নিজের বাল্যবিবাহ ঠেকানোর গল্প শোনাল আদুরী
Published: 3rd, June 2025 GMT
আদুরী আখতার তখন নবম শ্রেণির ছাত্রী। গত বছরের মার্চে হঠাৎই তার বাবা তার বিয়ের আয়োজন করেন। এতে রাজি ছিল না আদুরী। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকসহ স্থানীয় বিভিন্নজনের কাছে অভিযোগ করে সে। প্রথমে বিষয়টি অস্বীকার করলেও একপর্যায়ে এক রাতে আদুরীকে একটি নির্জন বাড়িতে নিয়ে গিয়ে বিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। তখন আদুরী মুঠোফোনে বার্তা পাঠিয়ে ঘটনা জানায় স্থানীয় উন্নয়নকর্মী জেসমিন আখতারকে। পরে পুলিশ ও ইউএনও গিয়ে বিয়েটি বন্ধ করে দেন।
ওই ঘটনায় ভ্রাম্যমাণ আদালত বাল্যবিবাহ নিরোধ আইনে কাজি, বর, বরের বোন ও বাড়ির মালিককে তিন মাসের কারাদণ্ড দেন।
গতকাল সোমবার রংপুরের আরডিআরএস মিলনায়তনে জননী প্রকল্পের আওতায় জেলা পর্যায়ে বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে ম্যাস মিডিয়া ক্যাম্পেইনের উদ্বোধন করা হয়। এই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মুক্ত আলোচনায় অংশ নিয়ে আদুরী এসব কথা বলে। সেভ দ্য চিলড্রেনের কারিগরি সহায়তায় মাতৃ ও নবজাতকের মৃত্যু কমাতে ‘জননী’ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে আরডিআরএস বাংলাদেশ।
আদুরীর বাড়ি রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার পলাশবাড়িতে। তার বাবা জাহাঙ্গীর আলম ভ্যানচালক। সে রসুলপুর মাহতাবিয়া স্কুল অ্যান্ড কলেজে দশম শ্রেণিতে পড়ছে। আদুরী জানাল, মা–বাবাসহ পরিবার এখন তার পাশে। ১৮ বছরের আগে বিয়ে না করার পক্ষে যুক্তি তুলে আদুরী বলে, ‘আমি যদি বিয়ে করতাম, তাহলে লাইফে এগিয়ে যেতে পারতাম না। পড়াশোনা করতে পারতাম না। ওখানে আমার লাইফ শেষ হতে যেত। আমি জীবনে স্বনির্ভর হতে চাই।’
আদুরীর সাহসিকতার প্রশংসা করে তার স্কুলের প্রধান শিক্ষক আবেদুল ইসলাম বলেন, পীরগঞ্জের কুমেদপুর ইউনিয়নে বাল্যবিবাহ ঠেকিয়ে আদুরী দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, রংপুর বিভাগে বাল্যবিবাহের হার ৬৮ শতাংশ, যেখানে জাতীয় গড় ৫০ শতাংশ। গাইবান্ধা, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও, নীলফামারী, কুড়িগ্রাম, পঞ্চগড় ও রংপুর জেলার কিশোরীদের মধ্যে ১৮ বছরের আগেই বিয়ের হার উল্লেখযোগ্য। গাইবান্ধায় ১৬ বছরের আগেই বিয়ের হার সবচেয়ে বেশি—৪৪ দশমিক ১ শতাংশ। বাল্যবিবাহের হার কমছে ধীরগতিতে।
পরিবার পরিকল্পনার উপপরিচালক সাইফুল ইসলাম বলেন, ১৫-২০ বছর আগে জাতীয়ভাবে এই হার ছিল ৫৯ শতাংশ, এখনো তা মাত্র ৯ শতাংশ কমেছে। চরাঞ্চল ও প্রত্যন্ত এলাকায় এখনো ৭০-৮০ শতাংশ বাল্যবিবাহ হয়।
বক্তারা বাল্যবিবাহের কিছু উল্লেখযোগ্য কারণ তুলে ধরেন। সেগুলো হলো অভিভাবকের অর্থনৈতিক অসচ্ছলতা, মেয়েকে নিয়ে সামাজিকভাবে নিরাপত্তাহীন ভাবা, ঘটক দ্বারা প্রভাবিত হওয়া, স্থানীয় কমিউনিটি ও স্থানীয় প্রশাসনের সমন্বয়হীনতা, জন্ম ও বিবাহের নিবন্ধন এবং বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন নিয়ে সচেতনতার অভাব।
প্রতিরোধে অভিভাবকদের সঙ্গে নিয়মিত সভা, ইউনিয়ন পর্যায়ের কমিটিকে সক্রিয়করণ, বিয়ের নিবন্ধনপ্রক্রিয়া অনলাইন করা, কাজিদের ওপর নজরদারি, অপসংস্কৃতির বিরুদ্ধে পদক্ষেপ এবং কিশোর-কিশোরীদের স্বাস্থ্য ও অধিকারবিষয়ক শিক্ষা দেওয়ার সুপারিশ করেন বক্তারা।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা.
অনুষ্ঠানের শুরুতে ‘জননী’ প্রকল্প ও ক্যাম্পেইনের উদ্দেশ্য ও কার্যক্রম উপস্থাপন করেন প্রকল্পের কারিগরি বিশেষজ্ঞ সৈয়দা জামিলা সিদ্দিকা। সঞ্চালনায় ছিলেন কমিউনিকেশন ও ডকুমেন্টেশন বিশেষজ্ঞ জাহানারা হৃদিতা।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: অন ষ ঠ ন প রকল প বছর র
এছাড়াও পড়ুন:
জ্ঞাত আয়বহির্ভূত ৫ কোটি টাকার সম্পদ অর্জনের অভিযোগে আসাদুজ্জামান নূরের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
জ্ঞাত আয়বহির্ভূত প্রায় সাড়ে পাঁচ কোটি টাকার সম্পদ অর্জন ও দেড় শ কোটি টাকার সন্দেহজনক লেনদেনের অভিযোগে সাবেক সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রী ও অভিনেতা আসাদুজ্জামান নূরের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
আজ বুধবার দুদকের ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে সংস্থার উপপরিচালক মো. আজিজুল হক বাদী হয়ে মামলাটি করেন। দুদকের উপপরিচালক (জনসংযোগ) মো. আকতারুল ইসলাম প্রথম আলোকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, আসাদুজ্জামান নূর ক্ষমতার অপব্যবহার করে ৫ কোটি ৩৭ লাখ ১ হাজার ১৯০ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করেছেন এবং তা নিজের দখলে রেখেছেন। এ ছাড়া আসাদুজ্জামান নূরের নামে থাকা বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ১৯টি হিসাবে ১৫৮ কোটি ৭৮ লাখ ৪৭ হাজার ৮৯৮ টাকার সন্দেহজনক লেনদেন হয়েছে। এই লেনদেনের মাধ্যমে অর্থ স্থানান্তর, রূপান্তর ও হস্তান্তরের অভিযোগ আনা হয়েছে, যা মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ও দুদক আইনে শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
দুদকের অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, ২০০৩-০৪ করবর্ষ থেকে ২০২৩-২৪ করবর্ষ পর্যন্ত আসাদুজ্জামান নূরের বৈধ আয় ছিল ৩২ কোটি ৯৬ লাখ ৮৩ হাজার ৬৮৮ টাকা। এ সময়ে তাঁর পারিবারিক ব্যয় ছিল ৯ কোটি ৩২ লাখ ২৫ হাজার ৭৬১ টাকা। সে অনুযায়ী নিট সঞ্চয় দাঁড়ায় ২৩ কোটি ৬৪ লাখ ৫৭ হাজার ৯২৭ টাকা। অথচ তাঁর অর্জিত স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ ২৯ কোটি ১ লাখ ৫৯ হাজার ১১৭ টাকা। এতে ৫ কোটি ৩৭ লাখ টাকার উৎস পাওয়া যায়নি বলে দুদক জানিয়েছে।
এজাহারে আরও বলা হয়েছে, আসাদুজ্জামান নূরের বিভিন্ন ব্যাংক হিসাবে ৮৫ কোটি ৭২ লাখ ৬৬ হাজার ৫৯৩ টাকা জমা এবং ৭৩ কোটি ৫ লাখ ৮১ হাজার ৩০৫ টাকা উত্তোলন হয়েছে। এসব লেনদেনের উৎস অস্পষ্ট।
২০০১ সালে নীলফামারী-২ আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন আসাদুজ্জামান নূর। এরপর ২০০৮, ২০১৪, ২০১৮ ও সর্বশেষ ২০২৪ সালের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও তিনি নির্বাচিত হন। ২০১৪ সালে দশম সংসদ নির্বাচনের পর সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রীর দায়িত্ব পান তিনি।
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর সাবেক মন্ত্রী ও এমপিদের বিরুদ্ধে একে একে মামলা ও গ্রেপ্তার শুরু করে দুদক ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থাগুলো। তারই ধারাবাহিকতায় গত ১৫ সেপ্টেম্বর রাতে রাজধানীর বেইলী রোডে নিজ বাসা থেকে আসাদুজ্জামান নূরকে গ্রেপ্তার করা হয়।