হঠাৎ ডায়রিয়ার প্রকোপে হাসপাতালে ঈশ্বরদী ইপিজেডের দেড় শতাধিক কর্মী
Published: 1st, June 2025 GMT
পাবনার ঈশ্বরদী রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকায় (ইপিজেড) হঠাৎ ডায়রিয়ার প্রকোপ দেখা দিয়েছে। গত দুই দিনে ঈশ্বরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও পার্শ্ববর্তী নাটোরের লালপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অন্তত ১৭৩ রোগী ভর্তি হয়েছেন, যাঁদের অধিকাংশই ইপিজেড এলাকা থেকে এসেছেন বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা।
এ ঘটনায় ইপিজেড কর্তৃপক্ষ গতকাল শনিবার দুপুরে সেখানকার সব কারখানার পানির নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য ঢাকায় পাঠিয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে।
ঈশ্বরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে হঠাৎ হাসপাতালে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগী আসতে থাকেন। গত শুক্রবার ক্রমেই এ সংখ্যা বাড়ছিল। এদিন বিকেল পর্যন্ত ৬২ রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নেন। এরপর গতকাল বিকেল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় আরও ৫১ রোগী ভর্তি হন। হঠাৎ অতিরিক্ত রোগী ভর্তির কারণে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ হিমশিম খাচ্ছে। শয্যা খালি না থাকায় অনেক রোগীকে বারান্দায় রাখা হয়েছে।
ঈশ্বরদী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আলী এহসান প্রথম আলোকে বলেন, ডায়রিয়ায় আক্রান্ত ও হাসপাতালে ভর্তি রোগীর অধিকাংশই ঈশ্বরদী ইপিজেডের কর্মী। ধারণা করা হচ্ছে, পানিবাহিত কোনো জীবাণুর কারণে তাঁরা ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছেন। তবে পরিস্থিতি এখনো নিয়ন্ত্রণে। বিষয়টি জেলা সিভিল সার্জনকে জানানো হয়েছে। ভর্তি রোগীদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।
অন্যদিকে লালপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি অন্তত ১০ জনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাঁরা ঈশ্বরদী ইপিজেডের ডেনিম ভিনটেজ (এ্যাবা), নাকানো ইন্টারন্যাশনাল বিডিসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন। বৃহস্পতিবার দুপুরে কারখানায় সরবরাহ করা পানি পান করেন তাঁরা। এর পর থেকেই অসুস্থতা অনুভব করতে থাকেন। রাতে শুরু হয় বমি, পেটব্যথা ও পাতলা পায়খানা। পরদিন সকালে তাঁরা হাসপাতালে ভর্তি হন।
ডেনিম ভিনটেজের কর্মী মমতাজ বেগম বলেন, তাঁরা দুপুরে বাড়ি থেকে নিয়ে যাওয়া খাবার খেয়েছিলেন। তবে পানি পান করেছিলেন ইপিজেডের ট্যাপকল থেকে। তাঁর ধারণা, পানি খেয়ে তাঁরা অসুস্থ হয়েছেন। নাকানো ইন্টারন্যাশনাল বিডির কর্মী আমজাদ হোসেন বলেন, ‘আমরা খাবার খেয়েছি আলাদা আলাদা। তবে পানি খেয়েছি এক জায়গার। তাই পানি থেকে সমস্যা হতে পারে।’
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, গতকাল রাত ১০টা পর্যন্ত ৫ জন চিকিৎসা শেষে বাড়ি ফিরেছেন। গুরুতর দুজনকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। আজ রোববার সকাল পর্যন্ত আরও ৯ জন নতুন করে ভর্তি হয়েছেন। বর্তমানে ভর্তি রোগী ৬৩ জন। তাঁদের মধ্যে ১৭ জন পুরুষ ও ৪৬ জন নারী।
লালপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মঞ্জুরুল আলম বলেন, ‘খুব স্বল্প সময়ে বিপুলসংখ্যক রোগী হাসপাতালে ভর্তি হওয়ায় আমরা চিকিৎসা দিতে চরম চাপে পড়ি। তবে সবাই মিলে পরিস্থিতি সামাল দিচ্ছি। শুধু দুজনকে রাজশাহী মেডিকেলে পাঠানো হয়েছে। ভর্তি রোগীরা সবাই এক জায়গার পানি পান করেছেন। তাই ধারণা করছি, পানিবাহিত ব্যাকটেরিয়া থেকে সমস্যা হতে পারে। সব রোগীর পেটব্যথা ও পাতলা পায়খানার উপসর্গ আছে।’
ঈশ্বরদী ইপিজেডের নির্বাহী পরিচালক এ বি এম শহিদুল ইসলাম বলেন, দুই দিন ধরে ইপিজেডের বেশ কয়েকজন কর্মী ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন। বেশ কিছু রোগীকে ইপিজেড হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, পানির কারণে এমনটি হতে পারে। ইতিমধ্যে ইপিজেডের ২৪টি কারখানার খাবার পানি সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। কারখানা এলাকা পরিচ্ছন্ন রাখতে প্রতিটি কারখানাকে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। হঠাৎ এই ডায়রিয়ার কারণও তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: স ব স থ য কমপ ল ক স হয় ছ ন উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
রূপপুর পারমাণবিক বিদুৎকেন্দ্রে প্রথম ইউনিটের সঞ্চালন লাইন চালু
পাবনার ঈশ্বরদীতে নির্মাণাধীন রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ইউনিটের সঞ্চালন লাইন চালু হয়েছে। এর ফলে উৎপাদন শুরু হলে গ্রিডে যুক্ত হবে কেন্দ্রটির বিদ্যুৎ। সোমবার এক বার্তায় এ তথ্য জানিয়েছে পাওয়ার গ্রিড বাংলাদেশ পিএলসি।
পাওয়ায় গ্রিড বাংলাদেশ জানায়, রূপপুর-গোপালগঞ্জ ৪০০ কেভি সঞ্চালন লাইন সফলভাবে চালু করার মধ্য দিয়ে প্রথম ইউনিটের বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে সঞ্চালন সক্ষমতার মাইলফলক স্পর্শ করল। এর মাধ্যমে পারমাণবিক কেন্দ্রের বিদ্যুৎ বাংলাদেশের গ্রিডে সঞ্চালনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হলো।
রূপপুর-গোপালগঞ্জ ৪০০ কেভি লাইনের দৈর্ঘ্য প্রায় ১৫৮ কিলোমিটার ও টাওয়ার সংখ্যা ৪১৪টি।
এর আগে প্রথম ইউনিটের ফিজিক্যাল স্টার্টআপের জন্য আরও দুটি হাইভোল্টেজ লাইন প্রস্তুত করা হয়েছিল। ২০২২ সালের ৩০ জুন ‘রূপপুর-বাঘাবাড়ি ২৩০ কেভি সঞ্চালন লাইন’ এবং ২০২৪ সালের ৩০ এপ্রিল ‘রূপপুর-বগুড়া ৪০০ কেভি সঞ্চালন লাইন’ চালু করা হয়। রূপপুর-গোপালগঞ্জ লাইন চালুর মধ্য দিয়ে মোট তিনটি লাইন প্রস্তুত হলো, যার প্রতিটির সঞ্চালন সক্ষমতা ২ হাজার মেগাওয়াট।