ছবিটি বেশ কিছুদিন হলো ফিরে এসেছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। এখন অবশ্য আরও বেশি চোখে পড়ার কথা।

বার্লিনের অলিম্পিক স্টেডিয়ামে স্যূট পরা লুইস এনরিকে। কোমরে হাত দিয়ে মাঠে দাঁড়িয়ে। মিটিমিটি হাসছেন। একটু দূরেই তাঁর পাঁচ বছর বয়সী মেয়ে জানার হাতে বার্সেলোনার লাল-নীল-হলুদ পতাকা। মেয়ের কাণ্ড দেখে বাবা যেন খুশিতে আটখানা!

এক দশক আগের সেই স্মৃতি যাঁদের স্মরণে আছে, এই ছবিটি দেখে তাঁদের এটাও মনে পরতে পারে পরে কী ঘটেছিল। বাবাকে সাক্ষী রেখে জার্মানির মাটিতে বার্সেলোনার পতাকা পুঁতেছিল জানা।

আরও পড়ুনইন্টারকে গোলের মালা পরিয়ে ইউরোপসেরার মুকুট পিএসজির৪ ঘণ্টা আগে

চার বছর পর ২০১৯ সালে জানা মারা গেল। তার আগে হাড়ের ক্যান্সারের সঙ্গে লড়েছে পাঁচ মাস। এনরিকে তখন স্পেন দলের কোচ। দায়িত্ব ছাড়ার ঘোষণা দিয়ে ছুটে গিয়েছিলেন মেয়ের কাছে। ফিরেছিলেন পাঁচ মাস পর। পরিবারের সঙ্গে শোক কাটিয়ে ওঠার চেষ্টার সেই সময়ে এনরিকের যোগাযোগ ছিল শুধু স্পেন ফুটবল ফেডারেশনের সঙ্গে। ৯ বছর বয়সী মেয়েকে হারাতে কেমন লাগে, সেসব কথা তিনি কাউকে বলবেন না বলে হোয়াটসঅ্যাপেও ছিলেন না।

সেই এনরিকেই মিউনিখের অ্যালিয়াঞ্জ অ্যারেনায় শেষ বাঁশি বাজার আগেই অন্য রুপে। আনন্দে ভেসে গেলে যেমন হয় আরকি!

দুই হাত তুলে উদ্‌যাপন তো ছিলই, ম্যাচ শেষে পিএসজির খেলোয়াড়দের জড়িয়ে ধরে তাঁর কী উল্লাস! চোখে দেখা কারণ হলো, কিছুক্ষণ আগেই মাঠে ইতিহাস গড়েছে এনরিকের পিএসজি। চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনালে ইন্টার মিলানকে বিধ্বস্ত করেছে ৫-০ গোলে। এই প্রতিযোগিতার ফাইনালের ইতিহাসে এর আগে কোনো দল এত বড় ব্যবধানে জিততে পারেনি। আর পিএসজিও আরাধ্য চ্যাম্পিয়নস লিগ জিতে হলো ট্রেবলজয়ীও, যেটা এনরিকের জন্য আবার বার্সাতেই চেখে দেখা স্বাদ।

খেলোয়াড় ও কোচ হিসেবে সফল এনরিকের ওভাবে আনন্দে ভেসে যাওয়ার কারণ তাই শুধু মাঠের ফলই নয়। কারণ এসব সাফল্যের কিছুই এনরিকের জীবনে নতুন না। যেটা নতুন, সেটা হলো, মেয়েকে হয়তো খুশি করতে পেরেছেন। সেজন্যই কি এনরিকের মুখে হাসি আর ধরে না!

গত জানুয়ারির কথা। স্প্যানিশ সংবাদমাধ্যম মার্কাকে এনরিকে বলেছিলেন, ‘বার্লিনে চ্যাম্পিয়নস লিগ জয়ের পর আমার সঙ্গে তার একটি অবিশ্বাস্য ছবি মনে আছে। মাঠে বার্সেলোনার পতাকা পোঁতার ছবি। আশা করি পিএসজির সঙ্গেও এটা করতে পারব।’

এটুকু পড়ার পর নিশ্চয়ই প্রশ্ন জাগছে, পিএসজির পতাকা বাবা-মেয়ে একসঙ্গে পুঁতবে কীভাবে? জানা তো নেই।

এনরিকের বাকি কথাগুলো শুনুন। তাতে বাবার কষ্টটা হয়তো একটু ধরা যায়, ‘আমার মেয়ে সেখানে (ফাইনাল) থাকবে না, শারীরিকভাবে থাকবে না। কিন্তু আধ্যাত্মিকভাবে থাকবে আর এটা আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ।’

কেন গুরুত্বপূর্ণ, সে প্রশ্নের উত্তর অন্তত বাবাদের জানা। মেয়েটা দেখে কষ্ট পাবে, এমন কিছু তাঁর সামনে করা যাবে না; মানে হারা যাবে না, ম্যাচটি ফাইনাল হওয়ায় অন্য অর্থে জিততে হবে। তাই মেয়েকে খুশি করতেই হয়তো এনরিকের এই পাঁচ গোলের ‘খেলনা’!

ইন্টারকে সেটা বানানোর পর এনরিকের গায়ে দেখা গেল একটা কালো টি-শার্ট। সামনে বুকের ওপর ১০ বছর আগের সেই ছবিটির মতো বাবা-মেয়ের পিএসজির পতাকা পোঁতার স্কেচ। অর্থাৎ জানুয়ারিতে বলা সেই কথাগুলো শুধু কথার কথা ছিল না। তাহলে পিএসজির ইউরোপসেরার এ মুকুট মেয়ে হারানো এক বাবার বিশুদ্ধ আবেগের পিছু ছোটার ফলও।

সেই আবেগ সংক্রমিত হয়েছে পিএসজির সমর্থকদের মধ্যেও। ফরাসি ক্লাবটির খেলোয়াড়েরা ততক্ষণে ট্রফি বুঝে নিয়েছেন। গ্যালারিতে ভেসে উঠল এনরিকে ও তাঁর প্রয়াত মেয়েকে নিয়ে বানানো বড় এক তিফো। তাতে ফুটে ওঠা ছবিটি এমন, মাঠে এনরিকে পিএসজির পতাকা পুঁতছেন, ৮ বছর বয়সী জানা পাশেই দাঁড়িয়ে, পরনে পিএসজির ৮ নম্বর জার্সি।

এনরিকেরও চোখে পড়েছে এই তিফো। দেখার পর কেমন লেগেছে সেটাও বলেছেন মিক্সড জোনে ‘খুব ভালো লাগছে। সমর্থকেরা আমার পরিবারের জন্য যে ব্যানার করেছে সেটা খুবই আবেগপূর্ণ ব্যাপার। তবে আমি সব সময় মেয়ের কথাই ভাবি।’

স্প্যানিশ এ কোচের সহজ যুক্তি, ‘মেয়েকে মনে রাখতে আমার চ্যাম্পিয়নস লিগ জয়ের দরকার নেই। সে সব সময় আমাদের সঙ্গেই আছে, বিশেষ করে যখন আমরা হেরে যাই।’

হারে কেউ পাশে দাঁড়ালে মনের কষ্ট লাঘব হয়। কিন্তু জয়ে পাশে দাঁড়ালে আনন্দ হয়। এনরিকে অনুচ্চারে ও অদৃশ্যে আনন্দটুকু ভাগ করেছেন জানার সঙ্গে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: চ য ম প য়নস ল গ প এসজ র এনর ক র ফ ইন ল আনন দ

এছাড়াও পড়ুন:

সুদানের এল-ফাশের শহরে ‘চরম বিপদে’ বাসিন্দারা: ডক্টরস উইদাউট বর্ডারস

সুদানের আধা সামরিক বাহিনী র‌্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেসের (আরএসএফ) কাছে দেশটির এল–ফাশের শহরের পতনের পর সেখানকার বাসিন্দারা ‘চরম বিপদের’ মধ্যে রয়েছেন। তাঁরা শহরটিতে আটকা পড়েছেন। গতকাল শনিবার ফ্রান্সভিত্তিক আন্তর্জাতিক দাতব্য চিকিৎসা সংস্থা ডক্টরস উইদাউট বর্ডারস (এমএসএফ) এমন শঙ্কার কথা জানিয়েছে।

২০২৩ সালের এপ্রিল থেকে সুদানের সেনাবাহিনীর সঙ্গে আরএসএফের লড়াই চলছে। গত ২৬ অক্টোবর এল-ফাশের দখল করে নেয় আধা সামরিক বাহিনীটি। শহরটির পতনের পর থেকে সেখানে বিচারবহির্ভূত হত্যা, যৌন সহিংসতা, ত্রাণকর্মীদের ওপর হামলা, লুটপাট এবং অপহরণের খবর পাওয়া যাচ্ছে। সেখানকার যোগাযোগব্যবস্থা প্রায় পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।

আরও পড়ুনসুদানে ‘গণহত্যা’ হয়েছে২২ ঘণ্টা আগে

এল–ফাশের শহর থেকে যাঁরা পালিয়ে কাছের তাউইলা শহরে আশ্রয় নিয়েছেন, তাঁরা বেসামরিক লোকজনের ওপর গণহত্যা চালানোর কথা বলেছেন। তাঁদের ভাষ্য, এল–ফাশেরে মা–বাবার সামনে সন্তানদের হত্যা করা হচ্ছে। মানুষজন শহরটি থেকে পালানোর সময় তাঁদের মারধর করা হচ্ছে। জাতিসংঘের হিসাবে, ২৬ অক্টোবর থেকে ‍৬৫ হাজারের বেশি মানুষ শহরটি থেকে পালিয়েছেন।

শনিবার ডক্টরস উইদাউট বর্ডারস জানিয়েছে, এল–ফাশেরের বিপুল মানুষ ‘চরম বিপদের’ মধ্যে রয়েছে। তাদের শহরটি ত্যাগ করতে দিচ্ছে না আরএসএফ ও তাদের সহযোগীরা। সংস্থাটির জরুরি বিভাগের প্রধান মাইকেল ওলিভিয়ার লাচেরিটে বলেন, এল–ফাশের থেকে যাঁরা নিখোঁজ হয়েছেন, তাঁরা কোথায়? সম্ভাব্য উত্তরটা হলো—তাঁদের হত্যা করা হয়েছে।

গত শুক্রবার জাতিসংঘের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, আরএসএফের হামলায় এল–ফাশেরে কয়েক শ মানুষ নিহত হয়েছেন। তবে সুদানের সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে দুই হাজার বেসামরিক মানুষকে হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের হিউম্যানিটারিয়ান রিসার্চ ল্যাব বলেছে, এল–ফাশেরে গণহত্যা অব্যাহত থাকার বিভিন্ন ইঙ্গিত স্পষ্টভাবে দেখা গেছে।

সুদান ‘মহাবিপর্যয়কর পরিস্থিতির’ মধ্যে রয়েছে বলে শনিবার উল্লেখ করেছেন জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী জোহান ওয়েডফুল। বাহরাইনে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, বেসামরিক লোকজনকে সুরক্ষা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল আরএসএফ। এরপরও এমন নৃশংসতার জন্য তাদের জবাবদিহির আওতায় আনা হবে। একই সংবাদ সম্মেলনে সুদানের পরিস্থিতি ‘ভয়ংকর’ বলে উল্লেখ করেছেন ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইভেট কুপার।

আরও পড়ুনসুদানে আরএসএফের গণহত্যায় আরব আমিরাত ইন্ধন দিচ্ছে কেন৭ ঘণ্টা আগে

সম্পর্কিত নিবন্ধ