চট্টগ্রামে আইনজীবী সাইফুল ইসলামকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যাসহ পাঁচ মামলায় সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেছেন আদালত। আজ মঙ্গলবার চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আবু বকর সিদ্দিক শুনানি শেষে এই আদেশ দেন।

নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (প্রসিকিউশন) মফিজ উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, কারাগারে থাকা চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে কোতোয়ালি থানার হত্যা, পুলিশের ওপর হামলা, গাড়ি ভাঙচুরসহ পাঁচ মামলায় জামিনের আবেদন করেন তাঁর আইনজীবীরা। ষড়যন্ত্রমূলকভাবে তাঁকে এ মামলায় জড়ানো হয়েছে দাবি করেন তাঁর আইনজীবীরা। রাষ্ট্রপক্ষ থেকে জামিনের বিরোধিতা করা হয়। উভয় পক্ষের শুনানি শেষে আদালত জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেন।

মফিজ উদ্দিন আরও বলেন, চিন্ময় দাস অসুস্থ বলে আদালতকে জানান তাঁর আইনজীবীরা। এরপর আদালত কারাবিধি অনুযায়ী প্রয়োজনীয় চিকিৎসার ব্যবস্থা নিতে কারা কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন।

চিন্ময়ের আইনজীবী অপূর্ব কুমার ভট্টাচার্য প্রথম আলোকে বলেন, ‘শুনানিতে আমরা আদালতকে বলেছি, চিন্ময় দাস কারাগারে অসুস্থ। তিনি লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত। এ ছাড়া ষড়যন্ত্রমূলকভাবে তাঁকে এসব মামলায় জড়ানো হয়েছে। তিনি সম্পূর্ণ নির্দোষ।’ এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, জামিন চাইতে এসে কোনো বাধার সম্মুখীন হননি তাঁরা।

পুলিশের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত ৫ মে চিন্ময় দাসকে আইনজীবী সাইফুল ইসলাম হত্যা মামলায় ভার্চ্যুয়াল শুনানি শেষে গ্রেপ্তার দেখান আদালত। পরে অন্য মামলাগুলোয় গ্রেপ্তার দেখানো হয়।

এদিকে চিন্ময় দাসের জামিন শুনানিকে কেন্দ্র করে চট্টগ্রাম আদালত প্রাঙ্গণে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। গত বছরের ২৬ নভেম্বর সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় দাসের জামিনকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের মধ্যে আইনজীবী সাইফুল ইসলামকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এ হত্যার ঘটনায় তাঁর বাবা জামাল উদ্দিন বাদী হয়ে ৩১ জনের নাম উল্লেখ করে হত্যা মামলা করেন। এ ছাড়া পুলিশের ওপর হামলা, কাজে বাধার, আইনজীবী ও বিচারপ্রার্থীদের ওপর হামলা ও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনায় আরও পাঁচটি মামলা হয়। ছয়টি মামলায় গ্রেপ্তার হন ৫১ জন। তাঁদের মধ্যে হত্যায় জড়িত অভিযোগে ২১ জন গ্রেপ্তার রয়েছেন।

আদালত সূত্র জানায়, সাইফুল ইসলাম হত্যার আসামিদের মধ্যে চন্দন দাস, রিপন দাস ও রাজীব ভট্টাচার্য আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। এতে উল্লেখ করা হয়, আইনজীবীর ঘাড়ে বঁটি দিয়ে দুটি কোপ দেন রিপন দাস। আর কিরিচ দিয়ে কোপান চন্দন দাস। পরে রাস্তায় পড়ে থাকা সাদা শার্ট ও কালো প্যান্ট পরা এই আইনজীবীকে লাঠি, বাটাম, ইট, কিরিচ ও বঁটি দিয়ে তাঁরা ১৫ থেকে ২০ জন পিটিয়ে হত্যা করেন।

গত বছরের ৩১ অক্টোবর চট্টগ্রাম নগরের চান্দগাঁও মোহরা ওয়ার্ড বিএনপির তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক ফিরোজ খান বাদী হয়ে কোতোয়ালি থানায় চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীসহ ১৯ জনের বিরুদ্ধে জাতীয় পতাকা অবমাননায় রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে ওই মামলা করেন। পরে ফিরোজ খানকে বিএনপি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। এ মামলায় চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে ২৫ নভেম্বর ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র আইনজ ব আইনজ ব র

এছাড়াও পড়ুন:

গ্রেপ্তারের সময় পরিবারের একজনকে প্রত্যক্ষদর্শী রাখা, জবানবন্দির সময় আইনজীবীর উপস্থিতিসহ নানা প্রস্তাব

গ্রেপ্তারের সময় অভিযুক্ত ব্যক্তির পরিবারের একজনকে প্রত্যক্ষদর্শী হিসাবে রাখা, আসামিপক্ষের আইনজীবীর উপস্থিতিতে জবানবন্দি রেকর্ড করা, ৬০ দিনের মধ্যে তদন্ত শেষ করা, মামলার আগে প্রাথমিক তদন্ত করা, গ্রেপ্তারের পর অভিযুক্ত ব্যক্তিকে অন্য কোথাও না রেখে শুধু থানায় রাখাসহ ফৌজদারি কার্যবিধি সংশোধনের প্রাথমিক খসড়ার বিভিন্ন প্রস্তাবের পক্ষে-বিপক্ষে মতামত দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। তাঁরা বলেছেন, প্রস্তাবিত খসড়ায় অনেক বিষয়ে অস্পষ্টতা রয়েছে। সেগুলো চূড়ান্ত করতে হবে।

মঙ্গলবার রাজধানীর বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে আয়োজিত ‘কোড অব ক্রিমিনাল প্রসিডিউর (সংশোধন) অর্ডিন্যান্স-২০২৫’-এর খসড়া নিয়ে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় আইনজীবী, আইনের শিক্ষক, পুলিশসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পেশার গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা নিজেদের মত তুলে ধরেন। আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয় এ মতবিনিময় সভার আয়োজন করে।

খসড়া অনুযায়ী বেত্রাঘাতের বিধান বাতিল করার ভাবনাকে স্বাগত জানান সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সারা হোসেন। তিনি বলেন, ‘এখানে যেসব চেঞ্জ (সংশোধন) নিয়ে কথা হচ্ছে, সেগুলো যথাযথভাবে করা গেলে আমি মনে করি, গত ২৫ বছরে যে পরিবর্তনের জন্য আমরা অপেক্ষা করছি, সেটা আমরা পেয়ে যাব।’

অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান বলেন, খসড়ায় গ্রেপ্তার ব্যক্তির ‘মেডিকেল এক্সামিনেশনের’ (স্বাস্থ্য পরীক্ষা) উল্লেখ থাকলেও কারা এটা করতে পারবেন, তার উল্লেখ নেই—এটি থাকলে ভালো হতো। খসড়া প্রস্তাবে প্রাথমিক তদন্তের কথা বলা হয়েছে। সিআরপিসিতে (ফৌজদারি কার্যবিধি) তদন্তের সংজ্ঞা রয়েছে। কিন্তু প্রাথমিক তদন্ত কী, সেটা স্পষ্ট নয়। এটা স্পষ্ট করা দরকার।

জিজ্ঞাসাবাদের সময় অভিযুক্ত ব্যক্তির আইনজীবীর উপস্থিতি থাকার সুবিধা-অসুবিধা নিয়ে কথা বলেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মো. তাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, পুলিশ অ্যাক্ট, প্রিজন্স অ্যাক্ট, প্রিজনার্স অ্যাক্ট এবং জেল কোড ইত্যাদির ভেতর থেকে ঔপনিবেশিকতা বাদ দিতে হবে।

অভিযুক্ত ব্যক্তির জবানবন্দি নিয়ে সমস্যা হচ্ছে উল্লেখ করে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী শিশির মনির বলেন, আসামির জবানবন্দি রেকর্ড করার সময় আইনজীবীর উপস্থিতি ও অডি-ভিডিও রেকর্ড করা উচিত। ভারত তাঁদের সিআরপিসিতে ইতিমধ্যে এটা যুক্ত করেছে। যদি কোনো অভিযুক্ত চান তাঁর আইনজীবীর উপস্থিতিতে জবানবন্দি নিতে হবে। একা একা গোপনে ম্যাজিস্ট্রেটের কক্ষে নেওয়া যাবে না।

পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম বলেন, গ্রেপ্তারের সময় অভিযুক্ত ব্যক্তির পরিবার থেকে অন্তত একজনকে প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। কিন্তু আসামি গ্রেপ্তারের সময় এটা অনুসরণ করা কঠিন হবে। এটা করতে গেলে অনেক সময় আসামির পালিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

সিআরপিসি সংশোধনের খসড়ার বিভিন্ন বিষয়ের ওপর মত দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন, ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর রহমান মিলন, পাবলিক প্রসিকিউটর মো. ওমর ফারুক ফারুকী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার এহসান এ সিদ্দিকী, ব্যারিস্টার তানিম হোসেন শাওনসহ বেশ কয়েকজন।
মতবিনিময় সভায় সভাপতিত্ব করেন আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল।

সরকার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ আইন সংস্কারের মাধ্যমে দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ইতিমধ্যে শতাধিক বাস্তবায়নযোগ্য সংস্কার প্রস্তাব চিহ্নিত করা হয়েছে এবং এগুলোর বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে।

আসিফ নজরুল বলেন, ‘আইনের এমন সংস্কার করতে সরকার কাজ করছে যেন আরেকটি ফ্যাসিবাদ গড়ে ওঠা কঠিন হয়ে ওঠে। তাদের (স্বৈরশাসকদের) জন্য আইন যতটা সম্ভব কঠিন করে যেতে চাই।’

আইনের অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেন, ‘অনেকে বলেন সংস্কার হচ্ছে না। আমরা এমন কাজ করেছি, যা কেউ কখনো করেনি। অনেক জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এসব কাজের প্রশংসা করেছেন। এমনকি সমালোচকেরাও সাইবার সুরক্ষা আইন সংশোধনের প্রশংসা করেছেন।’ উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, ‘অনেকের অনুরোধে আমরা পাওয়ার অব অ্যাটর্নির বিধান পরিবর্তন করেছি, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন সংশোধন করেছি। এ কাজ করতে গিয়ে বাধা এসেছিল। অথচ যাঁরা তখন প্রতিবাদ করেছিলেন, এখন তাঁরা এসে বলেন ভালো হয়েছে।’

বিয়ের আশ্বাসে ধর্ষণ বিষয়ে আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘অনেক সুশিক্ষিত মানুষ প্রশ্ন তুলেছেন, এটা আলাদা অপরাধ কেন? এটা প্রতারণার জায়গায় ছিল, যার শাস্তি ছিল মৃত্যুদণ্ড। এটাকে আমরা আলাদা করে ফেলেছি। আর ভয়ংকর যে ধর্ষণের ঘটনা, সেটাকে আমরা দ্রুত বিচারের ব্যবস্থা করেছি।’

সংস্কার চলমান থাকবে উল্লেখ করে আসিফ নজরুল বলেন, ‘মতবিনিময় সভায় যেসব গঠনমূলক পরামর্শ এসেছে, তা বিবেচনায় নিয়ে আইনটি সংশোধন করা হবে।’ মামলার জট প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘সবাই বলেন মামলার জট কমাতে হবে। আমরা সেদিকেই কাজ করছি। লিগ্যাল সার্ভিস অ্যাক্টে বড় পরিবর্তন আনছি। সেখানে একটা বিধান করা হবে, যাতে ছোটখাটো অপরাধ, পারিবারিক বিরোধ বা মীমাংসাযোগ্য মামলা আগে মধ্যস্থতায় যেতে হবে। মধ্যস্থতায় যাওয়ার পর আদালতে আসতে পারবে।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • কোরবানির পশু সম্পর্কে যে বিষয়গুলো জানতেই হবে
  • জিয়াউর রহমান মানুষের মনিকোঠায় স্থান করে নিয়েছেন : সজল
  • ময়মনসিংহে বাড়ি ফেরার পথে আইনজীবীকে পেটাল দুর্বৃত্তরা
  • গ্রেপ্তারের সময় পরিবারের একজনকে প্রত্যক্ষদর্শী রাখা, জবানবন্দির সময় আইনজীবীর উপস্থিতিসহ নানা প্রস্তাব
  • নরসিংদীতে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধে হাইকোর্টের নির্দেশ
  • পাঁচ মামলায় চিন্ময়ের জামিন নামঞ্জুর
  • পাঁচ মামলায় চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের জামিন নামঞ্জুর
  • দেওয়ানি কার্যবিধি আইনের প্রস্তুতির জন্য করণীয়
  • রাশেদ খান মেননের আরও ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর