সংখ্যালঘুদের প্রতিনিধিত্ব ন্যায়ানুগ করা কেন জরুরি
Published: 2nd, June 2025 GMT
বাংলাদেশে বহুমুখী রাজনৈতিক টানাপোড়েন চলছে। টানাপোড়েনের দৃশ্যমান স্তরে রয়েছে ‘সংস্কার’ প্রশ্নে বিতর্ক-বিবাদ। পরোক্ষ স্তরে চলছে নির্বাচনকেন্দ্রিক অঙ্ক এবং অঙ্ক না মেলার কাজিয়া। সবই করছে মূলত মূলধারার সংখ্যাগুরু সম্প্রদায়।
সংস্কার ও নির্বাচন বিষয়ের কোনো আলাপে সংখ্যালঘুদের জনপ্রতিনিধিত্ব নিয়ে আপাতত কোনো প্রস্তাব বা তর্ক নেই। হয়তো ধরে নেওয়া হচ্ছে, সংবিধান ও সংসদের সংস্কার উদ্যোগে বড় দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য হলে সংখ্যালঘু সমাজের প্রতিনিধিত্বের সমস্যাও মিটবে।
বাংলাদেশে সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীতে হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টানসহ নানান ধর্ম ও বহু জাতের নাগরিক আছেন। তবে অনেকে বলেন, এখানে সংখ্যালঘু-সংখ্যাগুরু বলে পৃথক বর্গ নেই। সবাই আমরা ‘বাংলাদেশি’। রাজনৈতিক উচ্চাশা হিসেবে এটা বেশ ভালো শোনায়। এ রকমই হওয়া দরকার। কিন্তু অমুসলিম ও অবাঙালি বাংলাদেশিরা রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক-সামাজিক বর্গ হিসেবে পৃথক অনুভূতি ও অভিজ্ঞতা নিয়েই জীবন যাপন করে। সংখ্যাগুরুরা যদিও মনে করে ‘সংখ্যালঘু’ বলে কিছু নেই, কিন্তু সংখ্যালঘু মনে করছে, তার পৃথক সত্তা সে চাইলেও মুছতে পারছে না।
সংখ্যালঘুদের বড় অংশ সনাতন ধর্মাবলম্বী। তাদের বড় একাংশ রাজনৈতিকভাবে বড় একটা দলের সমর্থক ছিল দীর্ঘকাল। স্বাধীনতার পর থেকে এ অবস্থা। এতে তারা লাভবান হয়েছে কি না, সেটা মহাতর্কের বিষয়। এ নিয়ে সনাতন সমাজেই পুনর্ভাবনা চলছে এখন।
একটি বড় দলের সঙ্গে সংখ্যালঘুদের বড় অংশের সমর্থনের সঙ্গে ভারত প্রসঙ্গও যুক্ত হয়ে পড়তে দেখা যায়। এভাবে ত্রিমুখী বিষয়টিতে মাঝেমধ্যে নাজুক অবস্থায় পড়ে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কও এবং এভাবে তা চতুর্মুখী চেহারা নেয়। সর্বশেষ গত ৯ থেকে ১০ মাস সে রকম দেখছি আমরা। রাষ্ট্র ও নির্বাচন বিষয়ের মতো উপরোক্ত চতুর্মুখী সংকটেরও সংস্কার দরকার।
হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান সমাজের শিক্ষিত, মেধাবী, রাজনীতিমনস্ক অনেকে বিগত দশকের চতুর্মুখী এই জটিলতা থেকে বের হওয়ার পথ খুঁজছেন। বাংলাদেশের মূলধারার রাজনৈতিক দলগুলো চাইলে তাঁদের সাহায্য করতে পারে, তাঁদের পাশে দাঁড়াতে পারে। সংসদে সংখ্যালঘুদের সংখ্যানুপাতে প্রতিনিধিত্বের পথ করে দেওয়া যায় কি না, সে প্রসঙ্গে আলোচনা, তর্ক–বিতর্ক চাইছে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়।
জনসংখ্যা, ভোট ও প্রতিনিধিত্ব
বিগত দশকগুলোর অভিজ্ঞতায় দাঁড়িয়ে সংখ্যালঘু সমাজের একটা বড় অভিযোগ, সুষ্ঠু ভোট হলেও তারা অনেকটা প্রতিনিধিত্বহীন থাকছে। বিগত সংসদ নির্বাচনগুলোতে তাদের সম্প্রদায়ের এমপি–সংখ্যা সচরাচর ২০ জনের নিচে ছিল। এক সংসদে সেটা ৪–এ নেমেছিল। আবার নির্বাচিত হয়ে এ রকম সংখ্যালঘু সংসদ সদস্যরাও যাঁর যাঁর দলের নীতি-আদর্শের মুখপাত্র হয়ে যান। তাঁরা হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান বা গারো-রাজবংশী-দলিতের প্রতিনিধি থাকেন না। ১৯৭৪ সালে মনোরঞ্জন ধরের হাত দিয়েই অর্পিত সম্পত্তি আইন হয়েছে। কারণ, এটা ছিল তখনকার বড় দলের সিদ্ধান্ত; অথচ সংখ্যালঘুরা ওই আইনে অসন্তুষ্ট ছিল।
আবার বর্তমান ব্যবস্থায় দলিতরা সংখ্যালঘু হয়েও কখনো সংসদে হাজির হতে পারেনি। দলগুলো সংখ্যালঘু হিসেবে যতজনকে মনোনয়ন দেয়, তাঁরা হয়ে থাকেন দলের কুলীন ও ধনাঢ্য সংগঠক। বর্তমান ব্যবস্থায় নিজ সম্প্রদায় থেকে দলই তাঁদের কাছে গুরুত্ব পায় বেশি। অথচ ১৯৫৪ সালেও পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের ৩০৯ আসনে ৭২ জন ছিলেন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের এবং তাঁরা সংখ্যালঘুদের কণ্ঠস্বর হিসেবেই পরিষদে ছিলেন। সেটা ছিল ভিন্ন এক নির্বাচনী ব্যবস্থার কাল। যে নির্বাচন হয়েছিল ‘ভারত শাসন আইনে’। তবে সেই নির্বাচনী ব্যবস্থা এসেছিল মুসলমানদের দাবিতে এবং আইনসভায় সংখ্যালঘুদের প্রতিনিধিত্ব যৌক্তিক করতেই সেটা হয়।
১৯৫৬ সাল থেকে সেই ব্যবস্থা আর নেই আমাদের অঞ্চলে। প্রশ্ন উঠছে, যদি সংখ্যালঘুদের জন্য সুবিধাজনক হয় এবং সংখ্যাগুরুর তাতে স্বার্থহানি না হয়, তাহলে সে রকম কাছাকাছি কোনো ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনা যায় কি না, কিংবা তাতে সমস্যা থাকলে সমধর্মী কোনো নতুন ব্যবস্থা নিয়ে জাতীয় পর্যায়ে আলাপ হতে পারে কি না?
‘দ্বিতীয় রিপাবলিকে’ খোদ সংবিধান বদল ও গণপরিষদ নিয়ে কথা হচ্ছে এখন। এ রকম পরিবেশে সংখ্যালঘুদের প্রতিনিধিত্বের পদ্ধতিগত বদল নিয়েও আলাপ হতে পারে কি না, সে নিয়ে ভাবা দরকার। এমনও হতে পারে, এখনকার ব্যবস্থাতেই লোকগণনার হিসাব অনুযায়ী কিছু আসন সংখ্যালঘুদের জন্য নির্দিষ্ট করে দেওয়া যায়। ভারতীয় লোকসভায় যেভাবে শিডিউল কাস্ট ও শিডিউল ট্রাইবদের জন্য আসন নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। এ রকম সমাধানে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে ‘৭০ অনুচ্ছেদে’-এর সমস্যা থেকেই যাবে।
সংখ্যালঘু প্রতিনিধিত্বের অতীত চিত্র
সংখ্যালঘুদের প্রতিনিধিত্বের ব্যাপারে কোনো ধরনের সংস্কার যদি করা না হয়, তাহলে কী ঘটতে পারে, সেটা বর্তমান সামাজিক বিবেচনায় অনুমান–অযোগ্য নয়। বড় দলগুলো নির্বাচনে সংখ্যাগুরুদের ভোট নিশ্চিত রাখতে সংখ্যালঘুদের প্রত্যাশিত সংখ্যায় মনোনয়ন দিয়ে বিজয়ী করে আনায় বেশি আগ্রহ দেখাবে না। অতীতে এমনও ঘটেছে, ভোটার হিসেবে ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা সংখ্যাগরিষ্ঠ, এমন আসনেও প্রায়ই মুসলমান প্রার্থীরা দলগুলোর মনোনয়ন পেয়েছেন।
আবার দেশের বেশির ভাগ আসনে সংখ্যালঘুদের সংখ্যা এমন নয় যে বর্তমান ভোটব্যবস্থায় কেবল নিজেদের ভোটে তাঁদের কেউ জিতে আসতে পারেন। খুলনা ও গোপালগঞ্জে মাত্র দুটি আসন আছে, যেখানে অমুসলিমরা সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটার। এর বাইরে ১০টার মতো আসনে তাঁরা বড় সংখ্যায় আছেন।
এর বাইরে সংখ্যালঘুরা কার্যত অল্প অল্প করে ছড়িয়ে আছে দেশজুড়ে। যেমন বাংলাদেশে পাঁচ লাখের মতো খ্রিষ্টধর্মাবলম্বী আছে। এমন কোনো নির্বাচনী এলাকা নেই, যেখানে তাদের বড় ভোটব্যাংক আছে। এ কারণে রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনে কোনো খ্রিষ্টানকে প্রার্থী করতে উৎসাহ দেখায় না। এর মানে দাঁড়ায়, খ্রিষ্টানদের কথা বলার জন্য সংসদে কেউ না থাকার শঙ্কা। এ রকম অবস্থায় সংখ্যাগুরু এমপিরা যদি দয়া করে খ্রিষ্টানদের কথা বলেন, তবেই সেই কথা শুনবে বাংলাদেশ। সে রকম ঘটে কি সচরাচর?
বৌদ্ধদের সংখ্যা দেশে খ্রিষ্টানদের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ। হিন্দুদের সংখ্যা প্রায় দেড় কোটি। হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান মিলে ১৭ কোটি জনসংখ্যার প্রায় ৯ ভাগ। সংসদ যদি হয় ৩৫০ আসনের, তাহলে ৩১ থেকে ৩২ জন সংখ্যালঘু এমপি সেখানে ওই সম্প্রদায়ের থাকতে পারেন। বিগত নির্বাচনগুলোর অভিজ্ঞতা জানায়, সংখ্যালঘুরা এ রকম সংখ্যায় সংসদে ছিলেন না। ২০–এর নিচে থাকছে তাঁদের আসন।
এটাও সত্য যে ভোটের আয়োজন ধর্মের ভিত্তিতে হয় না। ভোট হয় নাগরিকতার জায়গা থেকে। রাজনৈতিক দলগুলো সেভাবেই প্রার্থী দেয়। এটাও আশা করা হয়, ভোটাররা কেবল দলগুলোর ইশতেহার দেখে ভোট দেবেন এবং বিজয়ী প্রার্থীরা ধর্ম-বর্ণ-জাতিগত বিবেচনার ঊর্ধ্বে উঠে কাজ করবেন। কিন্তু বাস্তবের সঙ্গে যৌক্তিক এসব প্রত্যাশার অনেক ব্যবধান ঘটে বলে সংখ্যালঘুদের দাবি। তারা মনে করে, বর্তমান ব্যবস্থায় রাজনৈতিক দলগুলো হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান সংগঠকদের কম প্রার্থী করে সংখ্যাগুরুর পছন্দ-অপছন্দের বিবেচনা মাথায় রেখেই।
এটা আশপাশের দেশগুলোরও বাস্তবতা। মিয়ানমারে অং সান সু চির দল ২০২১ সালে কোনো মুসলিম প্রার্থী রাখেনি নির্বাচনে। একই কারণে ভারতীয় লোকসভায় বিজেপির কোনো মুসলিম এমপি নেই। মিয়ানমার ও ভারতে এভাবেই বামার ও হিন্দুত্ববাদীরা সংখ্যাগুরুদের মন জুগিয়ে ভোটে জিতেছিল। সেসব দেশে সংখ্যালঘুদের আহাজারির কথা আমরা জানি। বাংলাদেশে আমরা সে রকম চাইব না নিশ্চয়ই, অন্তত রাষ্ট্র পুনর্গঠনের নতুন উদ্যমের সময়।
কিন্তু সংখ্যালঘুদের প্রতিনিধিত্ব সন্তোষজনক মাত্রায় বাড়াতে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য পথ কী? সংখ্যালঘুরা বলছে, বাংলাদেশে তাদের নিজ প্রতিনিধি বাছাই করতে দেওয়া যেতে পারে। জনসংখ্যার হিস্যায় তারা যে পরিমাণ আসন পায়, সেসবে নিজেরা নিজেদের প্রার্থী বাছাইয়ের সুযোগ পেলে ভালো হয়। এর মধ্যে কিছু আসন (জনসংখ্যার হিস্যা অনুযায়ী) দলিতদের জন্যও চিহ্নিত করে দেওয়া যায়। ১৯৫৪ সালে সংখ্যালঘুদের ৭৪টি আসনের ৩৮টি ছিল প্রান্তিক সংখ্যালঘুদের জন্য। এখন এই ‘প্রান্তিক সংখ্যালঘু’ কারা, সেটা নির্ধারণে সংবিধান ও নির্বাচন সংস্কার কমিশন কাজ করতে পারে।
এ রকম সংস্কার ফলপ্রসূ হলে সংসদে সব ধরনের সংখ্যালঘুর প্রত্যাশামতো প্রতিনিধি থাকবে। তাঁরা নিজ জনগোষ্ঠীর আশা-প্রত্যাশার কথা বলতে পারবেন এবং সে অনুযায়ী সরকার পদক্ষেপ নিতে পারবে বলে জানাচ্ছেন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের তরুণেরা, যা দেশের রাজনৈতিক ব্যবস্থাকে অন্তর্ভুক্তিমূলক করে তুলবে এবং আন্তসাম্প্রদায়িক পরিবেশকে উন্নত করবে।
এটা সংখ্যালঘুদের বিষয়ে দেশ-বিদেশের তৃতীয় পক্ষের প্রচার-প্রচারণা বন্ধেও ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে। সমাজে নতুন স্বতন্ত্র রাজনৈতিক দলেরও জন্ম হতে পারে এ রকম সংস্কারে। তাতে বিশেষ কোনো দলের সমর্থক বনে থাকার সিলমোহর থেকে হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান বা সাঁওতাল-হাজং-খাসিরা নিজেদের সরিয়ে আনতে পারবে।
স্বাধীন দেশের প্রথম ১১টি সংসদের তথ্যে দেখা যায়, ১১২ জন সংখ্যালঘু এমপির ৯৫ জনই ছিলেন একটি দলের সংগঠক। এতে সংখ্যালঘুদের রাজনৈতিক নেতৃত্বের বিকাশ আটকে গেছে এবং ওই দলের সঙ্গে অন্যান্য দলের বিবাদে অন্ধভাবে সংখ্যালঘুরা আক্রান্ত হয়ে পড়ছে। এতে অন্য দলগুলো ক্ষমতায় এলে সংখ্যালঘুদের উন্নয়নও আটকে থাকার শঙ্কা থাকে। নতুন প্রজন্মের সংখ্যালঘু নেতৃত্ব এই আত্মঘাতী অবস্থার অবসান চায়। তারা বহুমত ও বহুপথে রাজনৈতিক বিকাশ চায়। সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোর সাহায্যপ্রত্যাশী তারা।
প্রতিনিধিত্ব প্রশ্নে চলমান আলাপ-আলোচনা
অন্তর্বর্তী সরকার নির্বাচন ও সংবিধান–সংক্রান্ত যেসব কমিশন গঠন করেছে, তারা সংখ্যালঘুদের সমস্যা ও তার সমাধান বিষয়ে বিশেষ মনোযোগ দিয়েছে বলে মনে হয়নি। রাষ্ট্রনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ কমিশনগুলোর সদস্য হিসেবে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ভুক্ত কেউ অন্তর্ভুক্ত হননি। সংবিধান সংস্কার কমিশনে ১০ জন সদস্য ছিলেন, নির্বাচন সংস্কার কমিশনে সদস্য ছিলেন ৮ জন। এই ১৮ জনে হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান বা অপ্রধান কোনো ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর কেউ ছিলেন না। বিস্ময়করভাবে, এই কমিশনগুলো রাষ্ট্র ও নির্বাচনী ব্যবস্থার সংস্কারের বিপুল প্রস্তাবের মধ্যে সংখ্যালঘুদের এত দিনের প্রত্যাশা অনুযায়ী বিস্তারিত কোনো মৌলিক সমাধান প্রস্তাব করেনি।
সংবিধান সংস্কার কমিশন দেশের জন্য দুটি আইনসভার মতো মৌলিক সংস্কারের কথাও বলেছে। নিম্নকক্ষে সাধারণ আসনের বাইরে নারীদের জন্য বাড়তি ১০০ আসনে নির্বাচনের কথাও বলা হয়েছে। এমনকি সাধারণ আসনে তরুণদের জন্য ১০ শতাংশ মনোনয়ন সংরক্ষণের কথাও বলা হয়েছে। কিন্তু দেশের সংখ্যালঘুদের প্রশ্নে কোনো সুপারিশ নেই। উচ্চকক্ষে ৫টি আসন ‘সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে অনগ্রসর সম্প্রদায়ে’র জন্য সংরক্ষণের প্রস্তাব করা হয়েছে। অর্থাৎ এখানেও সরাসরি ধর্মীয় বা জাতিগত সংখ্যালঘুদের বিষয়ে কিছু বলা হয়নি। ‘সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে অনগ্রসর’ মুসলমান ও বাংলাভাষী যেকোনো প্রান্তিক জনগোষ্ঠীও হতে পারে।
এই কমিশন পূর্বতন সংসদীয় ব্যবস্থার সমালোচনা করে বলেছে (তৃতীয় অধ্যায়, পৃ.
অনুমান করছি, সংবিধান সংস্কার কমিশন ‘সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে অনগ্রসর সম্প্রদায়’ বলতে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর কথা ভেবেছে। কিন্তু ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা চায় তাদের বিষয়েও এ সময় কিছু ভাবা হোক, বিশেষ করে নিম্নকক্ষে।
সম্ভাব্য নতুন সংবিধানের চলমান সংস্কার প্রস্তাবগুলো যদি ধর্মনিরপেক্ষতার আলোকে তৈরি হতো তাহলে বলা যেত, মুসলমান ও অমুসলমান বিবেচনায় নির্বাচনী ব্যবস্থা সাজানো সম্ভব নয়। কিন্তু সংবিধান সংস্কার কমিশন তার সুপারিশে একটি ধর্মকে ‘রাষ্ট্রধর্ম’ রেখেছে; একটি ভাষাকে ‘রাষ্ট্রভাষা’ রেখেছে। ধর্মনিরপেক্ষতার অতীত নীতিকে বলেছে ‘বিভক্তি ও বিভ্রান্তি সৃষ্টি’র কারণ (দ্বিতীয় অধ্যায়, পৃ.৪৭)। যদি ধর্মনিরপেক্ষতা না থাকে এবং কমিশনের প্রস্তাবমতো ‘বহুত্ববাদ’ ও ‘গণতন্ত্র’ রাখতে হয়, তাহলে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের জনপ্রতিনিধিত্বের ন্যায়সংগত ফয়সালা নিয়ে পুনর্ভাবনায় সমস্যা থাকার কথা নয়।
এসব বিষয়ে বিস্তারিত কিছু মেলেনি নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনেও। সেখানে শুরুতে বলা হয়েছে, ‘গণতান্ত্রিক সমাজের অনিবার্য বৈশিষ্ট্য পারস্পরিক তর্ক-বিতর্ক’। এ রকম বিতর্ক শেষে ১৮৪ পৃষ্ঠার এই প্রতিবেদনে ১৬টি বিষয়ে দুই শতাধিক সুপারিশ করা হয়েছে। তাতে সংখ্যালঘুদের নির্বাচন বিষয়ে বিস্তারিত কিছু নেই। কেবল সংসদের উচ্চকক্ষের বেলায় এক জায়গায় ‘পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী’ এবং অন্যত্র ‘সংখ্যালঘু’দের জন্য আসন সংরক্ষণের কথা বলা হয়েছে। সেটাও বলা হয়েছে অনির্দিষ্ট ভাষায় ও সংসদের নিম্নকক্ষের বেলায় কিছু বলা হয়নি, সেখানে আসনসংখ্যা ৪০০–তে উন্নীত করার সুপারিশের পরও। সবার অনুমান, সংসদের নিম্নকক্ষই হবে নীতিনির্ধারণের ভরকেন্দ্র।
সংবিধান ও নির্বাচন কমিশনের প্রতিবেদনগুলো নিয়ে এখন রাজনীতিবিদদের মধ্যে মতবিনিময় চলছে। আশা করা যায়, কমিশনগুলোর প্রতিবেদনে কোনো অপূর্ণতা থাকলে জাতীয় স্বার্থে রাজনীতিবিদেরা সেসব বিষয়েও ভাববেন। সংখ্যালঘুদের যথাযথ প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত হলে, সেটা সংখ্যাগুরুর জন্য স্বস্তিকর হয়। যে দেশে সংখ্যালঘুরা অসুখী থাকে, সেখানে সংখ্যাগুরু বাড়তি রাজনৈতিক-সামাজিক-কূটনৈতিক অস্বস্তিতে থাকে। বৈশ্বিক অভিজ্ঞতা তা–ই বলে।
আলতাফ পারভেজ ইতিহাস বিষয়ে গবেষক
মতামত লেখকের নিজস্ব
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র প রস ত ব র র জন ত ক ন ম নকক ষ ব যবস থ য় ন ব যবস থ র জন য স দ র জন য জনগ ষ ঠ এ রকম স দলগ ল র ম সলম ন জনস খ য দ র বড় অন য য় দল র স ব তর ক বড় দল অবস থ সমস য সদস য
এছাড়াও পড়ুন:
ঘোড়াধাপ হাটে ধান বেচা
২ / ৯হাটে মধ্যে ধানের বিশাল স্তূপ