহীন পরিবেশক প্রতিষ্ঠানের খোঁজ পাওয়া গেছে। এসব প্রতিষ্ঠানের নামে গত ৫ বছরে সিলিন্ডার বের হয়েছে প্রায় ১৫ হাজারটি।

অভিযোগ আছে, এলপিজি বিভাগের কিছু কর্মকর্তা টাকার বিনিময়ে পছন্দের পরিবেশকদের এসব সিলিন্ডার দিয়েছেন। কারণ, একজন পরিবেশক মাসে সর্বোচ্চ ১০০টি সিলিন্ডার নিতে পারেন। ফলে বেশি লাভের জন্য বাড়তি সিলিন্ডার নিয়েছেন ওই পরিবেশকেরা। তবে কাদের এসব সিলিন্ডার দেওয়া হয়েছে, তা এখনো চিহ্নিত করা যায়নি।‘আমার গ্যাস কে নিল’

বশির আহমদ দুই দশক ধরে এলপিজির ব্যবসা করেন। চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে তাঁর প্রতিষ্ঠান মেসার্স বশির অ্যান্ড ব্রাদার্স। তিনি এসএওসিএলের পরিবেশক হলেও ১১ বছর ধরে সিলিন্ডার নিতে যাননি। অথচ প্রতিষ্ঠানটির নামে গত ৫ বছরে খালাস হয়েছে ৯১০টি সিলিন্ডার। ৩ আগস্ট দুপুরে বশির আহমদকে সিলিন্ডার খালাসের বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি হতবাক হয়ে যান। তিনি বলেন, ‘আমার গ্যাস কে নিল?’

অন্যদিকে ঢাকার খিলক্ষেতের বটতলা এলাকায় গ্যাস সিলিন্ডারের ব্যবসা করেন মতিউল ইসলাম। তাঁর প্রতিষ্ঠানের নাম মেসার্স রূপক এন্টারপ্রাইজ। পাঁচ বছর ধরে মতিউল ইসলাম এসএওসিএল থেকে গ্যাস নিতে আসেননি। তবু তাঁর নামে প্রায় দেড় হাজার সিলিন্ডার খালাস হয়েছে। সম্প্রতি মতিউল ইসলাম ঘটনাটি জানতে পারেন। এরপর ঘটনাটি তদন্তে গত ২০ জুলাই এসএওসিএলের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফেরদৌসী মাসুম বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন। এ রকম আরও তিন পরিবেশক তাঁদের অজান্তে সিলিন্ডার খালাসের তথ্য জানতে পেরে সম্প্রতি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।

৩ আগস্ট দুপুরে বশির আহমদকে সিলিন্ডার খালাসের বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি হতবাক হয়ে যান। তিনি বলেন, ‘আমার গ্যাস কে নিল?’যাঁদের অনুমোদনে বের হয় সিলিন্ডার

ডি ভি গ্যাস সাপ্লাই ও মেসার্স সাগরিকা এজেন্সি নামের দুটি প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্সের মেয়াদ নেই। তবু প্রতিষ্ঠান দুটির নামে সিলিন্ডার খালাস হয়েছে। এ ঘটনায় এসএওসিএল কর্তৃপক্ষের তদন্তে সম্পৃক্তদের নাম বেরিয়ে এসেছে। গত ৩১ জুলাই প্রতিবেদন জমা দিয়েছে কমিটি।

প্রতিবেদনে বলা হয়, দুই প্রতিষ্ঠানের নামে এলপিজি সরবরাহে ইনভয়েস সৃজন, সুপারিশ ও অনুমোদনে কোম্পানির তৎকালীন সহকারী ব্যবস্থাপক (বিক্রয়) মো. আবদুস সালাম মীর, কনিষ্ঠ কর্মকর্তা (বিক্রয়) সুদীপ কুমার দেব, কনিষ্ঠ কর্মকর্তা (কাস্টমস অ্যান্ড ভ্যাট) অসীম পারিয়াল, কনিষ্ঠ বিক্রয় সহকারী কায়ছার হামিদ ও সুপারভাইজার হযরত আলী সম্পৃক্ত। এ বিষয়ে মো. আবদুস সালাম মীর প্রথম আলোকে বলেন, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে তিনি ইনভয়েসের অনুমোদন দিয়েছেন। একই কথা বলেন সুদীপ কুমার দেব, কায়ছার হামিদ ও হযরত আলী।

মেয়াদোত্তীর্ণ লাইসেন্সধারী, অস্তিত্বহীন প্রতিষ্ঠানে নামে গ্যাস সরবরাহ করার বিষয়টি স্বীকার করেছেন কোম্পানির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফেরদৌসী মাসুম। তিনি সম্প্রতি বলেন, এসব অনিয়ম খুঁজে বের করতে বেশ কয়েকটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন। এসব কমিটি প্রাথমিকভাবে কিছু অনিয়ম খুঁজে পেয়েছে।

অনিয়মে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানি উপদেষ্টা এম শামসুল আলম। তিনি বলেন, অস্তিত্বহীন কিংবা বিস্ফোরক লাইসেন্সের মেয়াদ না থাকার পরও কীভাবে সিলিন্ডার খালাস হলো, এই সিলিন্ডার কোথায় গেল, তা খতিয়ে দেখতে হবে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: স ল ন ড র খ ল স হয় ছ দ র এসব স ল ন ড র দ ব যবস য় র গত ৫ বছর কর মকর ত ল ইসল ম র ব যবস ফর দ ল আর ফ ল ল আলম তদন ত এলপ জ

এছাড়াও পড়ুন:

মৃত ব্যবসায়ীর বন্ধ হয়ে যাওয়া প্রতিষ্ঠান চার বছর ধরে পাচ্ছে ১৪০০ এলপিজি

স্ট্যান্ডার্ড এশিয়াটিক অয়েল কোম্পানি (এসএওসিএল) থেকে এলপিজি কিনে ব্যবসা করতেন ফরিদুল আলম। কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার পুরোনো বাসস্টেশন এলাকায় তাঁর ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বস অ্যান্ড কোং। ২০২০ সালের ৪ মার্চ এই ব্যবসায়ীর মৃত্যু হয়। এরপর প্রতিষ্ঠানটি সিলিন্ডার বিক্রিই বন্ধ করে দেয়। কেউ গ্যাস সিলিন্ডার নিতে এসএওসিএলে যাননি। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটির নামে ২০২০ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত ১ হাজার ৪০০ সিলিন্ডার খালাস হয়েছে।

ফরিদুল আলমের মৃত্যুর পর বস অ্যান্ড কোং পরিচালনার দায়িত্ব নেন তাঁর ছেলে এ এম আরিফুল আলম। তাঁদের এখন ফিলিং স্টেশন রয়েছে। প্রতিষ্ঠানের নামে গ্যাস খালাস হওয়ার বিষয়টি জানতেন না আরিফুল। জানার পর গত ২২ মে এসএওসিএলে গিয়ে তিনি লিখিত অভিযোগ দেন।

শুধু মৃত ব্যবসায়ীর প্রতিষ্ঠানের নামে নয়, এসএওসিএলের এলপিজি সিলিন্ডার বিক্রিতে তিন ধরনের অনিয়ম খুঁজে পেয়েছে বিপিসি ও এসএওসিএল। তদন্তে উঠে এসেছে, অস্তিত্বহীন ২১টি, নিষ্ক্রিয় ৫টি ও মেয়াদোত্তীর্ণ লাইসেন্সধারী ৫৪টি প্রতিষ্ঠানের নামে সিলিন্ডার খালাস হয়েছে। গত ৫ বছরে ৮০টি প্রতিষ্ঠানের নামে ৬৯ হাজার সিলিন্ডার বের হয়েছে, যার বাজারমূল্য প্রায় সাড়ে ৪ কোটি টাকা।

ফরিদুল আলমের মৃত্যুর পর বস অ্যান্ড কোং পরিচালনার দায়িত্ব নেন তাঁর ছেলে এ এম আরিফুল আলম। তাঁদের এখন ফিলিং স্টেশন রয়েছে। প্রতিষ্ঠানের নামে গ্যাস খালাস হওয়ার বিষয়টি জানতেন না আরিফুল। জানার পর গত ২২ মে এসএওসিএলে গিয়ে তিনি লিখিত অভিযোগ দেন।

অভিযোগ আছে, এলপিজি বিভাগের কিছু কর্মকর্তা টাকার বিনিময়ে পছন্দের পরিবেশকদের এসব সিলিন্ডার দিয়েছেন। কারণ, একজন পরিবেশক মাসে সর্বোচ্চ ১০০টি সিলিন্ডার নিতে পারেন। ফলে বেশি লাভের জন্য বাড়তি সিলিন্ডার নিয়েছেন ওই পরিবেশকেরা। তবে কাদের এসব সিলিন্ডার দেওয়া হয়েছে, তা এখনো চিহ্নিত করা যায়নি।

বাজারে সরকার নির্ধারিত মূল্য ৮২৫ টাকায় এলপিজি পাওয়া যায় না। ভোক্তাদের ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা বেশি দামে কিনতে হয়। ফলে পরিবেশকেরা প্রতিটি সিলিন্ডারে অন্তত ৫০০ টাকা অতিরিক্ত লাভ করেছেন।

স্ট্যান্ডার্ড এশিয়াটিক অয়েল কোম্পানি লিমিটেড বা এসএওসিএল হলো বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) অঙ্গপ্রতিষ্ঠান। বর্তমানে কোম্পানিটিতে ৩৬৬ জন এলপিজির পরিবেশক আছেন। অনিয়মের পরিপ্রেক্ষিতে ৬ আগস্ট থেকে এসএওসিএলে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করেছে বিপিসি।

অনিয়মের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান প্রথম আলোকে বলেন, এসএওসিএলে কোনো অনিয়ম হলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তদন্তের মাধ্যমে অনিয়মে জড়িত ব্যক্তিদের শাস্তি পেতে হবে।

অস্তিত্বহীন কিংবা বিস্ফোরক লাইসেন্সের মেয়াদ না থাকার পরও কীভাবে সিলিন্ডার খালাস হলো, এই সিলিন্ডার কোথায় গেল, তা খতিয়ে দেখতে হবে। এম শামসুল আলম, জ্বালানি উপদেষ্টা, ক্যাবঅস্তিত্বহীন প্রতিষ্ঠানের খোঁজে

নথিপত্রে মেসার্স সামিয়া এন্টারপ্রাইজের ঠিকানা-চকরিয়ার জনতা মার্কেট। এসএওসিএলের কর্মকর্তারা সম্প্রতি এ ঠিকানায় গিয়ে প্রতিষ্ঠানটির অস্তিত্ব পাননি। ঠিকানায় যাওয়ার আগে প্রতিষ্ঠানটির কর্ণধার মো. ফরিদুল ইসলামকে ফোন করেন কর্মকর্তারা। শুরুতে তিনি বলেন, জনতা মার্কেটে তাঁর দোকান রয়েছে। এরপর জনতা মার্কেটে গেলে প্রতিষ্ঠানটি খুঁজে পাওয়া যায়নি। কর্মকর্তারা মার্কেটে দাঁড়িয়ে বারবার ফোন করলেও মো. ফরিদুল ইসলাম সাড়া দেননি। মার্কেটের ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, এ নামের কোনো প্রতিষ্ঠান সেখানে নেই।

২৯ জুলাই ফরিদুল ইসলামকে ফোন করেন এ প্রতিবেদক। পরিচয় জানার পর তিনি সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। এই প্রতিষ্ঠানটির নামে ১ হাজার ২৯০টি সিলিন্ডার খালাস করা হয়েছে।

এসএওসিএলের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা (হিসাব) মো. কামরুল হুদা ও কর্মকর্তা (বিক্রয় ও বিপণন) রাফিকুল ইসলাম গত ১৯ ও ২০ মে সরেজমিন পরিদর্শন করে মেসার্স সামিয়া এন্টারপ্রাইজসহ সাতটি প্রতিষ্ঠানের অস্তিত্ব পাননি। পরে তাঁরা এ নিয়ে প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন। এই ৭ প্রতিষ্ঠানের নামে গত ৫ বছরে ১০ হাজার ৮৫টি সিলিন্ডার খালাস হয়েছে। অন্যদিকে বরিশাল, খুলনা ও ঝালকাঠিতে ১৪টি অস্তিত্বহীন পরিবেশক প্রতিষ্ঠানের খোঁজ পাওয়া গেছে। এসব প্রতিষ্ঠানের নামে গত ৫ বছরে সিলিন্ডার বের হয়েছে প্রায় ১৫ হাজারটি।

অভিযোগ আছে, এলপিজি বিভাগের কিছু কর্মকর্তা টাকার বিনিময়ে পছন্দের পরিবেশকদের এসব সিলিন্ডার দিয়েছেন। কারণ, একজন পরিবেশক মাসে সর্বোচ্চ ১০০টি সিলিন্ডার নিতে পারেন। ফলে বেশি লাভের জন্য বাড়তি সিলিন্ডার নিয়েছেন ওই পরিবেশকেরা। তবে কাদের এসব সিলিন্ডার দেওয়া হয়েছে, তা এখনো চিহ্নিত করা যায়নি।‘আমার গ্যাস কে নিল’

বশির আহমদ দুই দশক ধরে এলপিজির ব্যবসা করেন। চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে তাঁর প্রতিষ্ঠান মেসার্স বশির অ্যান্ড ব্রাদার্স। তিনি এসএওসিএলের পরিবেশক হলেও ১১ বছর ধরে সিলিন্ডার নিতে যাননি। অথচ প্রতিষ্ঠানটির নামে গত ৫ বছরে খালাস হয়েছে ৯১০টি সিলিন্ডার। ৩ আগস্ট দুপুরে বশির আহমদকে সিলিন্ডার খালাসের বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি হতবাক হয়ে যান। তিনি বলেন, ‘আমার গ্যাস কে নিল?’

অন্যদিকে ঢাকার খিলক্ষেতের বটতলা এলাকায় গ্যাস সিলিন্ডারের ব্যবসা করেন মতিউল ইসলাম। তাঁর প্রতিষ্ঠানের নাম মেসার্স রূপক এন্টারপ্রাইজ। পাঁচ বছর ধরে মতিউল ইসলাম এসএওসিএল থেকে গ্যাস নিতে আসেননি। তবু তাঁর নামে প্রায় দেড় হাজার সিলিন্ডার খালাস হয়েছে। সম্প্রতি মতিউল ইসলাম ঘটনাটি জানতে পারেন। এরপর ঘটনাটি তদন্তে গত ২০ জুলাই এসএওসিএলের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফেরদৌসী মাসুম বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন। এ রকম আরও তিন পরিবেশক তাঁদের অজান্তে সিলিন্ডার খালাসের তথ্য জানতে পেরে সম্প্রতি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।

৩ আগস্ট দুপুরে বশির আহমদকে সিলিন্ডার খালাসের বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি হতবাক হয়ে যান। তিনি বলেন, ‘আমার গ্যাস কে নিল?’যাঁদের অনুমোদনে বের হয় সিলিন্ডার

ডি ভি গ্যাস সাপ্লাই ও মেসার্স সাগরিকা এজেন্সি নামের দুটি প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্সের মেয়াদ নেই। তবু প্রতিষ্ঠান দুটির নামে সিলিন্ডার খালাস হয়েছে। এ ঘটনায় এসএওসিএল কর্তৃপক্ষের তদন্তে সম্পৃক্তদের নাম বেরিয়ে এসেছে। গত ৩১ জুলাই প্রতিবেদন জমা দিয়েছে কমিটি।

প্রতিবেদনে বলা হয়, দুই প্রতিষ্ঠানের নামে এলপিজি সরবরাহে ইনভয়েস সৃজন, সুপারিশ ও অনুমোদনে কোম্পানির তৎকালীন সহকারী ব্যবস্থাপক (বিক্রয়) মো. আবদুস সালাম মীর, কনিষ্ঠ কর্মকর্তা (বিক্রয়) সুদীপ কুমার দেব, কনিষ্ঠ কর্মকর্তা (কাস্টমস অ্যান্ড ভ্যাট) অসীম পারিয়াল, কনিষ্ঠ বিক্রয় সহকারী কায়ছার হামিদ ও সুপারভাইজার হযরত আলী সম্পৃক্ত। এ বিষয়ে মো. আবদুস সালাম মীর প্রথম আলোকে বলেন, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে তিনি ইনভয়েসের অনুমোদন দিয়েছেন। একই কথা বলেন সুদীপ কুমার দেব, কায়ছার হামিদ ও হযরত আলী।

মেয়াদোত্তীর্ণ লাইসেন্সধারী, অস্তিত্বহীন প্রতিষ্ঠানে নামে গ্যাস সরবরাহ করার বিষয়টি স্বীকার করেছেন কোম্পানির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফেরদৌসী মাসুম। তিনি সম্প্রতি বলেন, এসব অনিয়ম খুঁজে বের করতে বেশ কয়েকটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন। এসব কমিটি প্রাথমিকভাবে কিছু অনিয়ম খুঁজে পেয়েছে।

অনিয়মে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানি উপদেষ্টা এম শামসুল আলম। তিনি বলেন, অস্তিত্বহীন কিংবা বিস্ফোরক লাইসেন্সের মেয়াদ না থাকার পরও কীভাবে সিলিন্ডার খালাস হলো, এই সিলিন্ডার কোথায় গেল, তা খতিয়ে দেখতে হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ