১৬ মে মোদি সরকার ঘোষণা করল, তারা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সর্বদলীয় প্রতিনিধিদল পাঠাবে ভারতের অবস্থান ব্যাখ্যা করতে। এই ঘোষণায় অনেকেই বিস্মিত হন। কারণ, তখন সরকার ও ক্ষমতাসীন শিবির ছিল পাকিস্তানকে যুদ্ধে পরাজিত করবার বিজয়োল্লাসে মাতোয়ারা।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ‘অপারেশন সিঁদুর’কে ভারতের নিরাপত্তানীতিতে এক বাঁকবদল হিসেবে তুলে ধরেন। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে দেন ‘দৃঢ় নেতৃত্ব’ দেওয়ার কৃতিত্ব। ভারত দাবি করে, তারা পাকিস্তানের চীন-নির্মিত আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থাকে পাশ কাটিয়ে সফলভাবে আঘাত হেনেছে।

তবু কেন মোদি সরকারের বিদেশে নিজেদের ভাবমূর্তি তুলে ধরার জন্য এমন দল পাঠানোর দরকার পড়ল? এমন শক্তিশালী সরকারকে কেন বিরোধীদেরও পাশে টানতে হলো? এসব প্রশ্ন তখনই উঠতে শুরু করে।

সর্বমোট ৫৯ জন সংসদ সদস্যকে ৩২টি দেশে পাঠানো হয়। এর মধ্যে কিছু প্রতিনিধিদলকে নেতৃত্ব দেন বিরোধী দলের সদস্যরা। কিছু আবার এনডিএর নেতারা। এই দলগুলো বিদেশি সংসদ সদস্য, গবেষক, সাংবাদিক ও থিঙ্কট্যাংকের সঙ্গে দেখা করে সরকারের সন্ত্রাসবিরোধী অবস্থান ব্যাখ্যা করে।

কিন্তু শুরু থেকেই এই সর্বদলীয় উদ্যোগ নিয়ে বিতর্ক দেখা দেয়। আগের প্রধানমন্ত্রীদের সময়ে এমন উদ্যোগে সব দলের সঙ্গে আলোচনার রেওয়াজ থাকলেও এবার তা হয়নি। সরকার নিজেই বিরোধী দলের মধ্য থেকে নিজের পছন্দের ব্যক্তি বেছে নেয়। যেমন কংগ্রেসের পক্ষ থেকে যাঁদের নাম প্রস্তাব করা হয়েছিল, তা উপেক্ষা করে সরকার নিজেই শশী থারুরকে নির্বাচন করে, যিনি আদর্শবিহীন রাজনীতির প্রতীক হিসেবে পরিচিত।

ভারতের ইতিহাস বলে, সংকটকালে সব দল একসঙ্গে দাঁড়িয়েছে। ১৯৭১ সালের যুদ্ধের পর আইপিইউ সম্মেলনে লোকসভা স্পিকার জি এস ধিলনের নেতৃত্বে প্রণব মুখার্জি, জ্যোতি বসু ও শঙ্কর দয়াল শর্মার মতো নেতারা ভারতীয় প্রতিনিধিদলে ছিলেন।

জটিলতা এড়াতে কংগ্রেস বিষয়টি নিয়ে উচ্চবাচ্য করেনি, কিন্তু তৃণমূল কংগ্রেস প্রতিনিধিদলে অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। পরে সরকারের পক্ষ থেকে কিছুটা ছাড় দিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাতিজা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। একইভাবে, শিবসেনা নেতা উদ্ধব ঠাকরের হুমকির পর প্রিয়াঙ্কা চতুর্বেদীকেও দলে রাখা হয়।

শশী থারুরের বিষয়টি অবশ্য আরও জটিল। গত এক বছরে তিনি কখনো কেরালার মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়নের প্রশংসা করছেন, কখনো মোদি সরকারের মুসলিম দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়ন প্রচেষ্টাকে সমর্থন করছেন। বোঝাই যাচ্ছে, তাঁর অবস্থান তাঁর ব্যক্তিগত রাজনৈতিক ভবিষ্যতের ওপর নির্ভর করছে। একসময় যিনি মোদিকে ‘৫০ কোটি টাকার গার্লফ্রেন্ড’ বলে কটাক্ষ করেছিলেন, তিনিই কি এখন তাঁর সঙ্গে মিলমিশ করতে চাইছেন? নাকি মোদিই থারুরকে আপন করে নিচ্ছেন?

'নমস্তে ট্রাম্প' আয়োজন, ২০২০ সাল.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: সরক র র

এছাড়াও পড়ুন:

ধামরাইয়ে মা ও ২ ছেলের লাশ উদ্ধার 

ঢাকার ধামরাইয়ে বসতঘর থেকে মা ও দুই শিশু ছেলের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে বিষক্রিয়ায় তাদের মৃত্যু হয়েছে বলে ধারণা করছে পুলিশ। তবে এটি আত্মহত্যা নাকি হত্যা সেই বিষয়ে কিছু জানা যায়নি। মৃতদের শরীরে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। আলামত হিসেবে ঘরে থাকা ভাত ও ডিম ভাজি জব্দ করা হয়েছে।

সোমবার (২ জুন) বিকেল ৩টার দিকে উপজেলার গাংগুটিয়া ইউনিয়নের রক্ষিত গ্রাম থেকে তাদের লাশ উদ্ধার করা হয়।

নিহতরা হলেন, ধামরাইয়ের গাংগুটিয়া ইউনিয়নের রক্ষিত এলাকার মৃত রাজা মিয়ার স্ত্রী নারগিস আক্তার (৪২), তার দুই ছেলে মো. শামীম (১৭) ও সোলাইমান (৮)। বড় ছেলে শামীম ডেকারেটরের কাজ করতেন ও ছোট ছেলে সোলাইমান মায়ের কাছে থাকতেন। তবে এখন পর্যন্ত তাদের মৃত্যুর কারণ জানা যায়নি বলে জানিয়েছে থানা পুলিশ।

আরো পড়ুন:

উখিয়ায় আশ্রয়কেন্দ্রের দেয়াল ধসে রোহিঙ্গা যুবক নিহত

সীমান্তে বাংলাদেশিকে গুলি করে হত্যার পর লাশ নিয়ে গেছে বিএসএফ

মৃতের মেয়ে নাসরিন বেগম বলেন, ‘‘বাড়িতে এসে দেখি দরজা সব লাগানো। এটা বাইরে থেকে খোলা যায়। ঘরে ফ্যান চলছিল। আমি ভেবেছি, মা শুয়ে আছে। আমি দরজা উঁচু করে বাইরে থেকে খুলেছি। ভেতরে ঢুকে মায়ের পায়ের কাছে বসেছি। তার পায়ে হাত দিয়েছি, দেখি পা একদম শক্ত। সাধারণত তার পায়ে পানি থাকত, পা নরম থাকত। যখন শক্ত দেখি, তখন গায়ের ওপর থাকা কাঁথা টান দিয়ে সরাই। দেখি বড় ভাই ও ছোট ভাই পাশে শোয়া। তখন মাকে জড়ায় ধরছি। দেখি মা মারা গেছে।’’

কীভাবে বা কেন মারা গেছে- এসব প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘‘আমি শ্বশুর বাড়ি থাকতাম। কিছুই জানি না।’’ বলতে বলতে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।

মৃত নারগিসের শ্বশুর জালাল উদ্দিন বলেন, ‘‘তাদের সঙ্গে কারো ঝগড়া ছিল না। বিবাদ ছিল না। আমার ছেলে মারা যাওয়ার পর দুই নাতিকে নিয়ে তার মা বাড়িতে থাকত।’’

পূর্বে থেকে চলমান জমিজমা নিয়ে বিরোধে তাদের হত্যা করা হতে পারে বলে ধারণা করছেন মৃত নারগিসের মা ও বোন। কান্নাজড়িত কণ্ঠে মৃতের মা রাশেদা বেগম বলেন, ‘‘আমার মেয়ে তিনটি বাড়ি বদলাইছে। এক বছর ধরে জামাই মারা গেছে। খালি বলত, ওরা ভিটা ছাড়া করবো। আমি বলতাম, ধৈর্য ধরতে।’’  

মৃতের ছোট বোন কাজলী আক্তার বলেন, ‘‘আমার বইনেরে শ্বশুর-শাশুড়ি মারছে। একমাত্র শত্রু তারা আর দুই প্রতিবেশী। কোনোভাবে শান্তি দেয়নি। মাঝে মাঝেই তারা হুমকি দিত। এই জায়গা আর বাড়ি নিয়ে ঝামেলা ছিল। এই বাড়ি নিয়ে ওদের মারছে।’’

ঢাকা জেলা পুলিশের সাভার সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শাহীনুর কবির বলেন, ‘‘লাশের শরীরে আঘাতের চিহ্ন নেই। ঘরের দরজা ভেতর থেকে বন্ধ ছিল। তার মেয়ে ভেতরে ঢুকে প্রথম লাশ দেখতে পান। প্রাথমিকভাবে লাশ দেখে বিষক্রিয়ায় মৃত্যু হয়ে থাকতে পারে বলে মনে হয়েছে। আত্মহত্যা কি-না সেটি ময়নাতদন্তের পর বোঝা যাবে।’’

এক সঙ্গে মা ও দুই ছেলের মৃত্যুর ঘটনায় এলাকাবাসী স্তম্ভিত হয়ে গেছে। লাশ দেখতে স্থানীয় হাজারো মানুষ বাড়িতে ভিড় জমায়। 

ঢাকা/সাব্বির/বকুল

সম্পর্কিত নিবন্ধ